Breaking News

দুষ্টু গার্লফ্রেন্ড । পর্ব -০২



“পরদিন সকালে”
প্রকৃতি চলছে নিজের নিয়মে।সবাই নিজ-নিজ কাজে ব্যস্ত।আকাশ উঠে ফ্রেস হয়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলো ব্যাংকের উদ্দেশ্যে।আয়রা , টিংকু ভাই এবং আরও কিছু লোক সহ দুটো গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলো তিনশো ফিট বস্তির দিকে।
এদিকে আহির সকাল বেলা বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে।ঈশার কলেজের টাকা যোগার করার জন্য।কিন্তু কোথাও টাকার কোনো ব্যবস্থা হলো না।ঈশা আজ টেনশনে কলেজে যায়’নি।সকালে ঈশার মা এসে বললো!
ঈশার মাঃ কিরে তুই আজ কলেজে যাস’নি?
ঈশাঃ না।
ঈশার মাঃ কেনো যাস’নি? কি হয়েছে তোর?
ঈশাঃ আমার শরীর ভালো লাগছে না আম্মা।
ঈশার মাঃ সে’কি কথা।দেখি জ্বর এলো নাকি তোর!
ঈশার মা দৌড়ে এসে ঈশার পাশে বসলো।তারপর ঈশার কঁপালে হাত রাখলো।ঈশা উঠে বসে বললো!
ঈশাঃ আম্মা!আমি একটু রাজিৎ স্যারের কচিং থেকে ঘুরে আসি।
ঈশার মাঃ তুই কিছু লুকাচ্ছিস না’তো?
ঈশাঃ আমি কিচ্ছু লুকাচ্ছি না আম্মা।
ঈশার মাঃ তোর না পরীক্ষা কাল?
ঈশাঃ হ..হা…হ্যাঁ আম্মা।
ঈশার মাঃ তুই পরছিস না কেনো? আচ্ছা এগুলো বাদ দে।তুই বোস আমি কিছু খাবার নিয়ে আসি তোর জন্য।
ঈশাঃ আম্মা আমি এখন কিছু খাবো না।আমি একটু রাজিৎ স্যারের কচিং থেকে ঘুরে কিছু সাজেশন নিয়ে আসি।
ঈশা আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না ওর আম্মা’কে।উঠে জামাকাপড় পাল্টে একটা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।ঈশার মা বেশ বুঝতে পারলো কিছু নিয়ে চিন্তা করছে ঈশা।”মায়ের কাছ থেকে কিছু লুকানো খুব কঠিন কাজ বটে”।
ঈশা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেই আহির বাড়ির কাছে এসে!বাড়ির পাশে চায়ের দোকানে বসলো।তখনি আহিরের কিছু বন্ধুরা এসে ওর পাশে বসলো।
ভিন্টুঃ কিরে মামা!তোর চেহারার এই হাল ক্যান?
আহিরঃ টাকা লাগবে ইয়ার।
মোটুঃ কত টাকা লাগবে ভাই?
আহিরঃ ২০ হাজার টাকা লাগবে।
বাম্বঃ বাপ রে বাপ!এত টাকা দিয়ে কি করবি?
আহিরঃ ঈশার কলেজের বেতন দিতে হবে।নয়তো কাল ঈশা’কে পরীক্ষা দিতে দিবে না কলেজে।
ভিন্টুঃ এত টাকা এই মুহূর্তে কোথায় পাবো আমরা।আমাদের মতো মানুষের কাছে এখন ২০ হাজার টাকা যোগার করা মানে “জীবন যুদ্ধ” করা।
.
আহিরঃ জানি আমি।কিন্তু ঈশার জন্য আমাকে যেভাবেই হোক যোগার করতেই হবে।মৃত্যুর সাথে লড়াই করে হলেও টাকা যোগার করতে হবে আমাকে।
মোটুঃ ভাই তোর চাকুরির ইন্টারভিউ এর কি হলো?
আহিরঃ সেটা তো ২ তারিখ।তাছাড়া ইন্টারভিউ তে সিলেক্ট হলে চাকুরি পাবো হয়তো।
বাম্বঃ চিন্তা করিস না।আমরা সবাই মিলে একটা না একটা ব্যবস্থা করে ফেলবো টাকার।
আহিরঃ আজকেই টাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
ভিন্টুঃ মামা দেখ!
আহিরঃ বাদ দে!কিছু ভালো লাগছে না আমার।
মোটুঃ আরে বড়-বড় গাড়ি এসেছে দেখ।
আহিরঃ কি দেখব…!
বাম্বঃ ক্যায়া আইটেম হ্যায় ইয়ার।বড়লোকের মেয়ে মনে হচ্ছে।
বস্তির মাঝখানে দুটো বড় গাড়ি এসে থামলো।গাড়ি থেকে আয়রা নেমে দাঁড়ালো।ইঞ্জিনিয়র বস্তির ম্যাপ তৈরি করছে।আয়রা গাড়ির বোনাটের সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো বুকে দু হাত বটে।আহির ভালোভাবে সবটা বোঝার চেষ্টা করলো।আশেপাশে সবাই কানাঘোশা করছে।
—: এরা এখানে কি করতে এসেছে?
—: বুঝতে পারছি না কিছু।
—: আবার ইঞ্জিনিয়র-টিঞ্জিনিয়র নিয়ে এসেছে।
—: আহির ভাই কি হচ্ছে এগুলো? কিছু বলবে না তুমি?
আহিরঃ মুড নেই আমার কারো সাথে কথা বলার।আমি উঠছি এখন।
আহির চায়ের দোকান থেকে বের হয়ে আয়রার সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছিলো।তখনি আয়রার চোখ গেলো আহিরের দিকে।আয়রা একবার মাথা থেকে পাঁ পর্যন্ত দেখলো আহির’কে।কালো জিন্স , নীল শার্ট , বাম হাতে দুটো কালো ব্রেসলেট।চুলগুলো এলোমেলো।বুকের মাঝখানে শার্টের দুটো বোতাল খোলা।ফর্সা বুকে কুঁচকুঁচে কালো পশম স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
.
আয়রার চোখ আহিরের বুকের দিকে যেতেই চোখ সরিয়ে নিলো।দেখেই মনে হচ্ছে গুন্ডা টাইপের ছেলে।আহির নিজের দু হাত দিয়ে শার্টের কলার ঘাড়ের পেছনে সরিয়ে দিলো।যেই আয়রার সামনে থেকে আহির যেতে নিবে!অমনি আয়রা নিজের হাত দিয়ে চুটকি বাজালো আহিরের সামনে।তাতে আহির দাঁড়িয়ে গিয়ে আয়রার দিকে তাকালো।আয়রা চোখ থেকে নিজের সানগ্লাস খুলে হাতে নিলো।
আয়রাঃ হুয়াট? এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো? আগে কখনো মেয়ে দেখো’নি নাকি?
আহিরঃ আমি আপনাকে খেয়াল করিনি।আপনি নিজেই আমাকে দাঁড় করিয়েছেন।
আয়রাঃ হুয়াট দ্যা হেল!আমি যেখানে যাই সেখানে প্রতিটা ছেলে আমার পেছনে ঘোরে।আর তুমি আমাকে ইগনোর করছো?
আহিরঃ আপনাদের মতো বড়লোক মেয়ের দিকে তাকানোর যোগ্যতা হয়তো আমাদের মতো গরিবের নেই।তাই আপনাকে খেয়াল করিনি আমি।
আয়রাঃ ইউ ডেলিভারেটলি ইন্সাল্টিং মি।এনিওয়ে এই বস্তিতেই থাকো নাকি তুমি?
আহিরঃ হ্যাঁ কেনো?
আয়রাঃ তোমাদের এক সপ্তাহ্ সময় দিলাম।এই পুরো বস্তি খালি করে দিতে হবে।
মোটুঃ ক্যান ম্যাডাম!আমাদের বস্তি আমরা কেনো ছাড়বো? এটা আমাদের বস্তি।আমরা এখানেই থাকবো।
আয়রাঃ সাট আপ স্টুপিড।এটা আমার জায়গা।এখানে আমি শপিং কমপ্লেক্স তৈরি করবো।
ভিন্টুঃ আপনার মতো আগে অনেকে এসে বলেছে এটা তাদের জায়গা।চুপচাপ যেভাবে এসেছেন সেভাবেই ফুটুন‌ ম্যাডাম জ্বি।
.
আয়রার জিদ উঠে গেলো ভিন্টুর কথা শুনে।আয়রা কিছু না ভেবেই জেদের বসে ভিন্টুর গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।সেটা দেখে আহির প্রচন্ড রেগে গেলেও!মেয়ে বলে কিছু বললো না আয়রা’কে।
আয়রাঃ ইউ ইডিয়ট!আর একটা কথা বললে হাত-পাঁ ভেঙে দিব।চুপচাপ এক সপ্তাহের মধ্যে জায়গা খালি করবে সবাই।নয়তো সোজা বুলড্রেজার দিয়ে!বস্তির সমস্ত ঘর ভেঙে তছনছ করে দিব।
আয়রার পাশে টিংকু ভাই দাঁড়িয়ে ছিলো।দেয়ালের মতো সোজা হয়ে।আহির ঠাস্ করে টিংকু ভাইয়ের গালে একটা থাপ্পড় মারলো।তাতে টিংকু ভাই গালে হাত দিয়ে লড়ে উঠলো।আয়রা আরোও রেগে গেলো আহিরের উপর।
টিংকু ভাইঃ উরিহ্ মাইরি!বলির পাঠা হয়ে গেলাম শেষমেষ।
আয়রাঃ হাউ ডেয়ার ইউ? তুমি উনাকে মারলে কেনো? [রেগে চিল্লিয়ে]
আহিরঃ গলা নিচে ম্যাডাম।এটা আপনার আলিশান বড় এসি ওয়ালা বাড়ি নয়।এটা আমাদের বস্তি বুঝলেন।
আয়রাঃ ইউ…!
আহিরঃ আপনি আমার বন্ধু’কে মেরেছেন।তাই আমি উনাকে মেরেছি।
টিংকু ভাইঃ বেশ জোর আছে তোমার হাতে ভাই।কি খাও তুমি ভাই প্রতিদিন?
আয়রাঃ টিংকু ভাই তুমি চুপ করবে?
টিংকু ভাইঃ আমি চুপ।
আহিরঃ থাপ্পড় আপনাকে মারা উচিৎ ছিলো।কিন্তু আমি মেয়েদের গাঁয়ে হাত দেই না।তাই আপনার পাশের জন’কে মারলাম।
.
আয়রাঃ ইডিয়ট , ননসেন্স , আনকাল্চার , আনএডুকেটেড পিপল।
আহিরঃ হ্যালো ম্যাডাম!আমরা গরিব হতে পারি।তবে শিক্ষিত গরিব।মিন উই আর অল এডুকেটেড পিপল অন হেয়ার।আই থিংক ইউ অ্যান্ডারস্ট্যান্ড অল-রাইট?
আয়রাঃ চলো টিংকু ভাই এখান থেকে।দেখে নিবো তোমাকে আমি। [আহির’কে উদ্দেশ্য করে]
আহিরঃ ওয়েট ম্যাডাম!এটা আমাদের বস্তি।আমরা এখানেই থাকবো।তাই দ্বিতীয় বার এখানে এসে ঝামেলা করলে!মেয়ে বলে সম্মান টুকু হয়তো আর দিতে পারবো না।আব…মিস্টার হাফ-টিকিট!
আহিরের মুখে “হাফ-টিকিট” নাম শুনে টিংকু ভাই এদিক-ওদিক দেখতে লাগলো।আহির বললো!
আহিরঃ আপনাকে বলছি!টংকি স্যরি টিংকু ভাই রাইট?
টিংকু ভাইঃ আমি কি হাফ-টিকিট দেখতে? [রেগে]
আহিরঃ কথা না বাড়িয়ে আপনার জ্বলন্ত ম্যাডাম’কে নিয়ে চলে যান এখান থেকে।
আয়রাঃ হাহ্!
আয়রা গাড়িতে উঠে টিংকু ভাই’কে না নিয়েই!রেগে একা ড্রাইভ করে গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে চলে গেলো।আহির হাসতে লাগলো টিংকু ভাইয়ের অসহায় চেহারা দেখে।
টিংকু ভাইঃ আমাকে ফেলে চলে গেলো।আকাশ ঠিক বলে আমি গাঁধা।আমি কি সত্যিই গাঁধার মতো দেখতে?
টিংকু ভাইও পেছনের গাড়িতে উঠে চলে গেলো।আহির ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
.
চলবে………

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com