নেশাগ্রস্ত ভালোবাসা । পর্ব -০৬

মিথ্যে কই বললাম? পুরুষ মানুষের ও একটু-আধটু ছুঁকছুঁকানি স্বভাব থাকে,দেখেছ ভালো কথা আবার শুয়ে পরতে যেও না ওই মেয়ের সাথে।।”
ইমান চমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “মানে?”
– “মানে আমি ওমন মেয়ে না যে সামান্য একটি বিষয় নিয়ে সিনক্রিয়েট করবো নিজের পার্টনারের সাথে আর হ্যাঁ,
পুরুষ মানুষের যদি নারীর প্রতি কোনো ফিলিং’স না থাকে তাহলে সে কেমন পুরুষ? নিশ্চয়ই তার পুরুষত্বে কোনো গণ্ডগোল আছে?”
.
– “তাহলে বিকেলে যে সবার সামনে ঝগড়া করলে?”
– “ওটা জাস্ট আই ওয়াস বেবি,বুঝতে হবে…! যাগগে বাদদেও,তুমি কি জানো? আমাদের কিয়াজ আর আকিব ওরা বহুবার নিজের গার্লফ্রেন্ড এক্সচেঞ্জ করেছে একে অপরের সাথে?” ইমান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “মানে?”
– “মানে সিম্পল,কিয়াজ আকিবের গার্লফ্রেন্ডের সাথে শুয়েছে আর আকিব শুয়েছে কিয়াজের গার্লফ্রেন্ডের সাথে।।
এমন টা না যে কেউ বৃষ্টি আর বর্না কে জোর করেছিল ওরা এনজয় করেছে পুরো ব্যাপার টা কে আর তুমি হলে আমার বেরসিক বাবু…!
তোমাকে তো আমাদের বিয়ে অব্ধি অপেক্ষা করতে হবে আরে বাব বাহ…!
আমরা তো দু’জনেই প্রাপ্ত বয়স্ক,দু’জনের’ই শারীরিক চাহিদা আছে,তাহলে সমস্যা কোথায় বেবি? বলো?
কিয়াজ আর আকিবের মতো পার্টনার চেইঞ্জ করতে তো আমি বলছিনা তোমাকে।” কথাগুলো শুনে ইমানের সমস্ত শরীর রাগে রি রি করতে লাগলো,ও আশকারা কে বললো,
– “ড্রাইভার কে বলছি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেবে।।”
আশকারা যাওয়ার পূর্বে ইমান কে ফাস্ট কিসের কথা বললো,ইমান পাত্তা না দিয়ে ওর ড্রাইভারের সাথে বাসায় পাঠিয়ে দিলো ওকে।।
তারপর নিজের ঘরে এসে লাইট অফ করে বিছানায় শুয়ে পরলো,তখন আশকারা ইমান কে ম্যাসেজ করে বললো,
– “বেবি আবার উত্তেজিত হয়ে পরেছ না কি তুমি ওই মেয়েটির কথা ভেবে?” ইমান রেগে গিয়ে আশকারা কে ইগনোর করতে চাইলো,আশকারা তখন কতগুলো ভিডিও পাঠিয়ে বললো,
– “এগুলো দেখো কাজে দেবে।।” ইমান রেগে গিয়ে ফোন করে আশকারা কে ঝাড়ি মেরে বললো,
– “বেয়াদব…!
আমি একবার ও তোকে বলেছি যে আমি ছিলাম ওই ভেন্টিলেটরের কাছে?” আশকারা আশাহত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “তুমি ছিলে না…!” ইমান রেগে গিয়ে বললো,
– “নাহ…! তুই আর ফোন করবি না আমাকে।।” তারপর ইমান কল টা কেটে ছুটে এসে বাথরুমে শাওয়ার ছেড়ে নিচে বসে পরলো মেঝেতে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বললো,
– “হ্যাঁ আমি দেখেছি তো….!
কি হয়েছে তাতে? বাবা’ই তো বললেন ভুল মানুষ করে,আমার মাধ্যমে ছোটো একটা ভুল হয়ে গেছে।”
সকালে মিম খাবার টেবিলে খাবার সাফ করতে করতে ইমান কে জিজ্ঞেস করলো,
– “রাতে কি আপনি ছিলেন ওই ভেন্টিলেটরের কাছে?” ইমান নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো,
– “আমার আপনাকে জন্মদিনের ড্রেসে দেখার শখ হয়নি,নিশ্চয়ই এ বাড়িতে অন্য কারো কাজ হবে? আপনি ইউসা কে জিজ্ঞেস করেছেন? জিজ্ঞেস করুণ ওর কাছে।।” মিম মনেমনে বললো,
– “আশ্চর্য….! তা কি করে সম্ভব? ইউসার সম্পর্ক চলছে গত পাঁচ বছর ধরে আমার কাজিন আমেনার সাথে।।
কিন্তু আমি কিছুতেই মন থেকে ওনাকে (ইমান) সরাতে পারছিনা?
কাজ টা কি তবে উনি’ই করেছে?” ইমান মিম কে উদ্দেশ্য করে বললো,
– “কি হলো বসুন? ভাবনার জগতে পরে থাকলে হবে?” মিম ইমানের চোখে চোখ রেখে বললো,
– “আপনি কিন্তু আমার সন্দেহের উর্ধে না ইমান,সেটা যেন মাথায় থাকে।” ইমান মুচকি মুচকি হেসে বললো,
– “সে নয় বুঝলাম ম্যাডাম…! প্রমাণ করুণ আগে।” মিম চুপচাপ খেতে বসে গেলো কিন্তু সে তখনও বের হতে পারেনি বিষয়টি থেকে।।
.
ইমান খাওয়ার শেষ করে মিমের দিকে তাকিয়ে রইলো,জিজ্ঞেস করলো,
– “মিম কি আপনার অন্য আরেকটি নাম? ইউসা দেখলাম সারাক্ষণ আপনাকে এই নামে ডাকছে?” মিম রেগে গিয়ে ইউসার দিকে তাকালো,নিজের চরম বোকামির জন্য ইউসা’র নিজের ওপরে খুব রাগ হচ্ছে।
মিম মুচকি হেসে বললো,
.
– “আসলে আমার বাড়িতে সবাই আদর করে আমাকে এই নামে ডাকে…।।” ইমান মুচকি হেসে বললো,
– “নাম টা সুন্দর ‘মিশকা’ নামের থেকে ‘মিম’ টা অনেক বেটার মনে হচ্ছে আমার কাছে।।” মিম চুপচাপ খাওয়া শেষ করে উঠে গেলো,ও আজ একটা ফন্দি এঁটেছে।।
দুপুরে ওর গোসল করতে গিয়ে মনে হলো যেন কেউ একজন ওই ভেন্টিলেটরের আশে-পাশে আছে,ও তাই এক কোণে সরে গিয়ে সেই ব্যাক্তির গায়ে পানি ছুড়ে মারলো।।
ইমান ভিজে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে’ই সরে পরলো ওখান থেকে…! মিম দ্রুত’ই ছুটে রুম থেকে বেড়িয়ে বাহিরে চলে এলো,এসে দেখলো ইউভান,ইমান ও ইউসা তিনজন গা মুছতে মুছতে বেরুচ্ছে ঘর থেকে।।
বেচারি একটু দ্বন্দ্বে পরে গেলো,কার কাজ হতে পারে তাই ভেবে ইমান মুচকি হেসে মিমের বিচলিত মুখ টা দেখে ফিসফিস করে বললো,
.
– “মিসস জঞ্জাল…! আপনি যে কলেজের স্টুডেন্ট,আমি সেই কলেজের প্রিন্সিপাল বুঝতে হবে।।”
ইউসা এগিয়ে এসে মিম কে বললো,
– “তুই যাকে খুঁজিস….! আমি সে নই বান্ধবী,বিশ্বাস কর আমাকে।।” মিম মন খারাপ করে নিজের ঘরে চলে এলো,
তারপর কার্ডবোর্ড কেটে নিয়ে সুন্দর করে আটকে দিলো ভেন্টিলেটর টা কে।।
ইমান সুযোগ বুঝে আবারও সেই ভেন্টিলেটর টার কাছে চলে এলো,এসে দেখলো মিম সুন্দর ভাবে আটকে দিয়েছে ভেন্টিলেটরের মুখ টা কে…! ইমান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
– “যাক এবার তাহলে চোখের ‘জিনা’ থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করতে পারবো নিজেকে…!
কিন্তু মনের ‘জিনা’ তা থেকে নিজেকে কি করে রক্ষা করবো?
আল্লাহ তাআ’লা সাহায্য করুণ আমাকে।।” কথায় কথায় মিম ইমা কে বললো,
– “আমি কার্ডবোর্ড দিয়ে ভেন্টিলেটর টা ঢেকে দিয়েছি,তবুও যদি সেই লোকটা কিছু করতে আসে?” ইশি বললো,
– “এতো চিন্তা করিস নাহ…! কোনো না কোনো ভাবে ঠিক ধরা পরেই যাবে।।”
– “তবুও আমার যে কত দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে বলে বোঝাতে পারবো না তোদের দু’জন কে রীতিমতো বাথরুমে যেতে ভয় করছে আমার…!
.
মনে হচ্ছে যেন ভেন্টিলেটরের কাছে কেউ বসে আছে।
বাহিরে দাঁড়িয়ে ইমান মিমের কথা শুনে বিড়বিড় করে বললো,
-“আমি তো ভয় পাইয়ে দিতে চাইছি আপনাকে।।
অফিস থেকে ফিরে এসে রিজওয়ান সাহেব সবাই কে বসার ঘরে ডেকে পাঠালেন।
ছেলে ইমান কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
– “আগামী কাল থেকে তোমার আন্ডারে মিশি (মিম) আমাদের অফিস জয়েন করছে।।
ইমান মুচকি হেসে বললো,
– “কোনো সমস্যা নেই বাবা…! শুধু ভাষন একটু কম দিতে বলো ওনাকে।।
মিম ইমান কে উদ্দেশ্য করে বললো,
– “ইমান,অফিসে আপনি যতই আমার ‘বস’ হননা কেন…!
এই স্বাধীন দেশে,নিজের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা কিন্তু আমার নিশ্চয়ই আছে কাজে’ই একটু সামলে থাকুন প্লিজ,সেটাই অনেক ঠিক আছে?” ইমান শার্টের হাত ফোল্ড করতে করতে বললো,
– “ওহ শিওর…! সে তো সঠিক সময় এলেই দেখা যাবে।।” আশকারা ইমান কে বললো,
– “বেবি,তুমি মেয়ে টা কে কেন কিছু বললে নাহ…!
সে অফিস জয়েন করার আগে’ই তোমাকে থ্রেড দিয়ে গেছে।।
ইমান মুচকি হেসে বললো,
– “জলে থেকে কুমিরের সাথে লড়াই করতে নেই,প্রতিটি জিনিসের আলাদা আলাদা স্ট্রাটেজি আছে।।
মিম পেছনে দাঁড়িয়ে ইমানের কথা শুনে বললো,
– “খবিশ যেন কোথাকার…!
শিওর আর কয়দিন এ বাড়িতে থাকলে আমার এই লোকের ওপর পি.এইচ.ডি করা হয়ে যাবে।”
.
চলবে…
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url