Breaking News

গল্পঃ ভাবির অহংকারী বোন । পর্ব - ৮


মিথিলাঃ না আমি কিচ্ছু শুনবো না।

আমিঃ বস এখানে প্লিজ।
( ওর হাত ধরে আবার বসালাম। মিথিলা চুপ করে বসল)
আমিঃ আমি অনেক আগে থেকেই সাদিয়াকে পছন্দ করতাম..
যেদিন ভাইয়ের জন্য ভাবিকে দেখতে যায়
♥♥অতীত♥♥
সকালে আম্মু ডাকে ঘুম ভাঙলো
আম্মুঃ তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠ।
আমিঃ এত সকালে উঠে কি করব?
আম্মুঃ কি করবি মানে? কালকে কি বলেছিলাম তোকে?
আমিঃ কি বলেছিলে?
আম্মুঃ আমাদের সাথে আজকে যাওয়ার কথা বলেছিলাম না তোকে?
আমিঃ আম্মু আমি তো বলেছি তোমরা যাও আমি যাব না।
আম্মুঃ তোর সমস্যা কি সেটাই তো বুঝলাম না।
আমিঃ সেটা তুমি বুঝবেও না। এখন যাও, আমাকে ঘুমাতে দাও..
আম্মুঃ তাহলে তুই যাবি না?
আমিঃ বললাম তো আমার কাজ আছে।
আম্মুঃ কর তুই তোর কাজ...
আম্মু চলে গেল। আমার কোথাও যেতে ভালো লাগে না। আর এই রোগা শরীর নিয়ে তো কোন মেয়ের সামনেই না। নিজের উপরেই মাঝে মাঝে রাগ হয়।
শালার কোন দোকানে গিয়েও আমার সাইজের শার্ট প্যান্ট পাওয়া যায় না। সবগুলো সেলাই করে চাপিয়ে নিতে হয়।
আমি আর না ঘুমিয়ে উঠে মোবাইল আর হেডফোনটা নিয়ে ছাদে এলাম। আজ বাসায় কেউ থাকবেনা একটু শান্তিতে গেম খেলা যাবে।
কিছুক্ষণ পর আবার আম্মু এল,,
আম্মুঃ পেয়েছিস তো আজকের দিনটা ফ্রী, সারাদিন শুধু মোবাইল টিপবি কেউ কিছুই বলবেনা।
আমিঃ হ্যাঁ, সেটাই তো ভাবছি।
আম্মুঃ যদি খেতে ইচ্ছা করে বা পেটে টান পড়ে তবে একটু কষ্ট করে নিচে গিয়ে খেয়ে আসবেন।
আমিঃ সেটা আর বলতে হবে না। আমি কি এখনো ছোট আছি..?
আম্মুঃ বড় হইলি কবে? এখনো খাবার জন্য জোর করে ডেকে নেওয়া লাগে।
আমিঃ হয়েছে তোমরা যাও তো, আমার খাওয়ার ইচ্ছা হলে খেয়ে নেব।
আম্মুঃ তোর তো সেই ইচ্ছাটা কোনদিনও হবে না। শুধু ফোনে গেম খেললেই পেট ভরে যাবে।
আমিঃ তোমরা যাবে কখন..?
আম্মুঃ এখনই বেরিয়ে পড়বো।
আমিঃ এত সকালে মেয়েদের অফিস খুলে বসে আছে তোমাদের মেয়ে দেখাবে বলে।
আম্মুঃ সে চিন্তা তোকে করতে হবে না। তোরতো ঘুম ভাঙ্গে বেলা 11 টায়।
আমিঃ হয়েছে তোমরা যাও এখন।
আম্মুঃ শরীরের দিকে একটু খেয়াল করে খাবারটা খেয়ে নিস
আম্মু বকবক করতে করতে চলে গেল। আমিও খেলায় মন দিলাম। আম্মু ভাইয়া বড় মামা আর আব্বু চলে গেল ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে।
সকালের খাবার খেতে খেতে খেলাম বেলা বারোটার পর।
মজাই অন্যরকম আজ কলেজে যায়নি।
দুপুরে গোসল করে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে কিছুক্ষন শুয়ে রইলাম। কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছি, সেটা আমার মগজে নেই।
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখে আম্মুরা চলে এসেছে...
আমি আম্মু কখন এলে তোমরা?
আম্মুঃ একটু আগেই।
আমিঃ ভাবীকে কেমন দেখলে..?
আম্মুঃ জানিনা..
আমিঃ দেখে এলে আবার বলছ জানি না..? বলোনা কেমন দেখতে..
আম্মুঃ আমার বলতে সমস্যা আছে।
আমিঃ ভাবিকে কেমন দেখতে সেটা বলতে আবার সমস্যা কিসের..?
আম্মুঃ তোর সকালে যাওয়াতে যে সমস্যা ছিল আমারও সেই একই সমস্যা।
আমিঃ এরকম করছ কেন? আমাকে বলবেনা..?
আম্মুঃ আমার প্রয়োজন মনে হচ্ছে না।
আমিঃ আচ্ছা না বললে। ভাইয়া কোথায়..?
আম্মুঃ জানিনা, তুই কি ভাত খেয়েছিস..?
আমিঃ খেয়েছি।
আম্মুঃ কই.. যতগুলো রেখে গিয়েছিলাম ততগুলি তো আছে। কোথা থেকে খাইলি..?
আমিঃ খেয়েছিলাম ওখান থেকেই..। বলো না ভাইয়া কোথায়..?
আম্মুঃ রুমে আছে হয়তো...
আমি সোজা ভাইয়ার রুমে চলে এলাম এসে দেখি ভাইয়া শুয়ে আছে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে...
আমিঃ কিরে শ্বশুর বাড়ি থেকে খেয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়লি নাকি..? নাকিস্বপ্নেও বউকে দেখেছিস..?
( কোন সারাশব্দ নেই)
আমিঃ সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে গেছিস নাকি..? ( গায়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে)
ভাইয়াঃ এখন কানের কাছে একদম বকবক করবিনা, একটু ঘুমাতে দে শান্তি মত।
আমিঃ তার মানে তুই ঘুমাসনি,,
ভাইয়াঃ তোর জ্বালায় ঘুমিয়েও শান্তি আছে,,
আমিঃ ভাবির কোন ছবি এনেছিস..?
ভাইয়াঃ না, কোন ছবি আনিনি।
আমিঃ দেখা না একটু। দেখালে কি ফুরিয়ে যাবে..?
ভাইয়াঃ....( চুপ)....
আমিঃ সত্যি বলতো ছবি এনেছিস কি না..?
ভাইয়াঃ হ্যাঁ, একটা...
আমিঃ একটু দেখা তো...
ভাইয়া বালিশের তলা থেকে ছবিটা বের করে দিল
আমিঃ বাব্বাহ, ছবি দেখি বালিশের নিচে নিয়ে ঘুমানো হচ্ছে।
ভাইয়াঃ বেশি বকবক না করে ছবিটা দেখে আবার রেখে যাস।
আমিঃ এখানে ভাবী কোনটা..?
ভাইয়াঃ পিছন থেকে যে গলা ধরে আছে...
আমিঃ ও তাহলে এটাই ভাবি...?
ভাইয়াঃ আরে পুরো কথাটা তো বলতে দিবি, ওটা হচ্ছে ওর বোন আর যাকে জড়িয়ে ধরে আছে এটাই হচ্ছে.....
আমিঃ থাক আর বলতে হবে না, বুঝতে পেরেছি। কিন্তু এখানে ওর বোনের ছবি দিল কেন..?
ভাইয়াঃ এটা ছাড়া আর কোনো ছবি ছিলনা দেওয়ার মতো..
আমিঃ ও,, দেখতে তো মাশাল্লাহ। এইটাই কি ফাইনাল..?
ভাইয়াঃ কিছুদিনের মধ্যেই বিয়ের তারিখ ঠিক করবে।
আমিঃ এত তাড়াতাড়ি..?
ভাইয়াঃ কোথায় এত তাড়াতাড়ি, এটা আরও দেরি হয়ে গেল।
আমিঃ তোমার তো আর তর সইছে না।
ভাইয়াঃ তোর ছবি দেখা হয়ে থাকলে ছবিটা রেখে যা এখন।
আমিঃ আচ্ছা যাচ্ছি যাচ্ছি, মনে হয় ছবিটা আমি নিয়ে যাব, ঢং দেখলে বাঁচিনা...
আমি পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে একটা ফটো তুলে নিলাম। ভাইয়ার বালিশের কাছে ছবিটা দেখে আমার রুমে চলে আসি।
এই মেয়েকে তো আমি আগে দেখেছি, ভাবির বোন মানে হবু ভাবীর বোন। আমরা একই কলেজে একই ক্লাসে পড়ি। কখনো সামনাসামনি দেখিনি বা কথা হয়নি তাই একটু চিনতে সমস্যা হচ্ছিল আর এমনিতেও আমি মেয়েদের সামনে খুব কমই যেতাম।
একটু পর বন্ধুদের ফোন আসাতে বেরিয়ে পড়লাম খেলার উদ্দেশ্যে।
দেখতে দেখতে বেশ কয়েকটা দিন পার হয়ে গেল এর মাঝে ভাইয়ের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়ে গেছে।
বেশ ভালই লাগছিল সামনে একটা অনুষ্ঠান আছে বলে কিন্তু আমার আনন্দটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। যখনই মনে পড়লো শরীরের কথা আবার মন বেদনায় ভরে গেল। অনুষ্ঠানে তো অনেক আত্মীয়স্বজন আসবে আমার এই চেহারা আর লিখলিকে শরীর নিয়ে তাদের সামনে যেতে লজ্জা লাগে। বিয়ের আর মাত্র 6 দিন বাকি, ভাবলাম এই 6 দিনেই শরীরের যত্ন নিয়ে, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করে একটা ভাবে আসতে হবে।
কিন্তু এই 6 দিনে কি করা যায়..
তবুও চেষ্টা করতে তো সমস্যা নেই,
আর এমনিতেও নিজের ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা। বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও যেতেও পারবো না।
শেষমেশ অনেক কষ্ট করে ছয়দিনের রুটিন টা শেষকরলাম।
সকাল-বিকাল মুখে সাবান ফেসওয়াশ ইত্যাদি ঘষতে ঘষতে যেন মুখের খোঁসা উঠে গেছে। এখন মনে হচ্ছে আরো কিছুদিন সময় পেলে ভালো হতো।
কিন্তু যখন সময় থাকে তখন মনে হয় সময় তো আছেই পরে করা যাবে।
এভাবেই সকাল সাজে ঘষতে ঘষতে বিয়ের দিন চলে এল। ভালো লাগে যখন মনে হয় যে একটা সুন্দরী ভাবির বোন আছে, কিন্তু উনার সামনে যেতেই তো লজ্জা করবে।
যাইহোক বিয়ের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নিলাম।
অনেকেই চলে এসেছে বাসাটাও সাজানো হয়েছে। একে একে সবাই তৈরি হয়ে নিচ্ছে বরযাত্রী যাওয়ার জন্য।
আমার একবার মনে হচ্ছে যাব না আবার মনে হচ্ছে যাব, নাকি কি করব কেমন একটা দোটানার মধ্যে পড়ে গেলাম।
শেষে বন্ধুদের জোরাজুরিতে যেতেই হলো সবাই গাড়ি করে ভাবিদের বাসার সামনে এসে থামলাম। কেমন যেন আনইজি ফিল হচ্ছে এতো মানুষের সামনে যেতে হবে এটা ভেবে..
সাগরঃ কিরে তুই কি গাড়ির মধ্যেই থাকবি নাকি নিচে আসবি..?
আমিঃ আমি না গেলে হয়না..?
সাগরঃ পাগল হলি নাকি..?
আমিঃ আমার যেতে ইচ্ছা করছে না।
সাগরঃ শালা ভাওতাবাজি বাদ দিয়ে নেমে আয়, এতো মানুষের মধ্যে টানাটানি করাস না ।
রাহাতঃ তারাতারি নেমে আয় দেখ কত সুন্দর সুন্দর মেয়েরা আসছে।
সাগরঃ তোর তো শুধু এক ধান্দা, মেয়েদের পিছনে ঘুরা।
রাহাতঃ শুনলাম তোর নাকি একটা বেয়াইন আছে,..?কোথায় একটু আলাপ করিয়ে দিলিনা।
আমিঃ আমিতো এখনো দেখি নি, তোর সাথে কিভাবে আলাপ করিয়ে দেবো।
রাহাতঃ শালা এখনো আলাপ করিস নি..?
আমিঃ পাব কোথায় যে আলাপ করব..?
সাগরেঃ তোরা কি এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলবি নাকি ওইদিকে যাবি..?
আমরা তিনজনে একসাথে ভিতরে চলে এলাম। একটু আগেই ভাইয়াকে গাড়ি থেকে নামিয়ে গেটের সামনে বসানো হয়েছে।
সবাই গেটের সামনে আনন্দ করছে, সাগর আর রাহাত ওখানেই আছে। আমাকেও নিয়ে গিয়েছিল আস্তে করে ওখান থেকে কেটে পড়েছি। গেটের ঝামেলার ইতিহাস সবাই জানেন।
ঝামেলাটা মিটিয়ে সবাই ভেতরে প্রবেশ করল। আমিও আস্তে আস্তে ভিতরে চলে এলাম। সবার থেকে আলাদা হয়ে বেড়াচ্ছি। এখন মনে হচ্ছে আমিও যদি ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করতাম শরীরের যত্ন নিতাম তাহলে সবার সাথে গিয়ে মজা করতে পারতাম।
শুধু চেহারা খারাপ বলে যে কারো সাথে কথা বলা যাবে না বা কারো সামনে যাওয়া যাবে না এটা কিন্তু নয়। তবে আমার নিজের কাছেই খারাপ লাগে শুধু মনে হয় লোকে কি বলবে।
লোকে কি বলবে এটা ভেবেই আরো বেশি খারাপ লাগে।
যাই হোক আমি আমার মত এক পাশে একটা চেয়ারে বসে আছি।
হঠাৎ দেখি সাগর আর রাহাত, আর ওদের সাথে তিনটা মেয়ে কথা বলতে বলতে আমার দিকেই আসছে।
আর ওই তিনটার মধ্যে একটা হচ্ছে ভাবীর বোন। নিজের বোনের বিয়ের জন্য অনেক সুন্দর করে সেজেছে। যে কেউ দেখলে প্রেমে পড়ে যাবে।
আমি বুঝতে পারলাম না ওরা ওদেরকে এদিকে আনছে কেন..?
কোন দিশা না পেয়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করে মাথা নিচু করে ফোন চাপছি। আমার কেমন জানি ভয় ভয় লাগছে। ওরা যত কাছে আসছে ততই বুকের ধকধকানি টা বাড়ছে।
সাগরঃ কোথায় কোথায় বেড়াচ্ছিস তুই..?
আমিঃ এইতো এখানেই ছিলাম।
সাগরঃ তোর ভাইয়ের বিয়ে, আর তুই সবার থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছিস..?
আমিঃ কোথায় আলাদা বেড়াচ্ছে, আমি তো এখানেই..
রাহাতঃ হয়েছে, আর এই হচ্ছে সাদিয়া আমাদের সাথে একই কলেজে পড়ে আর এটাই তোর বিয়াইন।
আমি একবার তাকিয়ে আবার মাথাটা নিচু করে নিলাম
রাহাতঃ সাদিয়া তোর বিয়াই কে দেখতে চেয়েছিলি এইযে এটাই।
(আমার দিকে তাকিয়ে তিনটা মেয়েই মুচকি হাসছে)
একটা মেয়ে বলল....
- সাদিয়া ওই যে দেখ তোর বিয়াই। দেখতে চাইছিলি না..? দেখ।
সাদিয়াঃ আমার দেখা হয়ে গিয়েছে। আর দেখবো না। তোরা থাক আবার দেখা হবে..
সাগরঃ আচ্ছা যা...
ওরা তিনজন হাসতে হাসতে চলে গেল।
নিজের কাছে অনেক খারাপ লাগছে
সাগরঃ কিরে তোর আবার কি হলো..?
আমিঃ তোরা তোদের এখানে নিয়ে আসলি কেন?
সাগরঃ ওরাই তোকে দেখতে চাইছিল, তাই,,
আমিঃ ওরা দেখতে চাইলো আর নিয়ে এলি?
রাহাতঃ তুই এরকম করছিস কেন?
আমিঃ আচ্ছা বাদ দে, তোরা যা হাটাহাটি কর আমি এখানেই আছি.
সাগরঃ এখানে থাকবি মানে? চল আমাদের সাথে।
আমিঃ না তোরা যা আমার ভালো লাগছে না ।
রাহাতঃ তোর ভালো লাগে কোনটা একটু বলবি?
আমিঃ কিছুই ভালো লাগে না, তোরা যা আমি এখানেই আছি__
ওরা আর কথা না বলে চলে গেল। আমি আমার মত বসে আছি ।
হঠাৎ দেখি সাদিয়া অন্য একটা মেয়েকে আমায় ইশারা করে দেখাচ্ছে........
অ্যাসাইনমেন্ট লেখার মাঝেও গল্প দিচ্ছি। গল্পের পর্ব ছোট হলে কিছু মনে করবেন না...
.
চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com