ভালোবাসি প্রিয় । পর্ব - ০৩
বা*স*র ঘরে একহাত ঘোমটা টেনে বসে রয়েছি।
কিছুক্ষণ আগে নাদিয়া আপু আমাকে এই ঘরে রেখে গিয়েছে,
আর যাওয়ার সময় আমার কানে কানে কিসব কথা বলে গেল যার আগা মাথা কিছুই বোধগম্য হলো না আমার।ভাবতে লাগলাম আপু ঠিক কি বলে গেল?
এরই মধ্যে দেখি বাবার ফোন। হ্যাঁ বাবা বল।
কুয়াশা আমি শীতলের আম্মা। তোমার জন্য মনটা কেমন করছিল।মনে হচ্ছে আমি কোন বড় সম্পদ হারিয়ে ফেলেছি। ভেতর টা হাহাকার করছে আমার।
আমি ও আপনাদের খুব মিস করছি।
মা ঐখানে তোমার কোন সমস্যা হচ্ছে না তো?
না, এইখানে সবাই অনেক ভালো। কিছুক্ষণ আগে রাজের আম্মা নিজের হাতে আমাকে খাইয়ে দিয়েছেন। রাজের বাবা, মা খুব ভালো।
একটা কথা বলি মা। তুমি সবার সামনে রাজের নাম ধরে ডেক না।
কেন কোন সমস্যা?
না মা কোন সমস্যা নেই। তবে মুরব্বিরা স্বামীর নাম ধরে ডাকা বিষয় টা স্বাভাবিক ভাবে নেয় না।অথচ স্ত্রীর নিকট স্বামী হলেন সবচেয়ে বড় বন্ধু। সবচেয়ে আপনজন। তাই স্ত্রী ও স্বামীর নাম ডাকতে পারবে।এতো কোন দোষ নেই।এতে করে দুইজনের মধ্যে বন্ধুত্ব বৃদ্ধি পায়।
"হযরত জায়নাব(রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে তার স্বামী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এর নাম ধরে কথা বলেছিলেন"।
[বুখারি ১৪৬২]
অথচ আমাদের দেশে স্বামীর নাম ধরে ডাকলে সেটাকে বেয়াদবি বলা হয়। শ্বশুর শ্বাশুড়ি মুরব্বিদের সামনে ডাকলে তো কোন কথাই নেই।
ইব্রাহিম আঃ বউ তার স্বামীর নাম ধরে ডেকছেন।
"ইয়া ইব্রাহিম! আপনি কোথায় যাচ্ছেন"?।
তার স্বামী একজন নবী। তারপর ও তিনি তার স্বামীর নাম ধরে ডেকেছেন,আর ইব্রাহিম আঃ কোন প্রতিবাদ ই করছেন না।
স্বামীর নাম ধরে ডাকাটাই নিয়ম, স্বামীর নাম ধরে ডাকাটাই হাদিস, বুখারি শরিফের হাদিস।
ঠিক আছে বুঝতে পেরেছি।
হঠাৎ দরজায় খটখট শব্দে ধ্যান ভাঙল আমার।
"আসসালামুয়ালাইকুম "
মিষ্টি একটা কণ্ঠে সালাম শুনে সামনে তাকিয়ে থমকে গেলাম আমি। এ আমি কাকে দেখছি? এ রাজ হতেই পারে না।
ওয়ালাইকুম আসসালাম।
আপনি কি রাজ?
কেন কোন সন্দেহ আছে ?
আমার সত্যি বিশ্বাস হচ্ছে না যে এইটা রাজ। আমার ভাবনার রাজের সাথে এই রাজের কোন মিল নেই।রাজ ছয় ফুট লম্বা, গায়ের রঙ আমার থেকে ও ফর্সা, মুখে চাপ দাড়ি,দাড়িতে যে কাউকে এতো সুন্দর লাগতে পারে হয়তো রাজকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না।এক কথায় সুদর্শন পুরুষ বলা যেতে পারে।
"এই যে মিসেস"কোথায় হারিয়ে গেলেন? সেই কখন থেকে ডেকে চলেছি।
কিছু বলছেন?
বলছি কেমন আছেন মিসেস রাজ?
.
আপনাদের সাথে পরিচয় হবার আগে ভালো ছিলাম।
যবে থেকে আপনাদের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে,
তারপর থেকে আমার জীবন টা এলোমেলো হয়ে গিয়েছে।
আমি কি খুব বেশি অন্যায় করে ফেলেছিলাম আপনাদের উপকার করে?
উপকারের বিনিময়ে আমার স্বপ্ন গুলো ভেঙ্গে দিলেন। বিয়ে নিয়ে কতো স্বপ্ন ছিল আমার।
একজন বিসিএস ক্যাডার কে বিয়ে করব।নাচ, গান হইহুল্লোর , জমকালো আয়োজন হবে,
হাজার হাজার সেলফি তুলব,টিকটক ভিডিও করব।
শুধু মাত্র আপনার জন্য আমার স্বপ্ন পূরন হলো না। আমার বাবা কে আপনি হাত করে নিলেন।
আমার তো মনে হয় আপনি আমার বাবার সম্পত্তির জন্য আমাকে বিয়ে করছেন।
না হলে একজন মাদ্রাসার শিক্ষক আমার মতো উ*শৃ*ঙ্খ*ল মেয়েকে কেন নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করতে চাইবে?
আমি যতটুকু জানি আপনি নিজের ইচ্ছায় আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন।
আপনার বাবা তো আমাকে বলল , আপনার এই বিয়েতে কোন আপত্তি নেই।
আমি সত্যি যদি জানতাম আপনি এই বিয়েতে রাজি না।
আমি কখনো আপনার মতের বিরুদ্ধে আপনাকে বিয়ে করতাম না।
আপনি সব জানেন। এখন ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা করছেন।
একে তো আপনার মতো লোকের সাথে বিয়ে হলো ।তাও আবার কোন প্রকার আয়োজন ছাড়া।
দেখুন"বিয়ে শুধুমাত্র একটি ব্যয়বহুল অনুষ্ঠান আর হাত ধরে কয়েকটি সেলফি তোলার নাম নয়।
এটি হলো পারস্পরিক ত্যাগ প্রশংসা আনুগত্য ভালোবাসা, এবং সম্মানের মাধ্যমে একটি সুন্দর বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া"।
আর এতো হাইপার হবার দরকার নেই মিসেস রাজ। আপনার বাবার সম্পত্তির প্রতি আমার বিন্দুমাত্র লোভ নেই। এই টা রাখুন। আপনার দেনমোহর এর টাকা ।আর বাসর রাতের গিফট।যদি কখনো ইচ্ছে হয় খুলে দেখবেন। হয়তো দামি কিছু দিতে পারি নি।তবে এতে আমার অনেক ভালোবাসা মিশ্রিত আছে।
যেইখানে আমি বিয়েটাই মানি না সেইখানে দেনমোহর পরিশোধ করার কি প্রয়োজন আছে?
.
তুমি মানো বা না মানো বিয়ে টা তো হয়েছে।
মুসলিম বিয়েতে দেনমোহর হচ্ছে স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীর একটা বিশেষ অধিকার।
দেনমোহর সাধারণত বর ও কনের সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।
দেনমোহর হিসেবে যে কোন পরিমাণ অর্থ নির্ধারণ করা যায়।
কিন্তু কোন অবস্থায়ই স্বামী নূন্যতম ১০ দিরহাম বা সমপরিমাণ অর্থ অপেক্ষা কম
নির্ধারণ করতে পারবেন না। মুসলিম আইন অনুযায়ী দেনমোহর বিয়ের একটি অন্যতম শর্ত।
দেনমোহর স্বামী কর্তৃক স্ত্রী কে প্রতিশোধ যোগ্য একটি আইনগত দায়।
স্বামী যদি স্ত্রী কে তা*লা*ক দেয় বা স্ত্রী যদি স্বামী কে তা*লা*ক দেয় বা
স্বামীর যদি মৃ*ত্যু ঘটে তবে অবশ্যই দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে।
দেনমোহর পরিশোধ করা ইসলামে বাধ্যতামূলক।
দেনমোহর পরিশোধ না করলে শেষ বিচারের দিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
দেনমোহর পরিশোধের বিকল্প কিছু নেই।তবে স্ত্রী যদি মাপ করে দেন সেক্ষেত্রে মাপ হতে পারে।
সুরা নিসার ৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে,"
আর তোমরা স্ত্রীদের কে খুশি মনে মোহর দিয়ে দাও, তারা যদি খুশি হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়,
তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করো।
দয়া করে আপনার লেকচার বন্ধ করেন।ইউ নো আমি হিসাববিজ্ঞানের ছাত্রী।
জ্ঞানে, বুদ্ধিতে কোন অংশে কম নয় আমি।
তাই আপনার মতো অশিক্ষিত লোকের থেকে আমি কোন জ্ঞান নিতে চাচ্ছি না।
.
আমি তোমাকে কোন জ্ঞান দিচ্ছি না। তোমার প্রাপ্য টা তোমাকে বুঝিয়ে দিতে চাচ্ছি।
চল আমাদের নতুন জীবন শুরু করার আগে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করি।
যদিও স্বামী স্ত্রী বা*স*র রাতে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোন হাদিস পাওয়া যায় নি ,
তবেএ ব্যাপারে সাহাবী এবং পূর্বসূরিদের আমল রয়েছে।
সুতরাং কেউ যদি তা পড়ে তাহলে তাতে কোন আপত্তি নেই ইনশাআল্লাহ।
অনেক আলেম ও এই দুই রাকাত কে মুস্তাহাব বলেছেন।
আমার নামাজ পড়া লাগবে না । আপনি একাই পড়েন।
আসলে আমি শেষ কবে নামাজ পড়েছি তা মনে ও নেই।
শুধু রমজান মাস আসলে নামাজ পড়তাম, রোজা রাখতাম।
কিন্তু রমজান মাস চলে গেলে আবার সেই আগের জীবনে ফিরে আসতাম।
অতঃপর রাজ একাই নামাজ পড়তে চলে গেল। প্রচুর ঘুম পেয়েছে আমার।
কিন্তু সমস্যা হলো আমি ঘুমবো কোথায়?ঐ লোকটার সাথে এক বি*ছা*না*য়? মোটেই না।
কিন্তু রুমে একটা মাত্র সিঙ্গেল সোফা।
যেইখানে পুরা একটা বিছানা আমার একার লাগে ,
সেইখানে এই সিঙ্গেল সোফা তে ও ঘুমতে পারব না।
এরই মধ্যে রাজের নামাজ পড়া শেষ হয়ে গেল।
"রাজকে জিজ্ঞেস করলাম " আমি ঘুমবো কোথায়?
আমার বু*কে।
.
চলবে...
রোমান্টিক বালোবাসার গল্প একবার পড়লে বার বার পড়তে মন চায়
ReplyDelete