Breaking News

গল্পঃ কুমারী



১৮১৬সাল

বাসর ঘরে বসে আছে চন্দ্রমল্লিকা, পরনে ভারী ভারী গহনা, গহনার ভার যেনো মল্লিকা সহ্য করতে পারছে না... মাত্র ১২বছর বয়সে মল্লিকা কে সাজিয়ে গুছিয়ে রজনী গন্ধা ফুলে সাজানো বিছানায় বসিয়ে দিয়ে গেছে তার শাশুড়ী। দিবে নাই বা কেনো? জমিদার বাড়ির বউ সে...
জমিদার ভল্লব রায় এর দ্বিতীয় সন্তান মহেশের সাথে বিয়ে হয়েছে মল্লিকার,
মল্লিকা যে বড় ভাগ্যবতী এমন নিচু জাতের মেয়ে হয়ে ও ৮গ্রামের জমিদারের ছেলের সাথে
বিয়ে হয়েছে তার, এটা ভাগ্য নয়তো কি?
মহেশ এর বয়স ৩৮বছর আগে একটা বিয়ে হয়ে ছিলো কিন্তু কি কারণে যেনো বউ টা পালিয়ে গেছে
তাইতো এত ঘটা করে বিয়ের আয়োজন... চন্দ্রমল্লিকার মা মৃণালিনী দেবী,
একটা ই কন্যা তার এই তল্লাটে জমিদার বড়ো মায়া করে আশ্রয় দিয়েছে তাকে পরিবর্তে তার
মেয়ে কে পুত্রবধূ হিসেবে চেয়েছে ভল্লোব রায়।
মহেশ জমিদারের দ্বিতীয় ছেলে বড় ভাই অভিজিৎ সিংহ রায় আর ছোট ভাই
নিখিল আরো 2টা ছোটো বন আছে একটা পৌলভি আর একটা শিউলী...
মহেশের মা ঐশ্বর্য্য রায় যেমন তার নাম তেমন তার রূপ গুন এই তল্লাটে জমিদারের বউ
মনে ই একটা নাম উঠে আসে আর সেটা হলো ঐশ্বর্য্য রায়,
যেমন তার দয়াময় মণ তেমন তার শিক্ষা আচরণ খুব নিয়মে বেধে রেখেছে নিজ সংসার।
চন্দ্রমল্লিকা কে বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে ঐশ্বর্য্য বললেন আজ থেকে তুমি এই বাড়ির
বউ অনেক নিয়ম মানতে হবে তোমায়।
পাস থেকে ঐশ্বর্যর জা বলে উঠলো বৌদি জেনে শুনে কেনো মেয়েটার জীবন এভাবে জলে ফেলছো?
ঐশ্বর্যর ধমকের সুরে, বুঝলে পার্বতী আমার নাতি চাই সংসারে আমার প্রদীপ
দরকার তাইতো এমন কচি বউ এনেছি... পার্বতী জমিদারের ভ্রাতা বউ বেশ চটপটে সভাবের।
ঐশ্বর্যর কথার কিছু ই বুঝলো না মল্লিকা কারণ নারী পুরুষের সম্পর্ক বাচ্চা
এসব জ্ঞান এখনও হয়নি তার.... ঐশ্বর্য্য মল্লিকার মুখভঙ্গি দেখে বুঝতে পেরে বললো,
ও কিছু না মা তোমার মা ও এই বাড়িতে থাকবে তুমি কোনো চিন্তা করো না
এখানে ভালো খেতে পারবে ভালো থাকতে পারবে...
ভালো খেতে পাবে বলে মল্লিকা খুশি হলো ছোটো মেয়ে মল্লিকা জানে ই না
তার সাথে কি হতে চলেছে।
অতঃপর মহেশ এর প্রবেশ, মহেশ কে দেখে ওর ভাবী এগিয়ে আসলো কিরে মহেশ
তোর মায়ের না হয় মাথার ঠিক নেই তাই বলে তুই কি করে পারলি!?
মহেশের বড় ভাই এর বউ পালক খুব উচ্চ বংশের মেয়ে হলেও মনে কোনো অহংকার নেই।
ভাবির কথায় মহেশ ওর ভাবির কানের কাছে গিয়ে বললো, সব বুঝি ভাবী কিন্তু প্রথম
দেখাতে চন্দ্রমল্লিকার প্রেম পরে গেছি...
পালক: যাক ভালো যাচ্ছিস জা তবে মনে রাখিস মল্লিকা বাচ্চা মেয়ে আমি কি বলেছি
আসা করি বোঝার বয়স তোর হয়েছে।
মহেশ: মুচকি হেসে মাথা নেড়ে সায় দিলো, আসি ভাবী।
পালক: আয়।
বাসর ঘরে মহেশের প্রবেশ দেখে সবাই বেরিয়ে গেলো, মল্লিকা সবাইকে যেতে দেখে বললো
মা কোথায় আমি মায়ের কাছে যাবো? মল্লিকার কথা শুনে পার্বতী মল্লিকার
কাল টিপে দিয়ে বললো আজ যে তোমায় মহেশের কাছে থাকতে হবে মা।
পার্বতীর মুখে এমন কথা শুনে মল্লিকা ঘাবড়ে গেলো! কান্না ভরা চোখে,
আমি মায়ের কাছে যাবো কেনো আপনারা আমাকে এভাবে আটকে রেখেছেন?
ঐশ্বর্য্য শান্ত গলায়, চন্দ্রমল্লিকা মা আমার তোমার মা আছে তবে সে তোমাকে
এখানে থাকতে বলেছে সে শীঘ্রই চলে আসবে তুমি যদি কান্না করো তবে যে সে আর কোনো
দিনো আসবে না, বলে থামলো ঐশ্বর্য্য।
মল্লিকা এমন কথা শুনে ভয়ে ঘাবড়ে গেলো চুপসে গেল একদম,,,,,
সবাই একে একে বেরিয়ে যাচ্ছে এখন শুধু মহেশ দাড়িয়ে আছে!
মল্লিকা ভয়ে গুটিসুটি মেরে বসে আছে.... মহেশ দরজা আটকে এসে চন্দ্রমল্লিকার সামনে এসে দাড়ালো। আমি মহেশ আমাকে ভয় পেও না আজ থেকে আমি তোমার বর তুমি এই বাড়ির বউ।
কথা গুলো কিছুই ঢুকলো না মল্লিকার মাথায়! মল্লিকা গুটিসুটি মেরে ফুপিয়ে কাদঁছে....
মহেশ এগিয়ে এসে বিছানায় সামনে দাড়ালো,
মল্লিকার ধারণাও নেই ওর সাথে কি হতে যাচ্ছে...
.

চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com