বিরহ মিছিল । পর্ব - ২২



বিধ্বস্ত অবস্থায় বসার ঘরে ফ্লোরে বসেই আদিল। চুল উষ্কখুষ্ক। চোখে মলিনতা পরিলক্ষিত। দুর্বল গা ফ্লোরে লুটবে লুটবে অবস্থা। মাথা দপদপ করছে ব্যথায় আদিলের।
গজগজ মুখে আমেনা বাহির থেকে ঘরে প্রবেশ করেই, সর্বপ্রথম ডাইনিং রুমে এলেন।
তৎপর সব রাগ টেবিলে উপর ঢেলে মিষ্টির কাটুন ছুঁড়ে ফ্লোরে ফেললেন।
টেবিলে থাকা কাঁচের গ্লাস কিংবা প্লেট রেহাই পেল না আমেনার ক্রোধে।
আরিফ আহমেদ দৌড়ে আমেনার হাত ধরে রুখতে চেষ্টা করলেন।
তবে সর্বশেষে পরাজয় বরণ করতেই হলো উনাকে।
ডাইনিং ঘরের লাগোয়া বসার ঘর।
বসার ঘর থেকেই ডাইনিং রুমের সব কিছু লক্ষ করা এবং দেখা যায়৷
আমেনার চেচামেচি আদিলের কানের ধারে নিরবে পৌঁচ্ছেছে।
আদিল দুর্বল চিত্তে বহু কষ্টে চেচামেচির স্থির স্থানে তাকালো।
আমেনা রোষিত কন্ঠে একের পর এক বুলি আওড়ে যাচ্ছেন।
আরিফ আহমেদ তাকে শান্ত করার প্রয়াস চালাচ্ছেন। আমেনার এমন রেগে যাওয়ার কারণ
আদিল ধরতে পারছে না। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা থেমেছে মনে হচ্ছে আদিলের।
আমেনার চোখ চকিত ঝগড়ার মধ্যে আদিলের দিকে গেল। মুহূর্তে চোখ যুগল অনড়।
সহসা আমেনা চেচামেচি থামার কায়দা বুঝলেন না আরিফ আহমেদ।
স্ত্রীর স্থির দৃষ্টি অনুসরণ করে হতভম্ব উনি!
আমেনা বড় বড় কদমে বসার ঘরের দিকে এগিয়ে ভর্ৎসনা কন্ঠে আদিল কে শুধালেন,
" আমার মেয়ে কে ভাগিয়ে নিয়ে এখানে সাহসিকতার পরিচয় দিতে এসেছ?
এটা যদি ভেবে থাকো তুমি তবে ভুল৷ আমি এখুনি তোমায় পুলি°শে দিবো।"

প্রতুত্তরে দুর্বল চোখে তাকালো আদিল। কোন কিছুতে আদিল বোধগম্য নয় আদিলের
অবস্থা দেখে আরিফ আহমেদ ঠাউর করতে পারলেন।
তবে স্ত্রী কি বোঝানোর সার্ধ আছে। তবুও চেষ্টা করলেন।
" আহা আমেনা মুগ্ধতা পালিয়েছে আদিল জানবে কি করে?
আদিল তো সেই সময় পরিক্ষার হলে ছিল।"
আমেনার মস্তিষ্কে যায় কথাটি। অযুক্তি নেই স্বামীর কথায়৷ নিজের রাগ ঝাড়তে বললেন,
" তুমি একদম চু°প করে থাকবে। তোমার জন্য আমার মেয়ে এই বয়সে বেঁকেছে। "
আদিল ফ্যালফ্যাল নয়নে সবই দেখলো।
এত এতো কথার মধ্যে একটি কথায় মস্তিষ্কে ঢুকলো মুগ্ধতা পালিয়েছে৷
বিয়ের আগে নাকি পরে! অল্প আশার আলো খুঁজে পেল আদিল।
দুর্বল কন্ঠে কিছু বলতে ঠোঁট নাড়িয়ে বলবে তন্মধ্যে আমেনা ডিক্লার দিলেন,
" হতচ্ছাড়ি কে হাতে পাই একবার! তারপর বোঝাব কত ধানে কত চাল।"
বসার ঘর দ্রুত প্রস্থান করলেন আমেনা। রাগ ঝাড়তে ঠিক মতো পারছেন না এখানে।
বসার ঘরে রইলেন আরিফ আহমেদ, আদিল।
আদিলের মুখ দেখে মনের অবস্থা পড়তে পারলেন অনায়াসে আরিফ আহমেদ।
তিনি আদিলের পাশে এসে দাঁড়ালেন। শুধালেন,
" তোমার প্রশ্ন জাগছে নিশ্চয়ই? মুগ্ধতা কোথায়? বিয়ে হয়ে গেল কিনা? "
আদিল শুধু মাথা দুলাল৷ আরিফ আহমেদের ওষ্ঠ চওড়া হলো৷
প্যান্টের পকেট হতে এক টুকরো ভাগ করা কাগজ আদিলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
" এখানে তোমার সব প্রশ্নের উত্তর আছে।"
আদিল কম্পিত হাতে কাগজটি হাতের আঁজলায় নিলো।
আরিফ আহমেদ অত্যল্প আদিলের দিকে ঝুঁকে আদিলের পিঠ চাপড়ে বললেন,
" আমার মেয়ে ভুল চয়েস করেনি।"

আদিল ধড়ফড় করে কাগজটি মেললো। কাগজে লেখা দেখে বোঝা গেল এটা মুগ্ধতার হাতের লেখা।
এটাকে চিঠি বলা চলে কিনা আদিল জানে না। শুরুতেই মুগ্ধতার ছেলেমানুষী আচরণ,
"খুব তাড়াহুড়োয় আছি মা। চিঠিটাও তাড়াহুড়োয় লিখছি। আমি পালাচ্ছি৷
আমার দাঁড়ায় সম্ভব না তোমার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করা।
তুমি যখন চিঠিটা পড়বে আমি তখন পগারপার।
তোমার হাত নিশপিশ করবে এই চিঠি পড়তে পড়তে।
মন চাইবে আমাকে কয়েকটা থা°প্পড় কিংবা পিঠে কি°ল বসাতে।
কিন্তু তোমার এই আশা তখন 'সে গুড়ে বালি'!
আমি অবলা মেয়ে না যে যাকে তাঁকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিবে,
আমি সাচ্ছন্দ্যে বরণ করে নিবো তাকে। আত্মহত্যা মহাপাপ।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া মহিলা এসব জেনে নিশ্চয়ই ইহকাল পরকাল হারাবে না নিজ ইচ্ছায়। স্যরি মা।"শেষোক্ত বাক্যটি পড়তে পড়তে আদিলের ঠোঁটের প্রান্ত প্রসার হলো।

ফ্লাটের সদরদ্বারে এলো আদিল। চোখমুখ অশান্ত।
মন খচখচ করছে মুগ্ধতা এই মুহূর্তে কোথায়! দুশ্চিন্তা নিয়ে কলিং বেলের সুইস চাপলো আদিল।
মিনিট হওয়ার পূর্বে দরজা খুলে গেল। আদিল চমকপ্রদ দৃষ্টিতে দরজার ভিতরে তাকালো।
স্বয়ং মুগ্ধতা দরজার ভিতর!
আদিল হুড়মুড় করে ভিতরে ঢুকে ভয়ংকর এক কারবার করে বসলো।
মুগ্ধতা হতভম্ব, কিংকর্তব্যবিমূঢ়! অতঃপর
মুগ্ধতার কপোলে দু'হাত আদিল রেখে উৎকন্ঠা স্বরে শুধালো,
"আমরা আজই এখনি বিয়ে করবো মুগ্ধ।"

চলবে...
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url