Breaking News

গল্প: ত্যাগ । পর্ব- ০৭

আকাশ তার কথা হেসে উড়িয়ে দিলো, নেহা তাকে ঝাড়ি মে'রে বলে উঠলো,

- "দাঁত কেলিয়ে কোনো লাভ নেই মা আমাকে বরণ না করলে,আমি কিন্তু ওভাবেই আবারও ফিরে আস
-ব আমার বাপের বাড়িতে। তখন তুমি আমার স্বামী হও আর যেই হও না কেন যেন আমি তখন তাকিয়ে ও দেখবো না তোমার দিকে।" ওর কথা শুনে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পরলো আকাশ, তবে ওর কথা কোনো ভাবেই গায়ে মাখলো না সে।"

এনগেজমেন্ট টা হয়ে গেলো ভালো ভাবে। ইমান ঘরে এসে একটা শাড়ি বের করে তার গায়ে হাত বুলোতে লাগলো। মনে মনে বলে উঠলো,
- "আজ তুমি এখানে থাকলে নিশ্চয়ই এটা পরতে?
আমাকে একটু বলেও গেলেনা? আজকাল তোমার
জানতে ইচ্ছে করে না তোমার সন্তানদের বাবা কেমন আছে?"
মিম আয়নার সামনে বসে আনমনে কিছু একটা ভাব ছিলো, মায়ান হামাগুড়ি দিতে দিতে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো মা কে। মিম ছেলে কে বুকে জড়িয়ে আদর করতে লাগলো। মায়ান মায়ের হাসিমাখা মুখ খানা দেখে হাসছে।" দেখতে বিয়ে টা ভালো ভাবে সম্পন্ন হয়ে গেলো,বিপত্তি ঘটলো বাড়ির গেইটে এসে। নেহা জেদ ধরে গাড়িতে'ই বসে রইলো,

সে সকলের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলে উঠলো,
- "আমার 'মিষ্টি মা' (মিম) এসে আমায় বরণ না করলে আমি সারা রাত ধরে এভাবে'ই ঠাণ্ডার মধ্যে বসে থাকবো গাড়িতে।"
ওর কথা শুনে যেন হতভম্ব হয়ে গেলো সকলে নেহাকে কেউ বোঝাতে গেলেই সে উল্টো ঝাড়ি মে'রে চুপ করিয়ে দিচ্ছে তাকে এমনকি
আয়েশা তাকে বোঝাতে গিয়েও ব্যার্থ হয়ে ফিরে এল
অবশেষে সে ধৈর্য্য হারিয়ে ফোন করলেন খায়রুল সাহেবের কাছে। খায়রুল সাহেব মেয়েকে বোঝাতে ব্যার্থ হলেন, নেহা আকাশ কে ডেকে বললো,
- "যাও, এখুনি গিয়ে মা কে নিয়ে আসো নারায়ণগঞ্জ থেকে।" আকাশ সঙ্গে সঙ্গে চোখ কপালে তুলে ফেললো, সে বললো,

- "তা কি করে সম্ভব?"
- "সম্ভব না হলে করতে হবে। আর হ্যাঁ,মা কে বাড়িতে নিয়ে আসতে বাবার পাশাপাশি তুমি নিজে ও যাবে।"
- "মানে কি?"
- "মানে তোমার মাথা। আর শোনো, আমি আমার মিষ্টি মা এ বাড়িতে দেখতে চাই কাল সকালের আগে
।" আকাশ বউয়ের হালচাল দেখে তার কানে অনুনয় বিনয় করতে লাগলো তখন নেহান ভ্রু কুঁচকে বললো,
- "তুমি যাবে কি না? শুধু সে টা বলো আমাকে?"
অগ্যতা আকাশ, রাফসাম এবং ইমান কে সঙ্গে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্য রওনা হলো।
সেখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত বারোটা বেজে গেছে
অতঃপর,খুঁজে খুঁজে তারা অনেক কষ্টে তৈমুর সাহেব
এর বাড়িতে গিয়ে পৌঁছাল। তৈমুর সাহেব সব কিছু শুনে ডেকে পাঠালেন মেয়েকে। ইমান তারপর সব টা বউয়ের কাছে খুলে বললো, আকাশ বললো,
- "মা তুমি আমার বিয়েতে ছিলে না। কিন্তু, এবার ফিরে গিয়ে তোমায় আমার বধূবরণ করতে হবে।"
মিম রেগে গিয়ে বললো,
- "মগেরমুলুক না কি সব কিছু? আমি যাবো না, তোমরা কি করবে?" ইমান বললো,
- "ওখানে গিয়ে কিছু দিন থেকে না হ'য় আবারও এখানে ফিরে এসো। তবুও, তোমাকে যেতেই হবে
আমাদের সাথে।" মিম তাদের মুখের ওপরে না ও করে দিলো। হঠাৎ আকাশ মায়ান কে কোলে নিয়ে গিয়ে বসে পরলো গাড়িতে রাফসাম ততক্ষণে মায়ের সমস্ত জিনিস গুছিয়ে নিয়ে এলো, ইমান মিটিমিটি হেসে জিজ্ঞেস করলো,

- "এখন ম্যাডাম আপনাকে কি কোলে তুলে নিয়ে যেতে হবে?" আমেনা বেগম এসে বললেন,
- "দেখ বাবা,আমি আমার মেয়েকে ও বাড়িতে যেতে চাই না।"
- "আপনি বিচক্ষণ মানুষ মা, একটু বোঝার চেষ্টা করুণ। সোসাইটিতে আমাদের ফেইস-লস হচ্ছে।"
- "তার দায়ভার নিশ্চয়ই আমার মেয়ের না? আমার মেয়ের জন্ম কি শুধু মাত্র তোমাদের মান-সম্মান
বাঁচানোর জন্য হয়েছে?"
- "এই বিষয়টি'র গুরুত্ব বোঝার চেষ্টা করুণ মা।"
- "আশা করছি, তুমি কাল সকালেই আমার মেয়েকে আমার কাছে রেখে যাবে।" ইমান চুপ করে রইলো।
মিম গিয়ে গাড়িতে বসলো আকাশের পাশে। ইমান ও গিয়ে তার পাশে বসলো কথা-বার্তা বলতে লাগলো।
তবে মিম গ্রাহ্য করলো না তাকে। ইমান এতে অনেক টাই রেগে গেলো, সে বললো,
- "বাপের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে তো ভুলে'ই গেছো৷ তোমার একটা স্বামী ও সংসার আছে। ফোন দাও না, কোনো খোঁজ-খবর নেও না। তোমার একবারও কি জানতে ইচ্ছে হ'য়নি মানুষ গুলো বেঁচে আছে। না কি ম*রে গেছে?"

- "না হ'য়নি, কারণ শয়তান-পয়তান কখনো ম*রে না এতো সহজে।"
মিমের এক কথায় সকলেই চুপচাপ। মায়নকে আদর করতে দেখে আকাশ বললো,
- "হ্যাঁ, শুধু মাত্র মায়ান তোমার সন্তান। ওর জন্মের পর থেকে'ই তুমি আর কখনো কাছে টেনে নাওনি আমাদের চারভাই বোনকে।
মায়ান'ই তোমার সব, আমাদের বোধ হ'য় কুড়িয়ে এনে ছিলে ডাস্টবিন থেকে?" মিম কোনো জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না। তারা পৌঁছাল তখন, রাত প্রায় দু'টো বাজে। অতঃপর, মিম ছেলের বউ বরণ করে বাড়িতে তুললো৷ নেহা আর কাওকে বরণ করার সুযোগ না দিয়ে আকাশ কে রেখে'ই ঝটপট ঢুকে পরলো বাড়িতে। তারপর, নবদম্পতিকে মিষ্টিমুখ করানো হলো। মিম তাদের মিষ্টিমুখ করালো সবার আগে। বেশকিছু ক্ষণ পর, সে মায়ান কে নিয়ে নিজের ঘরে চলে এলো, ইমান হাসি-মুখে জিজ্ঞেস করলো,
- "ছেলের বউ কে বরণ করে কেমন লাগছে?" মিম
বললো,

- "কেমন লাগবে আবার? এতো নাটক করার ধৈর্য্য কেবল মাএ আপনাদের'ই আছে।"
- "না মানে, তুমি তো আজ প্রথম বধুবরণ করলে
.....!"
- "কি হলো, হঠাৎ থেমে গেলেন যে?"
- "আমি জানি আমি অনেক অপরাধ করেছি।"
- "তো? আমি কি কখনো সে সব কেচ্ছা-কাহিনী জানতে চেয়েছি আপনার কাছে?"
- "আজ রাতে, আমি থাকবো তোমার সাথে।"
- "তার কোনো প্রয়োজন নেই, বড় আপার কাছে ফিরে জান।"
- "কেন ফিরে যাবো?
তুমি আমার স্ত্রী, আমার সন্তানের মা আর তা-ছাড়া নেহা থাকবে আয়েশার কাছে।" হঠাৎ নেই ছুটতে ছুটতে এসে মিমকে জড়িয়ে ধরলো, সে হাসতে হাসতে বলল,

- "সরি বাবা, আজ রাতে আমি থাকবো আমার মা, মিষ্টি মায়ের কাছে।" ইমান কথা ফাজলামি হিসেবে ধরে নিলো। কিন্তু যখন আয়েশা এসে বললো, তখন তার মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেছে। সে তেজ দেখিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো। মিম নেহা কে কোমল স্বরে বললো,
- "এভাবে ভারি গহনা-গাঁটি পরে কি করে থাকবে তুমি? এই সব এখুনি খুলে ফেলতে হবে।" আয়েশা এগিয়ে এসে বললো,
- "দেখি মা,আমি গহনা গুলো খুলে নিয়ে যাচ্ছি। কত
দামি গহনা আবার চুরিটুরি হলে মসিবত হয়ে যাবে।"
- "মানে কি? খালামণি?
আমার গহনা-গাঁটি কেন খুলে নেবে তুমি? এই সব কিছু মায়ের কাছে থাকবে। প্রয়োজনে আমি মায়ের
কাছ থেকে নিয়ে নেবো।
তুমি তো নিজের জিনিস সামলে রাখতে পারো না। তুমি আবার আমার গহনা-গাঁটি কি পাহারা দেবে?"
নিজের বোনঝির কাছে অপমানিত হয়ে ঘরে ফিরে এলো নেহা। সে মনে মনে ভাবতে লাগলো,
- "এই মেয়ে টা আসলে কি করতে চাইছে?" ছাঁদে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর,ইমান মেয়ের সন্ধান পেলো
তার কাছে গিয়ে দেখতে পেলো সে মুখ ভার করে বসে আছে। ও মেয়ের পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে জিজ্ঞেস করলো,

- "কি ব্যাপার মা? মন খারাপ কেন তোমার?"
- "তুমি কি জানো বাবা, মা আমার রিপ্লেসমেন্ট খুঁজে নিয়েছে? একটু আগে দেখলাম নেহাকে বুকে জড়িয়ে ধরে খুব আদর করছিলো। কোনো একসময় মা ঠিক এভাবেই আদর করত আমাকে।
কিন্তু যখন আমি তাকে লুকিয়ে বিয়ে টা করলাম।
তারপর থেকে তিনি কখনো আমায় ডেকে জিজ্ঞেস ও করেনি যে আমার শরীর টা কেমন আছে? আমি কি এতো টা অবজ্ঞা আর অবহেলার যোগ্য বাবা?
তুমি কি করে মুখ বুঝে সবটা সহ্য করে এতো বছর ধরে সংসার করছ তার সাথে?"
- "কারণ আমি খুব ভালোবাসি তোমাদের মা কে।"
- "ওহ তাই? তাই বলে তুমি মুখ বুঝে সবটা সহ্য করে যাবে? বি সেন্সিবল বাবা।"
- "কেন?"
- "কারণ মা সব কিছুর উর্ধ্বে চলে যাচ্ছে, তোমার হাতের বাহিরে চলে যাচ্ছে।" মেয়ের কথা শুনে বুক চিরে দীঘ নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো তার। অজানা এক ভয় তার ভেতর টা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। রাত গড়িয়ে সকাল হ'য়ে এলো। বেলা দশটায়,

সকলে নিচে আসার পর নেহা নিজের হাতের চা করে খাওয়ালো সবাইকে মিমের জন্য দুধ চা করলো আর
মায়ানের খিচুড়ি গরম করে তার খাবার নিয়ে পৌঁছে গেলো মিমের কাছে। মিম তাকে কড়া গলায় বললো,
- "তুমি আবার এই সব করতে গেলে কেন? পার্লার
থেকে মেয়েরা এখনো আসেনি তোমাকে বউ ভাতের জন্য সাজাতে?"
- "তুমি বাদদেও না মা সেসব, মায়ান কে খাইয়ে দাও
। দুধ খেয়ে ওর পেট ভরেনি বোধ হয়? তাই এমন খুঁত খুঁত করছে।" মিম তার কথা শুনে হাসতে লাগলো।
তখন আয়েশা শশুর শাশুড়ি কে ডেকে নিয়ে এসে বললো,
- "দেখুন মা দেখুন বাবা, নিজে সারা দিন শুয়ে-বসে দিন পার করছে আর বাড়ির নতুন বউ টা কে দিয়ে সব খাটুনির কাজ করিয়ে নিচ্ছে।" আকাশ তা শুনে রেগে গিয়ে বললো,
- "আরেহ বাদদেও না বড় মা, সুযোগ পেয়েছে যখন। তখব সুযোগের সৎ ব্যবহার টা করে নিতে দাও তাকে
তোমাকে নিয়ে তার কতশত অভিযোগ। নিজেকে না জানি সে কি ভাবে?" ইমান এসে ছেলের কথায় সায় দিয়ে বললো,

- "ঠিক সেটাই এতো দিন বাপের বাড়িতে ছিলো না? তাই হাতির পাঁচপা দেখেছে।"
- "তোমার এতো কিসের হিংসে ছোটো বউ মা? বউ তোমার ছেলের আর তুমি আসতে না আসতেই খাটিয়ে মা*রছ মেয়ে টা কে?" নেহা চিৎকার করে সকলের উদ্দেশ্য বলে উঠলো,
- "কি সমস্যা কি তোমাদের? মা আমাকে বলেননি কোনো কাজ করতে। বরং মায়ের মায়ান কে নিয়ে
কাজ করতে কষ্ট হচ্ছিলো তখন আমি নিজের ইচ্ছায় গিয়ে তার খিচুড়ি গরম করে এনেছি ঠিক আছে? আর খালামণি তুমি, তুমি যে এতো বড় বড় কথা বলছ নিজে কখনো কুটোটি নেড়ে দেখেছ এ বাড়িতে
আকাশ তুমি? আমি জানি না মা কেন দশ মাস দশ দিন ধরে নিজের গর্ভে রেখে জন্ম দিতে গেলো তোমাকে। হলে দয়া হবে পুরুষ হও,

কাপুরষ নও ঠিক আছে? আর বাবা তুমি? তুমি যে কোন মহারথী সে আমার বোঝা হয়ে গেছে। কাজেই দয়া করে নিজের চোখের ওপর থেকে অন্ধবিশ্বাসের পট্টি সরাও। আশাকরি, সবটা পরিষ্কার দেখতে পাবে
। আর দাদী তুমি, তোমার নাম তো গিনিস বুকে থাকা উচিত...!
মা না কি হিংসে করে, তাও আমাকে? মায়ের হিংসে করার কি প্রয়োজন? তার কাছে তো আল্লাহ তায়ালা
'র দেওয়া সবকিছু আছে। বরং এটা বলো না,তোমরা মা কে হিংসে করো আর হিংসে করো বলেই সবসময় অপমান করার সুযোগ খোঁজো তাকে।"মিম ছেলেকে
বিছানায় শুইয়ে দিলো, নেহা কে বললো,
- "হয়েছে তোমার?দয়া করে আগ বাড়িয়ে আর কিছু করতে হবে না
তোমাকে তুমি অনেক উপকার করেছ আমার,'ধন্যবাদ'।

বাবা, আজ বাপের বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা ছিলো
আমার আপনার গাড়ি টা কি সার্ভিসিং সেন্টার থেকে এসেছে?"
- "কোথাও যাবে না তুমি?"
- "কেন? আপনার মুখের কথায় বুঝি সবকিছু হবে?"
- "আজ ছেলের বউ ভাত তোমার।"
- "আমি মনে করিনা, মায়ান ব্যাতীত আমার আর কোনো সন্তান আছে।
বাবা আমি ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছি, আপনার ড্রাইভার কে আসতে বলুন।" ইমান একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে এসে বললো,
- "দেখ, তোমার জন্য কত সুন্দর একটা সফট সিল্ক তানচুড়ি জামদানী শাড়ি কিনেছি সাথে ম্যাচিং গহনা
পার্স ও আছে।" মিম সেসব ছুড়ে ফেলে দিলো, বলল,
- "এতো নাটক, না করলেও চলবে আমার সাথে।"
ইমান যেন হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হ'য়ে পরলো, মহসীন সাহেব বললেন,
- "মা, আজ তো আমি কোথাও যেতে দিচ্ছি না তোমাকে?"
- "তা দেবেন কেন স্বার্থে আঘাত লাগবে না আপনার
কোনো পার্থক্য নেই বাবা আপনার এবং এদের মাঝে

- "আমাকে ভুল বুঝো না মা।"
- "আপনি কেমন? তা আমার এতো দিনে বোঝা হয়ে গেছে।"
- "তুমি এই বাড়ির লক্ষী মা।" মিম শাশুড়ির কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,
- "হাসালেন মা, আমি লক্ষী হলে তো আর আপনি এতো বছর ধরে অলক্ষী পালতেন না এ বাড়িতে। তাকে এতো গুরুত্ব ও দিতেন না৷ সে যাই হোক, এখন আসুন। আমার খুব বিরক্ত লাগছে।" মহসীন সাহেব রেগে গিয়ে স্ত্রী রাবেয়া কে বললো,
- "কি হলো এখনো দাঁড়িয়ে আছো যে?" তিনি তখন
কিছু গহনার বক্স মিমের হাতে দিয়ে বললো,
- "তুমি এগুলো পরে তৈরি হয়ে নিচে এসো মা। তুমি হলে ছেলের মা। সকলে তোমাকেও দেখবে।" মিম হাসতে হাসতে বললো,
- "আমি আগেই বলেছি মায়ান ব্যাতীত আমার আর কোনো সন্তান নেই আপনার এতো সং জানানোর শখ তাহলে সাজান নিজের ছেলে'র আরেক বউকে।" তারপর সে সকলের মুখের ওপরে দরজা লাগিয়ে দিলো। নেহা কে পার্লার থেকে সাজাতে আসলেও সে সাজেনি তাদের হাতে। ও মন মরা হয়ে বসে আছে। আকাশ বললো,

- "দুশ্চিন্তা করো না। অনুষ্ঠানের আগেই মায়ের সমস্ত রাগ পরে যাবে।"
কিন্তু তা আর হলো কোই? মিম নিচে আসেনি আর না কারো অনুনয়-বিনয় শুনে দরজা খুলেছে। খায়রুল সাহেব মেয়ের মুখে সব টাই শুনলেন, তার মুখ কালো দেখে তিনি মিটিমিটি হেসে বললেন,
- "তুমি কি পারলে না? তোমার মা কে একটু মানিয়ে নিতে।" সে মাথা নিচু করে বসে রইলো, ইমান অধৈর্য্য হয়ে রুমের সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করতে লাগলো তাকে। মিম কোনো সাড়া-শব্দ করলো না। ইমান বললো,

- "সকালের পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে।"
মিম তার কথা কানে তুললো না, সে ছেলেকে নিয়ে চার দেওয়ালের মধ্যে অত্যন্ত সুন্দর সময় পার করছে। মায়ানের প্রয়োজনীয় সকল জিনিস মিমের ঘরেই ছিলো। ফাঁকতালে সে মণিকে দিয়ে ইন্ডাকশন টাও আনিয়ে নিয়েছে।"
খেতে বসে নেহা আকাশের কাছে জিজ্ঞেস করলো,
- "মা কোথায়?" ও কোনো উওর না দিতে পেরে চুপ- চাপ মাথা নিচু করে খাবার খাচ্ছে। নেহা তা দেখে রেগে গিয়ে বললো,
- "জীবনে কি খাবার চোখে দেখনি?
মা এখনো খাবার খাননি, তোমার গলা দিয়ে খাবার নামছে?" আকাশ তখনো চুপ করে রইলো, ইমান নেহার দিকে তাকিয়ে আছে।

ও উঠে চলে যেতে লাগলো। তবে একটা ম্যাসেজ ও উঠে চলে যেতে লাগলো।
তবে একটা ম্যাসেজ দেখে আবারও খাবার টেবিলে ফিরে এলো সে।
ওকে হঠাৎ খাবার খেতে দেখে চমকে গেলো সকলে
আকাশ একটু বেশি'ই অবাক হয়েছে। রাতে নেহা নিজে প্লেট সাজিয়ে মিমের জন্য খাবার নিয়ে গেলো। তবে মিম দরজা খোলেনি। আকাশ এসে কি ভেবে জিজ্ঞেস করলো,
- "মা খেয়েছে?" নেহা বিরক্ত হয়ে বললো,
- "খেলে নিশ্চয়ই দেখতে পেতে? বোকা-বোকা প্রশ্ন করো না, ঠিক আছে?"
- "তখন কি মা তোমাকে খেয়ে নেওয়ার জন্য টেক্সট ম্যাসেজ পাঠিয়েছল?"নেহা চিৎকার করে বলে উঠল,
- " তুমি আমার ফোনে হাত দিলে কোন সাহসে?"
- "না মানে, এখন যে আমি তুমি মিলে 'আমরা' হ'য়ে গেছি। কাজেই, এই মুহুর্তে কোনো সংশয় রাখার কোনো প্রয়োজন আছে?"
- "অবশ্যই আছে,
যে ছেলে নিজের মা কেই সম্মান করে না, সে কি না আবার এসে বেদবাক্য শোনাচ্ছে আমাকে।
শোনো, যদি তুমি ভেবে থাকো নিজের মা কে কষ্ট দিয়ে,
কথা শুনিয়ে বড় মায়ের উছিলায় মর*ণ কালে জান্নাত পেয়ে যাবে।
তাহলে এই সকল ভণ্ডামি বাদদেও, ঠিক আছে? একজন মায়ের সম্মান কত জানো?
মা এতো টা সম্মানিয় বলেই,
আল্লাহ তা'য়ালা মায়ের পায়ের নিচে তোমার আমার মতো অকালকুষ্মাণ্ড,
অপদার্থ ছেলে মেয়ের জান্নাত রেখেছে। আমি না হয় অকালে আমার জান্নাত টা কে খুঁইয়েছি।
তুমি কেন হেলায় হারাচ্ছ মা কে?"
চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com