Breaking News

প্রেম মানে পাগলামি । পর্ব - ০৬

নেশার ঘরে লাবন্যর সাথে শারীরিক মেলামেশা করার পরে আয়ান তো চলে আসে। নেশা কেটে যাবার পরে হয়তো লাবন্য পুলিশের কাছে এসব কিছু বলেছে।

এসব ভাবছে আয়ান দাড়িয়ে দাড়িয়ে আর পুলিশ এগিয়ে এসে গাড়ির পাশে দাড়ালো। সুমু পুলিশদের জিজ্ঞেস করলো— কি ব্যাপার আপনারা?
দারোগা বললো— ম্যাডাম আপনাদের কোম্পানি হাইয়েস্ট ট্যাক্স পে করে থাকে সবসময়, আর সরকারের কাছে হাইয়েস্ট ট্যাক্স পেয়ারদের নথি থাকে। এবং সরকার তাদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেন। আপনার এক্সিডেন্ট এর ব্যপারে এবং রাস্তায় বন্দুকধারীদের গুলি চালানোর বিষয়ে আমারা অনুসন্ধান করছি। আপনি সাবধানে থাকবেন এবং আপনি চাইলে আপনার বাসায় কয়েকজন পুলিশ দিতে পারি আপনার সিকিউরিটির জন্য।

সুমু মিষ্টি হেসে বললো— ওরা তো আমাকে উদ্দেশ্য করে গুলি করেনি সুতরাং এই বিষয়ে আমার সমস্যা নেই। আমি একজন বিপদকে বাঁচতে গিয়েই বিপদে পড়েছি এই আরকি। সমস্যা নেই আমি সামলে নেবো। আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ আসার জন্য।
আয়ান হাফ ছেড়ে বাচলো। শুধু শুধু টেনশনে আধমরা হবার অবস্থা।
এ্যাম্বুলেন্স বাসার সামনে আসতেই সুমুর ছোটবোন মিম এবং কাজের মেয়ে এসে গেট খুলে দিলো।
সবাই ধরাধরি করে সুমুকে তার বেডরুমে এনে শুইয়ে দিলো।
আয়ানকে দেখে মিম সুমুকে জিজ্ঞেস করলো— ইনি কে আপু?
— উনি মিস্টার বিপদ— বলে সুমু হেসে দিলো।

মিম হাসতে হাসতে বললো— আপু সবাই বিপদের কাছ থেকে পালায়, আর তুমি কিনা বিপদ সঙ্গে নিয়ে ঘুরছো।
আবার সবাই হেসে উঠলো।
কাজের মেয়ে বললো— বিপদ যে এত সুন্দর হয় দেখতে তা এনাকে না দেখলে বুঝতাম না। আমাদের সবার জীবনে এরকম একটা বিপদ আসুক।
আবার সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।
সবার হাসাহাসি দেখে আয়ানের কাশি বেড়ে গেলো। তাই দেখে সুমু বললো— আরে ওরা মজা করছে, প্রেশার নেবার কিছু নেই।
আয়ান আমতা আমতা করে বললো— নাম নিয়ে তো মহা বিপদে পড়লাম।
মিম আবার বললো— আচ্ছা আচ্ছা, বিপদও তাহলে বিপদে পড়ে, আজ প্রথম জানলাম — হাহাহা।
আবার সবাই হেসে অস্থির।

তারপর আরও অনেক অনেক কথাবার্তা শেষে মিম আয়ানকে বললো— আচ্ছা বিপদ ভাইয়া, আপনি যখন আপুর আপাতত কেয়ার টেকার, আপুর পাশের রুমটায় তাহলে আপনি থাকবেন, আসুন দেখিয়ে দিচ্ছি।
আয়ানকে নিয়ে মিম পাশের রুমে চলে গেল।
কাজের মেয়ে সুমুর পাশে বসে হেসে হেসে বললো— আপু একটা কথা কমু?
— আচ্ছা বলো।
— আপা বিপদ ভাইয়াও সুন্দর, আপনিও সুন্দর। আপনাগো দুইজনের বিয়ে হলে কি হবে বলেন তো?
— কী হবে?
— সুন্দর সুন্দর বেবি হবে একেবারে গুলুমুলু।
— হাহাহা, এই কথা কে বললো তোকে?
— আপু চিপায় চাপায় সবাই বলে, এমন কি সাইন্সও বলে।
— হা হা হা, তোরও তো বিয়ে হলো অনেক দিন, বেবি নিসনি কেন। তোর একটা বেবি থাকলে সাথে করে নিয়ে আসতি আমরাও আদর করতে পারতাম।
— আপু আমি তো চাইছিলাম, কিন্তু মহাকাশে পৌঁছানোর আগেই ওনার রকেটের তেল খতম হয়ে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে।

— হাহাহা, থাম তুই। মহাকাশে কি বলতো?
— আপু বেবি তো আকাশ থেকেই আনতে হয় দুজন মিলে, কিন্তু ওনার রকেট বেশিক্ষণ উড়তে পারেনা।
— হাহাহা, তুই যা তো এখান থেকে। পাজি একটা।
কাজের মেয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল।
যেকোনো পরিস্থিতিতে সুমু নিজেকে সুন্দর ভাবে মানিয়ে নিতে পারে বলেই আজ এতটা সফল সুমু, এতবড় কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার পদে সাফল্যের সাথে দ্বায়িত্ব পালন করছে।
রাতে ডিনারের পরে সুমুর রুমে সিঙ্গেল সোফায় বসে আছে আয়ান।
সুমু বললো— আপনার কোনো সমস্যা হচ্ছেনাতো আয়ান।
— আরে না, আপনাদের মতো এত সুন্দর মন মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের কাছে থাকলে আবার সমস্যা কি?
— বাহ! একদিনেই কীভাবে বুঝলেন আমাদের মন মানুষিকতা সুন্দর?
— আসলে আমার একটা বিশেষ গুণ আছে, কাউকে বুঝতে আমার বেশি সময় লাগেনা। অল্পতেই ধারণা এসে যায়।

— বেশ তো! তো মিস্টার বিপদ, ধারণা করে আমার সম্পর্কে কিছু বলুন তো আমি কেমন।
— ওকে; আপনি খুব গোছালো এবং সোজাসাপটা কথা বলা মেয়ে। খুব চঞ্চল আবার ভীষণ রকম চুপচাপ থাকতে পারেন। কাউকে ভালোবাসলে এবং বিশ্বাস করলে পুরোপুরি করেন, আবার সে যদি বিশ্বাস ঘাতকতা করে তাহলে আপনার মন থেকে চিরতরে উঠে যায়। নীরবতা আপনার প্রিয়, বিশেষ করে একলা থাকতেই বেশি ভালোবাসেন। আপনি সাহিত্য প্রেমী। কষ্ট লুকিয়ে রেখে স্বাভাবিক ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করার ক্ষমতা আপনার আছে। মনের কথা সহজে কারো সাথে শেয়ার করেননা। আপনার যন্ত্রণাগুলো আপনাকে ভীষণ পীড়া দিলেও সহজে আপনার চোখে জল আসেনা। আপনার ব্যক্তিত্ব ভীষণ মজবুত। আপাতত এ পর্যন্তই।
সুমু হা হয়ে তাকিয়ে আছে আয়ানের মুখের দিকে। ভীষণ বিস্ময় নিয়ে মুচকি হেসে বললো— আপনি কি জ্যোতিষ শাস্ত্রে পিএইচডি করেছেন নাকি আয়ান। এতকিছু বলে দিলেন।
— না মানে কারো সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললেই তার সম্পর্কে একটা ধারণা চলে আসে মনে, বলতে পারেন এটা সাবকনসিয়াস মনের একটা অদ্ভুত শক্তি।
দিনদিন আয়ানে মুগ্ধ হচ্ছে সুমু, আর সুমুতে আয়ান। ধীরে ধীরে দুজনের প্রতি দুজনের ভালোলাগা বাড়তে থাকে।

প্রায় দুমাস হয়ে যায়। সুমু পুরোপুরি সুস্থ এখন কিন্তু আয়ানের সামনে ধরা দেয়না যে সে সুস্থ। তাহলে যদি আয়ান চলে যায়। সুমু চায় সামনে তার জন্মদিনে আয়ানকে সারপ্রাইজ দিতে।
একদিন বাইরে থেকে ফেরার পথে আয়ান লক্ষ্য করে রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করে লাবন্য আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ানের মাথা গরম হয়ে ওঠে মুহুর্তেই। এতকিছু করেও লাবন্যর মন এখনও ভরেনি!
আয়ান লাবন্যকে কিছু বলার জন্য এগিয়ে যেতেই লাবন্য গাড়ি নিয়ে চলে গেল। কিন্তু আয়ানের মস্তিষ্কে লাবন্যর প্রতি রাগের বিস্ফোরণ চলছে অবিরত। লাবন্যকে ইচ্ছে মতো কিছু কথা না শোনাতে পারলে শান্তি হবেনা।
দুদিন পরে লাবন্যর অফিসে উপস্থিত আয়ান। লাবন্যর টেবিলের সামনের চেয়ারে এক যুবক বসে আছে। লাবন্যকে কেমন অস্থির লাগছে। লাবন্যর মুখটা দেখে সমস্ত রাগ উড়ে গিয়ে মায়া লাগল আয়ানের মনে।
আয়ানকে দেখেও ভীষণ চমকে গেল লাবন্য।

আয়ান সোজাসাপটা বললো— লাবন্য শেষবারের মতো বলছি হার মেনে নাও, তাহলে আজই আমি তোমায় বিয়ে করে নিজের বউ করে বরণ করবো। এভাবে আর থাকা যায়না।
সামনের চেয়ারে বসা যুবকের দিকে তাকিয়ে উঠে দাড়িয়ে লাবন্য আয়ানকে বললো— তোর মতো একটা ছোটলোকের বাচ্চার কাছে হার মানবো আবার তাকে বিয়ে করবো ভাবলি কোন সাহসে। এই মুহূর্তে আমার চোখের সামনে থেকে বেরিয়ে যা।
আয়ান একটা কথাও বললো না আর। চুপচাপ বের হয়ে চলে আসলো। লাবন্যকে পাওয়া হবেনা আর বোধহয়।
লাবন্যর সামনের চেয়ারে বসা যুবকও বেরিয়ে যাবার পরে লাবণ্য কি ভেবে যেন কান্নায় ভেঙে পড়লো খুব।
আরও দিন অতিবাহিত হচ্ছে, এদিকে লাবন্যর দেয়া কষ্ট জাদুকরী ভাবে সুমু আয়ানের মন থেকে দূর করে দিয়ে কাছে টেনে নিচ্ছে। আয়ানও সুমুতে মুগ্ধ। আয়ান জানে সুমু তাকে ভীষণ পছন্দ করে।

অবশেষে সুমুর জন্মদিন এসে গেল। সুমু জন্মদিনের কথা আয়ানের কাছে লুকালেও আয়ান ঠিকই জেনে গিয়েছে। রাত বারোটায় আয়ানও সুমুকে সারপ্রাইজ দিবে বলে মনে মনে ঠিক করে রেখেছে। এদিকে সুমুও।
রাত বারোটা বাজতেই আয়ান সুমুর ছোটবোন সুমুর রুমে হাজির হয়ে ভীষণ অবাক। নীল শাড়ি পরে সুমু দাড়িয়ে আছে সামনে, যেন স্বর্গের অপ্সরী। চোখ ফেরানো দায়।
সুমু মিষ্টি হেসে বললো— আয়ান জন্মদিনে তোমার জন্য বিশেষ সারপ্রাইজ, আমি পুরোপুরি সুস্থ তোমার সেবাযত্নে। ইচ্ছে হলে চলে যেতে পারো তবে তুমি ছাড়া আমার আর ভালো থাকা হবেনা তাহলে।
আয়ান বললো— এসব কথা পরে।
তারপর আয়ান ও সুমুর ছোটবোন সুমুকে পাশের রুমে নিয়ে গেল। সুমু ভীষণ সারপ্রাইজড। রুমটা ভীষণ সুন্দর ফুল ও রঙিন কাগজে সাজানো। ইয়া বড়ো এক কেক। আনন্দে নেচে উঠলো সুমুর মন।
বার্থডে উইশ শেষে কেক খেয়ে অনেক সময় অতিবাহিত হলো। যে যার রুমে চলে গেল।
কিছুক্ষন পরে আয়ান এসে সুমুর রুমে ঢুকলো। সুমুর মুখে আনন্দের হাসি। সুমু যেন আয়ানের অপেক্ষাতেই ছিল।

সুমু বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে হাসিমুখে বললো— কিছু বলবে আয়ান।
আয়ান পেছনে গুঁজে রাখা একটা প্যাকেট বের করে, প্যাকেট থেকে একটা সুন্দর বক্স বের করলো। তারপর সেই বক্স থেকে একটা স্বর্ণের হার বের করে সুমুর দিকে বাড়িয়ে ধরলো।
সুমু এতটাই সারপ্রাইজড যে একদম থমকে গেল, মহানন্দে আত্মহারা।
নিজেকে সামলে নিয়ে সুমু বললো— হারটা নিজের হাতে তুমি পরিয়ে দিলে আরও ভালো লাগবে আয়ান।
আয়ান হারটা সুমুর গলায় পরিয়ে দিলো।
আনন্দে সুমুর চোখে জল চিকচিক করে উঠলো।
আয়ান সুমুকে বিছানায় উঠে বসে পা খাটের বাইরে রাখতে বললো। সুমু তা-ই করলো।
আয়ান সুমুর পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে, প্যান্টের পকেট থেকে একজোড়া রূপার নুপুর বের করলো নীল পাথর বসিয়ে ডিজাইন করা।
সুমু শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে আর মুগ্ধ হচ্ছে।
আয়ান সুমুর দুই পায়ে নুপুর পরিয়ে দিয়ে, সুমুর সুন্দর পায়ে একটা চুমু খেতেই সুমু লাফিয়ে উঠে বললো— এটা কি করলে আয়ান।
—ভালোবাসায় সব সুন্দর— বলে আয়ান সেই প্যাকেট থেকে একটা বকুল ফুলের মালা বের করে সুমুর খোঁপায় বেধে দিলো।

সুমু নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলো না। ভীষণ খুশিতে আয়ানকে কাছে টেনে আয়ানের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে লম্বা চুমু খেলো পরাপর কয়েকবার। অনেক সময় কেটে গেল, রাত গভীর।
আয়ানের বুকের ওপর শুয়ে আছে সুমু। হঠাৎ করে সুমুকে নিচে ফেলে আয়ান সুমুর ওপর ঝুকে পড়ে বললো— অনেক চেষ্টা করেও মনকে বোঝাতে ব্যর্থ হলাম সুমু, সে খাবেই খাবে তোমার ঠোঁটে চুমু।
সুমু লজ্জামাখা হাসি হেসে বললো— বারণ তো করিনি।
তারপর ধীরে ধীরে আয়ানের ঠোঁট স্পর্শ করলো সুমুর ঠোঁট। অন্যরকম এক আনন্দের খেল খেলে যাচ্ছে দুজনের দেহ মনে। সুমু আরও গভীর ভাবে পেতে চাইছে আয়ানকে।
আয়ানের আদরে আদরে সুমু পাগলপ্রায়। সুমুও আয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পুরোপুরি উপভোগ করতে লাগলো আয়ানের আদর। আয়ান ধীরে ধীরে সুমুর কপালে, গলায়, বুকে, পেটে, কোমরে, ঠোঁটের আলতো ছোঁয়ায় পাগল করে তুলছে সুমুকে আরও আরও।
সুমুর সমস্ত দেহমন প্রচন্ড ভাবে আয়ানের এই স্পর্শ পেতে আরও ব্যাকুল হয়ে উঠলো। সুমু নিজেকে আয়ানের সামনে পুরোপুরি উন্মুক্ত করে দিতেই আয়ান...

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com