Breaking News

অবলোহিত ভালোবাসা

ভাবী! আপনি দুই বাচ্চার মা! আপনাকে দেখলে কেউ বিশ্বাসই করবে না, দেখে মনে হয় মাত্র মাধ্যমিক পাশ করছেন! সিরিয়াসলি!"
রিক্তা কে ওর প্রতিবেশি দেবর তুহিন কথাগুলো বলছিলো।
রিক্তা গিয়েছিলো গোসলের পর ছাদে কাপড় গুলো নেড়ে দিতে।
রিক্তার ফর্সা গালগুলা যেনো লাল হয়ে গেলো।
রিক্তা ঈষৎ লজ্জিত হয়ে বললো, "কি যে বলো না?
মাধ্যমিক দিয়েছি আজ থেকে দশ বছর আগে!"
রিক্তার কোমড় ছাড়িয়ে যাওয়া চুলগুলো দিয়ে টপটপ করে গড়িয়ে যাওয়া পানি গুলোর
দিকে তাকিয়ে তুহিন বললো, " কিন্তু আপনার যে ফিগার! এতো মেইন্টেইন করেন কিভাবে?"
রিক্তা আরো একটু বেশি হেসে বললো, "যাই, দুপুরের খাবার দিতে হবে, ডাইনিং এ সবাই অপেক্ষা করছে মনে হয়!
তুহিন গলার স্বর একটু উঁচিয়ে বললো, " বিকেলে ছাদে আইসেন ভাবী, ঘুড়ি উড়াবো আজ"
রিক্তা হাসতে হাসতে চলে গেলো।
রিক্তা শাশুড়ী আর স্বামির সাথে এই বাড়িতে থাকে। নিজস্ব বাড়িই।
রিক্তার মৃত শ্বসুর, বাড়িটা একতলা পর্যন্ত করে মা/রা গিয়েছিলেন।
এখন ওর স্বামি তিনতলা পর্যন্ত করেছে।
পাশের বাসার তুহিন ঢাকা কলেজ থেকে মাত্র মাস্টার্স পাশ করে ভাই- ভাবিদের সাথে উঠেছে।
তুহিনের স্থানিয় একটা সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে চাকরি হয়েছে।
বাবা মা দুই জন ই মৃ/ত। সরকারী মাধ্যমিক স্কুলের চাকরিটা নন ক্যাড়ার জব হলেও সুবিধা অনেক।
তাই আর নতুন চাকরির জন্য ঢাকাগামী হচ্ছে না সে।
তাছাড়া নিজ এলাকাতেই পোস্টিং হওয়ায় নিজ বাড়িতে, নিজ এলাকায় থাকার সুবিধা পাচ্ছে।
সাথে টিউশন সুবিধা তো আছেই।

রিক্তার শাশুড়ীর অনেক বয়স হয়েছে।
এবং অসুস্থ। সামান্য হাঁটা-চলা বাদে আর কিছুই করতে পারে না।বলতে গেলে ঘরে পড়া!
কিন্তু গলার বাজখাঁই স্বর টা এখনো বহাল আছে।
আদর যত্নের একটু ত্রুটি হলেই রিক্তাকে তার বাঁজখাঁই স্বরে যাচ্ছে তাই বলতে ছাড়ে নাহ!
আর স্বামি একটা আধা সরকারি চাকরি করে বাড়ি থেকে দশ কি.মি দূরে রংপুর জেলা শহরে।

রিক্তার ঘু/ষখোর স্বামি রায়হান বরাবর ই পকেট গরম করে না চললেও ;
মেজাজ টা সবসময় গরম ই থাকে।
মেজাজের ভ/য়ে স্বামির কাছে সামান্য একটা সুতোর বায়নাও করতে পারে না রিক্তা।

দশ বছরের বিবাহিত জীবনে দু বছর পর পর দু বাচ্চার জন্ম দিয়ে নিতান্ত জৌলুসবিহিন
দাম্পত্য আর সংসার জীবন যাপন করছিলো রিক্তা।
সে সংসার জীবনে নেই কোনো চাকচিক্য নেই কোনো নতুনত্ব।
সকালে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই স্বামি, শাশুড়ী আর বাচ্চাদের সকালের নাস্তা আর
টিফিন রেডি করা, খাওয়ানো, স্কুলে দিয়ে আসা! আবার বাসায় এসে থালা
বাসন, ঘর দোড়, কাপড় চোপড় পরিস্কার করা।
বেলা করে সকালের নাস্তা করেই দুপুরের খাবারের আয়োজন।
আবার বাচ্চাদের নিয়ে খেলা করা, ওদের হোমওয়ার্ক করানো,
আবার রাত হলে রাতের খাবার রান্না করা।
এ সব কাজ সব রিক্তার দু হাতের উপর দিয়েই যায়। আবার রাত হলেই
ওর ভুঁড়িবিশিষ্ট স্বামির বিছানার অ ত্যাচার সহ্য করা!
নিরামিশাষি এ জীবনে নেই কোন নতুনত্ব, নেই কোনো আনন্দের রঙ্গিন সুঁতো!

সেদিন রাতে রিক্তার স্বামি যখন বিশাল ভূঁড়ি টা ওর গায়ের উপর এলিয়ে দিয়ে দুহাতে
রিক্তার শরীর টা ন গ্ন করায় বিমোহিত হয়ে যাচ্ছিলো,
তখন রিক্তার শুধু তুহিনের কথাগুলোই মনে পড়ছিলো।
কি সুন্দর প্রাণোচ্ছল এক সুপুরুষ তুহিন! ঘুড়ি উড়ানোর সময় অপরাহ্ন বায়ুতে
যখন তুহিনের চুলগুলো উড়ছিলো, তখন ওকে নায়ক শাহিদ কাপুরের মতো লাগছিলো।
পরিপূর্ণ পুরুষ যুবা হওয়া স্বত্তেও তুহিনের মধ্যে শৌশবের চাঞ্চল্য!
"ভাবী এই ভাবী, তোমার শাড়ী টা খুলে দাও না উড়াই" অথবা "
ভাবী তোমার ঠোঁটের একটা চুম্মা দিয়ে দাও না আমার ঘুড়িটাতে! "
যাই ই বলুক না তুহিনের সব কথাই রিক্তার ভীষণ ই ভালো লাগে।

যেদিন যেদিন সন্ধ্যার আগ দিয়ে একটু সময় পায়, সেদিন ই ছাদে ঘুড়ি উড়ায় তুহিন।
ছুটির দিনে বাড়ির সামনের আঙ্গিনায় ফুটবল বা ক্রিকেট খেলে এলাকার ছেলেদের সাথেই।
মাধ্যমিক স্কুলে চাকরির সুবাদে বহু ছুটি পায় ও স্কুল থেকেই।
তাই বাড়িতে থাকার মতো ব্যাপক সময় পায়।
তুহিনের বড়ভাইয়ের বউ অনন্যার সাথে রিক্তার বেশ ভাব।
অনন্যা প্রায় ই রিক্তার কাছে গিয়ে তুহিনের বিয়ের ব্যাপারে আলাপ করে।
তবে তুহিন নাকি রিক্তার মতো রুপবতী, গুণবতী মেয়ে ছাড়া বিয়েই করবে না তা
সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে অনন্যার কাছে। তা শুনে রিক্তা তো হেসেই কুটিকুটি।
এত কাজকর্ম ও দেখভাল করার পর যে স্বামি, শাশুড়ীর কাছে তার সামান্য গুণ ও নেই,
সেখানে তুহিন ওকে রুপবতী গুণবতী বলে এতে ওর বেশ আহ্লাদ হচ্ছিলো।

একদিকে রিক্তার নিরামিষাশী জীবন, অন্যদিকে প্রতিদিন সকালে বা বিকেলে
যখনি দেখা হয় তখনি তুহিনের প্রশংসা বাক্য শুনে রিক্তা যেনো প্রতিমুহূর্তে তুহিনের দিকে ধাবিত হচ্ছিলো।
আয়নায় দাঁড়িয়ে এখন প্রতিদিন ই নিজেকে নতুন করে জানে রিক্তা। ওর গালের টোল, গোলাপি ঠোঁট , জোড়া ভ্রু, থুতনির তিল, মেদ হীন কোমড় এগুলা নিজের থাকা স্বত্তেও সে জানতো না, তুহিন ওকে ওর সৌন্দর্য্যের জানান দিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন ই। তাহলে তুহিন ও কি ওকে সেভাবেই দেখে যেভাবে ও চায়?
রিক্তা বুঝতে পারছিলো, ও নিজের অজান্তেই, নিজের বারণ স্বত্ত্বেও তুহিন কে ভালোবেসে ফেলছে। এ কোন ধরনের ভালোবাসা? যা কোনোদিন প্রকাশ পাবে না, যা কোনো দিন ও পরিনতি পাবে না? এ কি তবে সেই অবলোহিত ভালোবাসা? যা অদৃশ্য হয়েও ভিতরের সব কিছুকে পু ড়িয়ে মা রে?

<>সমাপ্ত<>

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com