কষ্ট - হানিফ সংকেত । পর্ব - ০১


এগার বছর ন'মাস। প্রায় এক যুগ বলা চলে। জেলখানার প্রধান ফটক দিয়ে বেরিয়ে বুক ভরে মুক্ত বাতাস নিল সুমন। মুক্তির স্বাদ। নাকি বিস্বাদ । গন্তব্যহীন এলোমেলো পায়ে সামনে এগুতে থাকে সুমন। এই শহরটাকে কেমন যেন অপিরিচিত মনে হয় সুমনের। মনে হয় কোন ভুল জায়গায়, ভুল শহরে, ভুল সময়ে সে এসে পড়েছে। 

কেমন যেন সন্দেহ জেগে ওঠে মনে-আসলে এখানে কি সে কোন দিন ছিল? হয়তো ছিল, হয়তো না। যে ঢাকা শহরকে সে দেখে গিয়েছিল তার কোন চিহ্নই যেন দেখতে পায় না। ক'টা বাজে? তপ্ত রোদ, উত্তপ্ত রাস্তা, হাঁটতেও কষ্ট হচ্ছে তার। একটা দুটো দিন নয়, প্রায় বারটি বছর সে বন্দী ছিল একটি নির্দিষ্ট স্থানে, চার দেয়ালের মধ্যে। ইতিমধ্যে অনেক ফাইল চালাচালি হয়েছে। 

জমানাও অনেক বদলে গেছে। ঢাকা শহরে এখন সোডিয়াম লাইট জ্বলে যেন নব সাজে সেজেছে। জগৎ যেমন চলছিল সেই রকমই চলছে । একজন মানুষের যাই হোক না কেন তাতে কারোরই কিছু যায় আসে না। সত্যিই সেলুকাস--বিচিত্র এই দেশ। সুমন ভেবে পায় না কোথায় যাবে এখন । 

কার কাছে যাবে? তার তো ঠিকানা নেই। খুনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত আসামী সুমন আহমেদ চৌধুরী। বিশেষ দিন উপলক্ষে মাঝে মধ্যে কিছু কয়েদিকে ছাড়া হয় এখানে। বিশেষ দিন এবং ভাল আচরণের জন্য যাবজ্জীবন হলেও বেশ ক'বছর আগেই ছাড়া পেয়েছে সে। জেল থেকে বেরিয়ে বরং সুমনের খারাপই লাগছে। এতোদিন তাও একটা আশ্রয় ছিল, নির্দিষ্ট ঠিকানা ছিল । 

কিন্তু এখন সে কোথায় যাবে। ক্লান্ত পা দুটোকে একটু জিরিয়ে নেবার জন্য ফুটপাতের কিনারায় একটা পানের দোকানের সামনে বেঞ্চিতে বসে পড়লো। ভীষণ সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে । পকেট হাতড়ে দেখে কোন পয়সা আছে কি না

চলবে....

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url