মুখোশের আড়ালে। পর্ব - ০৫
কর্নিয়া নিচে নেমে টিভিতে দেখতে পাই, তার বন্ধুবী ক্যাথিয়ার লাশ ঘিরে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে, ক্যাথিয়ার লাশ দেখে কর্নিয়া দ্রুত সিঁড়ি থেকে দৌড়ে টিভির সামনে এসে শুনতে পায়,
সেখানে পুলিশ অফিসার সাইফ লাশটা তদন্ত করছে,সাংবাদিকের একজন সাইফের সামনে গিয়ে প্রশ্ন করে, স্যার কে এই খুন গুলো করছে?আপনারা তার কোন সন্ধান পেয়েছেন?
-- আমরা তদন্ত করছি, খুব শিগগির সে ধরা পড়বে।
--আপনারা দেখতে পাচ্ছেন,পুলিশ এখনো এই খুনের ব্যাপারে কিছুই জানতে পারি নি।
এর আগে যে খুন গুলো হয়েছে, সব একই রকম, তাহলে খুন গুলো কি একজন করছে? নাকি একাধিক লোক আছে? সে ব্যাপারে এখনো কোন কিছুই জানা যায় নি।
কর্নিয়া আর কিছু না শুনে, যে অবস্থায় আছে। সে অবস্থায় দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে সে স্থানের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
কিছুক্ষণের মধ্যে কর্নিয়া সেখানে এসে পৌঁছায়,খবর পেয়ে তার বাকি বন্ধুরা একে একে সেখানে এসে পৌঁছায়।
ক্যাথিয়ার আম্মু আব্বু খবর পেয়ে সেখানে এসে কাঁদতে শুরু করে।
পুলিশরা সেখান থেকে ক্যাথিয়ার লাশ ফরেনসিক ল্যাবে নিয়ে যায়।
ডাক্তার ভালো ভাবে লাশের পরিক্ষা করে কোন কিছুই পায় নি।
-- কোন কিছু পেলেন?(সাইফ)
--না কোন কিছুই পায়নি(ডাক্তার)
-- খুনটা কি ছুরি দিয়ে করা হয়েছে, নাকি অন্য অস্ত্র ব্যাবহার হয়েছে(সাইফ)
-- খুনটা ছুরি দিয়ে করা হয়েছে, ওর শরীরে ছুরির চিহ্ন গুলো দেখে মনে হচ্ছে খুনি ওর মৃত্যুর পরে ও ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। দেখে মনে হচ্ছে অনেক বছরের রাগ এর উপর তুলেছে,তাই বার বার ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। হয় ও সাইকো,আর না হয় এর কোন পুরানো শত্রু(ডাক্তার)
-- পুলিশ ভালো করে লাশের ক্ষত চিহ্ন দেখে ডাক্তারের উদ্দেশ্য বলে, তাহলে আমরা ওকে এখন নিয়ে যেতে পারি।
-- হুম
-- পুলিশরা ক্যাথিয়ার লাশ এম্বুলেন্স করে বাসায় পাঠিয়ে দেয়।
ক্যাথিয়ার আম্মু আব্বু কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে, কর্নিয়া আর তার বাকি বন্ধুরা তাদের সামলাচ্ছে।
এইভাবে কিছু সময় কেটে যায়।
ক্যাথিয়া খ্রিস্টান ধর্মের ছিলো তাই তাকে তাদের নিয়মে সব কাজ সম্পন্ন করে।
এইভাবে সকাল পেরিয়ে বিকেল হয়ে আসে, পুলিশরা আবার ক্যাথিয়ার বাসায় আসে।
পুলিশকে আসতে দেখে কর্নিয়া আর রাফিন একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
পুলিশকে আসতে দেখে ক্যাথিয়ার আব্বু ওদের সামনে এসে বলে আমার মেয়ের খুনির ব্যাপারে কিছু জানতে পেরেছেন? কে খুন করেছে আমার মেয়েকে? ও তো কাল একটা পার্টিতে গিয়েছে, কত হাসি খুশি ছিলো আমার মেয়েটা, আর আজ কি হয়ে গেলো,আপনারা ও কে কেউ ছাড়বেন না।
--না,এখনো পযন্ত কোন কিছুই জানতে পারি নি, আপনি চিন্তা করবেন না আপনার মেয়ের খুনে সঠিক বিচার ঠিক আপনি পাবেন । হাত দিয়ে কর্নিয়া তার সব বন্ধুদের দেখিয়ে বলে, তবে আমার এদের সাথে কিছু কথা আছে।
-- রাফিন, কর্নিয়া,উর্মি,রুহাম,হ্যালি এটা শুনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে, পুলিশের উদ্দেশ্য বলে হুম বলুন,কি কথা?
--একমাত্র তোমারা আমাকে ওই খুনি পযন্ত নিয়ে যেতে পার। আমি যা যা বলবো তার সঠিক উত্তর যদি দাও(পুলিশ)
---হুম বলুন,
-- তোমাদের কোন শত্রু আছে? যে তোমাদের খুন করতে পারে?
--সবাই একসাথে বলে না স্যার আমাদের এমন কোন শত্রু নেই।
-- ভালো করে ভেবে দেখো, যে খুন করছে তার টার্গেট হয়তো তোমরা,তাই তোমাদের ফ্রেন্ডদের একে একে খুন করছে,এর পরের টার্গেট হয়তো তোমাদের মাঝে কেউ হতে পারে,তাই ভেবে চিন্তে বলো।
-- সবাই এটা শুনে ভয় পেয়ে যায়, একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
-- তারা সবাই আবার পুলিশের উদ্দেশ্য বলে স্যার আমাদের তো এমন কোন শত্রু নেই, যে আমাদের মারতে পারে।
-- ঠিক আছে,আর ভালো করে ভেবে দেখিও যদি কিছু মনে পরে আমাদের জানি ও। তবে তোমাদের সিকিউরিটি জন্য আমাদের কিছু লোক তোমাদের সাথে থাকবে।যে তোমাদের উপর সবসময় নজর রাখবে।
-- এই বলে সাইফ চলে যায়,।
সবাই সেখানে দাঁড়িয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।
এইভাবে সন্ধ্যা হয়ে যায়।
একে একে দুইজন ফ্রেন্ডকে তারা হারিয়ে ফেলছে, তাই সবাই ক্যাথিয়ার বাসার ছাঁদে গিয়ে বসে আছে। কারো কোন কথা বের হচ্ছে না।
--- এসব কি হয়ে গেলো? এইভাবে আমাদের দুই জন ফ্রেন্ডকে হারিয়ে ফেলবো কখনো ভাবি নি। ( রুহাম)
--কেউ আর কিছু না বলে, মন খারাপ করে বসে আছে।
সেদিন তারা সবাই ক্যাথিয়ার বাসায় থেকে যায়।
সকাল হতেই ক্যাথিয়ার আম্মু,আব্বুকে বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। সবার চোখে জল।
যে যার বাসায় চলে যায়।
কর্নিয়া বাসা গিয়ে বিছানায় সুয়ে পরে। ক্যাথিয়ার সাথে কাটানোর দিন গুলো ভাবতে থাকে।
মোবাইল বের করে সাত বন্ধু একটা ছবি দেখে তার বুকে ছেদ করে উঠে। কতই হাসি খুশি দিন ছিলো, এইভাবে বিষন্নতার ছায়া নেমে আসবে তারা কখনো ভাবি নি।
এইভাবে কিছু সময় কেটে যেতে তার মোবাইল অফিসের ম্যানেজার কল দেয়।
কর্নিয়া মন খারাপ থাকায় কলটা রিসিভ করে নায়।
কিন্তু বার বার কল আসায়, সে কলটা রিসিভ করে।
--ম্যাডাম, আজ অফিসে আসবেন না?
--- আজকে ভালো লাগছে না,তাই যাবো না(কর্নিয়া)
-- কিন্তু আপনাকে কালকে একটা মেইল পাঠিয়েছি সেটা দেখেছেন?
-- না, তো(কর্নিয়া)
---, আমির,সাহেল,রহিম এরা একটা মিটিং এরেন্জ করেছে। আপনাকে সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে। ওই প্রেজেক্টের কাজ কখন থেকে শুরু করবে সে বিষয়ে। এখন আমি কি বলবো ওদের বলে দিবো আপনি আজ আসতে পারবেন না।
-- এটা শুনে কর্নিয়া উঠে বসে, আর ম্যানেজার উদ্দেশ্য বলে, আমি আসছি, মিটিং কয়টার শুরু হবে, আর কোথায় হবে সেটা মেইল করে পাঠিয়ে দাও।
-- ওকে ম্যাডাম।
কর্নিয়া দ্রুত উঠে ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নেই।
সাদা কালারের একটা শার্ট, কালো কালারের জিন্স পেন্ট, পড়ে রেডি হয়ে নেয়।
লেপটপে মেইল চেক করে, নিচে নেমে হালকা কিছু খেয়ে বেড়িয়ে পরে।
কিছুক্ষণের মধ্যে সে জায়গায় এসে পড়ে, আমির হায়দারের অফিসে এসে মিটিং রুমে চলে যায়। সেখানে সবাই উপস্থিত ছিলো।
কর্নিয়া গিয়ে একটা চেয়ারে বসে।
কিছুক্ষনের মধ্যে মিটিং শুরু হয়। আমির একটা পড় পেপার এনে টেবিলে রাখে, সেটার বাজ খোলে সবাইকে দেখায়, একটা নকশা আঁকা,আমির সবাইকে একে একে সবটা বুঝিয়ে বলে।
তারা সেখানো গার্মেন্টস তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেই।
-- কিন্তু আরহাম খান, ও তো আমাদের পিছনে লেগে আছে।
এই জায়গাটা নাকি তার ওকে ফিফটি% সেয়ার দিতে হবে।
-- কর্নিয়া এসব শুনে ওদের উদ্দেশ্য বলে, আপনারা কাজ শুরু করুন, আমরা ও দেখতে চাই আরহাম খান কি করতে পারে।
--আজকের মতো সেখানে মিটিং শেষ হয়ে যায়।
কর্নিয়া গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে, রাস্তায় জ্যাম থাকায়, রাস্তায় আটকে পড়ে।
কর্নিয়া গাড়ির কাচ খোলে বাহিরে তাকিয়ে দেখে তার পাশে আরহাম ।
আরহাম পাশে তাকাতেই কর্নিয়াকে দেখে।
কর্নিয়া আরহামকে দেখে দ্রুত গাড়ির কাচ তোলে নেই।
কিছুক্ষণের মধ্যে জ্যাম কমে যাওয়ায়,কর্নিয়া গাড়ি চালাতে শুরু করে। কিন্তু আয়নায় দিয়ে দেখে একটা গাড়ি তার পিছু পিছু আসছে।
কর্নিয়া আর কিছু না ভেবে সোজা বাসার উদ্দেশ্য চলে আসে।
কর্নিয়া গাড়ি থেকে নেমে দেখে একটা গাড়ি তার দিকে আসছে।
--গাড়িটা সামনে এসে থামিয়ে, সেখান থেকে একটা ছেলেকে বের হতে দেখে। কর্নিয়া ছেলেটির মুখ দেখে বলে, আপনি এখানে?
--মিস কর্নিয়া খন্দকার এটা তোমার বাসা বুঝি?(আরহাম)
--হুম,আপনি এখানে কি করছেন?(কর্নিয়া)
--আরে আমরা তো এখন বিজনেস পার্টনার, সো আসতেই পারি(আরহাম)
--ওহহ তাই নাকি, আপনি কি করে ভাবলেন,আপনাকে আমার বিজনেস পার্টনার বানাবো(কর্নিয়া)
--সময় সবটা বলে দিবে,এখানে দাঁড়িয়ে রাখবে নাকি ভিতরে যেতে দিবে(আরহাম)
-- আজব তো! আপনি এখানে এসেছেন কেনো?(কর্নিয়া)
-- তোমার সাথে দেখা করতে আসি নি,এটা কামরুল খন্দকারের বাসা তাই না। আমি তার সাথে দেখা করতে এসেছি (আরহাম)
-- কর্নিয়া আর কিছু না বলে বাসার ভিতরে চলে যায়।
আরহাম বাসার ভিতরে এসে দেখে কামরুল সোফায় বসে আসে।
কামরুল কর্নিয়া সাথে একটা ছেলেকে আসতে দেখে সে দিকে তাকায়
কর্নিয়া ভিতরে এসে আরহামকে তার বাবাকে দেখিয়ে বলে এই হচ্ছে আমার বাবা এই বলে কর্নিয়া উপরে উঠে যায়।
আরহাম কমরুলকে দেখে, সালাম দেয়
-- কামরুল আরহাম কে সোফায় বসতে বলে, আরহামের উদ্দেশ্য বলে তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না,কে তুমি?
-- আমি আরহাম খান,আইমান খানের ছোট ছেলে।
-- তুমি সে আরহাম খান না,যে ওই প্রজেক্টের ফিফটি% সেয়ার দাবি করছো?
-- থাক না ওইসব, এখন আমি সেগুলো কথা বলতে আসি নায়।আমি এখানে আমার ডেড আইমান খানের বার্থডে ইনভাইটেশন কার্ড দিতে এসেছি।
-- কামরুল আইমান নাম শুনে আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে আইমান এই নামটা খুব চেনা চেনা লাগছে।
--আরহাম একটা কার্ড এগিয়ে দিয়ে বলে এটা আপনার জন্য বাবা পাঠিয়েছে।
-- কামরুল কার্ডটা হাতে নিয়ে বলে আমি তো তোমার বাবাকে চিনি না। কিন্তু তারপরে ও তোমার বাবা আমাকে তার বার্থডে পার্টিতে ইনভাইট করছে,কেমন একটা খটকা জাগছে মনে।
-- আরে স্যার,এটা তো একটা পার্টি, আর আপনারা এই শহরে একজন নাম করা বিজনেস ম্যান। সে সুত্রে হয়তো বাবা ইনভাইট করছে।
-- তবে, আমার মনে হচ্ছে আমি তোমার বাবাকে ছিনি,আর হয়তো ও নি আমাকে ছিনেন।(কামরুল)
--তবে বাবা আমাকে এখানে পাঠিয়েছে,আর আসার সময় আমাকে বলেছে আপনারা ওনার কাছে খুবই স্পেশাল। তাই আমাকে এখানে পাঠিয়েছে যাতে আমি নিজে আপনাকে ইনভাইট করে যায়।আপনাদের কিন্তু আসতেই হবে। আমি এখন উঠছি (আরহাম)
-- আরে বসো চা- কফি কিছু খেয়ে যাও (কামরুল)
--না, এখন কিছু খাবো না। অন্য কোন দিন এই বলে সোফা থেকে পিছনে তাকাতেই দেখে কর্নিয়া পার্পেল কালারের একটা স্কাট পড়া,খোলা চুলে ওকে দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে।
আরহাম কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে কর্নিয়া নিচে নেমে আরহামকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তার সামনে এসে বলে
-- কি দেখছেন এভাবে? আপনি এখনো এখানে?(কর্নিয়া)
-- অন্যমনষ্ক হয়ে বলে তোমাকেই দেখছি,খুব সুন্দর লাগছে(আরহাম)
-- কর্নিয়া চোখের সামনে তুরি বাজিয়ে বলে কি বলছেন এসব?
--আরহাম হুসে এসে বলে, চলেই যাচ্ছিলাম, বাট
--কিন্তু কি?
-- কিছু না, ওকে তাহলে আমি আসছি,
এই বলে আরহাম কর্নিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
কর্নিয়া ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
কর্নিয়া তার বাবাকে বলে, ও কি জন্য এখানে এসেছে?
কামরুল সবকিছু কর্নিয়াকে খোলে বলে।
এখন কি করা যায়? আমাদের সবাইকে যেতে বলেছে
-- পার্টি কালকে তো,ঠিক আছে যাবো।
এইভাবে একদিন কেটে যায়।
সে দিন সন্ধ্যায়...
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com