Breaking News

বন্দি তোমার মাঝে । পর্ব - ০২



ড্রয়িং রুমে সবাই অপেক্ষা করছে মাধবীর জন্য।
একটু পর নাসিমা শেখ ও নাবিলা মিলে মাধবীকে নিয়ে আসে সেখানে।
সুন্দর করে শাড়ি পরিহিতা মাধবীর মুখ ঢেকে আছে মসৃণ নেটের হালকা কাজের ওড়না দিয়ে,
শাড়ির সাথে ম্যাচিং ফুল স্লিভ ব্লাউজ সাথে হালকা গলায় ও কানের গয়না।

তীব্রের পাশে ওকে বসিয়ে দেয় নাবিলা।
পাশে বসতেই একপাশে চেপে যায় মাধবী তার মনে হচ্ছে আরেকটু কাছে
বসলেই যদি গায়ে গা স্পর্শ লেগে যায়।
চেপে যাওয়াটা তীব্র বুঝতে পারে তবুও কোনো রিয়েক্ট করে না।
এরপর মনোয়ারা এসে মাধবীর পাশে বসে ঘোমটা খুলে মুখ দেখতে নিবে
তখনই নাসিমা শেখ পাশ থেকে বলে,

আপা, এখন মুখ দেখার নিয়ম নেই। আগে সবটা মিটে যাক তখন দেখবেন।
এমনিতে অনেকটা লেট হয়ে গেছে।
আচ্ছা।
এ বলে মাধবীর হাত ধরে মনোয়ারা বলেন,
- তোকে আমার ছেলের বউ করে নিবো আজকে।
এতো দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হলো তাই দুদিন আগে এসে যে তোর সাথে কথা বলবো সেটাও হয় নি।
যাই হোক, একবার আমার বাসায় নিয়ে যাই সারাজীবন তো আছেই
ফুপু ভাইজি একসাথে অনেক গল্প করা যাবে।
এ বলে ঘোমটার উপরেই মাধবীর মাথায় চুমু দেন তিনি।
মায়ের কথা শুনে তীব্র মনে মনে বলে,
-" এ মেয়ে নিজেও জানতো না তবে বিয়ের বিষয়টা, তবুও সহজে মেনে নিলো।
নিজের ইচ্ছে পুরোপুরি আছে তো!!

ছেলের দিকে একটা আংটির বক্স এগিয়ে দিয়ে মনোয়ারা বলেন,
- আব্বা, আংটিটা মাধবীর হাতে পড়িয়ে দে । এরপর কাজি সাহেবের কাজ শুরু হবে।
মায়ের কথায় মাথা নাড়িয়ে সায় জানায় তীব্র। বক্সটা খুলে সুন্দর সিম্পল একটা আংটি বের করে বাম হাত পেতে মাধবীর সামনে রাখে। ওড়নার আড়ালে সবই দেখছে মাধবী শুধু তীব্র পাশে বসেছে বিধায় চোখ তুলে ভালো করে দেখতে পাচ্ছে না। তীব্রর হাতটা দেখে নিজের বাম হাতটা এগিয়ে দেয় ।
মাধবীর হাতের স্পর্শ পেতেই তীব্র বুঝতে পারে হাতটা কাঁপছে। আলতো করে হাতটা ধরে আংটিটা পড়িয়ে দেয় মাধবীর আঙুলে। মনে মনে বলে,

- এতো সফট হাত হয় কারো! আঙুলগুলো ছোটোদের মতো সাইজেও ছোটো।
নার্ভাসনেসে হাতটাও ঘেমে গেছে।
কেন জানি তার হাসি পাচ্ছে মনে মনে। তবে সবার সামনে স্বাভাবিক থাকছে।
এসব ভাবনার মাঝে মাধবীর হাতটা এখনো ধরে আছে তীব্র।
নাসিমা শেখের কথায় তার ধ্যান ভাঙে।
- এই নাও মাধবী, এই আংটিটা তীব্রকে পড়িয়ে দাও।
মাধবীর হাত ছেড়ে দেয় তীব্র। নিজেও বাম হাতটা এগিয়ে দেয়।
বড়মা এর কথা মতো বক্স থেকে আংটি বের করে তীব্রের আঙুলে পড়িয়ে দেয়।
সবাই হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানায় দুজনকে।
এরপর কাজি সাহেব নিয়ম অনুযায়ী বিয়ের কাজ শুরু করে।
তিন কবুল বলে আকদ সম্পন্ন হয় দুজনের।
বড়দের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সবাই খুশি। সাকী এসে নিরবে দাঁড়িয়ে আছে মাধবীর পাশে।
কানে কানে বলে,
-আপাই, তীব্র ভাইকে রাজপুত্রের মতো লাগছে। মুখটাই শুধু রাগী রাগী।
তুই ভয় পাস না, আমি আছি তো। তোকে বাঁচাবো উনার থেকে।
সাকীর কথা শুনে মাধবীর মলিন মুখে ভয়, হাসি দুটোই ফুটে উঠে ।
এইটুকু ছেলে নাকি তাকে বাঁচাবে।! যেখানে মানুষটার নামেই হয়ে গেছে সে।
- মাধবীকে ওর রুমে নিয়ে যাই এখন। এখানে বসে থেকে ওর কাজ নেই।
তরী শেখের কথায় সবাই সায় দেয়।
মাধবীকে নিয়ে ওর রুমে রেখে আবারও বাইরে এসে মনোয়ারার কাছে গিয়ে চুপিচুপি বলে,
-আপা, মাধবী আর তীব্র তো একে অপরের সাথে ভালো করে কথাও বলে নি।
এখন একটু আলাদা কথা বলার স্পেস দিলে হতো না?
তরীর কথাটা বুঝতে পারে মনোয়ারা । এর মাঝে সাকী মাধবীর কাছে চলে যায়।
তাই সবার উদ্দেশ্যে বলে,
- সবাই খাওয়া দাওয়া শুরু করুক। তীব্রকে মাধবীর সাথে কথা বলতে দেয়া দরকার।
ওরা আলাদা কথা বলুক এর মাঝে।
কেউ আর অমত করে নি এ নিয়ে।
তাই মনোয়ারা তান্নিকে বলে,
-যা দাদাভাইকে মাধবীর রুমে দিয়ে আয়।

-আচ্ছা মা
এরপর তান্নির সাথে মাধবীর রুমের সামনে আসে তীব্র। এসে তান্নি দরজা নক করে বলে,
- মাধবী আপু, আসি?
- এসো।
ভেতর থেকে মাধবীর জবাব পেয়ে ভেতরে যায় তারা।
গিয়ে তীব্রকে মাধবীর পাশে বসিয়ে দিয়ে হাসিমুখে বলে,
-দুজন নিজেদের মতো কথা বলো এখন।
এই দাদাভাই, আমার মাধবী আপুকে ধমকাবে না একদম।
তীব্রের উদ্দেশ্যে এ কথা বলতেই চোখ রাঙায় তীব্র।
সেটা দেখে আমতা আমতা করে বলে,
- হ্যাঁ, জানি বলবে না। তবুও আর কি...
- যা আমার সামনে থেকে।
ভারী গলার আওয়াজ পেতেই মাধবী নড়েচড়ে বসে।
এ সুযোগে তান্নি যেতে নিলে সাকীর দিকে তাকিয়ে বলে,
-এই সাকী টাকি চল, বাইরে যাই। ওদের একা থাকতে দে।
-আমি সাকী। টাকী না, তুমি তান্নি মান্নি। আমি আপাইয়ের সাথে একটু থাকবো। তুমি যাও।
-না চল, যাবি।

-আসছি। তুমি যাও।
-দু মিনিটের আগেই আসবি, নইলে আমি এসে কান টেনে নিয়ে যাবো।
তান্নি এ বলে বেরিয়ে যেতেই সাকী ভেংচি কাটে তার দিকে। এরপর তীব্রর সামনে গিয়ে বলে,
-তুমি আপাইকে নিয়ে যাবে আজকে? আমি দিবো না আপাইকে। নিয়ে যাবে না। আপাই আমার সাথে থাকবে এখানে।
সাকীর হুমকি দেখানো কথা শুনে মুচকি হাসে তীব্র। সাকীর কাধে হাত রেখে বলে,
-তোমার আপাইকে রেখে যাবো। এখন তো নিয়ে যাবো না, শালাবাবু।
-আমি বাবু না। আমি বড় হয়ে গেছি। আর আপাই তোমাকে অনেক ভয় পা..
বাকিটা বলার আগেই মাধবী হাত দিয়ে সাকীর মুখ চেপে ধরে। তখন বাইরে আওয়াজ পেয়ে ঘোমটা আবারও টেনে মুখ ঢেকে দিয়েছিলো। তাই কোনোমতে হাত বাড়িয়ে সাকীকে ধরতেই তীব্রের হাতের সাথে ধাক্কা লাগে তার। তড়িঘড়ি করে সরে আসে।
সাকীকে আস্তে করে বলে,
- বকবক করবি না ভাই। কিছু বলবি না।
- আচ্ছা আপাই। গেলাম আমি।
সাকী বেরিয়ে দরজা চাপিয়ে দিয়ে চলে যায়।

রুম খালি হতেই গলা খাকারি দেয় তীব্র। কি বলবে ভাবছে।
সাকীর বলে যাওয়া কথাটা মনে হতেই বলে,
-তুমি সত্যিই ভয় পাও আমাকে?
জবাবে কি বলবে বুঝতে পারছে না মাধবী। সে তো ভয় পায় ই।
তীব্র এ নিয়ে তেমন কিছু মনে করে না কারণ, সব ভাইবোনই কম বেশি যে ওকে ভয় পায় সেটা বুঝে সে।
এর মাঝে মাধবী বলে,
-জ্বি, ইট্টু ইট্টু।
জবাব শুনে নি:শব্দে হেসে দেয় তীব্র। ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
- ঘোমটা খুলতে সমস্যা?
- না মানে, আরকি..
- সমস্যা হলে থাক।

মাধবী মনে মনে বলে, " ঘোমটা খুললে না জানি কি হয়!
মাধবীরে হাই ভোল্টেজের রিজেক্ট না খেয়ে যাস।
এমনিতেই এক গালে যে কারুকাজ হয়ে আছে,
দেখে এই লোক আরেক গালেও না কারুকাজ করে দেয়! "
এসব ভাবনার মাঝেই মাধবীর কোলের মাঝে কোথা থেকে একটা টিকটিকি এসে পড়ে।
সেটা দেখে "ও মায়ায়া" বলে বসা থেকে উঠে তীব্রের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
হুট করে ওর আওয়াজে চমকে যায় তীব্র ঘোমটা টেনে সরিয়ে দিয়ে শাড়ি ঝাড়তে লাগে,
টিকটিকিটা সরছে না দেখে তীব্রের কাধে হাত খামছে ধরে চোখ বুজে বলে,

- এটা সরান না ইট্টু, প্লিজ। ভয় লাগছে।
আচমকা এতো কাছাকাছি আসতেই তীব্র বসা অবস্থায় পেছনে হেলে যাতে না পড়ে তাই তড়িঘড়ি করে মাধবীর কোমড় আঁকড়ে ধরে। এতক্ষণে টিকটিকি নড়াচড়া করে নেমে যাচ্ছে দেখে তীব্র বলে,
-তুমি স্থির থাকো, টিকটিকি সরে যাবে।
- সরে না কেন এখনো! হনুমান, বিলাই, বান্দর...
মাধবীর এমন অবান্তর বকা শুনে ভেবাচেকা খেয়ে যায় তীব্র।
চোখ ছোটো ছোটো করে তাকায় তার দিকে।
কোমড়ে রাখা হাত দিয়ে একটানে ওকে কোলে বসিয়ে ধমকে বলে,
-চুপ, এতো বড় মেয়ে হয়ে সামান্য টিকটিকি দেখে ভয় পাও।
চলে গেছে ওটা। আর এটাকে কিসব বকা দিচ্ছো!

মাধবী চোখ খুলে দেখে এখন নেই টিকটিকি।
তবে নিজের অবস্থানটা বুঝতেই চোখ বড় বড় করে তাকায় তীব্রের দিকে।
উঠতে নিতেই তীব্র আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে আটকে দেয়। মাধবী আস্তে করে বলে,
- সরি, আসলে টিকটিকি গায়ে পড়লে ভয় পাই। আর বকা দিবো না। আ'ম সরি।
এ কথার জবাব দেয় না তীব্র। অপলক তাকিয়ে আছে সে মাধবীর দিকে। গম্ভীর গলায় বলে,
- গালে কে মে/রেছে?

থতমত খেয়ে যায় মাধবী। ওড়নাটা যে মাথায় নেই সেটা বুঝতে পারে৷ তীব্র গালে এভাবে খেয়াল করবে সে ভাবে নি। তাই আমতা আমতা করে বলে,
- কে মা/রবে? কে কেউ না। মশা মা/রতে গেছিলাম।
- মিথ্যা বলা আমি সবথেকে বেশি অপছন্দ করি। আঙুলের ছাপ দেখতে পাচ্ছি আমি। সঠিক জবাব দাও। আজকের পর থেকে একবারের চেয়ে দুবার সুযোগ পাবে না জবাব দিতে। মিথ্যা বললে পানিশমেন্ট পাবে।
পানিশমেন্ট শুনেই ভয় পেয়ে যায় মাধবী। ছোটোবেলা থেকে এই পানিশমেন্ট কথাটা মানেই সে মা/র খেয়ে আসছে। নাকিব, নাবিলার হাতে মা/র খেলেও নালিশ জানাতে পারতো না। উল্টো ভয় দেখাতো ওরা যে, নালিশ দিলে আরও পানিশমেন্ট পাবে।
- মা/রবেন না প্লিজ।
- বলো কে মে/রেছে?
- না নাবিলা আপু।
- কেন?
- রে রেডি হচ্ছিলাম না দে দেখে।
- তুমি রাজি ছিলে না এই আকদে।

এবার আর জবাব দেয় না মাধবী। তীব্রও আর প্রশ্ন করে না। মাধবীর গালে এক হাত রেখে শক্ত গলায় বলে,
- আজকের মা/র খাওয়ার কারণটা ঠিক ছিলো। তবে এরপর থেকে যদি আর কেউ হাত লাগায় এই গায়ে তাহলে সেদিনই এ বাড়িতে তোমার শেষ দিন।
এ বলে ছেড়ে দেয় মাধবীকে। কোমড়ের বাধন হালকা হতেই উঠে তাড়াতাড়ি পাশে বসে যায় মাধবী।
জোরে জোরে শ্বাস টেনে মনে মনে বলে, " লোকটার কথায়ই আমার বুকটা কাঁপে আর এতক্ষন কতটা কাছে ছিলাম। কি থ্রেট!! আল্লাহ, রক্ষা করো এবারের মতো। আর আমাকে পছন্দ হয় নি, এটা বলে দিতেই পারতো এভাবে কাছ থেকে দেখে গালের দাগ নিয়ে পড়লো কেন! "
- গালে মলম লাগিয়ে নিবে। রেস্ট নাও এখন, আসছি আমি।
বলে জবাবের আশা না করেই উঠে চলে যায় তীব্র। এদিকে মাধবী বোকার মতো চেয়ে আছে দরজার দিকে। তীব্র এতক্ষণে চলে গেছে।

বর কনে সহ সবার খাওয়া দাওয়া শেষ। তীব্রের কথা মতো তরী এসে মাধবীর গালে মলম লাগিয়ে দিয়েছে। মাধবীকে বলে গেলেও বাইরে গিয়ে তরীকে জানিয়ে দেয় সে। পরে তরী আসে মাধবীর কাছে।
রাত ৮টা বাজে।
বড়রা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজকে তীব্র এ বাড়িতে থাকবে। মনোয়ারা আর তান্নিকেও যেতে দেয় না কেউ। নিজেদের বাড়িতে থাকতে সমস্যা কি! আর বাড়ির নিয়ম অনুসারে আকদ সম্পন্ন হলে বর কনের বাড়িতে সে রাত থেকে যায়। সেই মোতাবেক তীব্রকেও থাকতে হবে।
এটা জানতে পেরে মাধবী মনে মনে ভাবে, " গেলো রে মাধবী তোর সব গেলো! ঘুমের যে তিড়িংতিড়িং ভঙ্গী তোর , বিছানা থেকে লা/ত্থি দিয়ে ফেলে না দেয় তোকে এই রাগী লোকটা! "
এসব ভেবেই হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে মাধবীর। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই।

এদিকে তান্নি আজকে সুযোগ পেয়ে ভয়কে একসাইড করে তার দাদাভাইকে এটা ওটা বলছে। সে জানে এখন অন্তত তীব্র ওকে রেগে কিছু বলবে না।
-দাদাভাই, নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা। তোমার কুমারত্ব আজকে থেকে নিরসন হবে। তুমি বিবাহিত পুরুষে রুপান্তর হবে?
-কেন আমাকে কি এতোদিন তোর নারী মনে হয়েছে? তোর বোন আমি?
তীব্রের কথায় থতমত খেয়ে যায় তান্নি। তবুও বলে,
-আরে না না। পুরুষ তো ছিলেই, আজ থেকে বিবাহিত এটা বুঝিয়েছি।
-বেশি পেকে গেছিস তাই না? আছাড় দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসবো।
মুখ গোমড়া করে ভেংচি কেটে চলে যায় তান্নি। একটু পর নাসিমা এসে বলেন,
-তুমি মাধবীর রুমে যাও তীব্র। রাত তো অনেক হলো।
প্রায় বারোটা বাজে। সবাই রুমে চলে গেছে।
-যাচ্ছি।

মাধবীর রুমে এসে দরজা আটকে দেয় তীব্র। সামনে তাকিয়ে দেখে মাধবী বড় জানালার সামনে দাঁড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। রুমে কেউ এসেছে বুঝতে পেরে ঘুরে দাঁড়ায় মাধবী। তার পড়নে কলাপাতা রঙের কটন থ্রিপিস। ওড়না মাথায় দিয়ে গায়ে ভালো করে জড়ানো।
তীব্রকে দেখে নিজের ছোটো কাবাড থেকে একটা শপিংব্যাগ বের করে এনে দিয়ে বলে,
- এখানে আপনার পোশাক আছে। বড় মা পাঠিয়েছে।

- ওকে ।
ব্যাগ থেকে বের করে দেখে কয়েকটা টিশার্ট , দুটো শার্ট আর কয়েকটা টাউজার। এখান থেকে একটা টি শার্ট আর টাওজার নিয়ে তীব্র চলে যায় ওয়াশরুমে।
কিছুক্ষন পর বেরিয়ে এসে দেখে মাধবীর হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে সাকী। ওকে দেখেই বলে,
- আমি আপাইয়ের সাথে থাকি প্রতিদিন আজকেও থাকবো। আমি না থাকলে আপাই ভয় পায়।
সাকীর কথা শুনে মাধবীর দিকে তাকায় তীব্র। মেয়েটা উশখুশ করছে কেমন। সাকীকে থামাতে চাইছে হাত টেনে কিন্তু পারছে না।
- তোমার আপাই ভয় পাবে না। আমি আছি না?
- তুমি তো সাকী নও!
- সাকীর আপাইয়ের বর তো।
তীব্রের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে যায় মাধবী। তখনই হাজির হয় সাকীর মা তরী। এসে সাকীর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে,
-তোকে বলেছিলাম না আজকে নিজের রুমে ঘুমাবি। আপাইয়ের রুমে যেতে হবে না। কোন ফাকে চলে আসলি!

এরপর তীব্রের দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বলে,
-কিছু মনে করো না তীব্র। আসলে মাধবীর সাথে থাকে তো তাই চলে এসেছে। আমি নিয়ে যাচ্ছি।
-না, মামি। কিছু মনে করি নি। বাচ্চা মানুষ।
এরপর সাকীকে এক প্রকার জোর করেই নিয়ে চলে যায় তার মা। ওরা যেতেই তীব্র এসে দরজা আটকে দেয় আবার।
- তোমার প্রটেক্টিভ ভাই আপাই বলতে পাগল!
- হ্যাঁ।
-গালে মলম দিয়েছিলে?
-হুম।
-শুয়ে পড়ো।
এ বলে বিছানায় শুয়ে পড়ে তীব্র। মাধবী আস্তে আস্তে বিছানার দিকে এগিয়ে সেও পাশে গুটিসুটি মে/রে শুয়ে পড়ে পাশ ফিরে।
-লাইট অফ করলে না?

- আমি তো অন করেই রাখি। আপনার সমস্যা হচ্ছে?
- আলোতে ঘুম আসে না আমার। অসুবিধে নেই, থাক আলো। সাকী তো বললো এমনিতেই তুমি ভয় পাও।
তীব্রের দিকে ফিরে তাকায় মাধবী। ওর মনে হচ্ছে তীব্র মজা নিচ্ছে ওর সাথে, ওকে ভীতু বুঝাতে চাচ্ছে। তাই উঠে কোনো কথা না বলে লাইট অফ করে একছুটে বিছানায় ফিরে আসে।
- এবার ঘুমান।
- ধন্যবাদ।

অন্ধকারের মাঝেই ভেংচি কাটে মাধবী। মনে মনে বলে, " আসছে বেটা ধন্যবাদ দিতে।
এর জন্য আজকে ঘুমাবোই না আমি। কখন হাত পা তুলে দেই কে জানে!
থাক, একরাত না ঘুমালেও হবে। "
তীব্র চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু মনে মনে স্থির হতে পারছে না।
জীবনের প্রথম কোনো মেয়ের সাথে বেড শেয়ার করছে।
যার উপর তার সম্পুর্ন অধিকার আছে বলা যায়।
হাত বাড়ালেও ছুয়ে দিতে পারবে কিন্তু পারছে না।
দু'জনকেই একটু স্পেস নিতে হবে সবটা স্বাভাবিক করতে।
এদিকে ঘুমের রানী মনে মনে বকবক করতে করতে নিজেই ঘুমিয়ে গেছে।
অভ্যাস তো আর সহজে পাল্টে যায় না। স্বভাবসুলভ ভাবেই তার ঘুম এসে গেছে।
কিছুক্ষন সব ঠিক থাকলেও একটু পরই ঘুমের ঘোরে পাশ ফিরে মাধবী।
বারবার এপাশ ওপাশ করতে থাকে, ঘুমের মাঝে নড়াচড়া করা ওর অভ্যাস।
এরকম করতে করতে তীব্রের দিকে এগিয়ে আসে অনেকটা।

তীব্রের চোখে মাত্রই ঘুম ঘুম লাগছে এরমাঝেই বুকে কারো হাতের স্পর্শ পায়।
অন্ধকারের মাঝেও পাশে তাকিয়ে দেখে মাধবী নিজের বালিশ থেকে অনেকটা এগিয়ে এসেছে।
তার বুকে ঘুমের ঘোরেই হাত পড়েছে, হাতটা আস্তে করে সরিয়ে দিবে তখনই মাধবী
আরেকটু এগিয়ে ডান পা তার পায়ের উপর তুলে দেয়।
এবার মাধবীর ডান হাত পা দুটোই তীব্রের গায়ে জড়ানো।
বেচারা সরতেও পারছে না। এভাবে আটকে যাবে ভাবে নি,
এমনিতেই বুকের মাঝে অস্থির লাগছিলো এই অবস্থায় আরো বেকায়দায় পড়ে যায়।
উপায় না পেয়ে আস্তে করে বলে,
-মাধবী, এই মাধবী?
-উহহুম।
ঘুমের মাঝে থেকে তার আর হুশ নেই। তীব্রের গায়ের উপর হাত পা তুলে দিয়েই নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে সে। তীব্রও দীর্ঘশ্বাস ফেলে বুকে রাখা মাধবীর হাতটার উপর নিজের হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকাল ছয়টার একটু আগেই তীব্রের ঘুম ভেঙে যায়।
আশেপাশে তাকিয়ে কয়েক সেকেন্ড লাগে তার সবটা বুঝতে।
এরপর ভালো করে তাকিয়ে দেখে মাধবী তার গলায় মুখ গুজে ঘুমিয়ে আছে।
হাত পা এখনো ওর গায়ের উপর। ওড়না গলায় নেই, কিছু চুল এলোমেলো হয়ে আছে কপালে,
ওর নি:শ্বাস তীব্রের গলায় আছড়ে পড়ছে।
জামাটা কাধের দিক থেকে একটু সরে যাওয়ায় উন্মুক্ত কাধটা বেরিয়ে আছে।
সেদিকে চোখ যেতেই নজর সরিয়ে নেয় তীব্র।
ঘুমন্ত মেয়ে মানুষকে এভাবে দেখে বেশামাল লাগছে তার নিজেকে ।
কোনোমতে মাধবীকে ধরে ঠিকমতো ওর বালিশে শুইয়ে দিয়ে সরে আসে সে।
ধপ করে নিজের জায়গায় এসে শুয়ে পড়ে বিরবির করে বলে,
-এতো তুলতুলে কেন এই মেয়ে!? আমার জান বের করে নিবে একটুতেই!!

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com