Breaking News

মুখোশের আড়ালে। পর্ব - ০২



কর্নিয়া তখন আবার কিছু একটা ভেবে বলে, হ্যাঁ আমি রুম থেকে বের হয়েছি তার কারণ যখন রুমে লাইট অন হয়। তখন আমি টেবিলে একটা মোবাইল দেখতে পাই।

মোবাইল হাতে নিয়ে তর্নিশাকে বলি, আমার মনে হয় ছেলেটি মোবাইলটা এখানে ভূলে রেখে চলে গেছে।এখন কি করবো?

-- আরে এখানে রেখে দে। যার মোবাইল সে এসে নিয়ে যাবে। (তর্নিশা)
-- আমিও তর্নিশা কথায় একমত হয়ে, মোবাইল টা টেবিলে পাশে রেখে খেতে বসবো তখনি ছেলেটির মোবাইল বেজে উঠে, আমি মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি কোন নাম সেইভ নেই। তাই কলটা রিসিভ না করে আবার পাশে রেখে দি। ঠিক তখনি আবার কল বেজে উঠে, আমি এক প্রকার বিরক্ত হয়ে তর্নিশাকে বলি যা- না মোবাইলটা ও কে দিয়ে আই।

-- তর্নিশা খেলায় এত ব্যাস্ত ছিলো সে তার হাতের মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বলে,তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? আমি ও কে কোথায় খোঁজবো? তুই এখানে রেখে দে, যার মোবাইল সে এসে নিয়ে যাবে।
--আচ্ছা আমি দিয়ে আসছি। এই বলে আমি মোবাইলটা নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে ছেলেটিকে খোঁজতে থাকি।
তখন আমার হাতে তর্নিশার মোবাইল ছিলো,যেটাতে কল বেজে উঠে। আমি তর্নিশার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখি একটা আনানোন নাম্বার তাই কলটা রিসিভ না করে ছেলেটিকে খোঁজতে থাকি।
কিন্তু তর্নিশার মোবাইলে বার বার একই নাম্বার থেকে কল আসায় আমি নিজে কলটা রিসিভ করতেই তখনি ও পাশ থেকে বলে,

--আজ তোমার প্রিয় বান্ধবী মরবে? ও কে বাঁচাতে চাও?
-- আমি এটা শুনে রেগে বলি, কে আপনি? এসব কি বলছেন? (কর্ণিয়া)
--আমি সত্যি বলছি,যদি তুমি তাকে বাঁচাতে চাও তাহলে এক্ষুনি এই রিসোর্টের ছাঁদে চলে এসো। না হলে কাল সকালে তোমার বন্ধবীর লাশ দেখবে।
--আমি রেগে বলি, কি ফাজলামো করছেন? কে আপনি?আর এসব কি বলছেন? ও কে আমি এক্ষুনি ছাঁদে আসছি আপনি সেখানে থাকুন।এই বলে আমি দ্রুত ছাঁদের দিকে যেতে থাকি।
তখনি ওই ছেলেটির মোবাইলে কল বেজে উঠে, আমি কলটা রিসিভ করতেই ও পাশ থেকে বলে, কি দোস্ত কোথায় তুই? কাজ কি হয়ে গেছে?
--এই মোবাইলটা এখন আমার কাছে? আপনি কি এই মোবাইলের মালিক কে চিনেন? ( কর্ণিয়া)
আমার কথা শুনে ও পাশ থেকে কতক্ষণ কোন উত্তর আসে নি। হঠাৎ ও পাশ থেকে বলে আচ্ছা আপনি এখন কোথায়?

-- আমি এখন ছাঁদের দিকে যাচ্ছি( কর্নিয়া)
-- আপনি সেখানে থাকুন আমি এক্ষুনি আসছি, এই বলে ছেলেটি কলটা কেটে দেয়।
আমি ছাঁদে গিয়ে দেখি কোথাও কেউ নেই। আমি তর্নিশার মোবাইল থেকে ওই নাম্বারে কল দিয়ে দেখি নাম্বারটা বন্ধ বলছে।
আমি আগে বুঝে গিয়েছি কেউ কোন খেলা খেলছে।তাই এক প্রকার বিরক্ত হয়ে নামতে যাবো, তখনি একটা মাক্স পড়া ছেলে আমার সামনে এসে বলে ম্যাডাম মোবাইলটা
-- আমি ছেলেটিকে কোন কিছু জিজ্ঞেস না করে মোবাইলটা ওর হাতে দিয়ে দিয়।
যখন আমি রুমে এসে দেখি তর্নিশা রুমে ছিলো না। আমার মোবাইলটা বিছানায় পড়ে আছে। আর খাবার গুলো ও নেই। আমার মনে হয়েছে তর্নিশা সব খাবার খেয়ে নিয়েছে। তাই আমি আবার খাবার ওয়ার্ডার দিয়। কিছুক্ষণের মধ্যে খাবার চলে আসতে আমি খেয়ে, একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য সুয়ে পড়ি।
প্রায় অনেকক্ষন হয়ে গেলো তর্নিশার খবর পায় নি। আমি ভাবছি হয়তো বাহিরে কোথাও গিয়েছে।
তখনি হঠাৎ ওয়াশরুম থেকে কিছু একটা পড়ার আওয়াজ শুনে আমি ওয়াশরুমের সামনে এসে দরজায় হাত দিতেই দেখি দরজা ভিতর থেকে লাগানো।আমি দরজায় হালকা ধাক্কা দিয়ে বলি ভিতরে তর্নিশা আছিস নাকি?

-- হুম!
আমি আর কিছু না বলে আবার বিছানায় সুয়ে পড়ি।
মোবাইল নিয়ে ফেসবুকে গিয়ে রাফিন উর্মি সাথে কথা বলছিলাম।
প্রায় অনেকক্ষণ হয়ে গেলো ও ওয়াশরুম থেকে বের থেকে হচ্ছে না দেখে।আমি আবার ডাক দিই,এই তর্নিশা কিরে, এতক্ষণ কি করছিস?
কোন জবাব নেই
আমি আর কিছুক্ষন অপেক্ষা করি।
যখনি বিছানা থেকে নামতে যাবো তখনি আবার লাইট অফ হয়ে যায়। মোবাইল বিছানায় রাখায়, হাত দিয়ে মোবাইল খোঁজতে থাকি।

তখনি আবার লাইট চলে আসে।
দূর এই রিসোর্টে এতবার কারেন্ট চলে যায় কেনো?
আমি ওয়াশরুম সামনে এসে দরজা বাহিরে রক্তের ছিটে ফোঁটা দেখে ভয়ে কাঁপতে থাকি। আমি দরজায় হাত দিতে দেখি দরজাটা খোলা। আমি দরজাটা খোলে ভিতরে একটা লাশ দেখে সেখান থেকে চিৎকার দিয়ে রুমে এসে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
সাইফ কর্নিয়ার মুখে সব কিছু শুনে, কর্নিয়ার উদ্দেশ্য বলে, আমার তো মনে হয় এটা ট্রেপ ছিলো, তোমার কথা অনুযায়ী মনে হচ্ছে ওই খুনিটা তোমাকে খুন করতে এসেছে।
কর্নিয়া এটা শুনে সাইফের উদ্দেশ্য বলে, স্যার আপনি এসব কি বলছেন? আমাকে কে খুন করতে আসবে?
-- সাইফ দেখ সেই রুমে তুমি আর তর্নিশা ছিলে রাইট?
--হুম (কর্নিয়া)
-- তুমি ভুল বশত তর্নিশার মোবাইল নিয়ে চলে গেছিলে, তখন তার মোবাইল একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে, তুমি কলটা রিসিভ করায়, তোমাকে বলে তোমার প্রিয় বান্ধবী মরবে,তাকে বাঁচাতে হলে ছাঁদে চলে আসো,

এই রুম থেকে ছাঁদে যেতে হেঁটে যেতে ১০ মিনিটের মত লাগে,একটা খুনি করতে খুন ১০ মিনিটের থেকে কম সময় লাগে। এবার তুমি ভেবে দেখো।
যাই হক এখন তর্নিশার মোবাইলে টা আমাকে দাও।
তখনি সেখানে থাকা একটা স্টাফ সাইফের উদ্দেশ্য বলে স্যার ১০০ নাম্বার রুমে খাবার আনার কথা এর ছিলো। একজন স্টাফকে দেখিয়ে বলে।
সাইফ সে স্টাফের কথা শুনে ওই স্টাফের সামনে এসে বলে এই রুমে খাবার তুমি এনেছিলে?
স্টাফ ভয়ে ঘামতে থাকে তোতলাতে তোতলাতে বলে স্যার
সময় নেই তাড়াতাড়ি বলো তুমি খাবার এনে ছিলে? এই রুমে
স্টাফ ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে আসলে স্যার আমি আনি নাই এই রুমে খাবার?
-- তাহলে কে এনেছে?( সাইফ)
-- জানিনা,

-- সাইফ স্টাফের মুখটা চেপে ধরে বলে সত্যিটা বল না হলে তোকে এক্ষুনি
স্টাফ ভয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে, বলছি স্যার! বলছি।
আসলে স্যার ম্যাডাম যখন খাবারের ওয়ার্ডার দিয়েছিল। আমি খাবার নিয়ে, করিডোরে দিয়ে আসছিলাম তখন মাক্স পড়া একটা ছেলে আমার সামনে এসে আমাকে টাকা দেখিয়ে বলে, খাবার গুলো আমাকে দাও আমি নিয়ে যাচ্ছি, আর তুমি টাকা গুলো নিয়ে চলে যাও।
-- আরে কে তুমি? ( স্টাফ)
-- এত প্রশ্ন করছো কেনো? অপারটি ভালো লাগেনি(ছেলেটি)
--স্টাফ ছেলেটিকে এড়িয়ে দু-পা এগিয়ে যেতে, ছেলেটি আবার সামনে এসে, ওর কাঁধে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়।
-- আরে ভাই শুন আমি তো মজা করছিলাম, ওরা আমার বন্ধু হয়, ওদের সারপ্রাইজ দেওয়া জন্য আমি খাবার গুলো নিয়ে গিয়ে ওদের চমকে দিতে চাই। (ছেলেটি)

ওহহ তুমি সত্যি বলছো? আরে এইভাবে মুখোশ পড়ে আছো কেনো? (স্টাফ)
--- আরে প্রথমে ওদের ভয় দেখাবো,তারপরই তো মুখোশটা খোলে ওদের চমকে দিবো তুমি এসব বুঝবেনা। এই বলে ছেলেটি স্টাফের হাত থেকে খাবার গুলো নিয়ে ওর পকেটে টাকা ডুকিয়ে ছেলেটি ১০০ নাম্বার রুমের দিকে হাঁটা শুরু করে।
স্টাফের মুখে এসব শুনে পুলিশ বলে, ওহহহ সিট, পরের বার থেকে এইরকম বোকামি করবে না। তোমার জন্য আজকে একটা প্রাণ গেলো।
এই লাশটা তোলো,দুইজন পুলিশ কর্নিয়া লাশ তুলে নেয়। আর হাঁটা শুরু করে।
সাইফ সবার উদ্দেশ্য বলে কাল সকালে লাশ এখানে পাঠিয়ে দিবো।আর তোমরা সবাই সাবধানে থাকবে। বিশেষ করে কর্নিয়া তুমি সাবধানে থাকবে।
এই বলে সাইফ সেখান থেকে চলে যেতে নিলে রাফিন সাইফের উদ্দেশ্য বলে,
স্যার আমিও আপনার সাথে যাবো।

সাইফ ও কে আসো এই বলে তারা বেরিয়ে পড়ে
একে একে সবাই সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।
কর্ণিয়া,উর্মি,হ্যালি,ক্যাথিয়া,রুহাম সবাই একরুমে চুপ করে বসে আছে। তারা সাতজন একসাথে এসেছে, কত খুশি ছিলো।এখন বাসায় গিয়ে কি জবাব দিবে। সবাই তর্নিশার জন্য কান্না করছে সবথেকে বেশি কর্নিয়া কাঁদছে।

রুহাম শুধু চিন্তা করছে কে করতে পারে এই খুনটা,আমাদের তো কোন শত্রু নেই।
সরারাত তারা ঘুমায় নি। কোন খাওয়া দাওয়া করে নি।
সকালে একটা এম্বুলেন্সের আওয়াজ শুনে,সবাই বাহিরে বেড়িয়ে আসে।
তখন কোথায় থেকে সাংবাদিকরা এসে রিসোর্টে গেইটে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করে কি শুরু হচ্ছে আবার এই রিসোর্টে? আবার এই রিসোর্টে প্রাণ হারালো একজন, কে করছে এই খুন ? আজ থেকে প্রায় ষোল সতেরো বছর আগে এই রিসোর্টে দুইটা খুন,এতবছর পরেও আবার খুন হলো, এটা কি শুধু কাকতালীয়? নাকি কারো হাত আছে এই খুন গুলো মধ্যে?

ম্যানেজার সাংবাদিকদের দেখে তাদের আটকাতে সেখানে চলে যায়।
উর্মি,হ্যালি,ক্যাথিয়া গিয়ে সব ব্যাগ পত্র নিয়ে আসে।
কর্ণিয়া রাফিন এম্বুলেন্স উঠে বসে। বাকিরা একটা গাড়িতে উঠে তর্নিশার বাসার উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
কর্নিয়া রাফিনের কাঁধে মাথা দিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। আর চোখ টপটপ চোখের জল পড়ছে।
রাফিন কর্ণিয়ার মাথায় হাত দিয়ে বলে, আরে দেখ এইভাবে কাঁদিস না। এই ভাবে ভেঙে পরিস না।
কর্নিয়া কোন কথা না বলে চুপচাপ রাফিনের কাঁধে মাথায় দিয়ে বসে থাকে।
একসময় তারা তর্নিশার বাসায় আসতেই...

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com