রাজশাহী শহর থেকে চলে আসার পর বুঝতে পারলাম রাজশাহী শহরটা কত সুন্দর ছিল



রাজশাহী শহরটাকে সবসময়ই ভালবেসেছি, কিন্তু শহরের কিছু বিষয় নিয়ে অভিযোগও ছিল বেশ!

এখনো হয়তো একটু আকটু আছে।
যেমন মনে হতো এই শহরে না আছে সমুদ্র, না আছে পাহাড় আর না আছে চা বাগান!
তবে, রাজশাহী ছেড়ে আসার পর টের পাই আসলে কি ছেড়ে এসেছি! আর আসলে রাজশাহীতে কত কি আছে!
সমুদ্র না থাকলেও পদ্মা নদী আছে, রাজশাহী সেই নদীর পারে এতগুলা পর্যটন কেন্দ্র আছে!
ফুলতলা, শ্মশানঘাট, পদ্মা গার্ডেন, মুক্তমঞ্চ, বিজিবি, আইবাধ, টি-বাঁধ, নবগঙ্গা...সহ আরও কতগুলা পাড়!
ভোর দেখতে চাইলে চলে যাওয়া যেতো রাজশাহী টি-বাঁধে! কি সুন্দর স্নিগ্ধ ভোরবেলা, ভোর থেকে সকাল হতে দেখা!
সাথে ওখানে বসেই চা খাওয়া...

বাইরে নাস্তা করতে চাইলে রানার মিষ্টি আর পরোটা খেতাম। কিংবা জোড়াকালি মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের নিরামিষ, পরোটা আর মিষ্টি....
রাজশাহী বিন্দু হোটেল, ডালাসেও যেতাম...
রাজশাহীর নদীর পাড়গুলো জনসাধারণের জন্য ফ্রি! যার যেখানে ইচ্ছে বসে থাকছে, আড্ডা দিচ্ছে, গান গায়ছে, ছবি আঁকছে, প্রেম করছে...
শুক্রবারে এইসব জায়গায় গেলেই মনে হতো কোনো উৎসব চলছে! এত মানুষ পরিবার, পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসতো!
বিজিবি মুক্তমঞ্চে প্রায় শুক্রবারেই অনুষ্ঠান হয়, সেসব অনুষ্ঠানও ফ্রি দেখা যেতো!
মন খারাপে রিকশা নিয়ে ঘুরতে পারতাম ঘন্টার পর ঘন্টা। এত সুন্দর সব রাস্তা! পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। ডিভাইডারে নানান রকম ফুলের সমাহার। কোনো রাস্তায় সূর্যমুখী, কোনো রাস্তায় কাঠগোলাপ, আবার কোথাও রঙ্গন...
বাংলাদেশের আর কোনো শহরে এমন দেখিনি।
ঘুরতে ঘুরতে ক্ষুধা পেলে যেকোনো জায়গায় নামলেই কিছু না কিছু খাবার পাওয়া যেতো, এত স্ট্রিটফুডের দোকান।

একই রকমের চা খেয়ে একঘেয়েমি চলে আসলে আলাদা আলাদা ফ্লেভারের চা খাওয়ার জন্য যেতে পারতাম রাজশাহী জিরোপয়েন্ট, রাজশাহী বিজিবি মুক্তমঞ্চের নিচের মাঠে, অলকার মোড়, বর্ণালী মোড় কিংবা রাজশাহী সিএন্ডবিতে..
সিএন্ডবিতে শুধু চা খাওয়ার জন্য না, আড্ডার জন্যেও যাওয়া যেতো। ছবি তোলার জন্যেও যাওয়া যেতো..
বসার জন্য, হাটার জন্য, ছবি তোলার জন্য এত সুন্দর একটা রাস্তা! এত সুন্দর ব্যবস্থা!
রেস্টুরেন্টে খেতে যেতে ইচ্ছে করলে অপশনের শেষ নাই! আর বেশিরভাগই এত বাজেটফ্রেন্ডলি!
ব্যাগে যদি দেড়/দু'শ টাকাও থাকতো তাতেও চলে যাওয়া যেতো কোনো না কোনো রেস্টুরেন্টে, চিন্তা হতোনা "এই টাকায় হবে তো!"

কারণ জানতাম, কিছু একটা হয়েই যাবে...
রেস্টুরেন্টে যেতে না চাইলে রাজশাহী স্ট্রিটফুডের দোকানের কমতি নাই! ওই যে বললাম...
ভদ্রায় লেকপাড়ে বসে ভিউ এনজয় করতে করতে মোমো, চিকেন শাসলিক কিংবা অন্য কিছু খাওয়া যেতো, রাজশাহী জিরো পয়েন্টের ভাজাপোড়া আছে, নিউ মার্কেটের ভেতরে ভাংচুর আছে (ভাংচুর কিন্তু একটা খাবারের নাম) রাজশাহী নিউমার্কেটের বাইরে হালিম থেকে শুরু করে, চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ফুচকা, চটপটি, চপ পিয়াজু....কি নাই! নাস্তার জন্য যেকোনো কিছু ভাবলেই তা পাওয়া যেতো ওখানে।

শুধু ওখানে না, বাটার মোড়ের পিছনে, রাজশাহী উপশহর নিউমার্কেটের সামনে, নগর ভবনের আশেপাশে... কত্ত জায়গায় কত্তরকম স্ট্রিটফুডের পসরা!
ভাজাভুজি ছাড়াও মোড়ে মোড়ে শিক বার্গার তো আছেই! ২০/২৫ টাকায় একেবারে ভরপেট একটা খাবার! খেতেও খুব মজাদার...
এমন একটা শহর রাজশাহী যেখানে কম খরচে খাওয়া যায়, কম ভাড়ায় রিকশায় ঘুরা যায়, কম বেতনে চলা যায়...
সেই শহর ছেড়ে অন্য শহরে যারা যায়, তারাই টের পায় কি ছেড়ে গেছে!

কিন্তু না যেয়েও উপায় থাকেনা, জীবন জীবিকার জন্য যেতে হয়।
রাজশাহীতে কমতি বলতে আমি দেখি পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নাই! যদি থাকতো তাহলে অনেক ঘরের বাচ্চারা ঘরেই থাকতো, অন্য শহরে যেতোনা...
যাজ্ঞে, সব শহরেই সুবিধা অসুবিধা আছে, আজ সেসব নিয়ে আর না বলি।
শুধু এটুকু বলি, যারা রাজশাহীতে থাকেন তারা বাংলাদেশের স্বর্গে থাকেন। আপনারা ভাগ্যবান বলেই এত সুন্দর একটা শহরে থাকতে পারছেন।

আমার মতো যারা রাজশাহী এর বাইরে থাকছি, আমরা বুঝতে পারছি কি ছেড়ে এসেছি!
রাজশাহীকে মিস করছি, রাজশাহীর সবকিছু মিস করছি!
একটা শহরকে যে এত তীব্রভাবে মিস করা যায়, রাজশাহী ‘র বাইরে না এলে টের-ই পেতাম নাহ!
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url