Breaking News

ভালোবাসি প্রিয় । পর্ব - ১১



গত পর্বে ছিলো.... নাফিসা আর রিসাদ মিলে মেহেদীকে জেলে পাঠায়,এই আঘাত সইতে না পেরে মেহেদীর মা মা-*রা যান। হাসপাতালে মেহেদী আসে তার মাকে শেষ দেখা দেখতে।

তারপর...

দিনা নাফিসার পাশে বসে বলতে লাগলো....
- তুই কান্না করছিস কেন! তোর তো খুশি হওয়ার কথা! প্রতিশোধ তো নেয়া হয়ে গেছে! বাসায় চলে যা...
দিনা উঠে চলে গেলো। নাফিসা দিনার যাওয়ার পথে চেয়ে রইলো। সে তো এটা চায় নি! মেহেদীর ফ্যামিলি সম্পর্কে কিছু জানতোই না সে! প্রতিশোধ নেয়ার মোহে অন্ধ হয়ে গেছে সে! তার ফ্রেন্ড ও আজ তার বিপক্ষে দাড়িয়ে! নাফিসা উঠে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো। বাসায় চলে এলো। মামির সাথে দেখা হতেই মামি জিজ্ঞেস করলো,
- এতো সকালে কোথায় গেছো? নাস্তাও করোনি! কল করছি রিসিভ ও করছো না!
- একটা জরুরি কাজ ছিলো মামি।
- আচ্ছা, যাও। হাতমুখ ধুয়ে আসো, আমি খাবার দিচ্ছি।
- খাবো না আমি।

নাফিসা রুমে এসে পার্স ঢিল মেরে ফেলে জানালার পাশে, খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে। তার কানে শুধু মেহেদীর বলা কথা গুলোই বেজে চলেছে!
"অভিনয় করতে করতে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছিলাম তোকে! কমপিটিশন জিতে গেলে ক্ষমা চেয়ে নিতাম তোর কাছে! নাম কা-*টিয়ে নিবো বলেছিলাম, তাহলে মিথ্যে অপবাদ দিলি কেন আমার নামে! আমার পৃথিবী কেড়ে নিলি কেন! বিশ্বাস কর, মা ছাড়া আমার আর কেউ ছিল না! আজ মা ও নেই! মামলা এমন ভাবে উপস্থাপন কর যাতে কয়েক ঘন্টার মধ্যে আমার ফাসির রায় হয়ে যায়!"
নাফিসার চোখ থেকে টুপটাপ পানি গড়িয়ে পড়ছে! মামি খাবার নিয়ে নাফিসার রুমে চলে এলো। নাফিসার চোখে পানি দেখে প্লেট টেবিলে রেখে মামি পাশে বসলো।
- নাফিসা, কি হয়েছে তোমার? এই মেয়ে, কাদছো কেন?
নাফিসা মামিকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কান্না করতে লাগলো।
- নাফিসা এভাবে কান্না না করে বলো আমাকে, কি হয়েছে?
- বাবা মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে মামি।
- এই পা-*গলী মেয়ে, আমি তোর মা না? চুপ, একদম কান্না করবি না। মুখ ধুয়ে আয় আমি খায়িয়ে দেই। কাল রাতেও খাওয়া হয়নি। যা...

নাফিসা ওয়াশরুমে চলে গেলো। চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে আয়নায় নিজের চেহারা দেখে বলতে লাগলো,
- আমি যে মিথ্যে মামলা দিয়ে কোনো মায়ের প্রানে আঘাত করেছি! কোন ছেলের জীবন ধং-*স করে দিয়েছি! কোন মা আমার জন্য দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে! সেটা কি করে বলবো তোমাকে, মামি!
কিছুক্ষন পরে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মামির কাছে এলো। মামি খায়িয়ে দিয়ে রুম থেকে চলে গেলো। একটু পর রিসাদ কল করেছে। প্রথম বার রিসিভ করে নি, পরেরবার রিসিভ করলো।
- ভার্সিটি আসবে না আজ?
- না।

- নাফিসা, মেহেদীর মা মা-*রা গেছে আজ। জানাজা পড়লাম মাত্র। আন্টি অনেক ভালো ছিলেন। মেহেদীর বাবা ছোট বেলায় মেহেদীকে সহ আন্টিকে রেখে চলে গেছেন। চরিত্র ভালো ছিলো না উনার। এখন বেচে আছে কি ম-*রে গেছে কেউ জানে না। আন্টি অনেক কষ্ট করে মেহেদীকে লালন পালন করেছেন। মাঝে মাঝে বাসায় গেলে আমাদেরও খুব আদর, সেবাযত্ন করতেন।
রিসাদের কথাগুলো এখন অসহ্য লাগছে নাফিসার কাছে! আগে থেকেই এতোকিছু জানতো তাহলে নাফিসার পক্ষ নিয়ে মেহেদীর সাথে শত্রুতা কিভাবে করতে পারলো সে! নাফিসা নাহয় প্রতিশোধ নেয়ার মোহে অন্ধ হয়ে গেছে, রিসাদ কেন আগে একবার বললো না যে নাফিসা তুমি ভুল পদক্ষেপটা নিয়ো না! নাফিসা রিসাদকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

- মেহেদী এখন কোথায়?
- জানাযা শেষ করার পর পুলিশ থানায় নিয়ে গেছে।
- কথা বলতে ভালো লাগছে না আমার। বাই...
- ইগনোর করছো কেন আমাকে!
- ইগনোর কোথায় করলাম! বললাম কথা বলতে ভালো লাগছে না। শরীরটা আমার খারাপ লাগছে।
- অসুস্থ তুমি? কি হয়েছে?

- কিছুনা, এমনি দুর্বল লাগছে। রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে।
- ওকে। বাই...
নাফিসা কল কেটে পুলিশ আংকেল কে কল করলো।
- হ্যাঁ নাফিসা বলো।
- আংকেল, মেহেদী কোথায়?
- একটু আগে থানায় নিয়ে এলাম। আজ ওর মা মারা যাওয়ার আজ নিবো না, কাল সকালে কোর্টে চালান করবো।
- আংকেল কোর্টে চালান করবেন না প্লিজ। আমি মামলা উঠিয়ে নিতে চাই।
- কি বলছো তুমি! অপহরণের মামলা এতো সহজ না। কঠিন শাস্তি পাবে সে।
- আংকেল আমি মিথ্যে মামলা দিয়েছি।
- হোয়াট!

- জ্বি আংকেল। ও এমন না, মেহেদী খুব ভালো ছেলে। ওর সাথে ছোট খাটো একটা ঝ-*গড়া হওয়ায় ও আমাকে ভয় দেখানোর জন্য হু-*মকি দিয়েছিলো শুধু। তাই আমি মিথ্যে মামলা দিয়েছি।
- তুমি জানো, তুমি কি করেছো! একটা লাইফ ন*-ষ্ট করে দিয়েছো! আইনের হাতে কোন কাজ এলে সেটা সহজে সরে না। তোমার এ কাজের জন্য তোমার এবং সাক্ষীদাতার শাস্তি হতে পারে।
- প্লিজ আংকেল, একটু চেষ্টা করুন। ওকে মুক্তি দিয়ে দিন, প্লিজ।
- তোমাকে মামলা উঠানোর জন্য এখন আবার কেউ হু-*মকি দিচ্ছে না তো!
- না আংকেল, আমি এখন সত্যি বলছি। প্লিজ, মামলা নিষ্পত্তি করে দিন। বিনিময়ে আমার শাস্তি হলে আমি তাতে রাজি আছি।

- হুহ্! আইনের কর্মকাণ্ড পুতুল খেলা না নাফিসা। কোন কাজ করার আগে ভেবে করতে হয়। আর জেদ করে কোন কাজ করা ঠিক না। তোমার জন্য ছেলেটার যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনো পূরণ সম্ভব না। যাক, ভালো হয়েছে এখন কল করেছো। কোর্টে চালান করলে এ শাস্তি হতে মুক্তি পাওয়া যেত না। আমি চেষ্টা করছি ছাড়ানোর। এখন ছাড়বো না। দুপুরে দেখি...
- ওকে, আংকেল।
- দুপুরে তোমাকে আসতে হবে। মামলা উঠিয়ে নেয়ার দলিলে স্বাক্ষর করতে হবে।
- আংকেল এটা পরে করলে হবে না? মানে, আমি মেহেদীর সামনে যেতে চাচ্ছি না।
- স্বাক্ষর না করলে ছাড়া যাবে না।
- তাহলে এখন এসে স্বাক্ষর করে যাই, দুপুরে ছেড়ে দিবেন।
- আচ্ছা, আসো।
নাফিসা পার্স আর ফোন নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলো। আংকেলের সাথে কথা বলে মামলা উঠিয়ে নিলো।
কাজ সম্পন্ন করে বাসায় এসে দিনার কাছে কল করলো।
রিসিভ করছে না, বারবার কেটে দিচ্ছে ।
মেসেজ সেন্ট করলো, " মেহেদীকে নিয়ে জরুরি কথা আছে, প্লিজ একবার রিসিভ কর।"
এবার রিসিভ করতেই নাফিসা বলতে লাগলো,

- আবিদ ভাইয়া কোথায়?
- বাইরে গেছে একটু।
- আমি মামলা উঠিয়ে নিয়েছি, ভাইয়াকে বলিস দুপুরে মেহেদীর কাছে যেতে। ভাইয়া গেলে মেহেদীকে ছাড়া হবে।
- উঠিয়ে নিলি কেন? শাস্তি পাওয়া দরকার ছিলো, তাছাড়া তুইও খুব শান্তি পাবি।
- দিনা প্লিজ। বারবার এক কথা তুলবি না। দোষ আমার একা ছিলো না, শুরুটা মেহেদীই করেছে।
নাফিসা কল কে-*টে দিলো। দুপুরে আবিদ মেহেদীকে নিয়ে এলো তাদের বাসায়। পুরো ভার্সিটি সহ আশেপাশে সবাই জেনে গেছে, মেহেদী অপহরণের দায়ে জেলে ছিলো। একটা দিন, মাত্র একদিনে মেহেদীর পুরো জীবনটা পাল্টে গেছে!

বিকেলটা কাটিয়ে জোর করে আবিদের বাসা ছেড়ে তার নিজের বাসায় ফিরে এলো।
মায়ের রুমটা একবার ঘুরে গেলো, নিজের রুমটা দেখলো।
প্রত্যেকটা আসবাবপত্র নিয়ে হাজারো স্মৃতি চোখের সামনে ভাসছে।
সন্ধ্যায় আবিদও চলে এসেছে মেহেদীর সাথে থাকতে। একা ছাড়া যাবে না এখন মেহেদীকে!
নাফিসা আজও বই সামনে নিয়ে বসে আছে।
রিসাদের কাছে শুনেছিলো ভার্সিটি থেকে নাকি মেহেদীকে বহিষ্কার করা হয়েছে!
নাফিসা ভার্সিটি যাচ্ছে না তাই পলাশ স্যার কল করেছিলো প্রাক্টিস এর জন্য।
নাফিসা জানিয়েছে এখন একটু প্রব্লেমে আছে পরে প্রাক্টিস করবে।
সে ছেলেটার লাইফ ন-*ষ্ট করে দিয়েছে! মামা রুমে ঢুকতেই ভাবনার ছেদ ঘটলো,
- এমন বিষন্নভাবে বসে আছো কেন বই সামনে রেখে! কি হয়েছে?
- কিছু না।
- রিসাদকে চেনো?
নাফিসা একটু চমকে উঠলো। রিসাদের কথা মামা জানে কিভাবে!
- চেনো না?
- হ্যাঁ।

- ও তোমাকে পছন্দ করে। তার বাবা আমার খুব কাছের বন্ধু। একসাথেই ব্যবসা করি আমরা।
ফ্যামিলিও খুব ভালো। আজ কথা হলো তোমাকে নিয়ে তার বাবার সাথে।
পছন্দ করো তুমি রিসাদকে?
নাফিসা কি জবাব দিবে ভেবে পাচ্ছে না! সে রিসাদকেও পছন্দ করে না।
দেখতে যথেষ্ট স্মার্ট হলেও তাকে নিয়ে কোন ফিলিংস নেই।
শুধু তার পক্ষ নিয়েছিলো বলে বন্ধুসুলভ মিশেছে!
কিন্তু এটা খুব ভালো জানে, রিসাদ তাকে খুব পছন্দ করে।
এখন মামাকে না বললেও তো মামা বলবে তাহলে চেনো কিভাবে! নানান কথা ভাবতে ভাবতে জবাব দিলো,
- হ্যাঁ।

- ওর বাবা চায় তোমার মতামত থাকলে বিয়েটা দ্রুত সম্পন্ন করতে।
তুমি সেখানে থেকেও পড়তে পারবে, এখানেও থাকতে পারবে। সেটা সম্পূর্ণ তোমার ইচ্ছা।
ছেলেটাকে আমার কাছেও খুব ভালো লেগেছে। এখন তুমি কি বলো?
- মামা, এতো তারাতাড়ি বিয়ে!
- কতদিন বাচি আল্লাহ ছাড়া কে জানে! তোমাকে কারো হাতে তুলে দিতে পারলে আমি দায়িত্বমুক্ত হবো। বিয়েটা পড়িয়ে রাখলেও তো সমস্যা নেই!
- আচ্ছা মামা, যা ভালো মনে করো তাই করো।

মামা চলে গেলো। কিছু ভালো লাগছে না তার কাছে! নিজের জীবনটাকে আজ তার কাছে বোঝা মনে হচ্ছে। অন্যদিকে এই রিসাদের কর্মকাণ্ড! ও-*ফ্ফ! অসহ্যকর!
পরেরদিন রিসাদ ও তার বাবা মা নাফিসাদের বাসায় হাজির! নাফিসা তাদের দেখে অবাক হলো!
রিসাদের সাথে একা কথা বলে জানতে পারলো, ওর বাবা মা দেখতে এসেছে নাফিসাকে।
আর মেহেদী নাকি কোনোভাবে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গেছে। তাই নাফিসাকে নিয়ে তার ভয় হয়।
এজন্য বিয়েটা একটু তারাতাড়ি করতে চাচ্ছে! কিন্তু নাফিসা সারাক্ষণ মেহেদীর কথাই ভাবছে।
নাফিসাকে রিসাদের বাবা-মা দেখে খুব পছন্দ করেছে, তারা আজ আংটি পড়িয়ে যেতে চায়।
সেই প্ল্যান নাফিসাকে না জানিয়ে রিসাদ বাসা থেকে আগেই করে এসেছে সারপ্রাইজ দিবে বলে।
মামা মামীর সম্মতিতে তারা সেই কাজটা সারতে চাচ্ছে৷ রিসাদের মা নাফিসার হাতে আংটি পড়াতে গেলে নাফিসা হাত টেনে নিয়ে দাড়িয়ে গেলো। সবাই অবাক হলো, তার চোখে পানি! মামা জিজ্ঞেস করলো,

- নাফিসা কি হয়েছে? উঠে গেলে কেন?
- নাহ! মামা, আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
- বিয়ে হয়ে গেছে মানে!
- হ্যাঁ, আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
নাফিসার কথা শুনে সবাই অবাক! রিসাদের মনে হচ্ছে নাফিসা মজা করছে। তাই বললো,
- নাফিসা, বড়রা এখানে সিরিয়াস হয়ে কথা বলছে। দেখো, এখন মজা করার সময় না।
- আমি মজা করছি না, রিসাদ। আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
- আচ্ছা! মজা করছো না! বিয়ে কবে হলো! কার সাথে হলো, বলো....
- মেহেদীর সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
- হোয়াট!!!

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com