আইসিটি স্যার যখন বর । পর্ব - ২৭
ফারহাঃ আংকেল আপনিইইই?
ফারহা কথা শুনে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাহাত। রাহাত বিষয়টা বুঝে উঠার জন্য চারপাশ তাকিয়ে দেখছে কেউ আছে কি না! নাহ কেউ তো নেই। তাহলে!
ফারহাঃ কি ব্যাপার আপনি আমার কথা উত্তর না দিয়ে এভাবে চোরের মতো এদিকওদিক উকি দিচ্ছেন কেন?
রাহাতঃ আংকেল কে?
ফারহাঃ কেন? আপনি! এখানে আপনি ছাড়া আর কেউ আছে নাকি?
রাহাতঃ হোয়াট দ্যা!
ফারহাঃ ভুল বললাম নাকি? আপনি নিজেই তো বলেছিলেন যে আপনি আমার বাবার মতো। বাবার মতো কিন্তু বাবা তো নয় তার মানে আংকেল।
রাহাতঃ তোমাকে তো আমি,,,,,
ফারহাঃ হুহ! আমাকে কি করবেন আপনি? ভুলে যাবেন না এইটা আমার শ্বশুর বাড়ী। বাই দ্যা ওয়ে, আপনি এখানে কি করছেন?
রাহাতঃ লিসেন, এইটা আমার বাড়ী।
এই বলে রাহাত ওয়াসরুমে চলে গেলো।
ফারহাঃ মানে কি! এইটা যদি রাহাত স্যারের বাড়ী হয়, তাহলে আমার শ্বশুর বাড়ী কোথায় গেলো?
আর উনি এই রুমের ওয়াশরুমে গেলেন কেন? আর জিয়ানটাই বা গেলো কোথায়? এই ছেলে তো দেখি আস্ত একটা হাদারাম। এতক্ষণ হয়ে গেলো এখনো আসছেই না, আর এদিকে তার রুমে অন্য কেউ ডুকে বসে আছে। অসহ্য!
ফারহা কথা গুলো ভাবছে আর রুমে মধ্যে পাচারি করতেছে। কিছুক্ষণ পর রাহাত বের হলো। ফারহা কিছু বলার আগে ধুপ করে খাটের মধ্যে শুয়ে পড়ে।
এইটা দেখে ফারহার চোখ কপাল উঠে গেলো।
ফারহাঃ কি হচ্ছেটা কি? আপনি এখানে শুয়েছেন কেন?
রাহাতঃ,,,
ফারহাঃ কি হলো চুপ করে আছেন কেন উঠুন বলেতেছি উঠুন। এইটা কোন ধরনের অসভ্যতামি?
রাহাতঃ সেটাই তো এইটা কোন ধরনের অসভ্যতামী তোমার? এতো রাতে চেঁচামেচি করতেছো কেন? নতুন বউ এই ভাবে চেঁচাচ্ছে এটা মানুষ শুনলে কি বলবে।
ফারহাঃ আমার অসভ্যতামী মানে? চেঁচাব না তো কি করবো? আপনি এই রুমে শুয়েছেন কেন?
রাহাতঃ আজব আমার রুমে আমি থাকবো না তো কে থাকবে?
ফারহাঃ আপনার রুম মানে! এইটা আমার স্বামী ঘর। আচ্ছা আমার স্বামী কোথায়? আপনি ওর সাথে কিছু করেন নাই তো?
রাহাতঃ বাসর ঘরে নিজের বউ আরো একটা স্বামী খুঁজতেছে। আল্লাহ্! নেহাত আমি ভালো ছেলে দেখে কিছু বলতেছি না অন্য কেউ হলে এতক্ষণে তোমার কানের নিচে দুইটা দিতো।
ফারহাঃ সা স্বামী মানে? আপনার
রাহাতঃ হুম আমার সাথেই তোমার বিয়ে হয়েছে মানে আমি তোমার স্বামী।
ফারহাঃ কিন্তু আমি তো আপনাকে বিয়ে করি নাই। আমি তো জিয়ানকে বিয়ে করেছি।
রাহাতঃ জিয়ান ও আমি, রাহাত ও আমি। বাসার সবাই আমমায় জিয়ান ডাকে বুঝেছো?
ওনার কথা শুনে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে।
রাহাতঃ এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই, মায়ের পছন্দ তাই বিয়ে করতে রাজি হয়েছি। ভেবেছিলাম কিছুদিন যাওয়ার পর বলবো বিয়ে করবো না কিন্তু তুমি তো তা হতেই দিলে না। তোমায় এই শুক্রবার বিয়ে করতেই হবে। নিজের হাতে নিজের জীবনটা তেজপাতা করে দিলাম,, তোমার মতো পাগলীকেকে বিয়ে করে যে কিনা বাসর ঘরে জামাইকে জিজ্ঞাস করে আমার স্বামী কোথায়?
উনার কথা গুলো শুনে মাথা পুরা আগুন হয়ে গেলো। বজ্জাত বলে কি না আমি পাগলী? আমার জন্য জীবন তেজপাতা হয়ে যাবে!
ফারহাঃ হায় হায়,, এইটা আমার কি হলো?
রাহাতঃ আরে আবার কী হলো?
ফারহাঃ আমার কপাল পুড়েছ কপাল। বাবা তুমি আমার সাথে এইটা করতে পারলা? শেষে কি না একটা আংকেলের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিলা?
রাহাতঃ কি বললে! দাঁতে দাঁত চেপে
ফারহাঃ আংকেল বলেছি আংকেল।
রাহাতঃ আর একবার বলো তো দেখি,,
ফারহাঃ একবার কেন হাজার বার বলবো। আংকেল আংকেল আ,,,,
আরে বাবা রে এই রাক্ষস তো দেখছি খেপে গেছে, এইভাবে লাল চোখ করে তাকিয়ে আমার দিকে এগুচ্ছে কেন? এখন আমার কি হবে!
আমার দিকে এগুতে এগুতে আমায় একদম দেওয়ালের সাথে এসে ঠেকলেন। কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বললেন,
রাহাতঃ কি হলো ভয় পাচ্ছো কেন?
ওনার গরম নিশ্বাস আমার গাড়ে এসে পরছে। কেমন একটা শিহরণ বয়ে যাচ্ছে আমার শরীরে। বুকের মধ্যে ধুকপুক ধুকপুক করতেছে, মুখ দিয়ে যেন কথা বের হচ্ছে না।
রাহাতঃ কথা বলতেছ না কেন? তখন কি কি জানি বলছিলে আমি চোর, অসভ্য, আংকেল এখন চুপ করে আছো কেন? কথা বলো।
ফারহাঃ আ আপ আপনি এতো কাছে আসতেছেন কেন?
রাহাতঃ কেন ভুলে গেলে নাকি? আজকে না আমাদের বাসর রাত? বাসর করতে হবে না?
ফারহাঃ বা বা সর!
রাহাতঃ হুম বাসর,,
ফারহাঃ ভ্যা ভ্যা,,,,
রাহাতঃ আবার কি?
ফারহাঃ এ্যা এ্যা,, আমি বাসর করবো না,,,, ভ্যাাা
রাহাতঃ আল্লাহ্! দেখো তোমার মতো বাচ্চা মেয়ের সাথে আমার বাসর করার কোনো ইচ্ছেই নেই। যাও চেইঞ্জ করে পড়তে বসো।
ফারহাঃ পড়বো! তাও বাসর রাতে?
রাহাতঃ তুমি তো বাসর করবা না তাই পড়তে হবে। মোট কথা দুইটা অপশন, বাসর নাহয় পড়বা।
ফারহাঃ হুহ কোনোটাই করবো না।
রাহাতঃ তাহলে আমি জোর করেই,,,,
ফারহাঃ না না পড়বো,,,
বাবা একে বিশ্বাস নেই, পড়ায় ভালো।আরে বাহ আমি তো বই আনি নাই। হিহিহি চান্দু এইবার কি করবা?
ফারহাঃ বলছিলাম কি আংকেল না মানে স্যার আমার বই গুলো তো সাথে করে নিয়ে আসি নাই।পড়বো কি ভাবে? ইনোসেন্ট ভাব নিয়া বললাম।
রাহাতঃ কে বলেছে আনো নাই? তানহা তো নিজ দায়িত্বে সব গুলো বই গাড়ীতে তুলে দিয়েছে।
নিজের বোন যদি শত্রু থাকে তাহলে আর কি লাগে? এই তানহাকে তো আমি খবর করে ছাড়বো।
রাহাতঃ থাম্বার মতো দাঁড়িয়ে না থেকে যাও ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসো।
ফারহাঃ অসহ্য।
ফ্রেশ হয়ে এসে পড়তে বসেছি। ঝিমুচ্ছি আর পড়তেছি আর শয়তানটাকে দেখেন কি আরামে ঘুমাচ্ছে। আল্লাহ্ এই ছিলো আমার কপালে? শেষে কি না বাসর ঘরে স্বামী আমায় পড়াতে বসাইছে। এমন জামাই যেন আমার শত্রু কপালেও না জুটে,,,, তবে একটা জিনিস ভালোই হয়েছে যাকে ভালোবেসেছি তাকে জীনবসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি। কিন্তু আমি এত সহজে সবটা মেনে নিবো না। উনি আমার ভালোবাসাকে অসম্মান করেছে সবার সামনে এরর শাস্তি উনাকে পেতেই হবে।
ভাবতে ভাবতে আর পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি খবরি নেই। আমার আবার কাজ কম ভাবনা বেশি, যাকে বলে অকর্মা।
মনে হচ্ছে আমার গায়ে বৃষ্টির পানি পড়তেছে মানে শুয়ে শুয়ে বৃষ্টিতে ভিজতেছি। স্বপ্ন ভেবে ঘুমানো চেষ্টা করতেছি, কিন্তু না স্বপ্নের বৃষ্টি যেন থামছেই না।
আস্তে করে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি আমি সত্যি সত্যি পানি পড়তেছে। অবস্থা বুঝার চেষ্টা করতেই দেখি রাহাত স্যার আমাকে কোলে নিয়ে ওয়াশরুমের ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে আছেন। আপনারাই বলুন সকাল সকাল এসবের কোনো মানে হয়।
ফারহাঃ কি হচ্ছেটা কি?
রাহাতঃ কেন তোমার ঘুম ভাঙ্গাচ্ছি & গোসল করাচ্ছি।
ফারহাঃএতো সকালে কেউ গোসল করে?
রাহাতঃ করে তুমিও করবা এইবার থেকে প্রতিদিন।
ফারহাঃ আংকেল না মানে স্যার এইটা কোন ধরনের কথা!
রাহাতঃ
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com