Breaking News

আইসিটি স্যার যখন বর । পর্ব - ২৬



আব্বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললাম,

ফারহাঃ আব্বু বিশ্বাস করো আমি চাই নাই সবার সামনে তোমাদের এই ভাবে অপমান করতে। আমি কারো সাথে পালাই নাই বাবা বিশ্বাস করো। আমার একটা কাজ পরে গিয়েছিলো তাই বাধ্য হয়ে যেতে হয়েছে। বিশ্বাস করো আমি তোমাদের কষ্ট দিতে চাই নাই আমাকে ক্ষমা করে দাও আব্বু।

আব্বুঃ কাজ! বাবা মাকে মিথ্যা বলতে শিখেছিস তাই না? খুব বড় হয়ে গেছিস তাই না যার কারণে মা বাবার থেকে কথা আড়াল করতেছিস। এত বড় কথাটা আমাদের থেকে লুকিয়ে গেলি?
ফারহাঃ মা,,মা,নে,,, বাবা সত্যি আমার কাজ,,
আব্বুঃ হইয়েছে থাক আর মিথ্যা বলতে হবে না, জিহা আমাদের সব বলেছে।
আমরা কি তোর পর নাকি যে এই কথা গুলা বললি না।
ফারহাঃ না আব্বু তেমন কিছুই না,
তোমরা শুধু শুধু চিন্তা করবা তাই কিছু বলি নাই, আচ্ছা বাদ দাও না আব্বু।
তানহাঃ আপু তুই ঠিক আছিস তো? তোর কিছু হয় নাই তো আপু?
ফারহাঃ এই যে আমি তোমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে তোর মত বোনের ভালোবাসা,
আব্বু আর আম্মির দোয়া সবসময় আমার সাথে আছে
সেখান কোনো শয়তান আমার কিছু করতে পারবেই না।

আব্বুঃ নারে মা, আমরা কিছুই না। পুরাটাই আল্লাহ্‌র রহমত আর জিয়ানের ভালোবাসা।
জিয়ান না থাকলে আজ কি যে হতো? আজ আমি একটা কারণে নিশ্চিত হলাম।
আমার মেয়েটাকে একজন ঠিক মানুষের হাতে তুলে দিতে পারবো
যে আমার মেয়েকে সব কিছুর বিনিময়ে ভালো রাখবে।
বাবার কথা গুলো যেন আমার চুলের উপর দিয়ে যাচ্ছে।
বাবা তোমার হয়তো বুজতে ভুল হয়েছে,
তোমরা তো জানোই না জিয়ান না রাহাত স্যার আমাকে বাঁচিয়েছেন।
এইকথাটা না হয় তোমাদের না জানায় থাক।
আব্বুঃ আমি আর তোর মা খুব নিশ্চিত থাকবো ওর হাতে তোকে তুলে দিয়ে।
আম্মির কথা বলতেই,মনে আসলো এখানে আসার পর থেকে আম্মিকে একবার ও দেখি নাই।
ফারহাঃ আম্মি! আব্বু আম্মি কোথায়? আসার পর একবারও আমার কাছে আসলো না,
আব্বুঃ,,,

ফারহাঃ আব্বু চুপ করে আছো কেন? কিরে তানহা বল আম্মি কোথায়?
জিহাঃ ফারহা শুন আমি বলেতেছি।
ফারহাঃ বল জিহা আমার আম্মি কোথায়?
জিহাঃ আসলে আন্টি তোর কিডন্যাপিং এর কথা শুনে একটু অসুস্থ হয়ে গেছেন।
ফারহাঃ আম্মি অসুস্থ!
জিহাঃ চিন্তা করিস না, আন্টি ঠিক একদম আছেন। দুর্বল হওয়ার কারণে ডক্টর ইনজেকশন দিয়ে গেছেন উনাকে একটু ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে।

আম্মির কথা শুনে খুব কান্না পাচ্ছে। আজ আব্বু আম্মি আমার জন্য কতটা সহ্য করলেন। আজ নিজের কাছে নিজেই অপরাধী হয়ে গেলাম।নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না আমি। হঠাৎ কেউ একজন আমার চোখের পানি মুছে দিলেন তাকিয়ে আমি পুরাই অবাক, ইনি তো জিয়ানের আম্মু।
ফারহাঃ আন্টি আপনি! আপনারা যান নাই?
আন্টিঃ মেয়ের বিপদের কথা শুনে কি কোনো বাবা মা বাসায় গিয়ে আরামে থাকতে পারে?
আন্টির কথা শুনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
জিয়ানের বাবাঃ আমরা চলে গেলে তোদের বিয়ে দিবে কে?
ফারহাঃ বিয়ে!

জিয়ানের বাবাঃ হুম বিয়ে তোমার আর জিয়ানের বিয়ে।
আমি অবাক হয়ে ওনাদের দিকে তাকিয়ে আছি। তাও কি শেষরক্ষা হলো না! বিয়ে কি হয়ে যাবে!
আন্টিঃ অনেক বাধা বিপত্তি তোমরা ফেরিয়ে এসেছো। তোমাদের তো বিয়ে হওয়ারি কথা
আব্বুঃ আজকে বিয়ে হবে আমার মেয়ের। আর জিয়ানের সাথে যে আমার মেয়ের জন্য একদম পারফেক্ট। সারাদুনিয়া খুঁজে এমন ছেলে পাবো না আমার মেয়ের জন্য।
আন্টিঃ জিহা, তানহা তোমরা ফারহাকে নিয়ে যাও আবার নতুন করে তৈরি করে দাও।
জিহা & তানহাঃ আচ্ছা আন্টি।
জিহা আর তানহা ফারহাকে নিয়ে রুমে চলে আসলো সাজানোর জন্য।
অন্যদিকে
রাহাত কোনো ভাবে নিজের রাগ কমাতে পারছে না। জাহিদকে এইভাবে মেরেও ওর রাগ কমে নাই। রাগ করে এক কোণায় বসে আছে।
কিছুক্ষণ পর ওদের বিয়ে হয়ে গেলো।

বিদায়ের সময় ফারহা অনেক কান্না করেছে বাবা জিহা আর তানহা জড়িয়ে ধরে। প্রত্যকটা মেয়ের এই দিনটা নিয়ে যেমন অনেক স্বপ্ন থাকে ঠিক তেমনি লুকানো কষ্ট ও ভয় থাকে। থাকবেই না কেন, আজকে থেকে নিজের আপন মানুষ গুলোকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট।নতুন ঘর, নতুন মানুষ সব কিছুই নতুন। পারবে তো সব কিছুর সাথে মানিয়ে নিতে! এই ভয়টা সব মেয়ের মনে থাকে।
তারমধ্যে ফারহা আরো বেশি কষ্ট হচ্ছে। কারণ তার বিদায় বেলা মাকে দেখতে পারে নাই, নিজের ভালোবাসার মানুষটা থেকে আজকে অনেক দূরে সরে গেছে চাইলেও আর কখনো ফিরে যেতে পারবে না তার কাছে।
সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ীতে বসলাম। সারা রাস্তা কান্না করতে করতে আসলাম। সবার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছিলো, বিশেষ করে আম্মির জন্য। এতো কান্না করতেছি কিন্তু এই জিয়ান রামছাগলটা কিছুই বলে নাই।

বাসায় পৌছানোর পর সবাই মিলে নানা রকম আনুষঙ্গিকতার মধ্যমে সব কাজ শেষ করেন।
এখন রাত বারোটা বাজে। একটা রুমে বসে আছি যাকে বলে বাসরঘর। নানা রকমের ফুল দিয়ে সাজানো, সবার এইরাত নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে। আমারও ছিলো কিন্তু সেটা অন্য একজনের জন্য।আমার সমস্ত ভাবনা জুড়ে শুধু উনি ছিলেন, পারবো তো সব ভাবনা ভুলে যেতে! ছিঃ ছিঃ আমি এইসব কি ভাবছি? আমি এখন অন্য একজনের বউ, এখন এসব ভাবাও আমার জন্য পাপ। একজনের বউ হয়ে অন্যজনের কথা ভাবা যে কতখানি পাপ। কিন্তু আমি কি করবো ভুলতে যে পারছি না। আমার সময় চাই। হুম আমার সময় চাই, সময় পারবে আমাকে সঅঅব ভুলিয়ে দিতে জানি এতো সহজ নয় তাও আস্তে আস্তে সময়ের সাথে সব বদলে যায়। আমিও হয়তো ভুলতে পারবো। আজকে জিয়ান থেকে আমি সময় চেয়ে নিবো যাতে আমি নিজেকে প্রস্তুত করতে পারি।
এসব ভাবছিলাম, কারো আসার শব্দ শুনে বুকের ভিতর একটা মোচর দিয়ে উঠলো। একটু নড়েচড়ে বসলাম, দরজা খুলে যে ভিতরে ডুকলো তাকে দেখার জন্য মুখ তুলে তাকিয়ে আমি হা হয়ে আছি। জোরে চিৎকার দিয়ে বললাম
ফারহাঃ আংকেল আপনিইইই


চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com