আইসিটি স্যার যখন বর । পর্ব - ২৩



একটু একটু করে দিন আগাচ্ছে আর আমি যেন একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছি। আজকাল রাহাত স্যারে খুব বেশি মিস করি। এর মাঝে অনেকবার জিয়ানের সাথে কথাও হয়েছে। মাঝে মাঝে রাতে স্বপ্নের মধ্যেও রাহাত স্যারের করা অপমান গুলো দেখতে পাই। তখন নিজেকে খুব ছোট মনে হয় ইচ্ছা করে

মরে যাই। কিন্তু সেটা করতে পারছি না কারণ আমি দুনিয়ার সাথে সাথে আখিরাতও হারাতে চাই না। তাছাড়া মিত্যু কখনো কোনো কিছুর সমাধান হতে পারে না। যখনি রাহাত স্যারের করা অপমান গুলো মনে আসে তখন নিজের প্রতি খুব রাগ হয়, নিজেকে নিজেই ঘৃণা করতে ইচ্ছা করে।

এই কয়দিন নিজেকে পুরোপুরি বন্ধ করে রেখেছি রুমের মধ্যে, আমার এইই মুখ যে দেখানোর কোনো সাহস যে আমামার নেই। তাই বন্ধী থাকায় ভালো, এই ভাবে দিন যাচ্ছে। আসতে আসতে এগুচ্ছে বিয়ের তারিখ আর ভেঙ্গে যাছে আমার ভালোবাসা।

আজকে আমার গাঁয়ে হলুদ অনুষ্ঠান। সারা বাড়ীতে মেহমানে ভরপুর, সবার মধ্যে আনন্দের কোনো কমতি নেই। কিন্তু আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আমার দুনিয়াটা একটু একটু থেমে যাচ্ছে। ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্ট কতটুকু তা আজকে আমি বুঝতে পারছি। আমি জানি না সবটা ভুলে যেতে পারবো কি না! সবটা ভুলে নতুন ভাবে শুরু করতে পারবো তো!কিন্তু আমি এইটুকু জানি আমাকে পারতেই হবে।
তানহাঃ কিরে আপু তোর আবার কি হলো,সেই কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি তোর তো কোনো খবরি নেই।
ফারহাঃ হুম বল,
তানহাঃ আচ্ছা আপু তুই কাকে নিয়ে এত ভাবনায় আছিস? নিশ্চয় ভাইয়াকে নিয়ে?
ফারহাঃ চোখ লাল করে তানহার দিকে তাকালাম।
তানহাঃ এই ভাবে তাকাচ্ছিস কেন? ঠিক তো বললাম।বাবা তোকে বুঝা বড়োই মুশকিল, প্রথমে তো বিয়ে করতে চাচ্ছিলি না, আর এখন বিয়ে করার জন্য উঠেপরে লেগেছিস।
ফারহাঃ কি জন্য এসেছিস বলবি নাকি থাপ্পড়াইয়া দাঁত পেলে দিবো?

তানহাঃঢং😏😏😏
ফারহাঃ বলবি নাকি?😡😡
তানহাঃ আম্মি তোকে তৈরি করে দিতে বলছে।
ফারহাঃ তো তা না করে এতো বকবক করছিস কেন?
তানহাঃ আজিব,,,
তারপর তানহা আর আমার কয়েকটা কাজিন মিলে আমাকে সাজিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু আমার ওই দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই আমি তো আমার ভাবনায় নিযুক্ত।
ফারিয়াঃ ওয়াও ফারহা আপু তোকে কি যে সুন্দর লাগতেছে না! পুরাই হলুদ পরী।
ফারহাঃ হুম হয়েছে তোদের কাজ? এখন এখানে থেকে বের হতে পারিস,
তামান্নাঃ আমরা বের হবো মানে? তোকে সাজিয়েছি কি জন্য রুমে বসিয়ে রাখার জন্য? তোকেও যেতে হবে আমাদের সাথে,
তানহাঃ আচ্ছা তোমরা যাও আমি আপুকে নিয়ে আসছি।
তানহার কথায় ওরা চলে যায়।

তানহাঃ আপু চল।
ফারহাঃ হুম,, চলে আসছিলাম তানহার কথায় পিছন ফিরেলাম,
তানহাঃ আপু শুন
ফারহাঃ আবার কি?
তানহাঃ আপু তোকে খুব মিস করবো ,,,বিয়ের পর আর আমাদের বাড়ীতে সেরকম আসবি না?
কান্না করতেছে তানহা, নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না তানহাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।
তানহাঃ আমায় ভুলে যাবি না তো? আপু প্লীজ তুই সবসময় আসিস,, আমি প্রমিজ করতেছি আর কখনো তোর সাথে ঝগড়া করবো না, আর কখনো তোর ঘুমের আর ডিস্টার্ব করবো না। জানিস আমি সবসময় তোর সাথে ঝগড়া করতাম কারণ আমি তোকে খুব ভালোবাসি। তোর সাথে ঝগড়া করতে আমার খুব ভালো লাগে। আমি তোকে খুব খুব ভালোবাসি,,,

ফারহাঃ আমিও আমার পিচ্চি বোনটাকে খুব ভালোবাসি।
তানহার কথায় আমার চোখের পানি যেন বাঁধন হারা হয়ে গেছে। তানহাও খুব কান্না করতেছে।ওকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে দুই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দিলাম,
ফারহাঃদেখি,,,একদম কান্না করবি না, আমি কি আমার কলিজাকে ভুলতে পারি? আমি সব সময় তোর কাছে আসবো,,,
তানহাঃ হুম,,
ফারহাঃ আবার? আচ্ছা চল নিচে যাই সবাই অপেক্ষা করতেছে।
তানহার চোখের জল মুছে দিয়ে ওকে নিয়ে নিচে চলে গেলাম, সবাই নানা রকম প্রোগ্রামের মাধ্যমে আনন্দ করতেছে। তানহা একবারের জন্যও আমার পাশ থেকে সরে যায় নাই। জিহাও আসছে কিন্তু তেমন কোনো উজ্জ্বলতা নেই ওর মাঝে, নিরব দর্শকে মতো সব কিছু দেখতেছে। এই ভাবে কেটে গেলো গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠান।

নীল শাড়ী, নীল চুড়ি, নীল টিপ, লাল লিপস্টিক পরেছি। সবাই লাল বেনারসি পরে কিন্তু জিয়ানের নাকি নীল রঙ পছন্দ তাই তো নীল পরী সেজে বসে আছি,,, আমারও অনেক গুলো ইচ্ছা ছিলো বিয়ের সাজ নিয়ে, সেজেছিও। কিন্তু আমি তো অন্য কারো জন্য সাজতে ছেয়েছিলাম। কেন তা হলো না? আসলে মানুষ যেটা চায় সেটা পায় না আর যেটা পায় সেটা চায় না।
জানালার ওই দিকে কিছু পরে যাওয়ার শব্দ শুনে আমার ধ্যান ভাঙে, জানালার দিকে তাকিয়ে যা দেখি তাতেই আমি পুরাই হা হয়ে গেছি।

চলবে...
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url