বোরকা পড়া সে মেয়েটি । পর্ব - ০১


বছর ৩ আগের এক রাতে বোরকা পরা এক মেয়ে আমার কাছে রাতে থাকার জন্য আশ্রয় চায়.!
ব্যাপারটা গুছিয়ে বলা দরকার।গুছানো সব জিনিস মানুষ পছন্দ করে।
অফিস থেকে একটু লেট করে বাড়িতে ফিরছিলাম।
কলিগ নতুন বিয়ে করেছে তাই আভিজাত্য একটা হোটেলে ডিনার করার জন্য নিয়ে গিয়েছিল।
হেটে হেটে বাড়ি ফিরা আমার পুরোনো অভ্যাসগুলোর মধ্যে একটা।
বর্ষাকাল চলছিল তাই বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পরছিল।
আশে পাশের সব দোকান বন্ধ।
আমি হেটে হেটে এলাকায় আসতেই লক্ষ্য করলাম
জনি ভাইয়ের চায়ের দোকানের বেঞ্চে বোরকা পরা কে যেন বসে ছিল।
এত রাতে বৃষ্টির মধ্যে একটা বোরকা পরা মেয়ে বসে থাকা নজরে লাগার মতো।
আমি থমকে গিয়ে ছোট চোখ করে উচ্চস্বরে জিজ্ঞাস করলামঃ
>কে?কে ওখানে?
মেয়ে টি আমার আওয়াজ শুনে আমার উদ্দেশ্যে উঠে এসে সামনে দাঁড়িয়ে বললঃ
>আস সালামুয়ালাইকুম।
সালামের আওয়াজ যেন সরাসরি বুকে লাগল। এত সুন্দর কন্ঠ আমি আগে কখনো শুনি নি!! 😊
আমি বুঝতে পারলাম বোরকার পিছনে^ একজন মেয়ে আছে,পর্দাবতী মেয়ে।
আমি ভ্রু-কুচকে মেয়েটার সালামের উত্তর না দিয়েই জিজ্ঞাস করলামঃ
>কে আপনি?আর এত রাতে এখানে কি করছেন?
মেয়েটাও আমার কথার উত্তর না দিয়ে আমাকে জিজ্ঞাস করলঃ
>আপনি কি মুসলিম?
প্রশ্ন শুনে মেজাজ খারাপ হলো।
ভ্রু-কুচকে
মেয়েটাকে বললামঃ
হ্যাঁ মুসলিম।কিন্তু আমার প্রশ্নের সাথে আপনার প্রশ্নের কোন মিল নেই।
মিল নেই আমিও জানি কিন্তু শুরুতে আমি আপনাকে সালাম প্রদান করেছিলাম যার জবাব দেওয়া আপনার উপর ওয়াজিব করা হয়েছে।আপনি কি এই ব্যাপারে অজ্ঞ?!

কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
আমি হা করে বোরকার আড়ালের মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
নজরটা নিচে নামিয়ে প্রথমে মেয়েটার সালামের জবাব দিলামঃ
ওয়ালাইকুম আস সালাম।
মেয়েটা মনেহয় সন্তুষ্ট হয়েছিল।তারপর বোরকার আড়াল থেকে আবার মেয়েটা বলতে শুরু করেঃ
আপনি কি আমাকে একটু সাহায্য করতে পারবেন?
কি সাহায্য?
মেয়েটার নিকাবের কালো পর্দা তার মুখ থেকে একটু দূরে সরে গেল।
বুঝতে পারলাম সে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলেছেঃ
আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি আপনি কি আমাকে আজ রাত আপনার বাড়িতে থাকার সুযোগ দেবেন ?সকাল হলেই চলে যাবো।

এই সাহার্য্যের কথা শুনে প্রথমেই আমার মহিলা জঙ্গির কথা মনে পরল।
এই মেয়েও যদি মহিলা জঙ্গি হয় তাহলে বাড়িতে গিয়ে আমাকে মেরেই বের হবে।
>দেখুন আমি দুঃখিত এই ধরনের কোন সাহার্য্য আমি করতে পারবো না।
মেয়েটা যেন আমার বলা কথাটার জন্য প্রস্তুত ছিল।
তাই বলার সাথে সাথেই গিয়ে আবার বেঞ্চটাতে বসে পরল।
এমন মনে হলো আমার আগেও অনেকের কাছে সাহার্য্য প্রার্থনা করেছে সবাই আমার মতোই না করে দিয়েছে।

বৃষ্টিতে মেয়ের বোরকা সহ ভিজে গিয়েছিল তবুও মুখের নিকাব খোলার কোন প্রয়াস ছিল না।
এই অবস্থা দেখে আমার মায়া লেগে গেল,আসলে এমন মেয়েদের প্রতি মায়া বেশি কাজ করে।
আমার ভাবনা আবার উল্টে গেল।মনে মনে ভাবলাম বিপদে পরেই তো মেয়েটা সাহার্য্য চেয়েছে।
আর শালা আমি কি দেশের প্রধানমন্ত্রী নাকি যে আমাকে মারতে কেউ ঘরে প্রবেশ করবে?!

রাতের ব্যাপার এখণ তো নিয়ে যাই।
বাড়িতে গিয়ে সব শুনা যাবে।তাছাড়া মা তো আছেই।
আমি পিছনে গিয়ে মেয়েটাকে ডাক দিলামঃ
>এই যে শুনছেন!!চলুন আমার সাথে।
মেয়েটা আমার দিকে চেয়ে বেঞ্চ থেকে উঠে আসলো।আমরা দুজন হাটতে শুরু করলাম।
মেয়েটা একদম স্তব্দ হাটছে,মুখ দিয়ে ধন্যবাদ দেওয়ার নাম গন্ধও নেই।
না দেওয়াটাই স্বাভাবিক কারন মানুষ হিসেবে সাহায্য করা আমার কর্তব্য।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা বাড়িতে পৌঁছে যাই।
বাবা 5বছর আগেই মারা গেছে তাই বাড়িতে মা একা।
আর আমার জানা আছে সে এখনো ঘুমায় নি।
ঘরের কলিং বেল টিপতেই মা এসে দরজা খুলল
প্রথমে আমার দিকে চেয়ে পরে মেয়েটার দিকে চেয়ে কে জানে কি বুঝে একটা ছোট চিৎকার দিয়ে উঠে বললঃ

চলবে..
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url