ফুরিয়ে যাবার পর

জেগে আছো?
হ্যা...কিছু বলবা?
নাহ তেমন কিছুনা, আজ রাতটা মনে হচ্ছে খুব একটা ভালো কাটবে না, মনটা খুব খারাপ।৷
কেন?কি হইছে?
অনেক কিছু, আবার কিছুই নাহ।
তো, অনেক কিছু গুলা কি কি শুনি?
পুরাতন কিছু আবেগময় স্মৃতি জ্বালাচ্ছে খুব।
স্মৃতির কাজই তো জ্বালানো।
হুম... জীবনটা ওভাবে না কাটলেই ভালো হইতো"
কোনভাবে?
যেভাবে কেটেছিলো কিছুটা সময়।
কিছুক্ষণের নিরবতা। চারিপাশ খুব নিস্তব্ধ।।
তোমাকেও দেখছি আমার মত স্মৃতিতে আক্রমণ করে।
হেহে।
হাসো? হ্যা হাসবাই তো...

আসলে রাত যেখানে গভীর স্মৃতি সেখানে খুব নিষ্ঠুর আক্রমণ করে।
 আর দিনের আলো? সেটাও তো কম নিষ্ঠুর না। 
অনেক স্মৃতিই তো আছে আর তারাও তো ছেড়ে দেয়না।
হুম...শুধু ওই পাশের মানুষ গুলা ভিন্ন থাকে। আমি তোমায় ভেবে কাঁদলে তুমি অন্য কাওকে ভেবে কাঁদো। আবার তুমি আমায় ভেবে কাদলে আমি আবার অন্যকাওকে ভেবে....
সেটাই তো সাভাবিক, দুজন যদি শুধু দুজনকেই ভাবতো তাহলে তো আর কান্নাকাটির দরকার হতনা।
আমার লাইটারের গ্যাস ফুরিয়ে গেছে, সিগারেটের প্যাকেটও প্রায় শেষের পথে। 
তবে নেশাটা এখনো আছে। জ্বলবার আর পুড়বার নেশা.. স্মৃতির আগুনে।
নেশাটা থাকারই জিনিশ তাই থাকবেই।
Did you loved me?

কথাটা বলবার সাথে সাথেই ওইপাশের মানুষটা কিছু একটা লেখার চেষ্টা করছে। কি-বোর্ড এ টাইপিং দেখাচ্ছে অনেকক্ষণ ধরেই যেটা অবশ্য খুবই সাভাবিক। এতদিন পর এই ধরণের কথা ওই মানুষটা হয়তো আশাই করে নাই... কিছুক্ষণের মধ্যেই উত্তর আসলো।।
প্রশ্ন করছো, না ঠাট্টা?
কোনোটাই না।
ওহ।
জীবনটা ওভাবে না কাটলেই মনেহয় খুব ভালো হতো
কোনভাবে?
যেভাবে কেটেছিলো কিছুটা সময়।
লাষ্ট অনেক দিন থেকেই এই পর্যন্ত জীবন আমাকে অনেক বাস্তবতা শিখিয়েছে। আমাকে অনেকটা ম্যাচিউর করে তুলছে। আগের সেই বাচ্চামির কিছুই এখন আর নাই।
আমিও এখন অনেক ম্যাচিউর।
হুম।

আচ্ছা আমাদের ব্রেক-আপের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে তোমার কি মনে হয়?
দেখো... রিলেশনশিপ এর কোন ভবিষ্যৎ নেই এটা জেনেও কিন্তু কথা গুলা চছিলো অফুরন্ত। 
আমি যতই না বুঝে খেয়ালের বসে যাই করছি তবুও 
কিন্তু দিনশেষে কান্নাকাটি করে সকালটা একসাথে শুরু করতাম। 
আসলে সত্যি কথা বলতে কি জানো, 
তুমি আমার জীবনে এমন একটা সময় এসেছিলে যখন আমার মেন্টাল সাপোর্ট এর জন্যে 
কাওকে খুব দরকার ছিল ঠিক সেই সময়...
আর ঠিক তাই তোমাকে যে কতটা আপন ভাবতাম ইনফ্যান্ট এখনো ভাবি তা 
আমি তোমায় বলে বোঝাতে পারবোনা। কিন্তু সংসার, বাস্তবতা খুব খারাপ জিনিশ। 
এরা শুধু ভালো থাকা বোঝে। 
আর তাই দিনেরপর দিন ঘরে বায়রে আর ফোনে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। 
আমার নিজের বলতে তখন আর কোন স্পেস ছিলোনা।
আমাদের ব্রেক-আপের কারণ এইটা ছিলো?
কেন?তোমার অন্যকিছু মনে হয়?

তোমার ওই লম্বা টেক্সট এর কোথাও ব্রেক-আপের একটা কারণ আছে? 
ওখানে তো কিছু ভূমিকা মাত্র।
ওইগুলাই তো কারণ ছিল। মানুষের সহ্য ক্ষমতা বলতে একটা ব্যপার আছে। 
আমি দুনিয়ার সবার সাথে যুদ্ধ করতে পারলেও আমার বাবা, মা, ভাই আর 
পরিবারের সাথে কিভাবে পারতাম? এদের বায়রে কিভাবে যেতাম? 
ওদের সবার ইচ্ছার কাছে চাপা পরে গেছিলো আমার ইচ্ছা। 
আমি কি আর কাকে চাই সেটাও হারিয়ে গিয়েছিলো।
তোমার সাথে আমার না দেখা হলেই ভালো হতো। অথবা
তোমার সাথে তাঁর।
হবে হয়তো।

তোমার আর আমার কথা ভাবলে আমার যতটা না খারাপ লাগে 
এর থেকেও বেশি খারাপ লাগে তোমার আর তাঁর কথা মনে পরলে।
কেন?
কারনটা নাহয় নাই জানলা। কিছু কথা থাকনা আমার নিজের মধ্যেই। 
খুব যতন করে রাখা আছে, মনের ছোট্ট ঘরে বাক্সের মধ্যে তালাবন্ধ।
কথাটা বলেই ফেলো। এখন আমি সব কিছুই নিতে পারি।
আসলে তেমন কিছুই নাহ। 
যাকে ভালোবাসি তাকে অন্যকাওকে ভালোবাসতে দেখলে খারাপ তো লাগবেই।
হু।

আচ্ছা তোমার কি মনে হয় আমি তোমায় কতটা ভালোবাসতাম? 
আর সেই বা তোমায় কতটা ভালোবাসতো?
আমি কোন কম্পিউটেশন করছিনা বা জেলাস হয়েও কিছু বলছিনা, 
যাষ্ট এমনিই জানতে ইচ্ছা হইলো তাই। সত্যিটা বইলো...
তোমার ভালোবাসা খুব খাটি ছিলো। 
কোন খারাপ চাওয়া ছিলোনা। আর ও আমাকে আদৌ কতটা ভালোবাসতো তা আমি জানিনা। 
তবে ওর ভালোবাসায় অনেক বেশি স্বপ্ন দেখানো ছিলো। চাওয়া পাওয়া ছিলো। 
আর হঠাথ করেই সব কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো।
একটা কথা কি জানো... তুমি আমাকে ছেড়ে যাকে ধরছিলা, 
সে তোমাকে ছেড়ে আরেকজনকে ধরেছিলো
একটা কথা বলি?
শিওর।

তোমাকে ছেড়ে অন্যকাওকে ধরিনি। 
বরং অন্যকেও জীবনে চলে এসেছিলো বলেই বাধ্য হয়ে তোমাকে ছাড়তে হয়েছিলো"
একই তো হলো।
কথাটা বলতে বলতেই ফোনটা চার্জ এর অভাবে বন্ধ হয়ে গেলো। 
ওই পাশ থেকে চলেগিয়েছি কিনা জানতে চেয়ে টেক্সট হয়তো করছে। 
হয়তোবা করে নি, অথবা অনেক কিছুই ভেবে নিয়েছে। 
ভাবতেই পারে, কিন্তু সেগুলা নিয়ে এখন আর কিছুই ভাবছিনা আমি। 
আমার ভাবনা গুলা এমনিতেই বেড়ে গেছে। নতুন কিছু ভাবার অবস্থা আর এখন নেই। 
ফোনে চার্জার লাগিয়ে চাইলেই ফোনটা চার্জ করে অনলাইনে যাওয়া যেতে পারে। 
কনভারসেশনটা এতে হয়তো আরো দৈর্ঘ হবে 
কিন্তু না এরকম কিছুই আর এখন করতে চাচ্ছিনা।।
এখনকার সময়ের প্রেম গুলা ফোনের ব্যাটারির মত হয়। 
চার্জ ফুরিয়ে গেলেই সব শেষ। 

তবে পার্থক্য একটু আছে, ব্যাটারি চার্জ ফুরাবার পরেও চার্জ করে আবার শুরু করা গেলেও 
প্রেম জিনিশটার ক্ষেত্রে এই ব্যপারটা অতটা কাজে লাগেনা। 
তাই চার্জ ফুঁড়াবার আগেই চার্জ করতে থাকতে হয়। 
আমার বেলায় এইটাই হয়েছিলো। 
ভালোমতো প্রেম চালাতে চালাতে চার্জ এর ব্যপারটা ভুলেই গেছিলাম। 
যখন মনে পরেছিলো ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো।।
অনেক দিনের পর আজকে পুরাতন ব্যপারটা নিয়ে ওর সাথে কিছু কথা বললাম। 
কি লাভ ক্ষতি হলো সেটা জানিনা 
তবে মনের ভেতরকার জমে থাকা অনেকদিনের কথা গুলা বেড়িয়ে গিয়েছে। 
মনটা এখন খুব হালকা লাগছে।

এদিকে আমার লাইটারের গ্যাস ফুরিয়ে গেছে সিগারেটের প্যাকেটাও প্রায় শেষের পথে। 
পায়ের আঙুলে ব্যথা পেয়েছিলাম এখন ব্যথাচ্ছে খুব। 
কিন্তু তার থেকেও মনের ব্যথাটা বেশি গাঢ়।।
রাতটা খুব লম্বা হতে যাচ্ছে, তাই বিছানা থেকে ওঠা যাক। 
খুরিয়ে খুরিয়ে হেটে দেখি ঘরের কোথাও একটা দেশলাইর বাক্স পাওয়া যায় কিনা....

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url