স্ত্রীর হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাই দ্বীনের পথে
স্ত্রীকে বলা হয়- জীবনসঙ্গিনী।
একজন পুরুষের জীবনের প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত, প্রতিটি সকাল, প্রতিটি সন্ধ্যার সঙ্গী সে।
ফলে স্ত্রীর চিন্তা-ভাবনা, বোধ-বিশ্বাস, রুচি-অভিরুচির প্রভাব পড়ে স্বামীর উপর।
আর এটাই স্বাভাবিক।
অনেক বদকার পুরুষ নেককার স্ত্রীর সংস্পর্শে এসে দ্বীনের আলোয় আলোকিত হয়ে যায়।
আবার অনেক নেককার পুরুষ স্ত্রীর কারণে বিপথে পা বাড়ায়।
তো বৈবাহিক জীবনে স্বামীর উপর স্ত্রীর প্রভাবের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তাই স্বামীর দ্বীনদারীর ক্ষেত্রে, দ্বীনের উপর টিকে থাকার ক্ষেত্রে স্ত্রীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
বিশেষ করে দ্বীনের উপর টিকে থাকার ক্ষেত্রে স্ত্রীর সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন।
হালাল রিযিকে সন্তুষ্ট থাকা, হারামের দিকে পা না বাড়ানোর ক্ষেত্রে সাহস যোগানো,
হালাল রিযিকে জীবন-যাপনে ধৈর্য ধারণ, দ্বীনের কাজে সহযোগিতামূলক মানসিকতা,
দ্বীনের কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন বিপদ-আপদে পাশে থাকা,
সান্ত¡না দেয়া ইত্যাদি একজন পুরুষকে দ্বীনদারীতে অনেক এগিয়ে দেয়।
এক্ষেত্রে আমরা উম্মুল মুমিনীন খাদিজা রা.-এর জীবন থেকে শিক্ষা নিতে পারি।
উম্মুল মুমিনীন খাদিজা রা.।
নামটি উচ্চারণ করলেই মন শ্রদ্ধায় ভরে ওঠে।
ইসলামের প্রতি তাঁর কুরবানীর সকল চিত্র ভেসে ওঠে হৃদয়পটে।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলোতে তিনিই ছিলেন সান্ত¡না ও সাহস।
পরম মমতায় আগলে রেখেছিলেন
নিজ স্বামী ও সায়্যিদুল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে।
তাঁকে আল্লাহ অঢেল সম্পদের অধিকারী করেছিলেন।
নিজের সকল সম্পদ তিনি বিলিয়ে দিয়েছিলেন ইসলামের নুছরতে।
সকল বিপদ ও প্রতিকূল পরিবেশে পাশে থেকেছিলেন নবীজীর।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যখন প্রথম ওহী নাযিল হল তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁপতে কাঁপতে উম্মুল মুমিনীন খাদিজা রা.-এর কাছে এলেন এবং বললেন, আমাকে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে দাও। নবীজী খুব ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। প্রাণের আশংকা ব্যক্ত করলেন। বারবার বলতে লাগলেন, আমাকে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে দাও। খাদিজা রা. তখন পরম মমতায় তাঁকে আগলে নিলেন এবং সাহস ও সান্ত¡না দিয়ে বললেন-
কক্ষনো নয়! খোদার কসম, আল্লাহ কখনো আপনাকে লাঞ্ছিত করবেন না।
আপনি আত্মীয়তা রক্ষা করেন, দুস্থের ভার বহন করেন, নিঃস্বের জন্য উপার্জন করেন,
মেহমানের সমাদর করেন এবং দুর্যোগে (মানুষের) সহযোগিতা করেন।
এরপর আরো সাহস সঞ্চারের জন্য নবীজীকে নিয়ে চললেন ওয়ারাকা ইবনে নাওফালের কাছে। নবীজী সান্ত¡না লাভ করলেন। (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬০)
"مَا أَبْدَلَنِي اللهُ عَزَّ وَجَلَّ خَيْرًا مِنْهَا، قَدْ آمَنَتْ بِي إِذْ كَفَرَ بِي النَّاسُ، وَصَدَّقَتْنِي إِذْ كَذَّبَنِي النَّاسُ، وَوَاسَتْنِي بِمَالِهَا إِذْ حَرَمَنِي النَّاسُ، وَرَزَقَنِي اللهُ عَزَّ وَجَلَّ وَلَدَهَا إِذْ حَرَمَنِي أَوْلَادَ النِّسَاءِ ".
তো স্ত্রী যেমন স্বামীর পাশে থেকেছেন, স্বামীও আজীবন তার এহসানের কথা স্মরণ করেছেন।
যেমন শ্রেষ্ঠ স্ত্রী, তেমন সর্বশ্রেষ্ঠ স্বামী।
মুফতী ছাহেব তাঁর গোটা জীবন ইসলামের খেদমতে নিবেদিত থেকে কাটিয়ে দিয়েছেন। তাঁর ব্যাপক সফলতার পেছনে এটাও একটা কারণ যে, তিনি ঘরে আপনার পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছেন। আপনি বলবেন কি কীভাবে আপনি তাঁর পাশে ছিলেন?
“বিয়ের প্রথম দিনই আমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলাম, ঘরের কাজকর্ম এমনভাবে সামলাব যাতে আমার স্বামী তাঁর সবটুকু সময় দ্বীনের তরক্কী ও ইশা‘আতের (প্রচার-প্রসারের) কাজে ব্যয় করতে পারেন। এ কাজ আমি সওয়াবের উদ্দেশ্যেই করেছি। ...উদ্দেশ্য একটাই মুফতী ছাহেব যেন দ্বীনের ইশা‘আতের কাজে পূর্ণ মনযোগ দিতে পারেন।”
আর অনেক সময় স্ত্রীর কারণে স্বামী বিপথে পা বাড়ায়। হারাম উপার্জনের দিকে ছোটে। বা স্ত্রীর অসহযোগিতায় দ্বীনদারীতে পিছিয়ে থাকে। এর কুফল একসময় ঐ স্ত্রীকেই ভোগ করতে হয়; দুনিয়াতে ও আখেরাতে; সুতরাং...।
আমাদের স্ত্রীগণ দ্বীনদারীতে আমাদের সহযোগী হোন, বাধা নয়। এবং এর বিনিময়ে জান্নাতেও তারা আমাদের সঙ্গী হোন। সাথে সাথে পুরুষগণ হোক আদর্শ স্বামী; দ্বীনদারীতে দুজন দুজনার সহযোগী হোন- এই প্রার্থনাই মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে।