নারীর নিরাপত্তা আল্লাহর বিধান
আল্লাহ তাআলা নারী জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই তাঁদের নিরাপত্তা বিধান করেছেন।
নারীর নিরাপত্তা বিধানে তিনি নারী-পুরুষ উভয়ের প্রতি কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন,
দিয়েছেন কিছু বিধান। এই বিধান ও নির্দেশনা নারী-পুরুষের স্রষ্টার পক্ষ থেকে,
যিনি জানেন তাদের স্বভাব-প্রকৃতি, তাদের চাহিদা ও প্রবৃত্তি
এবং তাদের জীবনের বাস্তব অবস্থাগুলো।
সুতরাং নারীর নিরাপত্তা আল্লাহর বিধানে- এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু আমাদের কিছু ভাই-বোন ইসলামের শিক্ষা থেকে দূরে থাকার কারণে
এবং বিজাতীয় জ্ঞান-বিদ্যা ও কালচারে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে
এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারছেন না।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রসিদ্ধ এক জাতীয় দৈনিকের একটি শিরোনামে চোখ পড়তেই
পড়া শুরু করলাম- ‘নীরব থাকার সংস্কৃতি ঝেড়ে ফেলতে হবে।
এখানে কিশোরী নির্যাতনের কাগজ-কলমের যে পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হয়েছে
তা রীতিমত আঁতকে ওঠার মতো। মাত্র ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সের কিশোরীরা ...
নির্যাতনের শিকার। এদের হার শতকরা ৩৪.২ শতাংশ।
এ যুলুম থেকে বাঁচার জন্য লেখিকা দুটি পথ বাতলেছেন।
এক. নীরব থাকা চলবে না; সোচ্চার হতে হবে। দুই. দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
কিশোরীদের যুলুমের হাত থেকে বাঁচাতে লেখিকার আন্তরিকতাকে ধন্যবাদ।
কিন্তু একটি বিষয় আমার বুঝেই আসে না।
তিনি এবং তাঁর মত যারা নারীকে যুলুমের হাত থেকে বাঁচাতে চান,
কেন যেন মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও সচেতনভাবে এসব বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা এড়িয়ে যান।
কেউ কেউ যদিও ছোট্ট করে বলেন, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা জরুরি,
কিন্তু জানা সত্ত্বেও, বুঝা সত্ত্বেও ইসলামের নির্দেশনা এড়িয়ে যাওয়াই যেন নিয়ম
পাছে আবার কে সাম্প্রদায়িক বলে বসে বা সেকেলে।
লেখিকা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা বলেছেন।
অবশ্যই! ইসলামও তাই বলে- এ গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূক শাস্তিই হওয়া চাই।
যত বড় অন্যায়, শাস্তিও তেমন কঠিন হওয়া চাই।
নারী-বিষয়ক অপরাধের ক্ষেত্রে ইসলামের চেয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ঘোষণা আর কেউ দেয়নি।
আর ইসলামের সেই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রসঙ্গ আসলে এসব পরামর্শদাতা
লেখক-লেখিকা তখন অতি মানবতাবাদী হয়ে উঠেন।
অপরাধীর প্রতি তখন তাদের অতিমানবতাবোধ উথলে ওঠে;
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা ভুলিয়ে দেয়।
এটিই আসলে আল্লাহর বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার ফলাফল-
উদভ্রান্তের ন্যায় এদিক ওদিক ছুটে চলা।
একবার এদিকে দরদ, আরেকবার ওদিকে মায়াকান্না।
কতজন কত পরামর্শ দেন কিন্তু সচেতনভাবেই যেন অপরাধের মূল শেকড়টি জিইয়ে রাখতে চান। কারণ, মূল শেকড় উপড়ে ফেলতে তাদের প্রবৃত্তি বাধা দেয়।
তারা অন্যায় পথে প্রবৃত্তির চাহিদাও পুরা করতে চায় আবার যুলুম থেকেও নারীদের বাঁচাতে চায়।
ফলে তাদের সকল চেষ্টা হয় তীহ প্রান্তরে অনর্থক ছুটে চলা।
তাদের কেউ বলে, কারাতে শেখাতে হবে নারীদের,
অথবা অস্ত্র দেয়া যায় আত্মরক্ষার জন্য।
কেউ বলে, নারীদের নির্যাতন থেকে বাঁচাতে বিশেষ বাহিনী দরকার-
আর মোবাইলে থাকবে বিশেষ এ্যাপস;
নারী বিপদগ্রস্ত হওয়ার সাথে সাথে এ্যাপস স্থান চিহ্নিত করবে
এবং বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী পৌঁছে যাবে সেখানে। এভাবে বাস্তবতা বিবর্জিত হাস্যকর কতশত পরামর্শ!
কিন্তু তারা বোঝে না-
এ ব্যবস্থা তো জোরপূর্বক যুলুমের শিকার নারীর আক্রান্ত হওয়ার পরের ব্যর্থ কিছু চেষ্টা।
যে নারী মনস্তাত্ত্বিক ও প্রবৃত্তিতাড়িত হয়ে যুলুমের শিকার- তাকে রক্ষা করবে কে?
যে নারী স্বেচ্ছায় এ যুলুমের শিকার হওয়াকেই নিজের মুক্তি ও স্বাধীনতা ঠাওরাচ্ছে তাকে রক্ষা করবে কে?
এজন্য ইসলাম আইনের শাসনের সাথে সাথে নারী-পুরুষের মাঝে আল্লাহ্র ভয়
এবং আখেরাতের জবাবদিহিতার বিষয়টিকে জাগ্রত করেছে।
এ বিষয়টিই সবাইকে সব ধরনের যুলুম থেকে রক্ষা করতে পারে।
কারণ চারিত্রিক অবক্ষয়ের কারণে যে যুলুমের শিকার হচ্ছে
নারীরা এ থেকে উত্তরণের জন্য এ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা নেই।
সাথে সাথে ইসলাম সামাজিক বাস্তবতাকে সামনে রেখেছে।
ব্যক্তির মাঝে আল্লাহর ভয় থাকা সত্ত্বেও নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা,
অন্যায় পরিবেশ তাদেরকে আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত করতে পারে।
এ থেকে বাঁচতে সুন্দর সুন্দর শ্লোগান কখনোই কার্যকরি নয়।
ফলে ইসলাম নারী-পুরুষের অন্যায় মেলামেশাকে নিষিদ্ধ করেছে।
উভয়ের জন্য দিয়েছে হিজাবের বিধান; দৃষ্টির হেফাযত, যবানের হেফাযত
এবং সর্বোপরি অবস্থান ও সহাবস্থানের ক্ষেত্রে সুচিন্তিত পথনির্দেশ,
যা মেনে চললে নারী রক্ষা পাবে যাবতীয় ...নির্যাতন ও হয়রানি থেকে।
খালাতো-চাচাতো-মামাতো ভাই-বোন, দেবর-ভাসুর,
দুলাভাই ইত্যাদি যারা মাহরাম নয় তাদের সাথে পর্দার বিধান দিয়েছে ইসলাম।
এ বিধান যারা উপেক্ষা করছে তারাই যুলুমের শিকার হচ্ছে বেশি।
আলোচিত লেখাতেই সে পরিসংখ্যান তুলে আনা হয়েছে-
বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন (বিপিএফ) এবং সেভ দ্য চিলড্রেন সুইডেন-ডেনমার্ক
যৌথভাবে একটি গবেষণা চালিয়ে দেখেছে,
বাংলাদেশে শারীরিক ও মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জে থাকা অর্ধেকের বেশি শিশু যৌন হয়রানির শিকার।
এবং সেটি তারা হচ্ছে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের দ্বারাই।
এই স্বজনেরাই এখন শিশুদের জন্য ভয়ের কারণ। ...
চাচাতো ভাই, মামাতো ভাই, খালাতো ভাই, ফুফাতো ভাই, বানের স্বামীরাও রয়েছে এই তালিকায়। পাশের বাড়ির বৃদ্ধ দাদু ও গৃহশিক্ষকও বাদ যান না।
...কিশোরী মেয়ে বান্ধবীর বাড়ি যাবে। একা যাবে কী করে।
সঙ্গে পাঠানো হলো প্রাপ্তবয়স্ক মামাতো ভাইকে। পথে মামাতো ভাই...।
(দৈনিক প্রথম আলো, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, পৃ. ১০)
মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও এক্ষেত্রে যারা পশ্চিমা কালচারে অভ্যস্ত বা সে কালচারকেই নিজেদের উন্নতি-অগ্রগতি-মুক্তির পথ ভাবছেন, নিজেদের সন্তানদের সে কালচারে গড়ে তুলছেন- মুখে স্বীকার না করলেও তাদের ভেতরের অবস্থা উপরের পরিসংখ্যানের মতই। সুতরাং এখানে ‘নীরব থাকার সংস্কৃতি’ দায়ী নয়। নীরব-সরবের প্রশ্ন তো আসে আক্রান্ত হওয়ার পর আর ইসলাম গোড়া থেকেই সে পথ বন্ধ করার ব্যবস্থা করেছে।
আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। -সূরা নিসা (৪) : ১৪৮
যুলুমের শিকার নারী অবশ্যই মুখ খুলবে এবং তার যুলুমের প্রতিকার করবে।
কিন্তু যারা নিজ পাপের কথা মানুষকে বলে বেড়াবে,
এফএম রেডিওতে সারা দেশবাসীকে তার পাপের সাক্ষী বানাবে-
সে সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকদের থেকে আমরা কীভাবে নারীর মুক্তির নির্দেশনা নিতে পারি।
খোদ নারীকে যুলুমের হাত থেকে রক্ষা করার পরামর্শদাতাগণই তো এ যুলুম মেনে নেয়াকে নারীর সামনে মুক্তি ও নারী স্বাধীনতা বলে উপস্থাপন করছে, তাহলে আমরা কীভাবে এ পরস্পর বিরোধী পরামর্শে নারীর মুক্তির পথ দেখব!
দুঃখজনক হলেও সত্য এ শ্রেণিই এখন বিভিন্ন মুসলিম জনপদে চালকের আসনে।
তারাই আমাদের বিভিন্ন সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ দেখান।
তাঁরা আমাদের সামনে এগিয়ে নেয়ার শ্লোগান দেন,
কিন্তু দিন দিন তারা আমাদের পেছনের দিকেই নিয়ে চলেছেন।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com