Blue screen error windows 10/11/8/7 | উইন্ডোজ ১০/১১/৮/৭ ব্লু স্ক্রিন এর সমাধান


আপনার পিসি হঠাৎ করেই ব্লু স্ক্রিন দেখাচ্ছে এবং বার্তা দিচ্ছে “Your PC ran into a problem and needs to restart”? আপনি হয়তো ভাবছেন, কেন এমন হচ্ছে এবং এই সমস্যার সমাধান কী? এই আর্টিকেলে আমি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব কিভাবে উইন্ডোজ ১০, ১১, ৮ এবং ৭-এ এই ব্লু স্ক্রিন এরর বা “Blue Screen of Death” (BSOD) সমস্যাকে চিনতে হয় এবং কীভাবে সহজে সমাধান করা যায়।

আপনার পিসি রানের সময় এই ধরনের সমস্যা খুবই বিরক্তিকর হতে পারে, বিশেষ করে যখন আপনি জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকেন। তবে চিন্তার কিছু নেই, এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের জন্য এমন কিছু কার্যকরী পদ্ধতি তুলে ধরব যা আপনাদের পিসির এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করবে।

ব্লু স্ক্রিন এরর বা Blue Screen of Death (BSOD) কী?

ব্লু স্ক্রিন এরর মূলত উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যা তখন সক্রিয় হয় যখন পিসি কোনো গুরুতর সমস্যা বা ত্রুটির সম্মুখীন হয় এবং নিজে থেকে চালু থাকা অব্যাহত রাখা সম্ভব হয় না। এই সময় পিসি একটি নীল রঙের স্ক্রিন দেখায় যেখানে কোনো নির্দিষ্ট ত্রুটি কোড বা বার্তা থাকে যা সমস্যার প্রকৃতি নির্দেশ করে।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি হয়তো দেখেছেন “Your PC ran into a problem and needs to restart” বা “We're just collecting some error info, and then we'll restart for you” এই ধরনের বার্তা। এর সঙ্গে অনেক সময় ০x০০০০০০৭E, ০xC000021A, ০x000000D1 ইত্যাদি হেক্সাডেসিমাল এরর কোডও দেখা যেতে পারে।

ব্লু স্ক্রিন এরর হওয়ার প্রধান কারণসমূহ

বিভিন্ন কারণে আপনার পিসিতে ব্লু স্ক্রিন এরর হতে পারে। এর মধ্যে প্রধান কয়েকটি কারণ হলো:

ড্রাইভার সমস্যা: ভুল বা পুরানো ড্রাইভার অনেক সময় সিস্টেমের স্থিতিশীলতা নষ্ট করে।

হার্ডওয়্যার ত্রুটি: হার্ড ড্রাইভ, র‍্যাম বা অন্য কোনো হার্ডওয়্যার অংশে সমস্যা থাকলে এই ধরনের এরর দেখা দিতে পারে।

সফটওয়্যার কনফ্লিক্ট: কিছু সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন অপারেটিং সিস্টেমের সঙ্গে সঠিকভাবে কাজ না করলে সমস্যা হয়।

সিস্টেম ফাইলের ক্ষতি: উইন্ডোজের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে সমস্যা দেখা দেয়।

ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস: ক্ষতিকর প্রোগ্রামগুলো সিস্টেমে হস্তক্ষেপ করে ব্লু স্ক্রিনের কারণ হতে পারে।

“Your PC ran into a problem and needs to restart” সমস্যার সমাধান পদ্ধতি

এই সমস্যার সমাধানে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করা যেতে পারে। নিচে ধাপে ধাপে আমি এই সমস্যার জন্য কার্যকর সমাধানগুলো তুলে ধরছি:

১. সেফ মোডে পিসি চালু করুন

প্রথমেই চেষ্টা করুন আপনার পিসিটি সেফ মোডে চালু করতে। সেফ মোড এমন একটি অবস্থা যেখানে উইন্ডোজ শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ড্রাইভার ও ফাইলগুলো চালায়, ফলে সমস্যার উৎস খুঁজে বের করা সহজ হয়।

  • পিসি চালু করুন এবং যত দ্রুত সম্ভব F8 বা Shift+F8 কী চাপুন।
  • “Advanced Boot Options” থেকে “Safe Mode” নির্বাচন করুন।
  • সেফ মোডে প্রবেশ করলে, ড্রাইভার আপডেট বা আনইনস্টল করুন যেগুলো সন্দেহজনক।

২. সিস্টেম রিস্টোর ব্যবহার করুন

যদি সাম্প্রতিক কোনো সফটওয়্যার বা ড্রাইভার ইনস্টল করার পর এই সমস্যা শুরু হয়, তবে সিস্টেম রিস্টোর ব্যবহার করে পিসিকে আগের স্থিতিতে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।

  • সেফ মোডে প্রবেশ করুন।
  • “Control Panel” থেকে “Recovery” অংশে যান।
  • “Open System Restore” নির্বাচন করুন এবং একটি পূর্ববর্তী রিস্টোর পয়েন্ট নির্বাচন করুন।
  • নির্দেশনা অনুসরণ করে রিস্টোর সম্পন্ন করুন।

৩. কমান্ড প্রম্পট থেকে SFC স্ক্যান চালান

সিস্টেম ফাইল চেকার (SFC) একটি উইন্ডোজ টুল যা ক্ষতিগ্রস্ত বা হারানো সিস্টেম ফাইলগুলো খুঁজে বের করে মেরামত করে। এটি চালানোর জন্য:

  • সেফ মোডে কমান্ড প্রম্পট (Admin) খুলুন।
  • টাইপ করুন: sfc /scannow এবং এন্টার চাপুন।
  • স্ক্যান সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন এবং নির্দেশনা অনুসরণ করুন।

৪. ডিস্ক চেক (CHKDSK) চালান

হার্ড ড্রাইভের ত্রুটি অনেক সময় ব্লু স্ক্রিনের কারণ হতে পারে। ডিস্ক চেক ইউটিলিটি দিয়ে হার্ড ড্রাইভের সমস্যা পরীক্ষা করুন এবং ঠিক করুন।

কম্যান্ড প্রম্পটে লিখুন: chkdsk /f /r এবং এন্টার দিন।
পিসি রিস্টার্ট করুন এবং ডিস্ক চেক সম্পন্ন হতে দিন।

৫. অটোমেটিক রিপেয়ার ব্যবহার করুন

উইন্ডোজের একটি বিল্ট-ইন ফিচার হলো অটোমেটিক রিপেয়ার যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পিসির সমস্যা শনাক্ত ও মেরামত করার চেষ্টা করে।

পিসি চালু করার সময় তিনবার হঠাৎ বন্ধ করুন বা রিস্টার্ট করুন, এতে “Automatic Repair” মেনু আসবে।

  • “Advanced options” থেকে “Troubleshoot” ও তারপর “Startup Repair” নির্বাচন করুন।
  • নির্দেশনা অনুসরণ করুন এবং পিসি মেরামত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন।

৬. ড্রাইভার আপডেট এবং উইন্ডোজ আপডেট নিশ্চিত করুন

পুরানো বা অনুপযুক্ত ড্রাইভার ব্লু স্ক্রিনের অন্যতম বড় কারণ। তাই সব ড্রাইভার আপডেট রাখা জরুরি। একইভাবে উইন্ডোজের সর্বশেষ আপডেট ইনস্টল করা থাকাও গুরুত্বপূর্ণ।

  • “Device Manager” থেকে ড্রাইভারগুলো আপডেট করুন।
  • “Settings” > “Update & Security” > “Windows Update” থেকে আপডেট চেক করুন।

৭. হার্ডওয়্যার চেক করুন

র‍্যাম বা হার্ড ড্রাইভে ত্রুটি থাকলেও ব্লু স্ক্রিন হতে পারে। আপনি “Windows Memory Diagnostic” টুল ব্যবহার করে র‍্যামের সমস্যা পরীক্ষা করতে পারেন।

  • “Windows Memory Diagnostic” লিখে টুলটি চালান।
  • পিসি রিস্টার্ট করুন এবং মেমোরি টেস্ট সম্পন্ন হতে দিন।

বেশ কিছু সাধারণ ব্লু স্ক্রিন এরর কোড এবং তাদের অর্থ

ব্লু স্ক্রিনে বিভিন্ন ধরনের হেক্সাডেসিমাল কোড দেখা যায়। এখানে কয়েকটি সাধারণ কোড এবং তাদের অর্থ দেওয়া হলো:

0x0000000A (IRQL_NOT_LESS_OR_EQUAL): সাধারণত ড্রাইভার বা হার্ডওয়্যার সমস্যা নির্দেশ করে।

0x0000003B (SYSTEM_SERVICE_EXCEPTION): সিস্টেম সার্ভিসে কোনো এক্সসেপশন বা ত্রুটি।

0x000000EF (CRITICAL_PROCESS_DIED): গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম প্রসেস বন্ধ হয়ে যাওয়ার নির্দেশ।

0xC000021A: সিস্টেম প্রসেস ক্র্যাশ বা সিকিউরিটি সমস্যা।

0x0000007B (INACCESSIBLE_BOOT_DEVICE): বুট ডিভাইস অ্যাক্সেসে সমস্যা।

ব্লু স্ক্রিন লুপ থেকে মুক্তির উপায়

অনেক সময় ব্লু স্ক্রিন এরর বার্তা বারবার আসতে থাকে এবং পিসি রিস্টার্ট হয়—একে বলে ব্লু স্ক্রিন লুপ। এই ক্ষেত্রে নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করুন:

  • সেফ মোডে প্রবেশ করুন এবং সাম্প্রতিক ইনস্টল করা সফটওয়্যার বা ড্রাইভার আনইনস্টল করুন।
  • সিস্টেম রিস্টোর ব্যবহার করে পিসিকে আগের স্থিতিতে ফিরিয়ে নিন।
  • অটোমেটিক রিপেয়ার চালান।
  • হার্ডওয়্যার চেক করুন এবং প্রয়োজন হলে পরিবর্তন করুন।

ব্লু স্ক্রিন এরর প্রতিরোধের জন্য টিপস

ব্লু স্ক্রিন সমস্যা থেকে দূরে থাকার জন্য কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা উচিত:

  • নিয়মিত উইন্ডোজ ও ড্রাইভার আপডেট করুন।
  • আন্তঃসংযোগ হার্ডওয়্যার ভালো মানের এবং সঠিকভাবে ইনস্টল করুন।
  • সতর্কতার সঙ্গে সফটওয়্যার ইনস্টল করুন, বিশেষ করে অজানা উৎস থেকে।
  • ম্যালওয়্যার প্রতিরোধক সফটওয়্যার ব্যবহার করে নিয়মিত স্ক্যান করুন।
  • সিস্টেম ফাইলের ব্যাকআপ রাখুন এবং প্রয়োজনীয় সময়ে রিস্টোর করুন।

উপসংহার

“Your PC ran into a problem and needs to restart” বা ব্লু স্ক্রিন এরর উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের জন্য একটি সাধারণ কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি করা বিষয়। তবে সঠিক তথ্য ও পদ্ধতি অনুসরণ করলে এই সমস্যার সমাধান করা মোটেও কঠিন নয়।

উপরোক্ত ধাপগুলো আপনাকে সাহায্য করবে সমস্যা নির্ণয় এবং মেরামতে। সর্বদা মনে রাখবেন, সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত যাতে পিসির বড় ধরনের ক্ষতি না হয়।

যদি নিজে থেকে সমাধান করতে না পারেন, তবে অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানের সাহায্য নিন। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য সহায়ক হবে এবং আপনার পিসি আবার সুস্থ ও দ্রুত চালু হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url