Windows 11 Top 10 Hidden Features | উইন্ডোজ ১১ এর গোপন ১০ টি ফিচার


Windows ১১ এসেছে এবং এর সঙ্গে অনেক নতুন ও চমকপ্রদ ফিচার যুক্ত হয়েছে যা আপনার কম্পিউটার ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে অনেক সহজ ও দ্রুততর করবে। আমি আজ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব Windows ১১ এর ১১টি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অনেকের অজানা এমন ফিচার, যা ব্যবহার করলে আপনি আপনার সময় অনেকটা বাঁচাতে পারবেন এবং Windows ১১ এর একজন প্রকৃত প্রো ব্যবহারকারী হয়ে উঠতে পারবেন। বিশেষ করে ফিচার নম্বর ২, ৬, ৭ এবং ৯ গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

১. টাইপ করার বদলে কথা বলুন – Voice Typing

আমরা সবাই জানি Windows এ স্পিচ রিকগনিশন ফিচার আছে, কিন্তু তবুও অনেকেই এটি ব্যবহার করে না। Windows ১১ এ আপনি খুব সহজেই আপনার কথা বলে টাইপ করতে পারবেন। শুধু Windows + H প্রেস করলেই স্পিচ রিকগনিশন চালু হয়ে যাবে, এরপর আপনি যা বলবেন সেটি টাইপ হয়ে যাবে। এটি অনেক সময় বাঁচায়, বিশেষ করে যখন দ্রুত নোট নিতে হয় বা মেসেজ পাঠাতে হয়। তাই আজই এই ফিচারটি ব্যবহার শুরু করুন এবং দেখুন কিভাবে আপনার টাইপিং সময় সাশ্রয় হয়।

২. Dynamic Lock – যখন আপনি দূরে থাকবেন, তখনই কম্পিউটার লক হবে

আপনি কি জানেন, আপনার Windows ১১ কম্পিউটার আপনার কাছ থেকে দূরে গেলে নিজে থেকেই লক হয়ে যাবে? এই ফিচারটির নাম Dynamic Lock। এটি ব্যবহার করতে আপনার স্মার্টফোন Bluetooth এর মাধ্যমে আপনার কম্পিউটারের সাথে পেয়ার করতে হবে। তারপর আপনি যখন আপনার ফোন নিয়ে কম্পিউটার থেকে দূরে চলে যাবেন, তখন ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে কম্পিউটার নিজে থেকেই লক হয়ে যাবে।

এই ফিচারটি চালু করতে Settings > Accounts > Sign-in Options > Dynamic Lock এ যান এবং "Allow Windows to automatically lock your device when you're away" অপশনটি অন করুন। এটি আপনার প্রাইভেসি ও ডেটা সুরক্ষার জন্য বেশ কার্যকরী।

৩. ভাইরাস স্ক্যান করুন – Windows ১১ এর শক্তিশালী বিল্ট-ইন সিকিউরিটি

অনেকেই মনে করেন ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে আলাদা অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার লাগবে, কিন্তু Windows ১১ এর মধ্যে একটি শক্তিশালী বিল্ট-ইন সিকিউরিটি রয়েছে যা ভাইরাস ও থ্রেটগুলি স্ক্যান ও রিমুভ করতে পারে।

আপনি Start মেনু থেকে Settings > Privacy & Security > Windows Security এ যান এবং Virus & Threat Protection এ ক্লিক করুন। এরপর Quick Scan চালিয়ে আপনার পিসি বা ল্যাপটপের সমস্যা শনাক্ত ও মিটিয়ে ফেলুন। এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং আপনার ডিভাইসকে ভাইরাস থেকে বাঁচাতে সাহায্য করবে।

৪. Snap Layouts – একাধিক উইন্ডো সহজে স্ন্যাপ ও রিসাইজ করুন

Windows ১১ এ Snap Layouts ফিচার নিয়ে এসেছে, যা আপনাকে একসাথে একাধিক অ্যাপ বা উইন্ডো সুন্দরভাবে স্ক্রিনে সাজাতে সাহায্য করবে। আপনি চাইলে তিনটি বড় উইন্ডো বা দুই-তিনটি ছোট উইন্ডো একসাথে স্ক্রিনে রাখতে পারবেন।

Windows + Z প্রেস করলে Snap Layout অপশন আসবে, যেখানে আপনি বিভিন্ন লেআউট থেকে পছন্দমতো নির্বাচন করতে পারবেন। এই ফিচারটি ব্যবহার করলে আপনার মাল্টিটাস্কিং অনেক সহজ হয়ে যাবে এবং কাজের গতি বাড়বে।

৫. ব্যাটারি ব্যবহারের বিস্তারিত বিশ্লেষণ – Battery Sense

ব্যাটারি জীবন বাড়ানো এবং ব্যাটারি ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। Windows ১১ তে একটি নতুন ফিচার এসেছে যার নাম Battery Sense। এটি আপনাকে দেখাবে কতক্ষণ আপনি ব্যাটারি ব্যবহার করেছেন, কোন কোন অ্যাপ বেশি ব্যাটারি খরচ করছে, এবং সামগ্রিক ব্যাটারি ব্যবহারের বিস্তারিত।

Settings > System > Power & Battery এ গিয়ে Battery Usage ট্যাব খুলুন। এখানে আপনি গত কয়েক দিনের ব্যাটারি ব্যবহার ও অ্যাপ ভিত্তিক খরচ দেখতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপনি ব্যাটারি ব্যবহারে সচেতন হতে পারবেন এবং ব্যাটারি লাইফ বাড়াতে পারবেন।

৬. একাধিক ডেস্কটপ তৈরি ও পরিচালনা করুন

আমাদের অনেক সময় ডেস্কটপে অনেকগুলো অ্যাপ বা ফাইলের শর্টকাট জমে যায়, যা খুঁজে বের করা অনেক সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়ে। Windows ১১ এ আপনি একাধিক ভার্চুয়াল ডেস্কটপ তৈরি করতে পারবেন, যার মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ বা ক্যাটাগরির জন্য আলাদা ডেস্কটপ ব্যবহার করতে পারবেন।

উদাহরণস্বরূপ, একটি ডেস্কটপ রাখতে পারেন বিনোদনের জন্য, অন্যটি রাখতে পারেন অফিস বা প্রোডাক্টিভিটির জন্য। টাস্কবারের নিচে থাকা ডেস্কটপ আইকনে হোভার করলে সহজেই ডেস্কটপগুলোর মধ্যে সুইচ করা যায়। এর ফলে আপনার কাজের গতি বাড়বে এবং ডেস্কটপ আরও সুশৃঙ্খল থাকবে।

৭. কাস্টম স্ক্রিনশট নিন – উন্নত Snip টুল

স্ক্রিনশট নেওয়া এখন অনেক সহজ এবং কাস্টমাইজেবল Windows ১১ এ। আপনি Windows + Shift + S প্রেস করলে Snip টুল চালু হবে, যেটা আপনাকে পুরো স্ক্রিন, আংশিক স্ক্রিন, বা ফ্রি-ফর্ম আকারে স্ক্রিনশট নিতে দেয়।

এর ফলে আপনি শুধু প্রয়োজনীয় অংশের স্ক্রিনশট নিয়ে তা সহজে শেয়ার বা সেভ করতে পারবেন। এটি আগের তুলনায় অনেক উন্নত এবং ব্যবহারকারীদের জন্য সময় সাশ্রয়ী।

৮. Storage Sense – স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপ্রয়োজনীয় ফাইল পরিষ্কার করুন

কম্পিউটারের স্টোরেজ যখন কমে যায়, তখন অপ্রয়োজনীয় ফাইল ও টেম্পোরারি ফাইল ম্যানুয়ালি ডিলিট করতে হয়। Windows ১১ এই সমস্যারও সমাধান নিয়ে এসেছে Storage Sense এর মাধ্যমে।

Settings > Storage এ গিয়ে Storage Sense চালু করুন। যখন আপনার স্টোরেজ কমে যাবে, তখন এটি নিজেই অপ্রয়োজনীয় ফাইলগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিষ্কার করে দিবে। এর ফলে আপনার কম্পিউটার দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে চলবে এবং আপনার হাতেও সময় বাঁচবে।

৯. Start Menu কাস্টমাইজ করুন এবং আপনার পছন্দমতো অ্যাপ পিন করুন

Windows ১১ এর Start Menu এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি কাস্টমাইজেবল। আপনি চাইলে Settings > Personalization > Start > Folders থেকে Start Menu তে যেসব ফোল্ডার বা অ্যাপ দেখতে চান তা নির্বাচন করতে পারবেন। এতে আপনার প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো সহজেই এক্সেস করা যাবে।

কোনো অ্যাপকে Start Menu তে পিন করতে চাইলে সরাসরি অ্যাপের উপর রাইট ক্লিক করে "Pin to Start" অপশন নির্বাচন করুন। পছন্দ মতো অ্যাপগুলো পিন এবং আনপিন করে Start Menu কে আপনার কাজের সুবিধামত সাজাতে পারবেন।

১০. Glanceable VPN – Windows ১১ এর নতুন নিরাপত্তা ফিচার

বর্তমান সময়ে প্রাইভেসি রক্ষা ও নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য VPN অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। Windows ১১ এর নতুন Glanceable VPN ফিচারটি ব্যবহার করে আপনি নিরাপদে ও সহজে VPN চালু করতে পারবেন। এটি Windows ১১ এর সর্বশেষ আপডেটে যুক্ত একটি নতুন ফিচার যা আপনাকে সারাক্ষণ সুরক্ষিত রাখবে।

VPN ব্যবহারে অনেক সময় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, কিন্তু Glanceable VPN আপনার ডিভাইসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং আপনার অনলাইন ট্রাফিক এনক্রিপ্ট করবে।

১১. আপনার Windows ১১ ব্যবহার আরও দ্রুত ও দক্ষ করুন

উপরের ১০টি ফিচারের পাশাপাশি Windows ১১ এ আরও অনেক ছোট ছোট ফিচার আছে যা আপনার ব্যবহারকে আরও স্মার্ট করে তুলবে। যেমন, নতুন Snap Layouts দিয়ে উইন্ডো ম্যানেজমেন্ট, একাধিক ডেস্কটপে আলাদা কাজ করা, এবং উন্নত স্ক্রিনশট টুল ব্যবহার। এগুলো সবই আপনার কাজের গতি বাড়াবে এবং কম্পিউটার ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করবে।

উপসংহার

Windows ১১ এর এই ১১টি গোপন ফিচার ব্যবহার করে আপনি আপনার কম্পিউটার ব্যবহারের দক্ষতা অনেকগুণ বাড়াতে পারবেন। বিশেষ করে Dynamic Lock, Battery Sense, Multiple Desktops এবং Start Menu কাস্টমাইজেশন ফিচারগুলো আপনার দৈনন্দিন কাজকে অনেক সহজ করে তুলবে।

আপনার কাজের গতি বাড়াতে এবং সময় বাঁচাতে এই ফিচারগুলো অবশ্যই ব্যবহার করুন। যারা Windows ১১ ব্যবহার করছেন তাদের জন্য এটি একটি অসাধারণ গাইড যা আপনাদের প্রো ইউজার বানিয়ে দেবে। আপনারা যদি এই তথ্যগুলো কাজে লাগান, তবে নিশ্চিতভাবেই আপনার কাজের দক্ষতা ও নিরাপত্তা বাড়বে।

সুতরাং, এই গোপন ফিচারগুলো শিখে নিন, ব্যবহার শুরু করুন এবং আপনার বন্ধুবান্ধবদের সাথেও শেয়ার করুন যাতে তারা ও উপকৃত হয়। Windows ১১ এর এই অসাধারণ ফিচারগুলো আপনার ডিজিটাল জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url