বাংলাদেশের সেরা ১০টি গ্রুপ অব কোম্পানী। Top 10 Group of Company in Bangladesh
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে যেসব বৃহৎ ব্যবসায়িক গ্রুপগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, তাদের মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। এই আর্টিকেলে বাংলাদেশের সেরা ১০টি গ্রুপ অব কোম্পানির ইতিহাস ও তাদের বিস্তারিত কার্যক্রম তুলে ধরা হলো।
১. বেক্সিমকো গ্রুপ (BEXIMCO Group)
বেক্সিমকো গ্রুপ (BEXIMCO Group) বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ও বহুমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এই গ্রুপটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং বহুবিধ খাতজুড়ে তাদের কার্যক্রম বিস্তার করেছে। এর কার্যক্রমের পরিসর যেমন বিস্তৃত, তেমনি আন্তর্জাতিক পরিসরেও প্রতিষ্ঠানটির সুনাম উল্লেখযোগ্য।
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
বেক্সিমকো গ্রুপের সূচনা ঘটে ১৯৭০-এর দশকে, বিশেষ করে ১৯৭২ সালে। প্রতিষ্ঠাতা সালমান এফ রহমান এবং আহসান ফজলুর রহমান এই প্রতিষ্ঠানটি গঠন করেন। শুরুতে এটি ছিল একটি সাধারণ ট্রেডিং কোম্পানি, তবে অল্প সময়েই এটি বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে এক বিশাল গ্রুপে পরিণত হয়। বেক্সিমকোর নাম এসেছে “Bangladesh Export Import Company Ltd.” এর সংক্ষিপ্ত রূপ থেকে।
শিল্প খাতে বৈচিত্র্য
বেক্সিমকো গ্রুপের কার্যক্রম মূলত নিম্নলিখিত খাতগুলোতে বিস্তৃত:
ওষুধ শিল্প (Pharmaceuticals): বেক্সিমকো ফার্মা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। এটি দেশের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে। বেক্সিমকো ফার্মা বাংলাদেশের প্রথম কোম্পানি যেটি যুক্তরাষ্ট্রের FDA (Food and Drug Administration) অনুমোদন পেয়েছে।
বস্ত্র ও পোশাক শিল্প (Textiles and Apparel): বেক্সিমকো টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাতেও সুপ্রতিষ্ঠিত। তাদের তৈরি পোশাক বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড যেমন Calvin Klein, Zara, H&M, এবং Tommy Hilfiger-এর জন্য সরবরাহ করা হয়।
আইটি ও টেলিকমিউনিকেশন: বেক্সিমকো টেকনোলজি খাতেও বিনিয়োগ করেছে। তারা তথ্যপ্রযুক্তি সেবা এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে কাজ করছে। এছাড়া, টেলিকম খাতে রবি-র মতো কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ছিল পূর্বে।
মিডিয়া ও বিনোদন: বেক্সিমকো মিডিয়া খাতেও সক্রিয়, যেখানে তারা টেলিভিশন চ্যানেল যেমন “Ekattor TV” এবং “The Independent” পত্রিকার মালিকানা নিয়েছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও অবকাঠামো: বেক্সিমকো দেশের বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করেছে এবং সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পেও সক্রিয়। তারা দেশের প্রথম বৃহৎ স্কেল সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের অংশীদার।
কৃষি ও খাদ্য খাত: Beximco Agro একটি নবীন তবে দ্রুত বর্ধনশীল বিভাগ, যেখানে কৃষিজ পণ্য উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উপস্থিতি
বেক্সিমকো গ্রুপ শুধুমাত্র বাংলাদেশের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। তাদের পণ্য ও সেবা বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পৌঁছে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ইমেজ গড়ে তুলতে বেক্সিমকোর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্ব (CSR)
বেক্সিমকো সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কেও সচেতন। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ক্রীড়া ও দুঃস্থদের সহায়তায় প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত অনুদান ও কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বিশেষ করে, দুর্যোগকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন রিলিফ কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকে।
নেতৃত্ব ও পরিচালনা
বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও অন্যতম পরিচালক সালমান এফ রহমান একজন খ্যাতনামা শিল্পোদ্যোক্তা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা। তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিনিয়ত নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। তার দূরদর্শী চিন্তা এবং নেতৃত্ব দক্ষতার ফলেই বেক্সিমকো গ্রুপ একটি আন্তর্জাতিক মানের কনগ্লোমারেটে রূপান্তরিত হয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বেক্সিমকো গ্রুপ ভবিষ্যতে প্রযুক্তিনির্ভর ও পরিবেশবান্ধব ব্যবসায়িক মডেলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন, এবং ক্লিন এনার্জির মতো আধুনিক প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। একইসাথে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রির দিকেও তাদের দৃষ্টি।
বেক্সিমকো গ্রুপ শুধু একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ নাম। এর বহুমুখী খাতের উপস্থিতি ও আন্তর্জাতিক মানের পরিচালনা বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ভবিষ্যতে বেক্সিমকোর অবদান আরও প্রসারিত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
২. বসুন্ধরা গ্রুপ (Bashundhara Group)
বসুন্ধরা গ্রুপ (Bashundhara Group) বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ এবং প্রভাবশালী শিল্পগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। এই গ্রুপটি বিভিন্ন খাতে বিশাল বিনিয়োগ ও সাফল্যের মাধ্যমে দেশীয় শিল্পখাতকে সমৃদ্ধ করেছে এবং লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও বসুন্ধরার কিছু কার্যক্রম প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে। এর পেছনে রয়েছে সময়োপযোগী পরিকল্পনা, দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি।
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
বসুন্ধরা গ্রুপের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৭ সালে, যখন এটি একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে "East West Property Development (Pvt) Ltd." নামে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ আকবর সোবহান, যিনি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা ও উদ্যোক্তা। বসুন্ধরা গ্রুপের এই রিয়েল এস্টেট প্রকল্পটি ছিল দেশের প্রথম Planned Housing Project — যা পরবর্তীতে "বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা" নামে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
শুধু আবাসন খাতেই নয়, সময়ের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানটি সিমেন্ট, কাগজ, টিস্যু, খাদ্যপণ্য, মিডিয়া, ইস্পাত, এলপিজি গ্যাস, শিপিং, ও ই-কমার্সসহ বিভিন্ন খাতে নিজেদের কার্যক্রম বিস্তৃত করেছে।
বিভিন্ন খাতে উপস্থিতি
বসুন্ধরা গ্রুপের বিশাল পরিসরের ব্যবসাগুলোকে মূলত নিচের কিছু ভাগে ভাগ করা যায়:
১. আবাসন ও নির্মাণ খাত: East West Property Development Ltd.-এর মাধ্যমে শুরু হওয়া রিয়েল এস্টেট ব্যবসা বসুন্ধরার সবচেয়ে প্রথম এবং অন্যতম সফল প্রকল্প। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা আজ রাজধানী ঢাকার অন্যতম অভিজাত ও সুপরিকল্পিত এলাকা হিসেবে পরিচিত।
২. সিমেন্ট শিল্প: বসুন্ধরা সিমেন্ট বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিমেন্ট উৎপাদন করে এবং দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানি করে থাকে।
৩. কাগজ ও টিস্যু: বসুন্ধরা পেপার মিলস এবং বসুন্ধরা টিস্যু ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ কাগজ ও টিস্যু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। তারা উচ্চমানের পণ্য উৎপাদন করে যা দেশের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হয়।
৪. খাদ্য ও পানীয়: বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড বিস্কুট, নুডলস, পানীয়, আটা-ময়দা প্রভৃতি খাদ্যপণ্য উৎপাদন করে। এই খাতে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি রপ্তানি বাজারেও প্রবেশ করেছে।
৫. মিডিয়া ও প্রকাশনা: বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের অন্যতম বৃহৎ মিডিয়া হাউজের মালিক। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কণ্ঠ, দৈনিক সুনামকণ্ঠ, নিউজ২৪ টেলিভিশন চ্যানেল, রেডিও ক্যাপিটাল FM, ইত্যাদি। এই মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি গণমাধ্যমে আধিপত্য বজায় রেখেছে।
৬. ইস্পাত শিল্প: বসুন্ধরা স্টিল কমপ্লেক্স লিমিটেড নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ইস্পাত সামগ্রী উৎপাদন করে থাকে। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে এই খাতটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
৭. এলপিজি গ্যাস ও জ্বালানি: বসুন্ধরা এলপিজি দেশের গৃহস্থালি ও শিল্পখাতে ব্যবহৃত গ্যাস সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে নিরাপদ ও কার্যকর জ্বালানি পৌঁছে দেওয়ায় এই সেক্টরে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান শক্ত।
কর্মসংস্থান ও সামাজিক দায়িত্ব: বসুন্ধরা গ্রুপ দেশে লক্ষাধিক মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া, প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সমাজকল্যাণ মূলক কাজ যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ক্রীড়া উন্নয়ন, রোহিঙ্গা সহায়তা ইত্যাদিতে নিয়মিতভাবে অবদান রেখে চলেছে।
নেতৃত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গি
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং তার পরিবারগত পরিচালনা দল প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্বে রয়েছেন। তার পুত্র সায়েম সোবহান আনভীর বর্তমানে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (Managing Director) হিসেবে কাজ করছেন। নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে বসুন্ধরা গ্রুপ আরও আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বসুন্ধরা গ্রুপ ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করছে। পরিবেশবান্ধব শিল্প, গ্রীন এনার্জি, এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদন খাতে আরও দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে তারা। এছাড়া, ই-কমার্স ও ডিজিটাল মিডিয়া খাতেও তাদের আগ্রহ বাড়ছে।
বসুন্ধরা গ্রুপ শুধু একটি কর্পোরেট নাম নয়, এটি বাংলাদেশের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান এবং শিল্পায়নের এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এর বহুমুখী কার্যক্রম ও আন্তর্জাতিক মানের পরিচালনা কাঠামো দেশের শিল্পখাতে একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়। ভবিষ্যতের দিকে তাকালে বলা যায়, বসুন্ধরা গ্রুপ আরও নতুন খাতে প্রবেশ করে দেশের অর্থনীতিতে আরও ব্যাপক অবদান রাখবে।
৩. আকিজ গ্রুপ (Akij Group)
আকিজ গ্রুপ (Akij Group) বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ, বহুমুখী ও সুপ্রতিষ্ঠিত শিল্পগোষ্ঠী। কৃষিভিত্তিক উৎপাদন থেকে শুরু করে আধুনিক শিল্পপ্রযুক্তি—প্রায় সবখাতেই এই গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এটি শুধু একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক কল্যাণে এক শক্তিশালী নাম।
প্রতিষ্ঠার পটভূমি
আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শেখ আকিজউদ্দিন। তার ব্যবসায়ী জীবনের শুরু হয়েছিল অনেক সাধারণ ও পরিশ্রমনির্ভরভাবে। ১৯৪০-এর দশকে তিনি কুষ্টিয়া জেলার ফুলবাড়িয়া এলাকায় তামাক ব্যবসা দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীরে অন্যান্য খাতে প্রবেশ করেন এবং গড়ে তোলেন এক বিশাল শিল্প সাম্রাজ্য—যা পরবর্তীতে পরিচিত হয় আকিজ গ্রুপ নামে।
বর্তমানে আকিজ গ্রুপ পরিচালিত হচ্ছে শেখ আকিজউদ্দিনের সন্তানদের নেতৃত্বে। এই গ্রুপের অধীনে ৩০টিরও বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা দেশব্যাপী এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তৃত।
বিভিন্ন খাতে আকিজ গ্রুপের উপস্থিতি
১. তামাক শিল্প (Tobacco): আকিজ বিড়ি এবং পরে আকিজ টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেডের মাধ্যমে এই খাতে আকিজ গ্রুপ একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে। ২০১৮ সালে আকিজ টোব্যাকো কোম্পানি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনালের (JTI) কাছে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে দেওয়া হয়, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগ চুক্তিগুলোর একটি।
২. খাদ্য ও পানীয় (Food & Beverage): আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড (AFBL) বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান খাদ্য ও পানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। তাদের পণ্যসমূহ যেমন: Speed (energy drink), Frutika, Mojo, Clemon, Farm Fresh, ইত্যাদি—দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
৩. আবরণ ও প্যাকেজিং (Packaging): আকিজ গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজিং সামগ্রী উৎপাদন করে। এদের মধ্যে Akij Printing & Packaging Ltd. এবং Akij Particle Board Mills Ltd. উল্লেখযোগ্য। তারা আন্তর্জাতিক মানের প্যাকেজিং সামগ্রী তৈরি করে যা বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
৪. আবাসন ও নির্মাণ খাত: আকিজ গ্রুপ Akij Cement, Akij Steel, এবং Akij Doors এর মাধ্যমে দেশের নির্মাণ খাতে ব্যাপকভাবে অবদান রাখছে। আকিজ সিমেন্ট বর্তমানে দেশের অন্যতম সেরা মানের সিমেন্ট হিসেবে পরিচিত।
৫. পাট শিল্প: Akij Jute Mills Ltd. দেশের অন্যতম বৃহৎ পাটকল, যেখানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পাটপণ্য উৎপাদন করা হয়। এই খাতে আকিজ গ্রুপ দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যকে রক্ষা করার পাশাপাশি রপ্তানি আয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
৬. স্বাস্থ্য ও শিক্ষা: আকিজ গ্রুপ Ad-din Foundation ও অন্যান্য সামাজিক সংস্থার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে কাজ করছে। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে হাসপাতাল, স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে, বিশেষ করে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য।
৭. প্রযুক্তি ও আইটি: আকিজ গ্রুপ সম্প্রতি তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও বিনিয়োগ শুরু করেছে। তারা সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও ডিজিটাল সেবার দিকে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে।
কর্মসংস্থান ও মানবসম্পদ
আকিজ গ্রুপ দেশে সরাসরি প্রায় ৫০,০০০-এর বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এছাড়া পরোক্ষভাবে আরও লক্ষাধিক মানুষ এই গ্রুপের বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত। এই কর্মসংস্থান বাংলাদেশের বেকারত্ব হ্রাসে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR)
আকিজ গ্রুপ সবসময় সামাজিক দায়বদ্ধতাকে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দুর্যোগ মোকাবেলায় তারা বরাবরই এগিয়ে আসে। রোহিঙ্গা সঙ্কট হোক বা করোনাভাইরাস মহামারী—আকিজ গ্রুপ সহায়তা দিয়েছে অর্থ, চিকিৎসা সামগ্রী ও খাদ্যপণ্য দিয়ে।
নেতৃত্ব ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
বর্তমানে শেখ আকিজউদ্দিনের পুত্র শেখ বাশিরউদ্দিন ও অন্যান্য পরিচালকরা আকিজ গ্রুপ পরিচালনা করছেন। তারা আধুনিক ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে গ্রুপের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছেন।
ভবিষ্যতে আকিজ গ্রুপ আরও বেশি পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসায়িক মডেলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন খাতে প্রবেশ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান গড়ে তোলাই তাদের অন্যতম লক্ষ্য।
আকিজ গ্রুপ বাংলাদেশের শিল্পখাতে এক বিশাল ও শক্তিশালী নাম। এটি শুধু একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নয়, বরং বাংলাদেশের মানুষের জীবনে নানা ভাবে প্রভাব ফেলছে। এর বৈচিত্র্যময় খাত, উন্নত প্রযুক্তি, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি আকিজ গ্রুপকে বাংলাদেশের অগ্রগণ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভবিষ্যতে আকিজ গ্রুপের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হবে এবং এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে বলে আশা করা যায়।
৪. এস আলম গ্রুপ (S. Alam Group)
এস আলম গ্রুপ: বাংলাদেশের শিল্প ও অর্থনীতির এক নির্ভরযোগ্য স্তম্ভ
এস আলম গ্রুপ (S. Alam Group) বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ, প্রভাবশালী ও বহুমুখী শিল্পগোষ্ঠী। চট্টগ্রামভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৫ সালে যাত্রা শুরু করে এবং সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন খাতে বিস্তৃত হয়ে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। শিল্প, ব্যাংকিং, আমদানি-রপ্তানি, কৃষি, খাদ্য, জ্বালানি ও বিদ্যুৎসহ বহু খাতে তাদের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল তথা চট্টগ্রামের অর্থনীতিকে সচল রাখতে এই গ্রুপের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও যাত্রা শুরু
এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ, যিনি একজন উদ্যমী উদ্যোক্তা ও সফল ব্যবসায়ী। তার হাত ধরেই ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় “S. Alam Brothers” নামের একটি ট্রেডিং কোম্পানি। শুরুতে খাদ্যশস্য, চিনি, তেল ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করে এই গ্রুপ। ধীরে ধীরে এস আলম গ্রুপ খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্যাকেজিং, স্টিল, ব্যাংকিং, বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ বিভিন্ন খাতে প্রবেশ করে এবং এক বিশাল শিল্পগোষ্ঠীতে পরিণত হয়।
বিভিন্ন খাতে এস আলম গ্রুপের কার্যক্রম:
১. ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত: এস আলম গ্রুপ দেশের ব্যাংকিং খাতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। তারা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, সোসাইটি জেনারেল ডি ব্যাংক কনজুমার ফাইন্যান্স (SIBL) এবং আরও কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার অধিকার করে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। এর মাধ্যমে তারা দেশের আর্থিক প্রবাহ ও বিনিয়োগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব রাখে।
২. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত: এস আলম গ্রুপের সবচেয়ে আলোচিত ও বিনিয়োগবহুল প্রকল্প হলো এস আলম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটি চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে অবস্থিত এবং এর উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ১,৩২০ মেগাওয়াট। এটি দেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি বিদ্যুৎ প্রকল্প। যদিও পরিবেশ ও সামাজিক প্রভাব নিয়ে এ প্রকল্প নিয়ে সমালোচনা রয়েছে, তবে এটি দেশের বিদ্যুৎ খাতে এক বড় সংযোজন।
৩. ভোগ্যপণ্য ও কৃষিশিল্প: এস আলম গ্রুপ নানা ধরনের ভোগ্যপণ্য যেমন ভোজ্যতেল, আটা, ময়দা, চিনি, চাল প্রক্রিয়াজাত করে। তাদের S. Alam Refined Sugar Industries, S. Alam Vegetable Oil, ও S. Alam Soybean Oil Ltd. দেশজুড়ে সুপরিচিত। তারা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিশিল্পে টেকসই বিনিয়োগ করে যাচ্ছে।
৪. ইস্পাত ও গলন শিল্প: এস আলম গ্রুপ ইস্পাত ও গলন শিল্পে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নাম। তারা S. Alam Steel Mills Ltd. ও S. Alam Cold Rolled Steels Ltd. এর মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে নির্মাণ খাতে ব্যবহৃত উচ্চমানের স্টিল ও রড উৎপাদন করে থাকে।
৫. পরিবহন ও যোগাযোগ: এই গ্রুপের রয়েছে নিজস্ব জাহাজ পরিবহন ব্যবস্থা এবং ডকইয়ার্ড, যার মাধ্যমে তারা আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন কার্যক্রম আরও কার্যকরভাবে সম্পাদন করতে পারে।
মানবসম্পদ ও কর্মসংস্থান
এস আলম গ্রুপ বর্তমানে দেশে প্রায় ৫০,০০০ মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং পরোক্ষভাবে আরও অনেককে সহায়তা করছে। তারা চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক বিকাশে যেমন অবদান রেখেছে, তেমনি বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলেও শিল্প স্থাপন ও বিনিয়োগের মাধ্যমে উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
সমালোচনা ও বিতর্ক
এস আলম গ্রুপের দ্রুত প্রবৃদ্ধি যেমন প্রশংসনীয়, তেমনি কিছু বিতর্ক ও সমালোচনারও জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে বাঁশখালীর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সময় স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষ ও পরিবেশগত উদ্বেগ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। এছাড়া, আর্থিক খাতে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ ও ব্যাংকিং খাতের নিরপেক্ষতা নিয়েও কিছু আলোচনা রয়েছে। তবে এস আলম গ্রুপ এ বিষয়ে সময়ের সাথে সাথে স্বচ্ছতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিচ্ছে।
সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR)
এস আলম গ্রুপ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে জড়িত। তারা স্কুল, মসজিদ, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট নির্মাণ, ত্রাণ সহায়তা ইত্যাদিতে অবদান রাখে। করোনা মহামারীর সময় প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী বিতরণ করেছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এস আলম গ্রুপ ভবিষ্যতে আরও আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ, এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরির পরিকল্পনা করছে। নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে তারা দেশীয় ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে এগোচ্ছে।
এস আলম গ্রুপ বাংলাদেশের একটি অগ্রগণ্য এবং শক্তিশালী শিল্পগোষ্ঠী। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শিল্পায়নে এর অবদান অনস্বীকার্য। যদিও কিছু বিতর্ক রয়েছে, তবে সামগ্রিকভাবে এস আলম গ্রুপ একটি শক্তিশালী, বহুমুখী এবং ভবিষ্যতমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে।
৫. যমুনা গ্রুপ (Jamuna Group)
যমুনা গ্রুপ: বাংলাদেশের শিল্প জগতের এক অগ্রণী শক্তি
বাংলাদেশের শিল্প, ব্যবসা এবং বিনিয়োগ জগতে যমুনা গ্রুপ একটি সুপরিচিত ও প্রভাবশালী নাম। এই গ্রুপটি দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। বহুমুখী খাতে সক্রিয় এই প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদনশীলতা, কর্মসংস্থান, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং সামাজিক দায়বদ্ধতায় নিজেদের এক অনন্য অবস্থানে নিয়ে গেছে। দেশীয় শিল্প বিকাশে যমুনা গ্রুপের অবদান নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট
যমুনা গ্রুপের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৪ সালে, প্রতিষ্ঠাতা নূরুল ইসলাম বাবুল এর নেতৃত্বে। একজন মেধাবী ও দূরদর্শী উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি যমুনা গ্রুপকে শূন্য থেকে গড়ে তোলেন এবং তা আজকের বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পসমূহের কাতারে নিয়ে আসেন।
প্রতিষ্ঠার শুরুতে তারা কিছু নির্দিষ্ট শিল্পখাতে সীমিত থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্রুপটি বিভিন্ন খাতে বিস্তৃতি লাভ করে। বর্তমানে এটি ২৫টিরও বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে, যা পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে মিডিয়া, নির্মাণ, এবং রিটেইল খাত পর্যন্ত বিস্তৃত।
প্রধান শিল্প খাতসমূহ
১. টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস: যমুনা গ্রুপের সবচেয়ে বড় খাতগুলোর একটি হলো বস্ত্র ও পোশাক শিল্প। তারা Jamuna Denims Ltd., Jamuna Knitting & Dyeing Ltd., এবং Jamuna Spinning Mills Ltd. এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের পোশাক ও কাঁচামাল উৎপাদন করে। এদের পণ্য বিদেশে রপ্তানিও করা হয়, যা বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস।
২. বেভারেজ ও কনজিউমার পণ্য: Jamuna Distillery Ltd. এবং Well Food এর মাধ্যমে যমুনা গ্রুপ ভোগ্যপণ্য বাজারে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। পাশাপাশি তারা বিভিন্ন খাদ্য ও পানীয় পণ্য উৎপাদন করে যা দেশের বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
৩. ইলেকট্রনিক্স ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স: Jamuna Electronics & Automobiles Ltd. দেশের অন্যতম হোম অ্যাপ্লায়েন্স ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য প্রস্তুতকারক। ফ্রিজ, টেলিভিশন, এসি, ওয়াশিং মেশিনসহ বিভিন্ন পণ্য তারা উৎপাদন ও বাজারজাত করে থাকে, যা দেশের মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে সমাদৃত।
৪. নির্মাণ ও রিয়েল এস্টেট: যমুনা গ্রুপের Jamuna Builders Ltd. এবং Jamuna City প্রকল্প দেশের অন্যতম বৃহৎ আবাসন ও বানিজ্যিক প্রকল্প। তাদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হলো Jamuna Future Park—এশিয়ার অন্যতম বড় শপিং মল, যা ঢাকা শহরের বাণিজ্যিক মানচিত্রে একটি যুগান্তকারী সংযোজন।
৫. মিডিয়া ও প্রকাশনা: Jamuna Group এর মালিকানায় রয়েছে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল Jamuna TV এবং দৈনিক পত্রিকা যায়যায়দিন। এই মিডিয়া হাউসগুলো দেশের গণমাধ্যম খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
নেতৃত্ব ও পরবর্তী প্রজন্ম
যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা নূরুল ইসলাম বাবুল ২০২০ সালে ইন্তেকাল করেন। এরপর তার পরিবার, বিশেষ করে তার স্ত্রী ও সন্তানরা বর্তমানে গ্রুপটি পরিচালনায় রয়েছেন। তারা প্রতিষ্ঠাতার ভিশন বাস্তবায়নে আধুনিক ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে যমুনা গ্রুপকে আরও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
কর্মসংস্থান ও মানবসম্পদ উন্নয়ন
যমুনা গ্রুপের অধীনে সরাসরি প্রায় ৫০,০০০ এর বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া পরোক্ষভাবে আরও কয়েক লক্ষ মানুষ এই গ্রুপের পণ্য, পরিষেবা বা সরবরাহ শৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত। এটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR)
যমুনা গ্রুপ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, বন্যা ও দুর্যোগকালীন ত্রাণ সহায়তা, মসজিদ নির্মাণ, দরিদ্রদের সহায়তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তারা নিয়মিতভাবে অবদান রেখে আসছে।
করোনা মহামারির সময় তারা অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
যমুনা গ্রুপ ভবিষ্যতে তাদের বিদ্যমান শিল্পের পরিধি আরও বাড়াতে চায়। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, আইটি খাত, এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-তে বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। তারা দেশের বাইরেও শিল্প ও বাণিজ্য প্রসারে কাজ করতে চায়।
যমুনা গ্রুপ শুধুমাত্র একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নয়, বরং বাংলাদেশের উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান তৈরির এক বলিষ্ঠ চালিকাশক্তি। প্রতিষ্ঠাতা নূরুল ইসলাম বাবুলের স্বপ্ন, পরিশ্রম এবং দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে গড়ে ওঠা এই গ্রুপ বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে আরও মজবুত করে তুলছে। ভবিষ্যতে যমুনা গ্রুপের অবদান আরও বিস্তৃত হবে এবং এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে—এটি আশা করা যায়।
৬. স্কয়ার গ্রুপ (Square Group)
স্কয়ার গ্রুপ: শিল্প, ঔষধ ও উদ্ভাবনের এক উজ্জ্বল প্রতীক
স্কয়ার গ্রুপ (Square Group) বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ, সুপ্রতিষ্ঠিত ও সম্মানজনক শিল্প প্রতিষ্ঠান। এই গ্রুপটি দেশের স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, টেক্সটাইল, খাদ্য, ভোগ্যপণ্য এবং মিডিয়া খাতে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে। দক্ষ ব্যবস্থাপনা, গুণগত মান ও সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে স্কয়ার গ্রুপ দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সুপরিচিত।
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
স্কয়ার গ্রুপের যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৮ সালে, দুই জন উদ্যমী উদ্যোক্তা—স্যামসন এইচ চৌধুরী এবং তার বন্ধুদের হাত ধরে। শুরুর দিকে এটি একটি ছোট ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ছিল, যার নাম ছিল Square Pharmaceuticals Ltd. নাম থেকেই বোঝা যায়, “Square” মানে হচ্ছে সততা, নিখুঁততা এবং গুণগত মান। তারা প্রথম থেকেই মানসম্মত ওষুধ উৎপাদনের মাধ্যমে আস্থা অর্জনের দিকে মনোযোগ দেয়।
প্রধান খাতসমূহে স্কয়ার গ্রুপের কার্যক্রম
১. ফার্মাসিউটিক্যালস (Square Pharmaceuticals Ltd.): স্কয়ার গ্রুপের মূল ও সর্ববৃহৎ শাখা হলো ফার্মাসিউটিক্যালস খাত। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ওষুধ কোম্পানি এবং বিশ্ব বাজারে রপ্তানির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। স্কয়ার ফার্মা ৪০টিরও বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে, যার মধ্যে রয়েছে এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের কিছু দেশ।
এর উৎপাদিত ওষুধ মানের দিক থেকে WHO, UKMHRA, TGA, এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করে। কোম্পানিটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—গবেষণা ও উন্নয়নে (R&D) নিয়মিত বিনিয়োগ এবং নতুন ওষুধ উদ্ভাবনের প্রতি অঙ্গীকার।
২. ভোগ্যপণ্য (Square Consumer Products Ltd.): স্কয়ার গ্রুপ দেশের ভোগ্যপণ্য খাতেও ব্যাপকভাবে সক্রিয়। তারা বিভিন্ন খাদ্য ও রান্নার উপকরণ উৎপাদন করে, যেমন – মসলা, ঘি, চা, দুধ, এবং বিভিন্ন প্যাকেটজাত খাদ্য। এসব পণ্য “Radhuni”, “Chashi” ও “Jui” ব্র্যান্ডের অধীনে বাজারজাত করা হয়।
৩. টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প: Square Textiles Ltd., Square Fashions Ltd. এবং Square Yarns Ltd. বাংলাদেশের অন্যতম আধুনিক ও রপ্তানিমুখী টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান। তাদের উৎপাদিত সুতা, কাপড় ও পোশাক ইউরোপ, আমেরিকা ও অন্যান্য দেশে ব্যাপক চাহিদা অর্জন করেছে। এই খাতে তাদের অবদান দেশের রপ্তানি আয়ে উল্লেখযোগ্য।
৪. হেলথ কেয়ার (Square Hospitals Ltd.): ২০০৬ সালে স্কয়ার গ্রুপ রাজধানী ঢাকায় অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন Square Hospital প্রতিষ্ঠা করে। এটি বর্তমানে দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালগুলোর একটি, যেখানে দেশি-বিদেশি চিকিৎসক ও আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
৫. প্রকাশনা ও মিডিয়া: স্কয়ার গ্রুপ Mediacom Ltd. এবং Ananda Alo পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে মিডিয়া খাতেও সক্রিয় রয়েছে। এছাড়াও তারা বিভিন্ন টিভি কমার্শিয়াল ও বিপণন কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্ত রয়েছে।
কর্মসংস্থান ও মানবসম্পদ
স্কয়ার গ্রুপ সরাসরি ও পরোক্ষভাবে ৫০,০০০-এর বেশি মানুষকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, গবেষক, উৎপাদনকর্মী, বিপণন প্রতিনিধি এবং অন্যান্য পেশাজীবী। প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও কর্মী উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে দক্ষ জনবল গড়ে তোলে।
গুণগত মান ও প্রযুক্তির ব্যবহার
স্কয়ার গ্রুপ সবসময় গুণগত মান বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। তারা ISO, GMP এবং HACCP-এর মতো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহারে তারা দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR)
স্কয়ার গ্রুপ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং দুর্যোগকালীন ত্রাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। স্কয়ার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তারা দরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবা, ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি, ও নারীদের ক্ষমতায়নে কাজ করছে। এছাড়া পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণেও তারা সচেষ্ট।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
স্কয়ার গ্রুপ ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে একটি সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করেছে। তাদের লক্ষ্য আগামী বছরগুলিতে আরও নতুন বাজারে প্রবেশ, R&D বাড়ানো, এবং স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে উদ্ভাবনী সমাধান প্রদান করা।
স্কয়ার গ্রুপ আজ শুধু একটি কোম্পানি নয়, বরং একটি প্রতিষ্ঠান, একটি মানদণ্ড। সততা, কঠোর পরিশ্রম এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার মিশেলে গড়ে ওঠা স্কয়ার গ্রুপ বাংলাদেশের শিল্প, স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনীতির এক নির্ভরযোগ্য স্তম্ভ। ভবিষ্যতে তারা আরও বৃহত্তর পরিসরে দেশের ও বিশ্বের কল্যাণে অবদান রাখবে—এটাই জাতির প্রত্যাশা।
৭. রহিম আফরোজ গ্রুপ (Rahimafrooz Group)
রহিম আফরোজ গ্রুপ: টেকসই শক্তি, উদ্ভাবন ও নির্ভরতার প্রতীক
রহিম আফরোজ গ্রুপ (Rahimafrooz Group) বাংলাদেশের শিল্প ও ব্যবসা জগতে এক সুপরিচিত নাম। টেকসই শক্তি উৎপাদন, ব্যাটারি উৎপাদন, জ্বালানি, অটোমোটিভ এবং নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে এই গ্রুপের ব্যাপক অবদান রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রহিম আফরোজের ভূমিকাকে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গুণগত মান, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও উদ্ভাবনের প্রতি অঙ্গীকার এই গ্রুপকে দেশের অন্যতম সম্মানিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
রহিম আফরোজ গ্রুপের যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৪ সালে, প্রতিষ্ঠাতা লুৎফর রহমান এর হাত ধরে। তৎকালীন সময়ের তুলনায় এটি ছিল একটি অত্যন্ত দূরদর্শী উদ্যোগ। প্রথম দিকে ব্যবসার পরিধি ছোট থাকলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি শক্তি, অটোমোবাইল, রিটেইল এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করে।
বর্তমানে রহিম আফরোজ একটি বহুমাত্রিক শিল্প প্রতিষ্ঠান, যার অধীনে রয়েছে একাধিক ব্যবসা ইউনিট এবং অঙ্গপ্রতিষ্ঠান।
প্রধান খাতসমূহ ও কার্যক্রম
১. ব্যাটারি ও শক্তি খাত (Rahimafrooz Batteries Ltd.): রহিম আফরোজ সবচেয়ে বেশি পরিচিত তাদের ড্রাই সেল ও লিড-অ্যাসিড ব্যাটারি উৎপাদনের জন্য। এই খাতে তারা দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। তাদের উৎপাদিত ব্যাটারি যেমন “Volta”, “Lucas”, এবং “Optus” দেশের গাড়ি, বাস, ট্রাক, শিল্প কারখানা ও ঘরোয়া ব্যবহারে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
তারা শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয়, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার বহু দেশে ব্যাটারি রপ্তানি করে থাকে।
২. রিনিউএবল এনার্জি (Rahimafrooz Renewable Energy Ltd. - RREL): নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারে রহিম আফরোজ দেশের পথপ্রদর্শক। সৌর শক্তি ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন, সৌর প্যানেল স্থাপন, গ্রামীণ সৌর হোম সিস্টেম এবং সৌরচালিত জলসেচ প্রকল্পসহ বহু উদ্ভাবনী উদ্যোগ তাদের রয়েছে।
গ্রামীণ বিদ্যুতায়নে RREL-এর অবদান বিশেষভাবে প্রশংসিত, বিশেষ করে যেসব এলাকায় জাতীয় গ্রিড এখনও পৌঁছায়নি।
৩. জেনারেটর ও পাওয়ার সলিউশন: রহিম আফরোজ Cummins Power Generation এর অফিশিয়াল পার্টনার। তারা গৃহস্থালি ও শিল্পখাতে ব্যবহারের জন্য উন্নতমানের জেনারেটর সরবরাহ করে। ব্যাকআপ পাওয়ার সলিউশন, UPS, ইনভার্টার ও পাওয়ার ম্যানেজমেন্টেও তাদের বিশেষ দক্ষতা রয়েছে।
৪. অটোমোটিভ ও টায়ার (Rahimafrooz Distribution Ltd.): রহিম আফরোজ বাংলাদেশের অন্যতম বড় টায়ার, ব্যাটারি ও অটোমোটিভ পণ্যের পরিবেশক। তারা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড যেমন Dunlop, Castrol, Lucas, Hankook ইত্যাদি দেশের বাজারে আনে।
৫. রিটেইল ও ই-কমার্স: একসময় রহিম আফরোজ “Agora” নামক সুপারশপ চেইন পরিচালনা করত, যা বাংলাদেশের আধুনিক খুচরা বাজারে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে এটি অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়, তবে রিটেইল খাতে তাদের এই পদক্ষেপ দেশের বাজার ব্যবস্থায় একটি বিপ্লব সৃষ্টি করেছিল।
উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি
রহিম আফরোজ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উদ্ভাবনকে সবসময় গুরুত্ব দিয়েছে। ব্যাটারি ও সৌর পণ্যে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে তারা নিয়মিত গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম (R&D) পরিচালনা করে থাকে। তারা ISO এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান।
কর্মসংস্থান ও মানবসম্পদ
রহিম আফরোজ গ্রুপে বর্তমানে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪,০০০+ কর্মচারী কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি করে থাকে। মানবসম্পদ উন্নয়নে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত ইতিবাচক।
সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR)
রহিম আফরোজ সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িত। তারা পরিবেশ সুরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং নারী ক্ষমতায়নের বিভিন্ন প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে। গ্রামীণ এলাকায় সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন তাদের অন্যতম উল্লেখযোগ্য সামাজিক উদ্যোগ।
তারা বিশেষভাবে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও টেকসই শক্তির প্রসারে কাজ করে, যা দেশের পরিবেশগত উন্নয়নে সহায়ক।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
রহিম আফরোজ ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে চায়। সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুশক্তি ও স্মার্ট পাওয়ার সলিউশনের দিকেও তারা নজর দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাটারি ও সৌর পণ্য রপ্তানির পরিধি বাড়ানো তাদের অন্যতম লক্ষ্য।
রহিম আফরোজ গ্রুপ শুধু একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি মূল্যবোধসম্পন্ন ব্র্যান্ড, যা গুণগত মান, উদ্ভাবন ও সামাজিক দায়বদ্ধতার সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে শক্তি, প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব সমাধানে তাদের অবদান সত্যিই প্রশংসনীয়। ভবিষ্যতে রহিম আফরোজ গ্রুপ দেশের শিল্প খাতকে আরও উন্নত ও টেকসই পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে—এটা শুধু প্রত্যাশা নয়, বরং একটি বাস্তব সম্ভাবনা।
৮. নিটল নিলয় গ্রুপ (Nitol-Niloy Group)
নিটল-নিলয় গ্রুপ: বাংলাদেশের অটোমোটিভ ও শিল্পখাতের এক উজ্জ্বল নাম
নিটল-নিলয় গ্রুপ (Nitol-Niloy Group) বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ও বহুমুখী শিল্পগ্রুপ। এই গ্রুপটি মূলত অটোমোটিভ শিল্পে সুপ্রতিষ্ঠিত হলেও, সময়ের সাথে সাথে তারা কৃষি, ব্যাংকিং, নির্মাণ, ইলেকট্রনিকস, রিয়েল এস্টেট এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসহ বহু খাতে নিজেদের কার্যক্রম বিস্তৃত করেছে।
ব্যবসায়িক সাফল্য, নেতৃত্বদানের সক্ষমতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার মাধ্যমে নিটল-নিলয় গ্রুপ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
নিটল-নিলয় গ্রুপের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮০-এর দশকে, যখন প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান আব্দুল মতলুব আহমদ প্রথমে যানবাহন আমদানি ও বিপণন ব্যবসা শুরু করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্রুপটি বিভিন্ন খাতে প্রসার লাভ করে এবং আজ এটি একটি বহু-বৈচিত্র্যময় ব্যবসায়িক কনগ্লোমারেটে পরিণত হয়েছে।
প্রধান খাতসমূহ ও কার্যক্রম
১. অটোমোবাইল খাত: নিটল-নিলয় গ্রুপ সবচেয়ে বেশি পরিচিত তাদের অটোমোবাইল ব্যবসার জন্য। তারা ভারতের বিখ্যাত Tata Motors এর একমাত্র অনুমোদিত পরিবেশক হিসেবে ১৯৮৮ সাল থেকে বাংলাদেশে টাটা ব্র্যান্ডের গাড়ি, ট্রাক, পিকআপ এবং বাস আমদানি ও বিপণন করে আসছে।
এছাড়া, তারা বাংলাদেশে টাটা গাড়ির SKD (Semi Knocked Down) ভিত্তিক অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্ট পরিচালনা করে, যার মাধ্যমে দেশীয় শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান বাড়ছে।
২. ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান: নিটল-নিলয় গ্রুপ বাংলাদেশের অন্যতম বেসরকারি ব্যাংক বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক (BCBL)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এছাড়া গ্রুপটির নিজস্ব নিলয় ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট নামেও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা মূলত SME খাতে অর্থায়নে কাজ করে।
৩. নির্মাণ ও অবকাঠামো: নিটল-নিলয় গ্রুপ রোড কনস্ট্রাকশন, ব্রিজ নির্মাণ, এবং অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে অংশ নিয়ে দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অবদান রাখছে। তারা সরকারি ও বেসরকারি নানা প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে থাকেন।
৪. কৃষি ও কৃষিপণ্য: এই গ্রুপ কৃষির যান্ত্রিকীকরণে বড় ভূমিকা রেখেছে। তারা কৃষিযন্ত্র, ট্রাক্টর, হারভেস্টার ইত্যাদি আমদানি ও সরবরাহ করে। সেই সঙ্গে, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতকরণেও তারা আগ্রহী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
৫. ইলেকট্রনিকস ও রিটেইল: নিলয় গ্রুপ ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি ও বিপণনেও সক্রিয়। টাটা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের টিভি, ফ্রিজ, এসি ইত্যাদি পণ্য তারা দেশের বাজারে সরবরাহ করে।
৬. পর্যটন ও রিয়েল এস্টেট: নিটল-নিলয় গ্রুপ রিয়েল এস্টেট ও হসপিটালিটি খাতেও বিনিয়োগ করেছে। তাদের হোটেল, রিসোর্ট এবং আবাসিক প্রকল্প দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে।নেতৃত্ব ও ভিশন
গ্রুপটির চেয়ারম্যান আব্দুল মতলুব আহমদ একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, যিনি FBCCI (Federation of Bangladesh Chambers of Commerce & Industry)-এর সাবেক সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার নেতৃত্বে নিটল-নিলয় গ্রুপ শুধু ব্যবসায় নয়, সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়নেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সম্প্রসারণ
নিটল-নিলয় গ্রুপ ভারত, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পার্টনারশিপ গড়ে তুলেছে। তারা বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
তারা আফ্রিকার কয়েকটি দেশেও অটোমোবাইল পণ্য রপ্তানি করছে, যা তাদের আন্তর্জাতিক পরিসরে বিস্তৃতিকে নির্দেশ করে।
সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR)
নিটল-নিলয় গ্রুপ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সংরক্ষণ খাতে নানা ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি চালিয়ে থাকে। তারা শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি, দরিদ্রদের জন্য চিকিৎসাসেবা এবং বৃক্ষরোপণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ভবিষ্যতে নিটল-নিলয় গ্রুপ দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে জোর দিতে চায়। তারা ইলেকট্রিক গাড়ি (EV) প্রযুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে এবং আগামী দশকে পরিবহন খাতে একটি বড় রূপান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে।
নিটল-নিলয় গ্রুপ আজ বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিশালী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তাদের বহুমুখী কার্যক্রম, সুদৃঢ় নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়নে সক্রিয় অংশগ্রহণ বাংলাদেশের শিল্পায়নের একটি অনন্য মাইলফলক। ভবিষ্যতেও এই গ্রুপ দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে—এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
৯. প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ (PRAN-RFL Group)
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ: বাংলাদেশের গর্ব, বৈশ্বিক মানের শিল্পপ্রতিষ্ঠান
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ (PRAN-RFL Group) বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ এবং বহুমুখী শিল্পগোষ্ঠী। কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য থেকে শুরু করে প্লাস্টিক পণ্য, ইলেকট্রনিক্স, হোম অ্যাপ্লায়েন্স এবং নির্মাণ সামগ্রী—সব কিছুতেই প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ব্যাপক ও সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। শুধু দেশের বাজারেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও এ গ্রুপ একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার সূচনা
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮১ সালে, উদ্যোক্তা আমজাদ খান চৌধুরী-এর হাত ধরে। তিনি একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ছিলেন এবং বাংলাদেশে কৃষিনির্ভর শিল্পের সম্ভাবনা দেখে দেশের কৃষিজাত পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ ও মূল্য সংযোজনের লক্ষ্যে “প্রাণ” (Programme for Rural Advancement Nationally) নামে যাত্রা শুরু করেন। এরপর ১৯৮৫ সালে গড়ে ওঠে RFL (Rangpur Foundry Ltd.), যার মূল লক্ষ্য ছিল কৃষিজ যন্ত্রপাতি ও কাস্টিং পণ্য তৈরি।
দুটি শাখা: PRAN ও RFL
PRAN
প্রাণ ব্র্যান্ড মূলত কৃষিপণ্য ও খাদ্যপণ্যের সাথে জড়িত। প্রাণ গ্রুপ বাংলাদেশে সর্বপ্রথম প্রক্রিয়াজাত ফলজ এবং খাদ্যপণ্য রপ্তানির উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে প্রাণ-এর পণ্যের তালিকায় রয়েছে:
- জুস, বেভারেজ
- স্ন্যাকস ও বিস্কুট
- দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য
- ভোজ্যতেল, চিনি, মসলা
- নুডলস, পাউরুটি, খাবার হ্যান্ডলিং পণ্য
RFL
RFL-এর যাত্রা শুরু হয় মূলত কৃষিজ যন্ত্রপাতির মাধ্যমে। পরবর্তীতে এটি প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনে বিশাল প্রসার লাভ করে। বর্তমানে RFL এর আওতায় রয়েছে:
প্লাস্টিক হাউজওয়্যার (বালতি, মগ, চৌকি, বক্স ইত্যাদি)
- PVC ও CPVC পাইপ
- ফার্নিচার
- কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স
- ইলেকট্রনিক্স (RFL Gas Stove, Fan, LED Light ইত্যাদি)
- নির্মাণ সামগ্রী (ট্যাংক, ট্যাপ, স্যানিটারি পণ্য)
- বাইসাইকেল ও অটোমোবাইল অ্যাকসেসরিজ
RFL-এর প্লাস্টিক পণ্য ISO এবং FDA অনুমোদিত, যার কারণে এগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
কর্মসংস্থান ও কারখানা
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাইভেট-সেক্টর নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। গ্রুপটিতে বর্তমানে সরাসরি ১,২০,০০০ এর বেশি মানুষ কর্মরত। এছাড়া অগণিত কৃষক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এই গ্রুপের সরবরাহ চেইনের সঙ্গে যুক্ত।
তাদের প্রধান উৎপাদন কেন্দ্রগুলো হলো:
- গাজীপুরের পানিশাইল, ভোগড়া ও শ্রীপুর
- হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক
- নরসিংদী, দিনাজপুর ও রংপুর
- রপ্তানি ও বৈশ্বিক উপস্থিতি
এছাড়াও, গ্রুপটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে এবং আফ্রিকায়ও উৎপাদন কেন্দ্রে বিনিয়োগ করেছে।
ভোক্তা সন্তুষ্টি ও ব্র্যান্ডিং
প্রাণ-আরএফএল সবসময় গুণগত মান, স্বাস্থ্যবিধি ও আন্তর্জাতিক মান রক্ষায় সচেষ্ট। HACCP, ISO 9001, ISO 22000 প্রভৃতি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। তাদের "PRAN", "RFL", "Bashundhara Tissue (ব্র্যান্ড পার্টনার)", "Fun", "Frooto", "Max", "Fresh", "Jhatpot" সহ একাধিক জনপ্রিয় ব্র্যান্ড রয়েছে।
সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR)
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ নানা সামাজিক উদ্যোগেও সক্রিয়। তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নারীর ক্ষমতায়ন ও কৃষকের উন্নয়নে কাজ করে থাকে। “PRAN Agriculture Contract Farming” মডেলের মাধ্যমে তারা হাজারো কৃষককে ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রির সুযোগ দেয়।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ভবিষ্যতে আরও বেশি প্রযুক্তিনির্ভর ও পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের পরিকল্পনা করছে। তারা ই-কমার্স, রোবোটিক্স এবং স্মার্ট উৎপাদন ব্যবস্থায় বিনিয়োগের চিন্তাভাবনা করছে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ এখন আর শুধু একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের শিল্প উন্নয়নের প্রতীক। দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার, বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার ক্ষেত্রে এই গ্রুপের অবদান অনস্বীকার্য। এই গতিতে চলতে থাকলে, প্রাণ-আরএফএল আগামী দিনে এশিয়ার অন্যতম বড় কনজ্যুমার ব্র্যান্ডে পরিণত হতে পারবে—এটা আশা নয়, বরং এক দৃঢ় বাস্তবতা।
১০. এইচএসবিসি গ্রুপ (Ha-Meem Group)
এইচএসবিসি গ্রুপ (Ha-Meem Group): বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পের অগ্রণী প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বস্ত্রশিল্প একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত। আর এই শিল্পখাতের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান হলো এইচএসবিসি গ্রুপ (Ha-Meem Group)। বস্ত্র ও পাদুকা শিল্পে নিজস্ব এক বিরাট ইম্পেরিয়াম গড়ে তোলার মাধ্যমে এই গ্রুপ বাংলাদেশকে বিশ্ববাজারে এক মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, দক্ষ মানবসম্পদ এবং উচ্চমানের পণ্যের কারণে এইচএসবিসি গ্রুপ দেশের বৃহত্তম রপ্তানিকারক শিল্প সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি।
গ্রুপের প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস
এইচএসবি গ্রুপের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৩ সালে, যখন সেক্টরের প্রবল প্রতিযোগিতার মধ্যেও সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়। গ্রুপটির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি হলেন শেখ হাফিজুল ইসলাম। তিনি মূলত বস্ত্র খাতের ওপর জোর দিয়ে শুরু করেছিলেন, যা ধীরে ধীরে বিস্তৃত হয় পাদুকা শিল্প, রিয়েল এস্টেট, ব্যাংকিং এবং অন্যান্য খাতে।
আজকের দিনে এইচএসবিসি গ্রুপ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পাশাপাশি প্রায় ২০,০০০ এরও বেশি মানুষকে কর্মসংস্থান দিচ্ছে।
বিভিন্ন খাতে কার্যক্রম
১. বস্ত্র ও গার্মেন্টস শিল্প: এইচএসবিসি গ্রুপ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গার্মেন্টস উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। গ্রুপের অধীনে রয়েছে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে বহু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, যেখানে একাধিক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক তৈরি করা হয়।
তাদের উৎপাদিত পোশাকের গুণগত মান আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে এবং প্রধান রপ্তানিমুখী বাজার হলো ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্য।
২. পাদুকা ও চামড়া শিল্প: বস্ত্রের পাশাপাশি পাদুকা শিল্পেও এইচএসবিসি গ্রুপ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। গ্রুপের অধীনে চামড়া ও পাদুকা উৎপাদন কারখানা রয়েছে, যা বিশ্ববাজারে দেশীয় পণ্যের অবস্থান শক্তিশালী করছে।
৪. ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত: গ্রুপের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো ব্যাংকিং এবং আর্থিক সেবা। এইচএসবিসি গ্রুপের মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেশের আর্থিক খাতে গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখে চলেছে।
নেতৃত্ব ও ম্যানেজমেন্ট
শেখ হাফিজুল ইসলাম, এইচএসবিসি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, একজন অভিজ্ঞ উদ্যোক্তা এবং ভিশনারি নেতা। তার দক্ষ নেতৃত্ব ও ব্যবসায়িক দূরদর্শিতার ফলে গ্রুপটি গত কয়েক দশকে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। তিনি বস্ত্রখাতের পাশাপাশি অন্যান্য খাতেও আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ মানবসম্পদ নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
সামাজিক দায়িত্ব ও কর্মসংস্থান
এইচএসবিসি গ্রুপ দেশের গৃহস্থালি অর্থনীতির উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করছে। গ্রুপের শিল্পগুলোতে কর্মরত হাজার হাজার নারী-পুরুষ দক্ষ শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য তারা বিভিন্ন স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করে থাকে।
এছাড়াও, গ্রুপটি সামাজিক দায়বদ্ধতা হিসেবে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং পরিবেশ সংরক্ষণে নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
দেশের অর্থনীতিতে অবদান
এইচএসবিসি গ্রুপের অবদান বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বস্ত্র খাত থেকে প্রাপ্ত আয় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। গ্রুপের উৎপাদিত পণ্য বিশ্বমানের হওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
গ্রুপটি দেশের শিল্পায়ন প্রসারে এবং নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় অব্যাহতভাবে অবদান রাখছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এইচএসবিসি গ্রুপ ভবিষ্যতে বস্ত্রশিল্পের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তি খাতে আরও প্রবেশের পরিকল্পনা করছে। তারা পরিবেশ বান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া ও টেকসই উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের উপস্থিতি আরও শক্তিশালী করতে নতুন ব্র্যান্ড ও পণ্য উন্নয়নেও মনোযোগ দিচ্ছে।
এইচএসবিসি গ্রুপ বাংলাদেশের অর্থনীতি ও শিল্পখাতে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নাম। দেশের বস্ত্র ও পাদুকা শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানে তুলে ধরে গ্রুপটি বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের গর্ব হয়ে উঠেছে। তাদের বহুমুখী উদ্যোগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টিকেন্দ্র এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা দেশের উন্নয়নে অব্যাহতভাবে অবদান রাখছে।
আশা করা যায়, সামনের দিনগুলোতে এইচএসবিসি গ্রুপ বাংলাদেশের শিল্পায়নের অন্যতম প্রেরণাদায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
এই দশটি গ্রুপ বাংলাদেশের শিল্প, বাণিজ্য ও রপ্তানি খাতে যুগান্তকারী অবদান রেখে যাচ্ছে। শুধু অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতেই নয়, তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। উদ্যোক্তাদের অদম্য সাহস, সৃজনশীলতা ও পরিশ্রমের ফলেই আজকের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি এতটা শক্তিশালী।