Breaking News

নিস্তব্ধ প্রেমাবেগ |পর্ব -20|লিখা- স্বর্ণালি আক্তার

আজ ১৭ দিন যাবৎ ঘর বন্ধী জিসান!বাড়ির কারো সাথে যোগাযোগ নেই আর না এখানের কারো সাথে।নতুন ফোন কিনলেও সেটা অকেজো হয়ে পড়ে আছে।সারাদিন এক ঘরে হয়ে থাকে।সার্ভেন্ট রান্না করে কাজ করে রেখে যায়।জিসান দুইদিন তিনদিন পর ঘর থেকে বের হয় খেয়ে নিয়ে আবার নিজের ঘরে চলে আসে।কখন দিন হয় কখন রাত হয় কিছুই তার খেয়াল নেই!

অপরদিকে আজ ৬ দিন হলো জুঁইয়ের বাবা তাকে ছেড়ে চলে গেছে!ভুবনশূন্য তার!পাগল প্রায় হয়ে এলোমেলো অবস্থায় ঘরের এক কোনে বসে আছে!না চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আর না নিজে কাঁদছে!বাবার মুখটা সাদা কাপড়ে ঢাকা দেখে সেই যে চুপ হলো জুঁই আর কোনো টুঁ-শব্দটিও করেনি আর না কেঁদেছে।
জুঁইকে কতো বার কাঁদানোর চেষ্টা করেছে মোনালিসা লাভ হয় নি!জিসানকেও কল করেছে বহুবার ফোন উঠায় নি!উপায়ন্তর না পেয়ে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে জিসানের ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

প্রায় ১ঘন্টা সময় লাগে মোনালিসার জিসানের ফ্ল্যাটে পৌঁছাতে!বারে কয়েক কলিংবেল বাজানোর পরেও দরজা খোলে না কেউ!হতাশ হয়ে ফিরে আসতে পা বাড়ালো মোনালিসা।কিন্তু আবার পিছনের দিকে ফিরে লকটায় মোচড় দিতেই দরজাটা খুলে গেলো।কিছুটা অবাক হলো মোনালিসা।পুরো ড্রয়িং রুমে ঘুটঘুটে অন্ধকার।প্রত্যেকটা জানালাও বন্ধ।একটা রুমে আলো জ্বলতে দেখে ফ্লাস জ্বালিয়ে দ্রুত পায়ে সে রুমে গেলো মোনালিসা!

ফ্লোরে উদাস হয়ে বসে আছে জিসান।মোনালিসা এসে ফ্লোরে বসলো।জিসান কি হয়েছে তোমার? এ অবস্থা কেনো?তুমি কি অসুস্থ?কি হয়েছে?ব্যস্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করতে লাগল মোনালিসা।

মোনালিসা তুমি? স্বাভাবিক কন্ঠে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল জিসান।

কি হয়েছে জিসান?

আ’ম ওকে!তুমি হঠাৎ?

জিসান জুঁই…

প্লিজ মোনালিসা ওর কোনো কথা আমায় বলবে না তুমি।যদি তুমি ওর কথা বলতে এসে থাকো তাহলে চলে যাও..

জিসান শোনো তো আমার কথাটা..

স্টপ মোনালিসা!বের হও

জিসান আমি চলে যাচ্ছি.. কিন্তু জুঁইয়ের বাবা আর নেই! ৬ দিন হয়ে গেছে আংকেল দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে।মেয়েটা ভালো নাই..একদম না!এরকম চলতে থাকলে জুঁই ও আর বাঁচবে না!

কথা শেষ করে আর একমিনিট ও দাঁড়ালো না মোনালিসা!

স্তব্ধ থেকে বেশি স্তব্ধ হয়ে গেলো জিসান।খানিকক্ষণ থম মেরে বসে থেকে!গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো জিসান!
রাত প্রায় ১১ টা!

ঘরে বসে শ্রেয়ার অপেক্ষা করছে জয়!শ্রেয়া আদিবার ঘরে পড়তে গেছে!এতক্ষণে চলে আসার কথা!কিন্তু এখনো আসছে না!
বিরক্ত হয়ে উঠে ওয়াশরুমের দিকে গেলো জয়!

বইপত্র ঘুছিয়ে অনেকক্ষণ ধরে আদিবার সাথে গল্প করচে জয়!রোদ আর আদিবার লাভ ক্যামেস্ট্রি শুনছিলো।রোদের কল আসায় দুজনের গল্পে ব্যাঘাত ঘটলো।আদিবা করুণ চোখে তাকালো শ্রেয়ার দিকে।
শ্রেয়া মুচকি হেসে উঠে ঘরে থেকে বেরিয়ে গেলো।

রুমে ডুকতেই কেউ ধরাম করে দরজা আটকে দিলো।পিছু ফিরে দেখে জয়।দরজা বন্ধ করে তাতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!হাতের উপর হাত গুজে শ্রেয়া শাসনের ভঙ্গিতে বলল এখনি ঘুমান নি কেনো??

কি হলো চুপ করে আছেন কেনো?

তুমি ছাড়া ঘুম আসছিলো না।

এহহ আসছে ঢং করতে।বলেই ওয়াশরুম চলে গেলো শ্রেয়া!

ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা মুখ হাত নিয়েই চুল খুললো শ্রেয়া।আবার খোঁপা করে নিয়ে হাতমুখ মুছলো!..

পেছন থেকে ঘাড়ে উষ্ণ স্পর্শ পেতেই মুচকি হাসলো। জয় যতবার তার কাছে আসে ততবারই লজ্জা নুয়িয়ে পড়ে শ্রেয়া।আজ ও তার ব্যতিক্রম হলো না!
আলতো করে কপালে উষ্ণ পরশ ঠেকালো জয়!তারপর চোখ জোড়ায়..
শ্রেয়া তোমার মাঝে ডুব দিতে চাই..দেবো অনুমতি..ঘোর লাগা কন্ঠে বলল জয়!
শ্রেয়া যেন লজ্জায় আরো সংকীর্ণ হয়ে গেলো!হেসে জয়ের বুকে মুখ লুকাতেই আরো নিবিড়ভাবে জড়িয়ে নিলো জয়!

এক জোড়া দম্পতির ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে চললো!
দুজন অসুখী মানুষ মুখোমুখি বসে আছে।দুজনের কারো মনেই শান্তি নেই!

এলো-মেলো চুলে ময়লা কাপড়ে ঘরের কোনায় ফ্লোরে বসে আছে জুঁই!
জিসান তার সামনে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।সে দিকে তার খেয়াল নেই। তার দৃষ্টি আটকে আছে সাদা টাইলসের মেঝেতে!

অনেকটা সময় পেরিয়ে যাবার পর ধীর কন্ঠে জুঁইকে ডাকলো জিসান।

জুঁই… এই জুঁই…

জুঁই নড়লো না কোনো উত্তর দিলো না।

এই জুঁই বলেই খপ করে জু্ঁইকে ঝাপটে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো জিসান।
গগনবিদারী চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলে জুঁই।
জিসান ওকে আরো শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরল। দু হাতে এমন ভাবে আঁকড়ে ধরে আছে যেন বাঁধন আলগা হলেই জু্ঁই পালাবে।

জুঁইয়ের কান্নায় বেশ প্রশান্তি লাগছে জিসানের। যেন বুকের বা পাশে শীতল হাওয়া জড়ো হচ্ছে! নিজের চাপা ব্যাথা কষ্টগুলোও যেন জুঁইয়ের কান্নার সাথে সাথে কমে যাচ্ছে!

জিসান মোনালিসাকে বললো জুুুঁইকে গোসল করিয়ে দিতে।নিজে পছন্দ করে কাভার্ড থেকে অফহোয়াইট কালারের শাড়ি বের করে দিলো।সে পাশের রুমের ওয়াশরুমে গোসল সেরে এ বাড়িতে রাখা তার সাদা পাঞ্জাবি পাজামাটা পড়ে নিলো!

এক কঠোর সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে জিসান।নিজের কথা ভুলে গেছে যেন!যত যাই হোক এ সিদ্ধান্ত থেকে নড়বে না সে।

ঘরে পায়চারি করে কল করলে বাবাকে।তার এখানে প্রায় সন্ধ্যা! বাংলাদেশে ভোর!
ছয়বার কল করার পর সাত বারের বার কল রিসিভ করলেন আকাশ মাহমুদ!
জিসান ফোন করেই বাবাকে সবটা বললো।তিনি অনুমতি দিলেন!কল কেটে ঘর থেকে বেরিয়ে জুঁইয়ের ঘরের দিকে গেলো জিসান।।

অপরদিকে এত ভোরে স্বামীকে চিন্তিত দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যান ঝর্ণা বেগম!কি হয়েছে জানতে চেয়ে পাশে বসেন।
আকাশ মাহমুদ ভনিতা না করে সবটা খুলে বলেন ঝর্ণা বেগমকে!

!
জুঁইকে নিয়ে মসজিদে পা রেখেছে জিসান!জু্ঁইয়ের মাথায় আধ হাত ঘোমটা!ইমাম সাহেব তাদের দুজনকে সাদরে মসজিদের ভেতর নিয়ে গেলেন।
মোনালিসা খ্রিষ্টান তাই আশে নি তাদের সাথে!

অপরদিকে ঝর্ণা বেগমের আহাজারিতে পুরো মাহমুদ ভিলা কাঁপছে! নাহ কেউ মারা যায় নি!তার ছোট ছেলে ইউএস এ বিয়ে করছে শুনেই তার এ আহাজারি….!

চলবে_

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com