দ্যা ভ্যাম্পার কিং । পর্ব -২



‘Bipolar disorder ’ নীলের মানসিক ব্যাধির নাম। রোগটি থেকে সে চিরতরে মুক্তি চায়। রাগের মাথায় এই অব্দি সে শ খানেক পানির গ্লাস ভেঙ্গেছে। নীলের রাগ এমনিই বেশি, তবে এখন মানসিক ব্যাধির কারণে তার রাগের মাত্রা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে।
.
হতচ্ছাড়া, হতচ্ছাড়া করতে করতে বৃদ্ধা লোকটার ওষ্ঠ জোড়া ব্যথা হয়ে গেল। এক গ্লাস পানি খেয়ে লোকটা বললেন, ‘হতচ্ছাড়াগুলা বসে আছিস কেন? কিছু বলিস না কেন?’
রনি কাঁপা গলায় বলল, ‘ভ্যাম্পায়ার কিং এর ছবি আছে আপনার কাছে?’
“আছে একটা ছবি। বেশ পুরোনো, অর্ধেক রং ওঠে গেছে।’’
“তাই দেন।’’
বৃদ্ধ লোকটা উঠে গিয়ে কাঠের তৈরি একটা আলমিরা থেকে একটা ছবি বের করলেন। সাদা, কালো ছবি। আগের যুগের সাদা কালো ছবি।
রনির দিকে বৃদ্ধা ছবিটা এগিয়ে দিলেন ।ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে রনি তাকিয়ে থাকল, সে বলল, ‘মুখটা তো বিগড়ে গেছে। ছবিটা কোনো কাজেরই না।’
বৃদ্ধা বললেন, ‘দুপুর হয়ে এসেছে। তোমাদের কাজ শেষ হলে তোমরা এখন যাও। আমি গোসল করব, তারপর রান্নাও করতে হবে।’
রনি আর রিয়াজ বৃদ্ধকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসলো।
.
.
মর্গ থেকে লাশ গায়েব! জনাব রাতিম মর্গের পাহাড়াদার। রাতভর তিনি মর্গের বাহিরে বসে ছিলেন। সকালে নিয়ম মাফিক মর্গে ঢুকে তিনি সব লাশ ঠিক আছে কিনা দেখতে গিয়ে লক্ষ্য করলেন মগে গত দিনে আশা রক্ত শূন্য লাশটি গায়েব। মর্গের ভেতর কোনো জানলা নেই। ভেতরে প্রবেশ করার একটাই পথ, সেটা হলো মূল দরজা। রাতিম তৎক্ষণাৎ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে বিষয়টা জানান। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে মতো রাতিমকে গালি গালাজ করলেন। এরপর পুলিশে খবর দিলেন।
পুলিশ ঘটনাস্থল তদন্ত করলেন এবং প্রাথমিক ভাবে রাতিমকে সন্দেহ করলেন। তাকে জবানবন্দির জন্যে থানায় নিয়ে যাওয়া হলো।
.
.
ব্যস্ততা আর কর্মক্ষেত্রের চিন্তা ভাবনা নীলান্তিকার মগজ হতে সে দিনের বিভৎস
ঘটনার চিত্রগুলো মুছে দিলো। অফিসের কাজ শেষ করে রাতেৃ নীলান্তিকা বাড়ি ফিরছিল।
পথিমধ্যে সে একজন লোককে দেখে থমকে দাঁড়াল।
লোকটার পুরো শরীর সাদা কাপড়ে মোড়ানো। যত দূর বোঝা যাচ্ছে সাদা কাপড় ছাপা লোকটার দেহে
আর কিছুই নেই। নীলান্তিকা আচমকা অজানা এক ভয়ে পতিত হলো।
তার নরম, কোমল হাত জোড়া কেন জানি ঠাণ্ডা হতে লাগল।
তার দেহ কিছু একটা বুঝতে পেরেছে, হয়তো আগাম বিপদ।
কিন্তু সে এখনো সেই বিপদটা আঁচ করতে পারেনি। নীলান্তিকা দ্রুত পায়ে হেঁটে যেতে লাগল।
লোকটার পাশ দিয়ে যাবার সময় কিছু একটা ভেবে সে লোকটার মুখের দিকে তাকাল।
সাথে সাথে তার পুরো দেহ একটা কাঁপুনি দিয়ে উঠল।
ভয়ে চোখের মণি তুলনামূলক বড় হয়ে গেল। নীলান্তিকা এমন কিছুর জন্যে প্রস্তুত ছিল না।
কিছুটা হুস ফিরে পেতেই সে দৌড়ে পালাতে লাগল।
সে অনুভব করল তার পেছন পেছন কিছু একটা উড়ে আসছে।
সে স্পষ্ট ডানা ঝাপটানোর শব্দ পাচ্ছে।
নীলান্তিকার আর সাহস হলো না পেছন ফিরে তাকানোর।
.
নীলান্তিকা প্রাণ ভয়ে চোখ বন্ধ করে ক্ষিপ্র গতিতে দৌড়াতে লাগল।
কতক্ষণ সে দৌড়েছে সে জানে না। কিছুক্ষণ পর সে থামল, হাঁপাতে লাগল।
পেছন ফিরে সে আর কাউকে দেখতে পেল না।
.
.
পরের দিন
থানায় এসেছে নীলান্তিকা। পুলিশ অফিসারের মুখোমুখি হয়ে সে বসে আছে।
পুলিশ অফিসার নীলান্তিকার সাথে ঘটে যাওয়া গত রাতের ঘটনা কোনো ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না।
“এটা সত্য যে রক্ত শূন্য অপরিচিত লাশটি মর্গ থেকে গায়েব হয়েছে। কিন্তু তাই বলে একটা মৃত দেহ এভাবে পথে দাঁড়িয়ে বে এটা বিশ্বাস যোগ্য না। লাশটি আমার খুঁজার চেষ্টা চালাচ্ছি। তদন্ত চলছে, অতি শীঘ্রই লাশ চোরকে আমরা ধরতে সফল হবো। আপনি রাতে হয়তো অন্য কাউকে দেখেছিলেন। ভয়ের কারণে গত দিন রাতে সেই লোকটাকে ওদিনের লোকটা ভেবে বসেন।’’
.
“কিন্তু স্যার আমি স্পষ্ট দেখেছি, আমার দ্বারা ভুল হবার কথা নয়।’’
“ দেখুন আপনি একটা রক্ত শূন্য লাশের সাথে সারা রাত ছিলেন। সুতরাং আপনার মগজে তার মুখটা গেঁথে গেছে। ফলে গতদিন রাতের আঁধারে অন্য একজন লোককে সেই রক্ত শূন্য ব্যক্তি ভেবে ভয় পেয়ে দৌড় দেন। আচ্ছা শোনেন! আপনি কি ভূতে বিশ্বাস করেন?’’
“এক সাংবাদিক কখনই ভূতে বিশ্বাস করে না।’’
“একটা মৃত লাশ কি কখন নিজ ইচ্ছা হাঁটতে পারবে?’’
“না! কিন্তু…!’’
“কোনো কিন্তু নয়। আপনি বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নেন। ক’দিন অফিসের কাজ থোকে বিরত থাকেন। দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।’’
নীলান্তিকা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।
.
.
নীলান্তিকা বাড়ি ফিরে আসলো। মনের ভুল ভেবে সেটা সবটা ভুলার চেষ্টা করতে লাগল।
.
.
“ নীল শান্ত হও! ’’ কথাটা বলল অনিশা।
নীল হাতের কাছে থাকা কাচের গ্লাসটা মেঝেতে আছাড় দিলো। চোখের পলকের কাচের গ্লাসটি ছোটো ছোটো টুকরোতে খণ্ডিত হলো।
নীল আচমকা কপালে হাত দিয়ে চিৎকার দিতে লাগল। একটু পর সে জ্ঞান হারালো। জ্ঞান ফিরতেই সে নিজেকে বিছানায় পেল। উঠার চেষ্টা করল, কিন্তু উঠে বসতে অক্ষম হলো। মাথাটা তার অসম্ভব ভারি হয়ে আছে। পুরো কপাল কেন চিন করে ব্যথা করছে।
“তোমার কপাল ফুলে সাদা হয়ে আছে। শুয়ে থাকো, উঠতে হবে।’’ বলল অনিশা।
নীল কাঁপা গলায় বলল, ‘ক্ষমা করে দিও আমার ওমন ব্যবহারের জন্যে।’
“সমস্যা নেই তুমি অসুস্থ আমি জানি।’’
“গত রাতে ঔষধ খাইনি, সকালেও না। যার ফলে এমনটা হলো। ভেবেছিলাম আর ঔষধ খাবো না, নিজের রাগ নিজে নিয়ন্ত্রণ করব। কিন্তু পারলাম না!’’
.
“তুমি এখন অসম্ভব জোস নিয়ে আছ। ক’দিন থাকবে, তারপর ভেঙ্গে পড়বে।’’
“হ্যাঁ! রোগটা থেকে মুক্তি চাই আমি। চিরতরে মুক্তি চাই।’’
“আপাতত তুমি ঔষধগুলো সময় মতো খাও। এরচেয়ে বিকল্প আর কোনো উপায় আমার চোখে পড়ছে না।’’
নীল এবং অনিশার সংসারের বয়স তিন বছরে পড়েছে। এখনো তাদের বাচ্চা হয়নি, হয়নি বললে ভুল হবে নেয় নি। নীল কখনই চাইবে না সে রাগের মাথায় তার সন্তানকে আছাড় মারুক।
“আজ তোমার চোখগুলো কেমন জানি লাল হয়ে গিয়েছিল। একদম টকটকে লাল। আগে কখনো এমন হতে দেখিনি।’’ শান্ত গলায় বলল অনিশা।
.
“চোখ লাল হোক বা নীল হোক তাতে কিছু না। রোগটা থেকে মুক্তি মেললেই হলো।’’
নীল চোখ গেল অনিশার গালের দিকে। তার মনে পড়ল অনিশা যখন তাকে শান্ত হতে বলছিল সে তখন তাকে একটা কষে চড় মেরেছিল। নীল অনিশার গালে হাত দিলো। অনিশা অস্পষ্ট স্বরে একটা মৃদু আর্তনাদ করে উঠল।
“ গাল পুরো ফুলে আছে! বরফ লাগাও। আমি না বুঝে এত জোরে চড় মেরে ফেললাম!’’
“চড় খেয়ে আমি বুঝেছি যে তুমি অনেক শক্তিশালী একজন পুরুষ।’’ হেসে বলল অনিশা।
“জোর করে হাসতে হবে না। যা বলেছি করো।’’
অনিশা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। নীল আচমকা হেঁচকা টান মেরে অনিশাকে কাছে টানল। চড় মারা গালে সে একটা চুমু খেল, বলল, ‘ব্যথা কমেছে?’
অনিশা ভ্রু কুঁচকিয়ে বলল, ‘এমন অভিনব কায়দায় শুধু মাত্রা প্রেমিক প্রেমিকাদের ব্যথাই করে। স্বামী-স্ত্রীর বেলায় চিকিৎসকের কাছেই যেতে হয়। তোমার চুমুতে ব্যথা কমার বদলে গালটা জ্বলছে।‘
“ ভদ্র মেয়ে! সব সময় সত্য কথা বলে।’’ হেসে বলল নীল।
.
.
রক্ত শূন্য সেই মৃত দেহটা শহরের গণ্ডি পেরেছি একটা জঙ্গলের সামনে একে দাঁড়ালো। ধীরু পায়ে জঙ্গলের গভীরে যেতে লাগল। কিছু দূর যাবার পর সে একটা গুহার সামনে এসে দাঁড়াল। গুহার ভেতরটা ঘুট্ঘুটে অন্ধকার। রক্ত শূন্য লাশটি গুহার ভেতর প্রবেশ করল। আর বের হলো না সে।
.
.
“ইওবার্ড, ভ্যাম্পায়ার ডাইরী খুঁজে পেয়েছ?’’ ইওবার্ডকে প্রশ্ন করলেন তার বাবা এডওয়ার্ড
“না বাবা!’’
“তার কোথায় যে তার ভ্যাম্পায়ার ডাইরীটা লুকিয়ে রেখেছে! আমি বুঝি না চার্লস কেন চায় না আমরা পৃথিবীতে যাই? প্রতিটা রাজাই চায় তার সাম্রাজ্য বড় করতে। পৃথিবীর প্রতিটা মানুষকে আমরা ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে আমাদের সাম্রাজ্যের পরিধি বাড়াতে পারব।’’
“এই সালা চার্লস মারার আগে পৃথিবীতে যাবার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। সেই সাথে ভ্যাম্পায়ার ডাইরী কোথাও লুকিয়ে রেখে চলে গেছে। ওর বংশ আমি নিবংশ করে ছাড়ব।’’
“চার্লসের ছেলেদেরও তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুরো ভ্যাম্পায়ার রাজ্য তন্নতন্ন করে খুঁজেছি। কোথাও পেলাম না তাদের।’’
“হয়তো তারা পৃথিবীতে রয়েছে। ’’
“হতে পারে! আমাদের সৈন্য দল প্রস্তুত। এখন শুধু ভ্যাম্পায়ার ডাইরীটা হাতে পেলেই হলো, পৃথিবীতে আক্রমণ হবে। ’
.
রনি বৃদ্ধ লোকটাকে কল দিয়ে বলল, ‘আপনার কথাই সত্য হলো। মর্গ থেকে রক্ত শূন্য লাশটি গায়েব হয়ে গেছে।’
বৃদ্ধা চিৎকার দিয়ে বললেন, ‘হতচ্ছাড়াগুলা!’
রনি আর কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলো। সে বুঝতে পারল এখন বৃদ্ধা শুধু তাকে হতচ্ছাড়া বলে গালিই দিয়ে যাবে।

চলবে...
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url