তবুও ভালোবাসি | পর্ব -০২



আয়নার সামনে বসে চুল আছড়াচ্ছি আর বারবার পিছনে তাকিয়ে আদিলকে দেখছি, আদিল বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের দিকে আনমনা হয়ে তাকিয়ে আছে। এই মানুষটাকে আমি একদম বুঝতে পারছি না কখনো ওকে দেখলে মনে হয় ওর দ্বারা কাউকে কষ্ট দেওয়া সম্ভব না আবার কখনো ও এতোটাই হিংস্র হয়ে উঠে যে খুব ভয় পেয়ে যাই। তবে ও যেমনই হউক আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি ছেড়ে যেতে পারবো না কখনো।

আদিলের পাশে এসে দাঁড়ালাম, ও এখনো সাগরের দিকে তাকিয়ে আছে। রেলিং এ আদিলের হাত রাখা দেখে ওর হাতের উপর আমার হাত রাখলাম, আদিল যেন কোনো এক ভাবনার জগত থেকে ফিরে এসেছে, আমার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে, ওর দুচোখ যেন আমায় কিছু বলতে চায়।
আমি: একা একা দাঁড়িয়ে কি করছেন?
আদিল: কিছুনা।
আমি: মন খারাপ?
আদিল: আমার আবার মন খারাপ, এই মনের উপর দিয়ে যে কি ঝড় বয়ে যাচ্ছে সেটা একমাত্র আমিই জানি।
আমি: মেয়েটাকে বড্ড বেশি ভালোবাসেন তাই না?
আদিল: কোন মেয়েকে?
আমি: আপনার প্রেমিকা।
আদিল: হুম।
আমি: আমিও একজনকে খুব বেশি ভালোবাসি। (আদিল আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
আদিল: তাহলে বিয়েটা করেছ কেন আর তোমার বিএফ কোথায়? (মৃদু হাসলাম, আদিল তো আমার ভালোবাসা বুঝতেই পারছে না)
আদিল: হাসছ যে?
আমি: এমনি, আচ্ছা আমাদের বৌভাত এর অনুষ্ঠান হলো না কেন?
আদিল: এখানে তো আমাদের কোনো আত্মীয়স্বজন নেই তাছাড়া বিয়েটা তো তাড়াহুড়ো করে হয়েছে।
আমি: হুম আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম আপনারা তো তাড়াহুড়ো করে বিয়ে এনেছেন আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য। আশ্চর্য কি ভুল করেছি সেটা জানিনা অথচ শাস্তি ভোগ করে যাচ্ছি।
আদিল: সত্যি জানোনা?
আমি: উঁহু, বলবেন প্লিজ কেন আমার সাথে আপনারা এমন করছেন আমি কি অন্যায় করেছি?
মা: সেটা আদিলকে জিজ্ঞেস না করে নিজের বিবেক'কে জিজ্ঞেস করো। (মায়ের ধমক শুনে ভয়ে আদিলের থেকে দূরে সরে দাঁড়ালাম, মা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছেন)
মা: আদিল এসব হচ্ছে কি?
আদিল: কি করেছি আম্মু?
মা: এই মেয়ের সাথে এতো ভালো ব্যবহার কিসের? ভুলে গেছিস এই মেয়ের জন্য আমাদের সংসারে অন্ধকার নেমে এসেছে? এই মেয়ে তো একটা কালসাপ, ওর ছুবলে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। (বরাবরই দুষ্টু মেয়ে ছিলাম ঘুরে বেড়ানোটাই আমার নেশা ছিল কষ্টটাকে কখনো কাছে ঘেষতে দেইনি আর আজ সেই আমার কপালেই এতো কষ্ট। আগে কখনো কাঁদিনি তো তাই ওদের এমন কথায় এতো কান্না পায়)
মা: আদিল আমি কিন্তু বলে দিচ্ছি তুই এই মেয়ের প্রতি একদম দূর্বল হবি না যদি হয়েছিস তাহলে আমার চেয়ে বেশি খারাপ আর কেউ হবে না। (মা আঙ্গুল তুলে আদিলকে শাসিয়ে আমাকে ধাক্কা মেরে চলে গেলেন, আমি তাল সামলাতে না পেরে আদিলের বুকে এসে পড়লাম। আদিল আমাকে সরিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেল)
বড্ড একা লাগছে নিজেকে খুব কান্নাও পাচ্ছে। কেন হচ্ছে আমার সাথে এরকম?

জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি আর মনে করার চেষ্টা করছি নিজের অজান্তে কখনো কারো কোনো ক্ষতি করেছি কিনা। কিন্তু ভেবে কিছুই পাচ্ছি না। হ্যাঁ ছোটবেলা থেকে আমি খুব ফাজি মেয়ে কিন্তু তাই বলে খারাপ নই যে কারো কোনো ক্ষতি করবো। একটু আগে তো মা বললেন আমার ছুবলে উনার সব শেষ হয়ে গেছে কিন্তু আমি উনার কি ক্ষতি করেছি সেটাই তো বুঝতে পারছি না।
আদিল: আনিশা... (আদিলের ডাকে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম)
আদিল: নাশতা করবে না?
আমি: আমি নাকি কালসাপ আমি নাকি খারাপ মেয়ে, এখন তো দেখছি আমার চেয়ে বড় অমানুষ আপনারা।
আদিল: মানে?
আমি: আপনারা প্রতিশোধের জন্য আমাকে এখানে এনেছেন কিন্তু আমিতো এসব জানতাম না, আমি আর আট দশটা মেয়ের মতোই হাজারটা স্বপ্ন নিয়ে আপনার সংসারে এসেছি। আপনারা আমার সাথে অমানুষের মতো ব্যবহার করছেন। অন্যদের কথা বাদ দিলাম আপনি তো আমার স্বামী, আমার প্রতি তো আপনার কিছু কর্তব্য আছে সে হিসেবে তো খাওয়ার সময় আমাকে ডাকতে পারতেন। সবার খাওয়া শেষ এখন আমাকে ডাকতে এসেছেন নাশতা করার জন্য, কিন্তু কেন? আমি একা খাবো কেন আর এখন কি আপনাদের রেখে আসা অবশিষ্ট খাবার খাবো?
মা: হ্যাঁ তাই খাবে। (মায়ের কথা শুনে দরজায় তাকালাম)
আমি: ওহ আবারো আপনি চলে এসেছেন?
মা: আমি জানি এই বিষয় নিয়ে তুমি আদিলের সাথে তর্ক করবে তাই এসেছি। শুনো তুমি আমাদের রাখা অবশিষ্ট খাবার খাবে আ...
আমি: কিন্তু কেন? আমি কি রাস্তার পাগল?
মা: কারণ তোমার জন্য কোনো একজন এসবই খায়।
আমি: মানে?
মা: এতো মানে খুঁজতে যেওনা তাহলে আরো বেশি পস্তাতে হবে। ঠিক আমি যেভাবে বলবো সেভাবে থাকবে নাহলে... (মা রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলেন, আস্তে আস্তে বিছানার কাছে এসে দফ করে বসে পড়লাম। আদিল সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে)
আমি: আপনার ফোনটা দিবেন প্লিজ!
আদিল: কেন ফোন দিয়ে কি করবে?
আমি: আব্বুকে ফোন করবো, আমি আর এখানে থাকবো না।
আদিল: ফোন করো সমস্যা নেই কিন্তু যাওয়ার কথা ভুলেও মাথায় এনো না।
আমি: কেন যাবো না? এখানে পড়ে থেকে কেন আমি অত্যাচার সহ্য করবো? আমি চলে গেলে আব্বু আমাকে ফেলে দিবেন না, এমন দশটা মেয়েকে লালনপালন করার ক্ষমতা আমার আব্বুর আছে। আব্বু আমাকে কখনো অভাব বুঝতে দেননি আর আজ আমি খাবো আপনাদের জোটা খাবার?
আদিল: মানছি তোমার আব্বুর অনেক টাকাপয়সা আছে তার সাথে তো সম্মানটাও আছে তাই না? মাত্র বিয়ে হয়েছে তোমার এখন যদি চলে যাও লোকে মন্দ বলবে এতে তোমার আব্বুর সম্মান যাবে, তুমি কি চাও তোমার কারণে তোমার আব্বুর সম্ম...
আমি: বাহ্ আমাকে এখানে রেখে অত্যাচার করার জন্য কতো সুন্দর যুক্তি দেখাচ্ছেন।
আদিল: কেঁদো না প্লিজ! আর আমি যুক্তি দেখাইনি তোমার আব্বুর সম্মানের কথা ভেবেই বলেছি। তাছাড়া উনার একমাত্র মেয়ে এতো কষ্টে আছে শুনলে উনিও তো কষ্ট পাবেন।
আদিল ফোনটা বিছানায় রেখে দিয়ে চলে গেল। আদিল তো ঠিকই বলেছে আমি কষ্টে আছি শুনলে আব্বু খুব কষ্ট পাবেন। আব্বুকে এসব বলা যাবে না, সহ্য করি কিছুদিন হয়তো একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।

ফোনটা হাতে নিয়ে রুমের মধ্যে পায়চারী করছি আর ভাবছি আব্বুকে ফোন করবো কিনা। ফোন করি কিন্তু এসব ব্যাপারে কিছু বলবো না, বললে আব্বু টেনশন করবেন। কিছুক্ষণ রিং হতেই আব্বু রিসিভ করলেন।
আমি: হ্যালো আব্বু...
আব্বু: আনিশা?
আমি: হ্যাঁ কেমন আছ?
আব্বু: ভালো মা তুই কেমন আছিস?
আমি: ভালো, আব্বু আমি বাসায় যাবো কবে?
আব্বু: তোর কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেন তোর কি ওখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে?
আমি: না কোনো সমস্যা নেই, তোমাকে মিস করছি তো তাই।
আব্বু: পাগলী মেয়ে, আগামীকালই তো তোরা আসবি এখানে।
আমি: সত্যি? (লাফিয়ে উঠতে গিয়ে দরজার দিকে চোখ পড়লো, আদিল আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিল আমি তাকাতেই মুখটা গোমড়া করে ফেললো)
আব্বু: হ্যাঁ সত্যি।
আমি: আচ্ছা আব্বু এখন রাখছি।
আব্বু: ঠিক আছে।

ফোন রেখে আদিলের দিকে এগিয়ে গেলাম, আদিল অন্যমনস্ক হওয়ার ভাণ ধরে আছে।
আমি: আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিলেন কেন?
আদিল: কখন?
আমি: একদম মিথ্যে বলবেন না।
আদিল: হুম হাসছিলাম, তোমার খুশি দেখে হাসছিলাম।
আমি: আমিতো জানতাম আমার কান্না দেখলে এই বাসার সবাই খুশি হয়।
আদিল: হয়তো সবাই খুশি হয় না কেউ কেউ কষ্টও পায়।
আদিল চলে গেল। ওর শেষ কথাটা ভাবছি, কেউ কষ্ট পায় মানে কি? তবে কি আমার কষ্টে আদিলেরও কষ্ট হয়? তারমানে দাদুর কথাই ঠিক আদিল ওর মায়ের কথায় আমাকে কষ্ট দেয় ওর নিজের ইচ্ছায় নয়।

উফফ সকাল পেরিয়ে দুপুর হলো দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো এখনো কিছু খাওয়া হয়নি, রাগ করে তো আর থাকতে পারছি না খিধায় পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। তবে কি অবশেষে ওদের সবার অবশিষ্ট খাবার খেতে হবে আমাকে?
দাদু: দিদিভাই... (খিধের জ্বালায় বিছানায় শুয়ে ছিলাম, দাদুকে আসতে দেখে উঠে বসলাম। দাদুর হাতে খাবারের প্লেট)
আমি: দাদু আপনি?
দাদু: আদিল কোথায়?
আমি: জানিনা।
দাদু: কোথায় নতুন বউকে ভালো মন্দ কিছু এনে খাওয়াবে তা না মায়ের কথায় উঠছে আর বসছে। আমি যখন তোর দাদিকে বিয়ে করেছিলাম তখন রাতের বেলা লুকিয়ে লুকিয়ে কতো কিছু এনে দিয়েছি। এখনকার ছেলেপুলেদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না। (দাদুর কথা গুলো শুনে ফিক করে হেসে দিলাম)
দাদু: হাসলে তোর মুখটা খুব মায়াবী লাগে, আর কখনো এই চাঁদ মুখটা গোমড়া করে রাখিস না। খেয়ে নে, আর এভাবে নিজেকে কষ্ট না দিয়ে লড়াই করতে শিখ। মানছি তুই ভুল করেছিলি কিন্তু তার কি কোনো ক্ষমা নেই? এভাবে অত্যাচার করবে কেন তোর উপর? ভুল তো মানুষেরই হয়। শাশুড়ি মায়ের মন জয় করার চেষ্টা কর বুঝেছিস।
দাদু খাবার রেখে চলে গেলেন আমি চুপচাপ বসে আছি। শাশুড়ির মন জয় করবো কিভাবে আমি যে আমার ভুলটা কি সেটাই জানিনা। আচ্ছা মা সকালে কিসব বলছিলেন আমার জন্য কেউ একজন জোটা খাবার খায়, কে সে?
আদিল: বুড়োর সাথে তো প্রেম ভালোই চলছে। (আদিলের কথায় ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো)
আমি: হুম তাতে আপনার কোনো সমস্যা?
মিতু: ভাইয়ার কোনো সমস্যা নাহলেও আমার সমস্যা আছে। (মিতু এসেই আমার সামনে থেকে খাবারের প্লেট সরিয়ে নিলো)
মিতু: নবাবজাদী নাকি যে রুমে খাবার এনে খেতে হয়?
আমি: খাবার গুলো আমি আনিনি দাদু দিয়ে গেছেন।
মিতু: আম্মু যেভাবে বলেছেন সেভাবে খাবে নাহলে খাবার বন্ধ।
আমি: তোমাদের মতো অমানুষদের মুখ দেখার পর আমার খাওয়ার ইচ্ছাটাই মরে গেছে, যেমন মা তেমন তার মেয়ে।
মিতু: ভাইয়া তোর সামনে ও আমাকে এসব বলছে আর তুই চুপ হয়ে আছিস?
আমি: ও আবার কি বলবে ও ভালো নাকি? সবগুলো ভালো মানুষের মুখোশ পড়া অমানুষ।
আদিল: আনিশা... (আদিল আমাকে থাপ্পড় দিতে চেয়েও হাতটা নামিয়ে নিলো)
আমি: কথায় কথায় থাপ্পড় দেওয়া আর মায়ের অন্যায় গুলো মুখ বোজে সহ্য করা এসবই পারবেন, আর কিছুনা।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে কিছুক্ষণ পর চারদিকে অন্ধকার নেমে আসবে, বাগানের দোলনাটায় বসে আছি আর চারপাশে চোখ বুলাচ্ছি। বাংলোর মতো ছোট একটা বাসা, বাসার সামনে ছোট একটা ফুলের বাগান। আশেপাশে আর কোনো বাসা নেই, দূরে সমুদ্র দেখা যায়। আচ্ছা এমন জায়গায় আদিলদের বাসা কেন? তবে কি আমার প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ওরা এমন নিরিবিলি বাসা নিয়েছে? ভয় হচ্ছে আদিলের মা যেমন কবে যেন আমাকে মেরে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়।
দাদু: আনিশা... (দাদুর ডাক শুনে বাসার দিকে তাকালাম)
দাদু: অন্ধকার নেমে আসছে একা একা ওখানে বসে থাকিস না ভিতরে আয়।
আমি: আসছি দাদু।

বাসার ভিতর ঢুকবো তখনই আদিলের মুখোমুখি হলাম, ও মনে হয় কোথাও যাচ্ছে।
আদিল: কোথায় ছিলে?
আমি: বাগানে।
আদিল: কেন আম্মু এসব পছন্দ করে না কিন্তু।
আমি: বাগানে বসে ভাবছিলাম আপনাদের বাসাটা এতো নিরিবিলি কেন আশেপাশে কোনো বাসা নেই। অনেক ভাবনার পর একটাই কারণ খুঁজে পেলাম।
আদিল: কি?
আমি: আমাকে মেরে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেওয়ার জন্যই এমন নির্জন জায়গ...
আদিল: কি বলছ এসব রুমে যাও বলছি।
আমি: হুহ।

রুমে চলে যাবো তখনই কিচেনে চোখ পড়লো, কাজের বুয়া সবজি কেটে দিচ্ছে আর মা রান্না করছেন।
আমি: মা কি করছেন?
মা: ডান্স করছি, দেখতে পারছো না রান্না করছি? (উফফ উনার মুখে সবসময় আজেবাজে কথা)
আমি: আমি হেল্প করি?
মা: প্রয়োজন নেই।
আমি: আমার উপর এতো অত্যাচার করেন কিন্তু রান্না করতে দিচ্ছেন না কেন? রান্না করিয়েও তো অত্যাচার করা যায়।
মা: যদি আমার খাবারে বিষ দিয়ে দাও এই ভয়ে। (মা রাগে গজগজ করতে করতে কথাটা বললেন, আমি হা হয়ে তাকিয়ে আছি উনার দিকে। মা আমাকে এতোটা খারাপ ভাবেন?)
বুয়া: এভাবে বলছেন কেন নতুন বউ সখ করে রান্না করতে এসেছে।
মা: তোমাকে এসবে নাক গলাতে হবে না।
বুয়া মায়ের সাথে তর্ক করছে আমি আস্তে আস্তে কিচেন থেকে বেরিয়ে আসলাম। মা এমন কথা বলেছেন আমার যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না। একজন মানুষ এতোটা খারাপ হতে পারে? কেন, উনি আমার শাশুড়ি মা বলে?

আদিল: আনিশা এই আনিশা...
আমি: হুম।
আদিল: উঠবে না অনেক রাত হয়েছে তো। (আদিলের কথা শুনে হকচকিয়ে উঠে বসলাম। সন্ধ্যার সময় রুমে একা একা ভালো লাগছিল না বলে শুয়ে ছিলাম ব্যস কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি। দেয়ালঘড়িতে তাকালাম রাত এগারোটা বাজে)
আদিল: মিতু বললো সন্ধ্যার সময় ঘুমিয়ে ছিলে, শরীর খারাপ নাকি?
আমি: উঁহু, সোফায় কখনো ঘুমাইনি তো তাই রাতে ঘুম হয়নি।
আদিল: ওহ, খাবে না?
আমি: কাল তো বাসায় যাবো, বাসায় গিয়ে একেবারে খাবো।
আদিল: তোমাদের বাসা কোথায় সেটা মনে আছে তো?
আমি: কোথায় আবার ঢাকা।
আদিল: কক্সবাজার থেকে ঢাকা যেতে অনেক সময় লাগবে ততোক্ষণে তোমাকে হসপিটাল ভর্তি করাতে হবে।
আমি: হাসুন বেশি করে হাসুন, এই বাসায় খাওয়ার চেয়ে না খেয়ে মরে... (আদিল আমার মুখ চেপে ধরলো, ওর দুচোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। হুট করে আদিল কি যেন ভেবে চোখ সরিয়ে নিলো। টেবিলে রাখা খাবার এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো)
আদিল: কারো জোটা খাবার নয় খেয়ে নাও।
আদিল মুচকি হেসে ওয়াশরুমে চলে গেল। খাবার এনে খেতে যাবো তখনই আদিলের ফোন বেজে উঠলো। বাব্বাহ্ স্কিনে "পাগলী" লেখা ভেসে উঠেছে, ধ্যাত খাওয়ার ইচ্ছেটাই নষ্ট করে দিলো।

বিছানায় বসে পা নাচাচ্ছি আদিল রুমে আসলো, উফফ আবারো সকালের সেই দৃশ্য।
আদিল: এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?
আমি: সকালের কথা ভুলে গেছেন?
আদিল: চুপ ফাজি মেয়ে।
আমি: মন ভালো নেই তাই রোমান্সও করবো না। পাগলী কে?
আদিল: কে আবার জিএফ, কেন ফোন এসেছিল?
আমি: হুম এসেছিল কিন্তু আপনি এখন কল ব্যাক করবেন না।
আদিল: কেন? ও রাগ করবে তো।
আমি: আর ওকে ফোন করলে আমি রাগ করবো, খাবো না এই খাবার।
আদিল: আনিশা কিসব পাগলামি শুরু করেছ?
আমি: বললাম তো খাবো না। না খেয়ে থাকবো তারপর আমি অসুস্থ হবো আমাকে নিয়ে হসপিটাল...
আদিল: হয়েছে আর বলতে হবে না খেয়ে নাও আমি ফোন করবো না।
আমি: এইতো কিউট জামাই আমার। (খাবারের প্লেট হাতে নিতেই মনে হলো আচ্ছা আদিলের হাতে খেলে কেমন হয়?)
আদিল: কি আমার দিকে তাকিয়ে কি ভাবছ?
আমি: ভাবছি আজ আপনার হাতে খাবো।
আদিল: কি?
আমি: ওমা এতে এতো চেঁচানোর কি আছে? খাইয়ে দিন বলছি।
আদিল: তুমি কি আমার ব্রেকআপ করাতে চাও?
আমি: এই চার দেয়ালের মধ্যে আপনি আমাকে খাইয়ে দিলে সেটা আপনার জিএফ দেখবে না। খাইয়ে দিন বলছি নাহলে খাবো না।
আদিল: ঠিক আছে।
আদিল চুপচাপ আমাকে খাইয়ে দিতে শুরু করলো, আমি আড়চোখে ওকে দেখছি আর মিটিমিটি হাসছি।

জানালার কাছে এসে দাঁড়ানো মাত্রই দেখলাম আদিল ঘুমানোর জন্য খাটের দিকে যাচ্ছে, এক দৌড়ে এসে খাটের মাঝখানে বসে পড়লাম।
আদিল: এইটা কি হলো?
আমি: আমি খাটে ঘুমাবো আপনার প্রবলেম থাকলে আপনি সোফায় ঘুমান।
আদিল: আমি কখনো সোফায় ঘুমাইনি।
আমি: আমিও ঘুমাইনি আপনার জন্য কাল ঘুমিয়েছি সোফায়।
আদিল: ঠিক আছে থাকো খাটেই তবে দুজনের মাঝখানে বালিশ থাকবে।
আমি: ঠিক আছে। (মাঝখানের বালিশ সরাতে কতোক্ষণ কিউট জামাই হিহিহি)
আদিল: হাসছ কেন?
আমি: কোথায় নাতো।
আদিল: ঘুমিয়ে পড়ো। (মাঝখানে বালিশ দিয়ে লাইট অফ করে আদিল শুয়ে পড়তেই বালিশটা ছুড়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে ওর বুকের উপর শুয়ে পড়লাম)
আদিল: আনিশা কি হচ্ছে এইটা কিন্তু কথা ছিল না।
আমি: বিয়ে করে এনে আমাকে এতো কষ্ট দিবেন এইটাও কথা ছিলনা।
আদিল: (নিশ্চুপ)
আমি: দেখেছেন তো আনিশা নিজের অধিকার খুব ভালো ভাবেই আদায় করে নিতে জানে।
আদিলের কপালে কপাল ঠেকিয়ে ওর চোখের দিকে তাকালাম, আদিল আমার এমন পাগলামি দেখে মুচকি হাসছে আর সে হাসি ডিম লাইটের আলোতে অসম্ভব এক সুন্দর লাগছে। আদিলের কপালে আলতো করে আমার ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিলাম আদিল সাথে সাথে দুচোখ বন্ধ করে নিয়েছে, ওর ঠোঁটের কোণে হাসির রেখে ও যেন এটাই চাইছিল। এতো কাছ থেকে ডিম লাইটের আলোতে ওর মায়াবী মুখটা আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি...

চলবে😍
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url