তবুও ভালোবাসি | পর্ব -০১



মৃদু বাতাসে জানালার পর্দা সরে যাচ্ছে বারংবার, তার সাথে পাল্লা দিয়ে জানালা গলে উঁকি দিচ্ছে
জ্যোৎস্না। আজকের জ্যোৎস্নায় যেন কিছু না পাওয়া ভাসছে, রাতের আধারের সাথে পাল্লা দিয়ে
 যেন বাড়ছে হাহাকার। দূর থেকে ভেসে আসা সমুদ্রের গর্জন যেন বুকের
 ভিতরের হাহাকারটা বাড়িয়ে দিচ্ছে দ্বিগুণ। খাটের এক কোণে বসে মৃদু বাতাস আর
 জ্যোৎস্নার লুকোচুরি খেলা দেখছি আর আনমনেই হাসছি আদিলের দুষ্টু মিষ্টি কথা 
-গুলো শুনে। নাহ আদিল আমার সাথে দুষ্টু মিষ্টি কথা বলছে না, 
বলছে তো ওর প্রেমিকার সাথে।আজ আমার আর আদিলের বাসররাত কিন্তু বুঝার উপায় নেই 
যে এইটা সদ্য বিয়ে হওয়া দুজন দম্পতীর বাসরঘর। 
আদিল আমাকে বসিয়ে রেখে ও সোফায় বসে আরামছে প্রেমিকার সাথে ফোনে কথা বলে যাচ্ছে,
 ইচ্ছে হচ্ছে ওর ফোনটা একটা আছার দিয়ে ভেঙে ফেলি। 
ইসস কতো ভালো ছিলাম বিন্দাস হয়ে এইখানে সেইখানে ঘুরে বেরিয়েছি
 হুট করে আব্বু বিয়ে দিয়ে আমার জীবনটাই শেষ করে দিলো। 
অবশ্য আব্বুরও দোষ নেই কারণ আমার ঘুরে বেড়ানো নিয়ে আব্বুর ভয় হয় তাছাড়া 
একবার তো বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম। 
তারপর এইতো সেদিন আদিল ওর দাদা, মা এবং ছোট বোনকে নিয়ে আমাদের বাসায় 
বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল ব্যস আব্বু রাজি হয়ে গেলেন। 
আমিও অমত করিনি আব্বুর অনুরোধ আর প্রথম দেখায় আদিলের আমার দিকে মুগ্ধ 
নয়নে তাকিয়ে থাকা ব্যস রাজি হয়ে গেলাম। বিয়েটা হয়ে 
গেল আর আজ আমার এই অবস্থা, কে জানতো এই ছেলের মুগ্ধ 
নয়নে তাকানো মিথ্যে ছিল।
"ওহ রিয়েলি? তোমার কপালে এখন আলতো করে আমার ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে 
দিতে ইচ্ছে করছে"
আদিলের কথা গুলো শুনে ওর দিকে তাকিয়ে আনমনে হেসে দিলাম, আজ 
আদিলের কার কপালে ভালোবাসার স্পর্শ আঁকার কথা আর আঁকছে কার কপালে...
আদিল: এই মেয়ে এমন পেত্নীর মতো হাসছ কেন? (আদিলের ধমক শুনে আমার 
হাসিমাখা মুখটা ভয়ে চুপসে গেল, আদিলের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকালাম)
আদিল: তোমার হাসির কারণে আমাদের ডিস্টার্ব হয়েছে এখন তোমাকে...
আমি: ভুল হয়ে গেছে সরি।
আদিল: ভুল যখন করেছ শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।
আমি: সরি তো বললাম তাহলে আবার শাস্তি কেন?
আদিল: তোমার জন্য আমার পাগলীটা রাগ করে ফোন কেটে দিয়েছে।
আমি: পাগলী না পাগলী না পেত্নী।
আদিল: এই বিড়বিড় করে কি বলছ?
আমি: যা ইচ্ছা তাই তাতে আপনার কি?
আদিল: বাব্বাহ্ এখনই দেখছি মুখে বেশ বুলি ফুটেছে।
আমি: ফুটবে নাতো কি হ্যাঁ? বাসরঘরে নতুন বউ রেখে প্রেমিকার সাথে 
ফোনে কথা বলে যাচ্ছেন লুচু কোথাকার।
আদিল: কি আমি লুচু?
আমি: এক হাজার পার্সেন্ট।
আদিল: আনিশা মুখ সামলে কথা বলো নাহলে...
আমি: নাহলে কি করবেন গায়ে হাত তুলবেন? আমিও মা আর দাদুকে ডেকে বলবো আপনি এই মাঝরাতে প্রেমিকার সাথে ফোনে কথা বলছেন।
আদিল: আম্মুকে বলবে? যাও তাহলে বলো গিয়ে দেখি আম্মু আমাকে কি করেন। (আদিল রেগে গিয়ে আমার গলা চেপে ধরেছে দেখে বেশ অবাক হলাম)
আমি: ছাড়ুন লাগছে।
আদিল: লাগার জন্যই ধরেছি ভবিষ্যৎ এ যেন আমার সাথে ঝামেলা করতে না আসো সেজন্য। (আদিল ঝটকা দিয়ে আমার গলা ছেড়ে দিলো, হাঁপাতে হাঁপাতে ওর দিকে তাকালাম)
আদিল: আর কখনো আমার সাথে তর্ক করতে এসো না তাহলে কিন্তু...
আঙ্গুল তুলে আমাকে শাসিয়ে বেলকনিতে চলে গেল, ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি অপলক দৃষ্টিতে।

খাটের মাঝখানে দু হাটুর মাঝে মুখ গুঁজে চুপচাপ বসে আছি, আদিল বেলকনিতে
 দাঁড়িয়ে এখনো ফোনে কথা বলে যাচ্ছে। আমি খুব দুষ্টু মেয়ে আমাকে কষ্ট কখনো ছুঁতে পারেনি,
 হ্যাঁ আমি জীবনে একবারই কেঁদেছিলাম আর আজ কান্না পাচ্ছে।
 জানিনা আদিলের অবহেলায় আমার এতোটা কষ্ট কেন হচ্ছে, ইচ্ছে হচ্ছে ওর
 বুকে মুখ গুঁজে খুব করে কাঁদি। কিন্তু আমি কাঁদবো না আমি এতো সহজে হেরে
 যাওয়ার মেয়ে নই আমি আমার অধিকার ঠিক আদায় করে নিবো।
আদিল: সরো ঘুমাবো। (আদিলের কন্ঠ শুনে মাথা তুলে পাশ ফিরে তাকালাম, 
আদিল একমনে ফোন টিপছে)
আমি: আপনি তো এতোটাও মোটা নন যে এই জায়গাতে ঘুমাতে পারবেন না।
আদিল: এই মেয়ে সবসময় এতো বেশি কথা বলো কেন? এই জায়গাটুকুতে আমি ঘুমুতে যাবো কেন এইটা আমার খাট আমি পুরোটায় ঘুমাবো।
আমি: তাহলে আমি কোথায় ঘুমাবো?
আদিল: সেটা তোমার ব্যাপার।
আমি: আপনার খাটে আপনি ঘুমাবেন তারমানে আমি ঘুমুতে হলে বাবার বাড়ি থেকে নিজের খাট এনে ঘুমাতে হবে তাইতো? এই আপনি কি ইশারায় আমাকে যৌতূক আনতে বলছেন?
আদিল: উফফ আনিশা এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে, সরো তুমি আমি ঘুমাবো।
আমি: এইটুকু জায়গাতে ঘুমাতে পারলে ঘুমান নাহলে সিনেমার নায়কদের মতো সোফায় গিয়ে ঘুমান। (আমার কথা শুনে আদিল আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
আদিল: তোমার সাহস দেখে তো আমি অবাক হচ্ছি, ভুলে গিয়েছ একটু আগে যে গলা চেপে ধরেছিলাম? (এই ছেলেকে বিশ্বাস নেই আবারো গলা চেপে ধরতে পারে তাই চুপচাপ সরে বসলাম)
আদিল: সোফায় যাও এই খাটে তোমার জায়গা নেই।
আমি: (নিশ্চুপ)
আদিল: কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না?
আমি: (নিশ্চুপ)
আদিল: যাও বলছি।
আমি: যাবো না যা খুশি করেন। প্রেমিকা রেখে কেন আমাকে বিয়ে করেছেন আর এখন এমন খারাপ ব্যবহার করছেন?
আদিল: খারাপ ব্যবহারের দেখেছ কি সবে তো মাত্র শুরু। (উফফ এই ছেলেকে... ওর কাছে এসে পাঞ্জাবী খামছে ধরলাম)
আমি: এই ছেলে শুন আমাকে না অন্য মেয়েদের মতো ভাববি না একদম। 
আমি ভ্যা ভ্যা করে কাঁদার মতো মেয়ে নই আমি আমার অধিকার ঠিক 
আদায় করে নিতে জানি।
আদিল: আনিশা হচ্ছে কি? ছাড়ো বলছি। (আদিল আমাকে ধাক্কা দিতেই দফ করে 
বিছানায় পড়ে গেলাম। আদিল আমার উপর শুয়ে বিছানার সাথে 
আমার হাত চেপে ধরে রাগি চোখে তাকালো আমার চোখের দিকে)
আদিল: আমি তোমাকে লাস্ট বার বলছি আমার সাথে তর্ক করো না করলে
 তোমাকে আমি খুন করবো। (আমার হাত ধরে টেনে তুলে সোফার 
দিকে ধাক্কা দিলো, তাল সামলাতে না পেরে সোফায় এসে উপুড় হয়ে পরে গেলাম)

শেষ রাত চারদিক নিস্তব্ধ, দূর থেকে শুনশান শব্দ আর ঝিঝি পোকার ডাক ভেসে আসছে। 
কপালে একটা হাত রেখে চুপচাপ সোফায় শুয়ে আছি। 
কোনো ভাবেই ভেবে পাচ্ছি না আদিল আমার সাথে কেন এরকম করছে। 
কোনো খারাপ মানুষও তো প্রথম দিন নতুন বউয়ের সাথে এতো খারাপ ব্যবহার করবে না 
আর আদিলকে দেখে তো আমার একবারের জন্যও খারাপ ছেলে মনে হয়নি তাহলে 
কেন করছে এরকম? ওর জিএফ আছে বলে? 
তাহলে জিএফ রেখে আমাকে বিয়ে করলো কেন? 
বিয়ে নাহয় কোনো পরিস্থিতির চাপে পরে করেছে কিন্তু আমাকে তো সবকিছু বুঝিয়ে 
বলতে পারতো তা না করে এতো খারাপ ব্যবহার কেন করছে? 
মনে হচ্ছে আমার সাথে যেন ওর জন্মজন্মান্তরের শত্রুতা, 
সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা আদিলকে 
একবার ঠান্ডা মাথায় জিজ্ঞেস করে দেখবো?
আমি: আদিল...
আদিল: হুম।
আমি: একটা প্রশ্ন করবো?
আদিল: হুম করো।
আমি: বিয়ের প্রস্তাব তো আপনাদের বাসা থেকেই দিয়েছিলেন আর আপনার আম্মুও তো আমাকে বউমা করতে চান বলে তাড়াহুড়ো করে বিয়েটা দিলেন তাহলে আজ আমার সাথে এসব কেন হচ্ছে?
আদিল: (নিশ্চুপ)
আমি: আব্বু আমাকে কখনো কষ্ট কি বুঝতে দেননি এসব শুনলে আব্বু খুব কষ্ট পাবেন। আপনি আমাদের আগে বলতে পারতেন আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন তাহলে...
আদিল: আর কথা বাড়াতে চাই না ঘুমিয়ে পড়ো।
আমি: ঘুম কি আসবে?
আদিল: চেষ্টা করো সকালে তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবো।
আর কথা বাড়ালাম না চুপচাপ ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
.
সকালের মিষ্টি রোদের আলো আর মৃদু বাতাস উপভোগ করছি জানালার কাছে দাঁড়িয়ে।
দূরে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে, সমুদ্রের বুক ছিঁড়ে সূর্য একটু একটু করে উঁকি দিচ্ছে। 
আদিল চাকরির জন্য পরিবার নিয়ে কক্সবাজার থাকে তাইতো এতো সুন্দর সকাল 
উপভোগ করতে পারছি। আদিলের ঘুমন্ত মুখটা দেখতে ইচ্ছে হলো হুট করেই পিছনে 
তাকালাম, আমিতো ভেবেছিলাম আদিল ঘুমিয়ে আছে কিন্তু ও তো আমার দিকে হা করে 
তাকিয়ে আছে। আমি তাকিয়ে আছি দেখে আদিল মুখ ফিরিয়ে নিলো, 
আমিও আবার সমুদ্র দেখায় মন দিলাম। রাতে আমাকে কষ্ট দিয়ে এখন 
আবার আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা হচ্ছে দাঁড়াও আমিও দেখাচ্ছি মজা। 
হুট করে আবার পিছনে তাকালাম আদিল এখনো তাকিয়ে ছিল কি করবে বুঝতে না 
পেরে তাকিয়েই রইলো, একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে আদিলকে চোখ টিপ দিলাম
 ও সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
আমি: লুচু কি আর সাধে ডাকি?
আদিল: মানে?
আমি: রাতে বউ রেখে প্রেমিকার সাথে কথা বললেন আর এখন 
প্রেমিকার কথা ভুলে গিয়ে সদ্য গোসল করে আসা বউয়ের ভেজা চুলের 
দিকে হা করে তাকিয়ে আছেন এইটা লুচু...
আদিল: কেকককে তাতাকিয়েছে ভেজা...
আমি: কেকেকেকে হিহিহি তোতলাতে হবে না আমি দেখেছি আপনি 
তোয়ালে দিয়ে বাধা আমার চুলের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলেন।
আদিল: মিথ্যে কথা।
আমি: আদিল প্লিজ বলবেন কেন করছেন আমার সাথে এরকম।
 (আদিলের পাশে বসে ওর একটা হাত আমার দুহাতের মুঠোয় নিয়ে ওর 
চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করলাম, আদিল শান্ত হয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি: আমিতো ভালোই ছিলাম কেন আমাকে এই মিথ্যে বিয়ের শিখলে বাঁধলেন? 
আমি এতো কষ্টে আছি শুনলে আব্বু খুব কষ্ট পাবেন।
আদিল: তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই তো বিয়েটা করেছি।
আমি: কি?
আদিল: হ্যাঁ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তোমাকে বিয়ে করে ঘরে নিয়ে এসেছি। 
মাত্র এক রাতেই এতো কষ্ট? তোমার তো তিলেতিলে আরো অনেক কষ্ট পাওয়া বাকি। 
তুমি কষ্ট পেলে আমি খুশি হবো, তুমি কাঁদলে খুশি হবে আমার...
আমি: আপনার কে খুশি হবে আমি কাঁদলে?
আদিল: সরো আমি উঠবো।
আমি: আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আপনি কোথাও যাবেন না। 
আমিতো আপনাদের কোনো ক্ষতি করিনি তাহলে আমাকে বিয়ে করে এনে এতো কষ্ট কেন
 দিচ্ছেন কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছেন?
আদিল: ক্ষতি করোনি? আরে তুমি তো একটা কালসাপ তুমি মানুষের জীবন 
নষ্ট করে দিতে দুবার ভাবো না।
আমি: কি?
আদিল: সরো বলছি।
আদিল আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে চলে গেল, 
আমি বোকার মতো বসে ওর বলা কথা গুলো ভাবছি। 
কি বলে গেল আদিল আমি কালসাপ? আমিতো জেনেশুনে কখনো কারো কোনো ক্ষতি করিনি 
তবে কি নিজের অজান্তে কাউকে কষ্ট দিয়েছি?
 কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছে ওরা আমাকে তা জানতেই হবে।

দাদু: এইযে নাতবৌ আমি এদিকে একটু এখানে এসো।
 (ড্রয়িংরুমে এসে উঁকিঝুঁকি মারছিলাম হঠাৎ দাদুর কন্ঠ শুনে কেঁপে উঠে পিছনে তাকালাম।
 দাদু সোফায় বসে আমাকে ইশারা দিয়ে কাছে ডাকছেন)
দাদু: আমাকে খুঁজছিলে তাই না? আমিতো জানি আমার প্রেমিকা আমাকে না
 দেখে এক মুহূর্তও থাকতে পারেনা। (দাদুর দুষ্টুমির কথা শুনে হেসে দিলাম)
দাদু: বস এখানে।
আমি: মা আর মিতু কোথায় দাদু?
দাদু: ওদের কথা বাদ দে আগে বল তোদের রোমান্স কেমন হলো।
আমি: দাদু...
দাদু: লজ্জা পাচ্ছিস কেন? আমিতো জানি রাতে তোর সাথে কি হয়েছে।
 (দাদুর কথা শুনে বেশ অবাক হলাম)
দাদু: এমন একটা লক্ষী মেয়েকে ওরা কি করে কষ্ট দেয় আমি ভেবে পাই না।
 তুই চিন্তা করিস না একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি: ওরা মানে? তবে কি আমাকে কষ্ট দেওয়াটা সবার প্ল্যান?
দাদু: হুম।
আমি: কিন্তু আমি কি ক্ষতি করেছি ওদের কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছে ওরা?
দাদু: সেটা আমি বলতে পারবো না আদিলের থেকে জেনে নিস।
 আমি শুধু এইটুকু বলতে পারবো আমার আদিল এতোটা খারাপ নয় যে
 কোনো মেয়েকে এতোটা কষ্ট দিবে, আদিল তো সবকিছু ওর মায়ের ইশারায়...
মা: সাতসকালে নাতবৌ এর কান ভাঙানো হচ্ছে?
 (মা'কে আসতে দেখে মাথা নিচু করে বসে রইলাম, দাদুও চুপ হয়ে গেলেন)
মা: শুনো মেয়ে আমরা যেভাবে বলি সেভাবে থেকো নাহলে কষ্টটা
 একটু বেশিই পেতে হবে তোমাকে।
আমি: আমার আম্মু নেই ছোট বেলায় হারিয়েছি তবুও কিছুটা জানি মা 
কেমন হয়, আমার জানা মতে মা কখনো সন্তানকে খারাপ শিক্ষা দেয়না 
কিন্তু আপনি আদিলকে... (কিছু বুঝে উঠার আগেই আদিল ঠাস করে আমার 
গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো, গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি)
আদিল: আম্মু আমাকে খারাপ শিক্ষা দেয়নি বরং এইটা শিখিয়েছে যে 
কোনো দুশ্চরিত্রা মেয়েকে কিভাবে শাস্তি দিতে হয়।
 (আদিলের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি দুচোখে পানি ছলছল করছে আমার। 
আদিল আমাকে কতোদিন ধরে ছিনে যে আমাকে দুশ্চরিত্রা বললো?)
মা: তিলতিল করে কষ্ট দিয়ে মারবো তোমাকে,
 তুমি এই যন্ত্রণা থেকে না মুক্তি পাবে না পালিয়ে যেতে পারবে। 
(মা আমার হাত জোড়ে চেপে ধরে কথা গুলো বলেই চলে গেলেন।
 নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে,
 কিছুই বুঝতে পারছি না কেন করছে ওরা আমার সাথে এরকম?)
দাদু: কাঁদলে হবে নারে দিদি ওদের সাথে লড়াই করতে হবে।
.
আমি: কার সাথে লড়াই করবো দাদু? যাকে মায়ের স্থানে জায়গা দিয়েছি তার সাথে? 
যাকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি, কবুল বলার পর যার প্রতি ভালোবাসা 
ক্রমশ বেড়েই চলেছে তার সাথে?
দাদু: আদিল এরকম ছেলে নয় ও খুব ভালো ছেলে, আদিল তো ওর মায়ের 
কথায় এসব করছে। তুই তোর ভালোবাসা দিয়ে আদিলের মন জয় করতে পারবি না?
আমি: কিন্তু ওর মনে যে অন্য কারো বসবাস দাদু।
দাদু: প্রেমিকার চেয়ে স্ত্রীর অধিকার বেশি, স্ত্রীর ভালোবাসা পবিত্র হয়। তাহলে জিতবে কে?
আমি: আমি জিতবো।
দাদু: এইতো বুঝে গেছিস, রুমে যা আদিল অনেক আগেই রুমে চলে গেছে।
আমি: হুম।

দরজা খুলে রুমে পা রাখতে যাবো তখনি আদিল চেঁচিয়ে উঠলো।
আদিল: বেহায়া বেশরম মেয়ে নক করে আসতে পারো না? 
(আদিলের প্রশ্নের উত্তর দিবো কি ওকে তোয়ালে পড়া অবস্থায় দেখে ফিক করে হেসে দিলাম)
আদিল: এখনো দাঁড়িয়ে আছ বাইরে যাও বলছি।
আমি: এইটা আপনার একার রুম নয় আমারো রুম এইটা।
আদিল: এই তুমি দরজা বন্ধ করছ কেন?
আমি: আপনাকে ভালোবাসা শিখাবো।
আদিল: মামাননে? একদম আমার কাছে আসবে না।
আমি: এতো লজ্জা পাচ্ছেন কেন আপনার বউই তো আমি তাছাড়া 
আপনি মেয়ে নাকি যে এভাবে লজ্জা পাচ্ছেন?
আদিল: কি করছ?
আমি: কোনো ছেলেকে গোসল করার পর তোয়ালে পড়া অবস্থায় এতোটা সুন্দর লাগতে পারে
 তা আমার অজানা ছিল। ভেজা চুল, ফর্সা লোমশ বুকে কয়েক ফোঁটা পানি...
আদিল: আনিশা এবার কিন্তু বেশি হচ্ছে। 
(ওর বুকে একটা আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করছিলাম আমার হাত সরিয়ে দিয়ে ও পিছিয়ে গেল)
আমি: বেশি তো হবেই আপনার কপালে যে একটা দুষ্টু বউ জুটেছে।
(আবারো ওর কাছে এসে দুহাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরলাম, 
ওর ভয়ে চুপসে যাওয়া মুখটা দেখে খুব হাসি পাচ্ছে)
আদিল: এবার কিন্তু আমি আম্মুকে ডাকবো আম্মু আম্মু...
আমি: চুপ, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে রোমান্স হচ্ছে সেখানে দজ্জাল শাশুড়িকে টেনে আনছেন কেন?
আদিল: এইটাকে রোমান্স বলে? এইটাকে তো...
আমি: ভালোবাসা বলে।
.
একহাতে ওর মাথার চুল খামছে ধরে অন্যহাতে ওর গালে ধরে ওর দু ঠোঁটে আলতো করে 
আমার ঠোঁট স্পর্শ করলাম। আদিল চোখ বন্ধ করে শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর আমি 
দুহাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরে ওর মায়াবী মুখটা দেখছি। এমন মায়াবী মুখে প্রতিশোধের
কথা মানায় না, এমন ভালো মনের মানুষের দ্বারা অন্যকে কষ্ট দেওয়া মানায় না। 
আপনি প্রতিশোধ নিন সমস্যা নেই আমিও আমার ভালোবাসা দিয়ে আপনাকে আগলে রাখবো, 
আমার দজ্জাল শাশুড়ি মায়ের ইশারায় আপনাকে আমি খারাপ হতে দিবো না। 
এভাবেই আপনাকে ভালোবাসবো আর 
আপনার মনে আমার জন্য ভালোবাসার বীজ রূপণ করবো...

চলবে...
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url