সুখের মূল্য ৩৫০ || লেখিকা: অবন্তী

চাচা! সারা দেশই তো লকডাউন!!  এরমধ্যে বের হয়ছেন কেন?
রিকশায় উঠতে উঠতে রিকশাওয়ালাকে কথাটা বললো তৌহিদ!!!
- কি করুম বাবা!! বাড়িতে তো খাওন নাই।
- কেন চাচা!! ত্রান পাননি?
- না রে বাবা। আনতে গেছিলাম ভিড়ের মধ্যে জায়গা অইলো না... চইলা আইছি!!
-তো কত টাকা ইনকাম হলো আজ?
-৬০ টাকা।
- কি বলেন, সারাদিনে মাত্র ৬০ টাকা?
- হ!!! দেশের যে অবস্থা,,মানুষজন বেরোয় না বাড়ি থিক্কা.. ভাড়া পামু কই?
-বাসায় সদস্য কইজন?
- আমি,বউ,তিনডা মাইয়া আর একটা পোলা!!
-মেয়ে বিয়ে দেননি?
-হ বড় জন রে বিয়া দিছিলাম। যৌতুকের টাকার লাইগ্গা মাইরধর করে।  কি করুম পরে নিয়া আইছি আমাগো বাড়ি। যা একমুঠ ভাত পায় তাই খাইয়ায় বাচঁবো, পরের মাইর খাইয়া মরার থিক্কা এই ভালো!!!
- চাচা!! বললেন যে ৬০ টাকা হয়ছে!! কেমনে কি কিনবেন? সব কিছুর দামই তো বাড়তি!!
- জানি না বাবা!! চেষ্টা তো করনই লাগবো,,বাড়িত গেলে হক্কলে হাতের দিকে চাইয়া থাকে। কিছু না কিছু নিয়া তো যাওয়ায় লাগবো।
-চাচা,, রিকশাটা সামনের গলির বাজারের পাশে রাইখেন...  মনে হয় কিছু সবজির দোকান খোলা আছে। একটু বাজার করে নিতাম।
-আইচ্ছা।
.
.
বাজারের পাশে রিকশা দাড় করিয়ে তৌহিদ দেখলো বেশ কিছু সবজির দোকান খোলা আছে। আবার চায়ের দোকানেও বেশ কিছু মানুষ। গলিটা ভেতরের দিকে হওয়ায় তেমন কোনো পুলিশি টহল নেই। 
.
.
তৌহিদ রিকশাওয়ালাকে দাড়াতে বলে.. দোকানীকে বললো-
- ভাই,২ কেজি চাল,হাফ কেজি ডাল,১ লিটার তেল,২ কেজি পেয়াঁজ আর আলু দিন!!! আর ওই ঢেঁড়শ আর শাকগুলোও দিয়েন।
-আচ্ছা ভাই।
-কত হয়ছে ভাই?
-৩৫০ টাকা।
.
.
ওদিকে তৌহিদকে বাজার করতে দেখে রিকশাওয়ালার ও খুব ইচ্ছে করছে বাড়ির জন্য বাজার করে নিয়ে যেতে!!! কিন্তু টাকা কই? ভাবতেই দুমরে মুচরে যাচ্ছে ভেতরটা...
একদিকে ক্ষুদার জ্বালা অন্যাদিকে অভাব.. মাঝে মাঝে সৃষ্টিকর্তাকে বলতে ইচ্ছে হয়" এই কষ্টের জন্যই কি পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলে?"
.
.
তৌহিদ বাজার নিয়ে রিকশায় উঠে বসে.. এবং রিকশা আবার গন্তব্যের দিকে যেতে থাকে।তৌহিদ বাসার সামনে এসে রিকশা থামাতে বলে...
- চাচা!! রাখেন রাখেন,,, চলে আসছি!!
বলেই সে রিকশা থেকে নেমে রিকশাওয়ালাকে বলে..
- এই নেন চাচা!! বাজারটা আপনার!!  আজ আর রিকশা চালানো লাগবে না।  বাসায় গিয়ে খাবারগুলো ভাগাভাগি করে খান।
ততক্ষনে রিকশাওয়ালার চোখ বেয়ে ঝরঝর করে পানি পরছে... তিনি বললেন
- বাজান!!! তোমাকে একটু জরায় ধরি?
- আরে চাচা!! ধরেন...
-তুমি জানো না বাজান..  তিনদিন হয় ঠিক মতো খাইনা। ক্ষুদার জ্বালা সহ্য হয় না বাজান!! মাইয়াগো মুখের দিকে তাকাইলে সহ্য করন যায় না। আইজ কা খাওন নিয়া গেলে সবার মুখে হাসি দেখবার পারুম.. এর থিক্কা বেশি আর কি হয়তে পারে বাজান!! তুমি জানো না বাজান!!! তুমি সুখ কিন্না দিছো আমারে!! ৩৫০ টাকায় সুখ কিন্না দিছো।
.
.
আবেগে,আনন্দে আর কৃতজ্ঞতায় রিকশাওয়ালা কেঁদে একাকার অবস্থা।তৌহিদও নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না।কেঁদে ফেললো।
আর নিজের মনকে প্রশ্ন করলো..

" সত্যিই কি ৩৫০ টাকায় সুখ কেনা যায়"?

সমাপ্ত
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url