তবুও ভালোবাসি | পর্ব -০৩
জানালার পর্দা সরে সকালের মিষ্টি রোদের আলো আদিলের মুখে এসে পড়ছে,
আমি ওর বুকে শুয়ে ওকে দেখছি আর মিটিমিটি হাসছি।
আদিল আমাকে ওর বুকের সাথে দুহাতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রেখেছে,
মনে হচ্ছে ও আমাকে ছাড়লেই আমি হারিয়ে যাবো।
আদিলের বুকে তুথুনি রেখে একটা আঙ্গুল ওর ঠোঁটে স্পর্শ করছি, হুট করে ও জেগে গেল।
আমাকে এতো কাছে দেখে কিছুক্ষণ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো
তারপর আচমকা চেঁচানো শুরু করলো।
আদিল: কি হচ্ছে এসব?
আমি: আরে আস্তে চেঁচান।
আদিল: সরো বলছি। (আমাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে ও উঠে বসলো)
আমি: কি হয়েছে?
আদিল: এই মেয়ে কিছু বলিনা বলে ভেবো না তুমি যা খুশি করবে
আর আমি চুপচাপ মেনে নিবো।
আমি: কি করেছি আমি?
আদিল: বেহায়া বেশরম মেয়ে, একটা ছেলে তোমাকে কাছে চায় না
আর তুমি নির্লজ্জের মতো... ছিঃ! (আদিলের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলাম)
আমি: স্বামীর বুকে ঘুমানো যে বেহায়াপনা সেটা জানা ছিলনা।
আর আমি নির্লজ্জ নই ভালোবাসি তাই...
আদিল: আমি কি তোমাকে ভালোবাসি? ভালো করে শুনে রাখো আমি শুধু মানহাকে ভালোবাসি।
আম্মু যেদিন বলবে সেদিনই আমি তোমাকে ডিভোর্স দিবো আর মানহাকে বিয়ে করবো।
আমি: কর গিয়ে বিয়ে ওই পেত্নীটাকে, আমার সাথে আর কথা বলবি না তুই।
আদিল আমার সামনে দাঁড়ানো ছিল ধাক্কা
মেরে ওকে সরিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। লুচু ছেলে একটা ঘরে বউ রেখে
ওই পেত্নীর সাথে ফষ্টিনষ্টি করে আবার বলে আমি নাকি নির্লজ্জ।
কথা বলবো না আর এই লুচু বেডার সাথে, আসুক একবার আমার সাথে কথা বলতে
ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিবো।
.
মিতু: আম্মু তো দেখছি অজতা কালসাপ বলে না, দেখো রাগে কেমন সাপের
মতো ফুসফুস করছে। (ড্রয়িংরুমে আসতেই মিতু আমার দিকে আড়চোখে
তাকিয়ে কথাটা বললো, ইচ্ছে হচ্ছে কষে একটা থাপ্পড় দেই। মা, মেয়ে, ছেলে সব একরকম)
মিতু: এতো রেগে আছেন কেন মহারাণী?
আমি: শুনবে?
মিতু: বলো শুনি।
আমি: লজ্জা পাবে নাতো আবার?
মিতু: লজ্জা পাবো কেন?
আমি: আমি ঘুমিয়ে ছিলাম আর তোমার ভাইয়া আমার সাথে দুষ্টুমি করছিল, ঘুম ভেঙে গেছে তো আমার তাই ওর উপর রাগ করেছি।
মিতু: কি? ভাইয়া...
আমি: ওমা এতে এতো চমকে যাওয়ার কি আছে? হাজবেন্ড তার বউয়ের সাথে দুষ্টুমি করতেই পারে।
মিতু: আম্মু আম্মু দেখে যাও তোমার গুণধর ছেলের কান্ড, সুন্দরী বউ পেয়ে কোনো হুশ নেই ভুলে গেছে পুরনো সব কথা।
আমি: মিতু তুমি একটু খিটখিটে জানতাম কিন্তু এতোটা বেশরম যে জানতাম না।
মিতু: মানে?
আমি: এইযে নিজের ভাই ভাবির রোমান্সের কথা মা'কে বলতে যাচ্ছ।
মা: কি হয়েছে মিতু চেঁচাচ্ছিস কেন?
মিতু: আম্মু...
আমি: মা বলছিলাম যে আমরা ঢাকা কখন যাচ্ছি আর আমি কি না খেয়েই যাবো নাকি খাবার দিবেন?
মা: যদি খাবার না দেই?
আমি: রাস্তায় খেয়ে নিবো নো প্রবলেম কিন্তু আব্বুকে গিয়ে বলবো আপনি আমাকে খাবার দেননা।
মা: তোমার বাবা'কে আমি ভয় পাই নাকি?
আমি: আচ্ছা মা বাড়ির বউয়ের উপর অত্যাচার করলে কি যেন একটা মামলা...
বুয়া: নারী নির্যাতন এর নতুন বউ।
আমি: একদম ঠিক বলেছ বুয়া।
মা: এই বুয়া চুপ করো।
মিতু: দেখেছ আম্মু কেমন শয়তান মেয়ে?
আমি: শয়তানের সাথে শয়তানই হতে হয় ননদিনী।
মা: বৌমা মুখ সামলে কথা বলো।
.
আমি: ভালোভাবে বলছি এসব অত্যাচার বন্ধ করুন নাহলে আমি আব্বুকে সবকিছু বলতে বাধ্য হবো। আব্বু এসব শুনে চুপ করে বসে থাকবেন না কিন্তু।
মা: আমি এমন করছি বলে তুমি তোমার আব্বুকে বলবে বলে হুমকি দিচ্ছ আর তোমার জন্য যে
আমার সংসারটা অন্ধকার হয়ে গেল আমি কাকে বলবো সেটা?
(মা আচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলেন, আমি বোবার মতো দাঁড়িয়ে আছি।
কিসের কষ্ট উনাদের? আমার উপর কিসের এতো রাগ সবার?)
মিতু: আম্মুকে সবকিছু মনে করিয়ে দিলে তো? আজ আম্মু সারাদিন রুমে বসে কাঁদবে।
(মিতুও কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল, আমি পাশে রাখা চেয়ারটায় বসলাম। আমার ভুলটা কি সেটা কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছি না, কেউ বলছেও না আমায়)
বুয়া: নতুন বউ মন খারাপ কইরো না, ভাবিরে মাঝেমাঝেই এইভাবে কাঁদতে দেখি। একটু পর আবার সব ঠিক হয়ে যাইব।
আমি: আচ্ছা বুয়া তুমি জানো এ বাড়ির সবার আমার উপর কিসের এতো রাগ?
বুয়া: আমি জানমু কেমনে? তয় এইটুকু বুঝি সবার মনে কিসের যেন একটা কষ্ট আছে।
আমি: হুম।
বুয়া: তুমি বসো আমি তোমার নাশতা দিতাছি।
আমি: আদিল খায়নি তো খাবো না এখন।
বুয়া: কত্তো ভালোবাস তুমি, ওরা কেউ সেটা বুঝে না।
বুয়ার কথায় মৃদু হেসে রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
আদিল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হেলেদুলে হাত দিয়ে চুল ঠিক করছে আর গুণগুণ করে গান গাইছে, পারেও বটে একটু আগে ঝগড়া করে এখনই আবার গান গাইছে। কিন্তু ও রেডি হয়েছে কেন কোথায় যাবে আজ তো আমাদের বাসায় যাওয়ার কথা। জিজ্ঞেস করতে যাবো তখনই মনে হলো আমিতো রাগ করেছি কথা বলবো না ওর সাথে।
আদিল: মানহার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি, রেডি হয়ে থেকো এসে ঢাকা যাবো। (ওহ এজন্যই এতো খুশি আর গুণগুণ করে গান গাওয়া হচ্ছে)
আমি: আমি এখনই যাবো।
আদিল: মানে কি? বললাম তো আমি মানহার সাথে দেখা করতে যাবো।
আমি: আমার চেয়ে ওই শাঁকচুন্নিটা বড় নাকি? আমি যখন বলেছি এখন যাবো এখনই যেতে হবে।
আদিল: আমার মানহাকে তুমি শাঁকচুন্নি বললে কেন?
আমি: বেশ করেছি শাঁকচুন্নিই তো নাহলে কি বিয়ে করে ফেলেছেন শুনেও কথা বলতো?
আদিল: মানহা শাঁকচুন্নি না তুমি শাঁকচুন্নি। মানহা খুব সুন্দর মায়াবতী একটা মেয়ে আর তুমি তো পুরাই পেত্নী।
আমি: আমি পেত্নী হ্যাঁ আমি পেত্নী? বিয়ে করেছিস কেন তাহলে ওই মানহাকে বিয়ে করলি না? (রাগে আদিলের গলা চেপে ধরলাম, ও হাসতে হাসতে দুহাতে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে আমাকে ওর কাছে টেনে নিলো)
আদিল: রাগলে তোমাকে সত্যিই পেত্নীর মতো লাগে।
আমি: এবার কিন্তু... (আদিল আমার ঠোঁটের উপর একটা আঙ্গুল রেখে কথা বলতে নিষেধ করলো। আমি ওর দুচোখের দিকে তাকিয়ে আছি, আদিলও তাকিয়ে আছে আমার চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে, পরক্ষণেই ও আমাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো)
আদিল: রেডি হয়ে নাও আমরা এক্ষণি যাবো। (আদিল বিছানায় বসে ফোন টিপছে। এই মানুষটাকে আমি একদম বুঝতে পারিনা, এখনই ভালো ব্যবহার করছে তো পরক্ষণেই খারাপ ব্যবহার করছে। হঠাৎ ইচ্ছে করে কাছে টেনে নিচ্ছে আবার নিজেই দূরে সরিয়ে দিচ্ছে)
আদিল: কি হলো এখনো দাঁড়িয়ে আছ যে? যাও রেডি হয়ে নাও।
আমি: এখন যাবো না আপনি মানহার সাথে দেখা করে আসুন।
আদিল: বাব্বাহ্ এর মধ্যেই শাঁকচুন্নির হাতে আমাকে তুলে দিলে?
আমি: আপনি তো আমার না শাঁকচুন্নিটারই। দেখা করে আসুন নাহলে পরে আবার আমাকে রাগ দেখাবেন। (আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে ইচ্ছে হচ্ছে...)
আদিল: তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও, ফিরে এসে মানহার সাথে দেখা করবো।
আর কিছু বললাম না চুপচাপ ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
উফফ আদিল রেডি হয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে আর আমি এখনো শাড়িটাই ঠিক করতে পারছি না, বারবার কুচি গুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ধ্যাত পড়বোই না শাড়ি...
আদিল: আরে কি করছ? (শাড়ি খুলে ফেলতে চাইলাম আদিল এসে আমার হাত ধরে ফেললো)
আদিল: শাড়ি খুলছ কেন যাবে না?
আমি: শাড়ির কুচি গুলো কিছুতেই ঠিক করতে পারছি না।
আদিল: আমি ঠিক করে দিচ্ছি কিন্তু একটা শর্ত আছে।
আমি: কি শর্ত?
আদিল: আম্মুকে কখনো বলতে পারবে না। (ওর কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলাম, মা'কে এতো ভয় পায় ভাবতেই হাসি পাচ্ছে)
আদিল: দাঁড়াও আসছি। (আদিল গিয়ে দরজা বন্ধ করে এসেছে দেখে খুব হাসি পাচ্ছে)
আদিল: হেসো না, আম্মু যদি শুনে আমি তোমার শাড়ির কুচি ঠিক করে দিয়েছি তাহলে আমার খবর আছে।
আমি: আচ্ছা বলবো না। (আদিল খুব যত্ন করে কুচি। গুলো ঠিক করে দিচ্ছে, আমি মুগ্ধ হয়ে ওকে দেখছি। একটা মানুষ এতোটা ভালো হতে পারে?)
আদিল: হয়ে গেছে এবার চলো।
আমি: (নিশ্চুপ)
আদিল: এভাবে কি দেখছ চলো।
আমি: হুম।
দাদু: তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস কেমন? (ড্রয়িংরুমে আসতেই দাদু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন)
আমি: ঠিক আছে দাদু, আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন আর ঠিকমতো ওষুধ খাবেন।
দাদু: আচ্ছা।
আদিল: আমিতো ভেবেছিলাম তুমি বুঝি আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছ কিন্তু এখন দেখছি বুড়োর প্রেমে পড়েছ। (আদিল আমার কানের কাছে ফিসফিস করে কথাগুলো বলেই হাসতে শুরু করলো)
আমি: দেখেছেন দাদু আপনার সাথে হিংসে করছে।
মা: বউয়ের কানের কাছে ফিসফিস করার অভ্যাস ছাড়, আর হ্যাঁ ওকে একেবারে সঙ্গে নিয়ে আসবি। এই মেয়েকে বিশ্বাস নেই।
দাদু: উফফ শিরিন ওদের যাওয়ার সময় অন্তত এসব কথা বলিস না, শান্তিতে বেরুতে দে ওদের।
মা: বাবা তুমি এসবে কথা বলো নাতো, ও যে ভয়ঙ্কর মেয়ে আমার ছেলেটার না আবার কোনো ক্ষতি করে বসে।
আদিল: আম্মু কি বলছ এসব?
আমি: মা আপনি আমাকে যতোটা খারাপ ভাবছেন আমি ততোটাও খারাপ নই, আর আপনার ছেলে তো আমার স্বামী। নিজের স্বামীর ক্ষতি কোনো নারী করে নাকি?
মা: তুমি কি করতে পারো আর না পারো তা আমার ছয় মাস আগেই জানা হয়ে গেছে। এবার যাও আরো দেরি করে বেরুলে পৌছতে রাত হয়ে যাবে।
আমি: হুম আসছি, দাদু আসছি।
দাদু: সাবধানে যাস।
আমি: হুম।
বাসে চুপচাপ হয়ে বসে আছি আর জানালা দিয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখছি, পাশে আদিল বসে আছে। আসার সময় মা বলেছেন আমি কি করতে পারি আর না পারি তা উনার জানা হয়ে গেছে ছয় মাস আগে, কেন বললেন উনি এই কথা? ছয় মাস আগে কি কোনো কিছু হয়েছিল যা আমার অজানা? যদি কিছু হয়েই থাকে তাহলে সেটার জন্য উনি আমাকে দায়ী করছেন কেন? উফফ প্রশ্ন গুলো মাথায় কিলবিল করছে কিন্তু উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না।
আদিল: আনিশা কোনো সমস্যা?
আমি: হু না কোনো সমস্যা না।
আদিল: তাহলে মাথায় হাত দিয়ে এমন করছ কেন মাথা ব্যথা করছে?
আমি: না।
আদিল: বলো আমাকে কি হয়েছে মন খারাপ কেন? (আদিল আমার একটা হাত ওর দুহাতের মুঠোয় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে উত্তরের অপেক্ষা করছে)
আমি: কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছেন আমার উপর বলুন প্লিজ! আমি কখনো কারো কোনো ক্ষতি করেছি বলে তো আমার মনে... (আমার পুরো কথা শেষ হবার আগেই আদিল আমার হাত ছেড়ে দিলো। পকেট থেকে ফোন বের করে ফোন টিপায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো)
আমি: আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না কেন?
আদিল: (নিশ্চুপ)
আমি: ঠিক আছে উত্তর দিতে হবে না, যখন উত্তর দিতে পারবেন তখন আমার সাথে কথা বলতে আসবেন এর আগে নয়। (এবার আদিল ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকালো, পাত্তা না দিয়ে আবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। আমার উপর অত্যাচার করবে কিন্তু আমার ভুলটা কি সেটা বলবে না যত্তোসব)
হাতে কারো চুমুর স্পর্শে ঘুম ভেঙে গেল, ঘুম ঘুম চোখে হাতের দিকে তাকালাম আমার হাত আদিলের হাতের মুঠোয় তারমানে আদিল...
আমি: এই আপনি আমার হাতে চুমু খেয়েছেন?
আদিল: ঘুম থেকে উঠেছ তো তাই মাথা ঠিক নেই।
আমি: ভালো করেই বুঝতে পেরেছি আপনি...(আদিল আমার মুখ চেপে ধরলো)
আদিল: আস্তে কথা বলো বাসের সবাই তাকাচ্ছে তোমার চেঁচামেচি শুনে।
আমি: আমি রোমান্স করলেই দোষ আর নিজের বেলা কিছুনা, এজন্যই তো লুচু বলি।
আদিল: তুমি লুচু তাইতো আমার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পুরোটা রাস্তা এসেছ। (তাইতো আমিতো ওর কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম)
আমি: আমি ইচ্ছে করে ঘুমাইনি।
আদিল: আমিও চুমু দেইনি।
আমি: হুহ।
আদিল: বাসেই বসে থাকবে নাকি নামবে? এসে পড়েছি তো।
আমি: নামছি।
সন্ধ্যা নেমে এসেছে চারদিক অন্ধকার হতে শুরু করেছে, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিংবেল চেপেই যাচ্ছি কেউ দরজা খুলছে না।
আব্বু: এই ফিরোজটা যে কোথায় থাকে, এতোক্ষণ ধরে বেল বেজে যা... (আব্বু দরজা খুলে আমাকে দেখেই থেমে গেলেন, আমাকে দেখে আব্বু রাগ ভুলে গেলেন নাহলে আজ ফিরোজ চাচ্চুর খবর ছিল)
আব্বু: আনিশা...
আমি: আব্বু...
আব্বু: আমি তোর ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম, জামাইকে তো ফোন করেছিলাম রিসিভ করেনি।
আদিল: আসলে আব্বু গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই...
আব্বু: ঠিক আছে ভিতরে এসো।
আমি: আব্বু দাঁড়াও না একটু।
আব্বু: কি? (আব্বুর গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম, মনে হচ্ছে আব্বুকে কতোদিন পর দেখেছি। আব্বু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন)
আব্বু: কি হয়েছেরে আনিশা সব ঠিক আছে তো? এভাবে কাঁদছিস কেন?
আমি: অনেক দিন পর তোমাকে দেখেছি তো তাই।
ফুফু: এই কান্না বাবা'কে দেখার নয় ভিতরের কোনো কষ্টের।
আমি: না ফুফু কোনো কষ্ট নেই। (আব্বুকে ছেড়ে ফুফুকে জড়িয়ে ধরলাম। ফুফু হয়তো বুঝতে পেরেছেন আমি ভালো নেই কষ্ট থেকেই কান্না করছি)
ফুফু: যা ফ্রেশ হয়ে আয়, মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে আমি খাবার দিচ্ছি।
আমি: ঠিক আছে।
আদিলকে নিয়ে আমার রুমে আসলাম, ওকে ইশারায় ওয়াশরুম দেখিয়ে দিলাম।
আদিল: বাহ্ তোমার রুমটা তো বেশ সুন্দর।
আমি: থ্যাংকস লাগবে?
আদিল: সত্যি তুমি পারো একটু আগেই কান্না করছিলে আর এখন আবার ফাজলামো করছ।
মৃদু হাসলাম, আদিলও মুচকি হেসে ফ্রেশ হতে চলে গেল।
বিছানায় বসে ফোন টিপছি, অনেক দিন হলো তানিয়া আর ফারজানার সাথে কথা হয় না। হারামী গুলো ভাববে আদিলকে পেয়ে ওদের ভুলে গেছি।
আদিল: এসেই ফোন ঘাটাঘাটি? বিএফ বুঝি কান্নাকাটি করছে?
আমি: না দুটু হারামী বান্ধবী আছে ওরা কান্নাকাটি করছে। (ভেংচি দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম)
সবাই একসাথে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম, আদিল অনেক আগেই রুমে চলে গেছে আর আমি আব্বু আর ফুফুর সাথে ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছি।
ফুফু: আনিশা এবার রুমে যা ছেলেটা ক্লান্ত হয়ে আছে তাইতো রুমে চলে গেছে।
আমি: তো আমি গিয়ে কি ওর ক্লান্তি দূর করে দিতে পারবো?
আব্বু: আচ্ছা তোর কি হয়েছে বলতো ছেলেটার উপর ক্ষেপে আছিস কেন? আসার পর থেকে দেখছি তোর মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে আগে তো এমন হতো না সবসময় হাসি খুশি থাকতি।
আমি: মানুষের জীবন সবসময় এক রকম থাকে না।
উঠে রুমের দিকে চলে আসলাম।
আদিল তো রুমে নেই গেল কোথায়? বারান্দার দরজা খুলা দেখে বারান্দায় আসলাম, আদিল দাঁড়িয়ে আছে। আদিলের পাশে এসে দাঁড়াতেই কেমন যেন লাগলো, ও কি কাঁদছে?
আমি: আপনি কাঁদছেন?
আদিল: (নিশ্চুপ)
আমি: আপনাকে তো কখনো কাঁদতে দেখিনি এখানে এসে কাঁদছেন কেন?
আদিল: (নিশ্চুপ)
আমি: ওহ বুঝেছি মানহার কথা মনে পড়েছে, আমিতো আগেই বলেছিলাম দেখা করে...
আদিল: আনিশা... (আদিল আমাকে ঝাপটে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো, আমি কিছু বুঝতে না পেরে বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছি)
আদিল: আমাকে ক্ষমা করে দিও।
আমি: এই কি হয়েছে আপনার এভাবে কাঁদছেন কেন?
আদিল: প্লিজ একটু শান্ত হয়ে আমার বুকে এভাবে থাকো।
আর কোনো কথা বললাম না। আদিল আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে আর কেঁদে চোখের পানিতে আমার পিট ভিজিয়ে দিচ্ছে। আমিও আদিলকে জড়িয়ে ধরলাম। বুঝতে পারছি না ও আমাকে জড়িয়ে ধরে এভাবে কাঁদছে কেন তবে কি ও আমায় ভালোবাসে...
চলবে😍
