তবুও ভালোবাসি | পর্ব -০৪
নিস্তব্ধ রাত চারদিকে শুনশান শব্দ খোলা আকাশের নিচে ছাদে বসে আছি, আদিল আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। আদিল নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছে দেখে আমিও কোনো কথা বলছি না, আনমনা হয়ে ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর ভাবছি আমার সাথে কেন এরকম হচ্ছে।
আদিল: আনিশা রুমে চলো ঘুমাবে না?
আমি: হুম।
আদিল: মন খারাপ?
আমি: না ভাবছি।
আদিল: কি?
আমি: কেন আমার সাথে এরকম হচ্ছে, বিশ্বাস করুন ভেবে কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না।
আদিল: সত্যি তুমি বুঝতে পারছ না?
আমি: বুঝতে পারলে তো এতোটা কষ্ট পেতে হতো না আমাকে।
আদিল: জানো আনিশা এই দুদিন তোমার সাথে থেকে আমি বুঝতে পেরেছি তুমি কোনো অন্যায় করতে পারো না, কিন্তু তবুও এইটা মানতে পারছি না কারণ আমি নিজের চোখকে তো আর অবিশ্বাস করতে পারিনা।
আমি: আপনাদের মতে আমি অন্যায় করেছি, তাহলে আমার কোলে শুয়ে আছেন কেন? আমিতো আপনারও কোনো ক্ষতি করতে পারি।
আদিল: (নিশ্চুপ)
আমি: আপনি সকালে কক্সবাজার ফিরে যান আমি আর যাবো না আপনাদের বাসায়।
আদিল: মানে? (আদিল উঠে বসে পড়লো, আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
আমি: হুম যাবো না এতো কষ্ট এতো অবহেলা আমি আর নিতে পারছি না।
আদিল: তোমাকে রেখে গেলে আম্মু আমাকে আস্ত রাখবে না।
আমি: গেলেই তো আবার আমার উপর অত্যাচার শুরু হবে।
আদিল: (নিশ্চুপ)
আমি: রুমে চলুন।
আদিল: হুম।
রুমে এসে চুপচাপ সোফায় শুয়ে পড়লাম, আদিল বিছানায় বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। পাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। আমি আর ওই বাসায় ফিরে যাবো না, আদিল তো আমার নয় মানহার তাহলে কেন মিছিমিছি ওর প্রতি মায়া বাড়াবো। সব কষ্ট সহ্য করা যায় কিন্তু প্রিয় মানুষের পাশে অন্য কাউকে সহ্য করা যায় না, আমি পারবো না আদিলের মুখে মানহা নাম শুনতে। আদিলের ফোনের রিংটোনে আমার ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো, এতো রাতে কে ফোন দিল? আদিল ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেল।
কি কথা বলেছে বা কে ফোন দিয়েছে কিছুই শুনার বা বুঝার চেষ্টা করিনি, মানহা হয়তো ফোন দিয়েছে তাই। আদিল কথা বলা শেষ করে রুমে এসে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো, আমিও চুপচাপ ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
সকালবেলা ফিরোজ চাচ্চুর চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙ্গলো, উনি আমাদের বেশ পুরনো কাজের লোক। কিন্তু চাচ্চু এভাবে চেঁচাচ্ছে কেন? দৌড়ে নিচে আসলাম, চেঁচামেচি তো আব্বুর রুম থেকে আসছে। আব্বুর রুমে এসে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল, আব্বু ফ্লোরে উপুড় হয়ে পড়ে আছেন পাশে ফুফু আর ফিরোজ চাচ্চু।
আমি: ফুফু কি হয়েছে?
ফুফু: ফিরোজ চা দিতে এসে দেখে ভাইয়া অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে। ভাইয়ার তো জ্ঞানই ফিরছে না।
আমি: আব্বু আব্বু... (আব্বু তো সাড়া দিচ্ছেন না কি করি এখন)
আদিল: আনিশা কি হয়েছে?
আমি: দেখুন না আব্বু অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন।
আদিল: কেঁদো না চোখেমুখে পানির ছিটা দাও। (ফিরোজ চাচ্চু পানির ছিটা দিলো কিন্তু তাতেও আব্বুর জ্ঞান ফিরছে না)
আমি: চাচ্চু গাড়ি বের করো আব্বুকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।
ফিরোজ চাচ্চু: আচ্ছা।
ফুফু: কিন্তু ড্রাইভার তো ছুটিতে গেছে।
আমি: আমি আছি তো।
আব্বুকে গাড়িতে তুলে আমিই ড্রাইভ করছি, আব্বুর পাশে ফুফু আর আদিল। কিছুতেই বুঝতে পারছি না আব্বুর হঠাৎ এমন অবস্থা হলো কেন, রাতে তো আব্বু বেশ ভালোই ছিলেন।
আই.সি.ইউ এর সামনে পায়চারী করছি, ডক্টর বের হয়ে কি বলবে টেনশনে বুকের ভিতর ধুকধুক করছে। আম্মুকে তো জন্মের সময় হারিয়েছি এখন যদি আব্বুর কিছু হয়ে যায় আমার কি হবে।
আদিল: আনিশা শান্ত হয়ে বসো সব ঠিক হয়ে যাবে।
ফুফু: এখানে বস তো কিচ্ছু হবে না এতো টেনশন করিস না।
আমি: আব্বুর কিছু হলে আমি শেষ ফুফু।
ফুফু: কিছু হবে না আল্লাহর উপর ভরসা রাখ।
আদিল: এইতো ডক্টর আসছে। (আদিলের কথা শুনে দৌড়ে ডক্টর এর কাছে গেলাম)
আমি: ডক্টর আব্বুর কি অবস্থা কি হয়েছে আব্বুর?
ডক্টর: হার্ট এ্যাটাক।
আমি: কি? কিন্তু...
ডক্টর: উনি কিছু একটা নিয়ে খুব বেশি টেনশন করছিলেন যার ফলে এমন একটা এ্যাটাক হয়েছে।
আদিল: এখন কি অবস্থা?
ডক্টর: আপাতত ভালো কিন্তু ভবিষ্যৎ এ এমন এ্যাটাক আবার হলে উনাকে বাঁচানো রিস্ক হয়ে যাবে। সবসময় উনাকে টেনশন মুক্ত রাখার চেষ্টা করবেন। (ডক্টর চলে গেল, আমি পাশের চেয়ারটায় বসে পড়লাম। আব্বুর কিসের এতো টেনশন আব্বু তো সবসময় হাসিখুশি থাকেন। ব্যবসাবাণিজ্য কিছুই আব্বুকে সামলাতে হয় না সবকিছু তো ছোট চাচ্চুর ছেলে সিহাব ভাইয়া দেখাশুনা করে তাহলে আব্বুর কিসের এতো টেনশন)
ফুফু: আনিশা শান্ত হ সব ঠিক হয়ে যাবে, ডক্টর তো বললো ভাইয়া এখন সুস্থ আছে।
আমি: ফুফু আব্বুর কিসের এতো টেনশন?
ফুফু: আমিও বুঝতে পারছি না।
ভাইয়া: আনিশা কি হয়েছে রে চাচ্চুর? (সিহাব ভাইয়া দৌড়ে এসে হাঁপাতে শুরু করলো)
ভাইয়া: ফিরোজ চাচা ফোন করে বললো চাচ্চুকে নিয়ে হসপিটালে এসেছিস কি হয়েছে চাচ্চুর?
আমি: হার্ট এ্যাটাক।
ভাইয়া: কি? কিন্তু কিভাবে সম্ভব? যে মানুষ সারাদিন হাশিখুশি থাকে সবাইকে আনন্দে রাখে সে... আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না।
আমি: ডক্টর বলেছে টেনশন থেকে।
ভাইয়া: চাচ্চুর কিসের টেনশন? চাচ্চুকে ভালো রাখতে চাই বলে নিজেদের ব্যবসার পাশাপাশি তোদের ব্যবসাও নিজে সামলাচ্ছি।
আমি: বুঝতে পারছি না।
নার্স: আনিশা কে? পেসেন্ট আপনাকে ভিতরে ডাকছে।
আমি: হুম যাচ্ছি।
আব্বুর পাশে বসে নিশ্চুপে কেঁদে যাচ্ছি, আব্বু আমার মাথায় গালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
আব্বু: কাঁদছিস কেন পাগলী মেয়ে আমিতো সুস্থ হয়ে গেছি।
আমি: আব্বু তোমার কিসের এতো টেনশন? কই আমাকে তো কখনো কোনো সমস্যার কথা বলোনি সবসময় তো তুমি হাসিখুশি থাকো।
আব্বু: আনিশা তুই সত্যি ভালো আছিস তো মা? (আব্বু আমার গালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কথাটা বলেই কেঁদে দিলেন, কেমন যেন কটকা লাগছে। তবে কি আব্বু ওই বাসার কথা জানতে পেরেছেন? আমার উপর অত্যাচার করা হয় এইটা জানতে পেরে কি আব্বুর এই অবস্থা হয়েছে?)
আব্বু: কিরে কি ভাবছিস?
আমি: কিছুনা, আব্বু আমিতো ভালোই আছি। আমার শাশুড়ি মা খুব ভালো আমাকে মেয়ের মতো আদর করে আর আদিল ও তো আমাকে অনেক ভালোবাসে। তুমি শুধুশুধু টেনশন করছ।
আব্বু: আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন তুই।
ভাইয়া: আর আমি বুঝি কিছুই না? আমি এতো দিন সবকিছু দেখাশুনা করে আসছি...
আব্বু: সিহাব তুই?
ভাইয়া: অবাক হওয়ার কি আছে তুমি হসপিটালে আছ আর আমি আসবো না?আম্মু সিঙ্গাপুর আছেন তাতে কি আমিতো দেশে আছি তা...
আব্বু: তোর আম্মুর সাথে আমার প্রয়োজন আছে বল দেশে আসতে।
সিহাব: আরে চাচ্চু এখন এসব নিয়ে ভাবার কি প্রয়োজন? তুমি হসপিটালে আছ শুনলে আম্মু টেনশন করবে তাছাড়া এখন হিসাবনিকাশ নিয়ে ঘাটাঘাটি করার কি দরকার? এমনি একটা এ্যাটাক হয়েছে আর একটা হলে তো তুমি সোজা উপরে।
আমি: ভাইয়া কি বলছ এসব পাগল হয়ে গেছ নাকি?
ভাইয়া: আমি কি বললাম ডক্টরই তো বললো চাচ্চুকে টেনশন মুক্ত রাখতে।
আমি: তাই বলে...
ভাইয়া: আসছি আমি অফিসে যেতে হবে, চাচ্চুর খেয়াল রাখিস।
ফুফু: সিহাব কিসব বলে গেল?
আমি: বাদ দাও তো পাগল হয়ে গেছে ও, তুমি এখানে বসো আর আব্বু তুমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর তো।
আব্বু: ঠিক আছে।
আদিল: আব্বুকে মিথ্যে বললে কেন? (কেবিন থেকে বেরুতেই আদিল আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করলো)
আমি: কি মিথ্যে বললাম?
আদিল: আম্মু তোমাকে মেয়ের মতো আদর করে আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি এইটা মিথ্যে নয়? আম্মু তো তোমার উপর অত্যাচার করে আর আমি তো মানহাকে ভালোবাসি। দেখো আনিশা তোমার সাথে ভালোভাবে কথা বলি বলে তুমি যদি এইটাকে ভালোবাসা ভেবে নাও তাহলে তুমি ভুল করছ, আমি শুধু মানহাকে ভালোবাসি আর তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করি মানবিকতার জন্য। (ওর শেষ কথাটা শুনে মৃদু হাসলাম, মানবিকতা হাহাহা...)
আদিল: আনিশা একটা কথা বলবো?
আমি: বলুন।
আদিল: সিহাব মানে তোমার চাচাতো ভাই ও কি তোমাদের সবকিছু দেখাশুনা করে?
আমি: হ্যাঁ।
আদিল: আমি দরজায় দাঁড়িয়ে তোমাদের সব কথা শুনেছি, আমার কি মনে হয় জানো সিহাব হিসাবে কোনো গণ্ডগোল করেছে যা নিয়ে টেনশন করে আব্বুর এই অবস্থা।
আমি: কি বলছেন?
আদিল: সিহাবের কথাবার্তায় আমার এটাই মনে হয়েছে। (ভাইয়া কি এমন করেছে যার ফলে আব্বুর এতো মারাত্মক একটা এ্যাটাক হলো?)
আদিল: আমি যা বলেছি একটু ভেবে দেখো।
আমি: হুম।
চুপচাপ আব্বুর পাশে বসে আছি আর আদিলের বলা কথাগুলো ভাবছি, সত্যি কি ভাইয়া খারাপ কিছু করেছে? আমার ফোন বেজে উঠলো চাঁচি ফোন দিয়েছেন দেখে ফোনটা হাতে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসলাম।
আমি: হ্যালো।
চাঁচি: আনিশা কেমন আছিস মা?
আমি: এইতো, তুমি কেমন আছ?
চাঁচি: ভাইয়ার এমন অবস্থা শুনে কি ভালো থাকতে পারি?
আমি: কিন্তু তুমি জানলে কিভাবে?
চাঁচি: বাসায় ফোন করেছিলাম ফিরোজ বললো।
আমি: ওহ শুনেছ যখন আব্বুকে দেখতে আসো, তোমার সাথে কিছু প্রয়োজনও আছে।
চাঁচি: কি প্রয়োজন আনিশা? কিছু কি হয়েছে?
আমি: সেটা তো আমি খুঁজে বের করবোই। একটা কথা শুনে রাখো আমার সন্দেহ যদি সত্যি হয় তাহলে তোমার ছেলেকে আমি জেলে পাঠাবো।
চাঁচি: কি বলছিস এসব আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না।
আম: সব বুঝতে পারবে একবার খুঁজে বের করি ভাইয়া কি গণ্ডগোল করেছে।
চাঁচি: ঠিক আছে আমি আসবো।
আমি: হুম রাখি। (ফোন রেখে পিছন ফিরতেই দেখি ফুফু আমার দিকে তাকিয়ে আছেন)
ফুফু: কি হয়েছেরে আনিশা?
আমি: কিছু নাতো ফুফু।
ফুফু: কিছু তো হয়েছে নাহলে হঠাৎ করে ভাইয়ার এমন অবস্থা হতো না।
ফুফুর কথার কোনো জবাব না দিয়ে আব্বুর কাছে চলে আসলাম।
আব্বুর একটা হাত ধরে চেয়ারে বসে আছি আব্বু চুপচাপ শুয়ে আছেন। রাত নেমে এসেছে আদিল খাবার আনতে বাইরে গেছে, ফুফুকে বিকেলেই বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছিলাম এখনই আব্বুকে জিজ্ঞেস করার সুযোগ।
আমি: আব্বু...
আব্বু: কিছু বলবি?
আমি: আব্বু আমাকে বলো কি হয়েছে কি নিয়ে তুমি টেনশন করছ?
আব্বু: কিছু হয়নি তো।
আমি: আব্বু প্লিজ বলো আমাকে।
আব্বু: বললাম তো কিছু হয়নি, আমি আবার কি নিয়ে টেনশন করবো বল তো।
আমি: তুমি আমার থেকে কিছু একটা লুকাচ্ছ। আচ্ছা আব্বু এমন নয়তো তুমি আমাদের যা নিয়ে কাঁদতে নিষেধ করেছ সেটা নিয়ে তুমি নিজেই...
আব্বু: না না আমি এইটা নিয়ে ভাবিই না, কাঁদবো কেন আমি কাঁদলে যে...
আমার ফোন বেজে উঠলো, মা ফোন করেছেন দেখে আব্বুর থেকে দূরে সরে এসে রিসিভ করলাম।
আমি: হ্যালো মা কেমন আছেন?
মা: কেমন দিলাম?
আমি: কি?
মা: ওমা তুমি এখনো কিছু আন্দাজ করতে পারোনি? বড্ড বোকা মেয়ে তো তুমি।
আমি: মা আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না দয়া করে একটু বুঝিয়ে বলুন।
মা: কি যেন বলছিলে আদিল যেন একা কক্সবাজার ফিরে আসে তুমি আর আসবে না।
আমি: হ্যাঁ কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে?
মা: আমার ছেলে আমাকে বলবে না সেটা ভাবলে কিভাবে? (এই আদিলটা যে কি, এই কথাটা মা'কে বলতে হলো)
মা: তোমার উপর তো আরো অনেক প্রতিশোধ নেওয়া বাকি সবে তো মাত্র শুরু বৌমা, তুমি ফিরে না আসলে কি হবে?
আমি: যাবো না আমি, আপনারা সত্যি খুব খারাপ মানুষ।
মা: আমরা খারাপ হলে তুমি কি? মানুষের মন ভাঙ্গা খারাপ কাজ নয়?
আমি: কার মন ভেঙেছি আমি?
মা: এখন তো মনে থাকবেই না। ভালো চাইলে চলে এসো নাহলে তোমার বাবার আবারো হার্ট এ্যাটাক হবে।
আমি: মানে?
মা: গতকাল রাতে তোমার আব্বুকে একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন করে বলেছিলাম তুমি সুখে নেই তোমার উপর অনেক অত্যাচার করা হয়, তারপরই তো উনার এই অবস্থা হলো। (মায়ের কথা শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো, মানুষ এতোটাও খারাপ হয় ছিঃ)
মা: এখন তুমি ফিরে আসবে কিনা সেটা একান্তই তোমার নিজের ব্যাপার, আসলে ভালো আর না আসলে আবারো অচেনা নাম্বার থেকে কল যাবে।
আমি: খবরদার আব্বুকে আর এসব বলবেন না।
মা: তাহলে ফিরে এসো।
আমি: হুম আসবো আব্বু একটু সুস্থ হলেই আমি ফিরে আসবো।
মা: লক্ষী বৌমা।
মা ফোন রেখে দিলেন। মানুষ এতোটাও খারাপ হয় আমিতো ভাবতেই পারছি না। পিছন ফিরতেই দেখি আদিল দাঁড়িয়ে আছে, কোনো কথা না বলে আব্বুর কাছে চলে আসলাম।
আব্বু ঘুমিয়ে পড়েছেন দেখে চুপচাপ বসে পড়লাম। খুব কষ্ট হচ্ছে কেন হচ্ছে আমার সাথে এরকম? আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য মা আমার আব্বুকে পর্যন্ত ব্যবহার করছেন ছিঃ!
আদিল: আনিশা খেয়ে নাও সারাদিন তো কিছুই খাওনি।
আমি: (নিশ্চুপ)
আদিল: কি হলো কথা বলছ না যে?
আমি: (নিশ্চুপ)
আদিল: আনিশা...
আমি: চলুন আমার সাথে।
আদিল: কোথায়? (আদিলের হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে আসলাম)
একটা ফাকা জায়গায় এসে আদিলকে আমার মুখোমুখি দাঁড় করালাম। আজ ওকে বলতেই হবে কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছে ওরা।
আদিল: এতো রেগে আছ কেন কি হয়েছে?
আমি: কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছেন হ্যাঁ? কি এমন অন্যায় করেছি আমি যে আমার আব্বুকেও ব্যবহার করছেন?
আদিল: তোমার আব্বুকে ব্যবহার করছি মানে?
আমি: এখন তো মনে হচ্ছে ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানেন না, আমি ফিরে যাবো না কথাটা মা'কে বলতে হলো? এতোটাই মায়ের বাধ্য ছেলে আপনি?
আদিল: তোমাকে না নিয়ে গেলে আম্মু আমাকে বকতো তাই বলেছিলাম কিন্তু কি হয়েছে সেটা বলবে তো।
আমি: আপনার বদমাইশ আম্মু...
আদিল: আনিশা...
আমি: চুপ চিৎকার করবেন না একদম। আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি বলেই সব অত্যাচার সহ্য করেছি কিন্তু আপনারা আমার আব্বুকেও ছাড় দিলেন না? সিহাব ভাইয়ার জন্য নয় আপনার আম্মু আব্বুকে ফোন করে বলেছেন আমি ভালো নেই আমার উপর অত্যাচার করা হয় আর সেটা শুনেই আব্বুর এই অবস্থা হয়েছে।
আদিল: কি বলছ এসব?
আমি: ছিঃ কেমন ছেলে আপনি মা অন্যায় করে যাচ্ছে আর আপনি সেটাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন?
আদিল: কোনটা অন্যায় আম্মু এখন তোমার সাথে যা করছে সেগুলো নাকি ছয়মাস আগে তুমি যা করেছ সেটা? আসল অন্যায় তো তুমি করেছ আর আম্মু সেটার শাস্তি দিচ্ছেন তোমাকে এর বেশি কিছুই না। আর কি যেন বললে আমাকে ভালোবেসে ফেলেছ? তুমি আবার কি ভালোবাসবে আমাকে তুমি তো ভালোবাসা কি সেটাই বুঝনা, ভালোবাসা খেলা মনে হয় তোমার কাছে। আর আমি চাইও না তোমার ভালোবাসা, শুধু আম্মুর অনুমতির অপেক্ষা করছি তারপর তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে মানহাকে বিয়ে করবো আমি, কথাটা মনে রেখো।
আদিল চলে যাচ্ছে আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি আর আমার চোখ থেকে বৃষ্টির মতো পানি ঝরছে। ভালোবাসাকে সবসময় আলাদা একটা পেইন মনে হতো তাই কখনো কাউকে ভালোবাসিনি কিন্তু আদিলকে যে কিভাবে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি। এখন মনে হচ্ছে ভালোবাসা সত্যিই অপরাধ, আর কাউকে মন থেকে ভালোবাসা আরো বড় অপরাধ...
চলবে😍
