তবুও ভালোবাসি | পর্ব -০৬
হঠাৎ করে এমন জ্বর আসলো কেন বুঝতে পারছি না, দাঁড়িয়ে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু আদিলের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই ও তো রাগে লুচির মতো ফুলতেছে শুধু। কোনোভাবে দেয়ালে ধরে দাঁড়ালাম তখনই কে যেন এসে দরজা খুললো, আদিল ভিতরে যাবে তখনই ওর হাত ধরলাম। আদিল পিছন ফিরে তাকালো, চারপাশ অন্ধকার লাগছে আদিলের হাতটা আস্তে আস্তে ছেড়ে দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম।
মা: এসেই মেয়ে ঢং শুরু করেছে যেন কোনো কাজ করতে নাহয়। (চোখ খুলে মায়ের দিকে প্রথমে নজর পড়লো, আমি সোফায় শুয়ে আছি পাশে আদিল বসে আমার হাত ধরে রেখেছে আর বাকি সবাই দাঁড়িয়ে আছে। অসুস্থতার সময় এমন কথা শুনতে যে কারো খারাপ লাগবে, মায়ের কথা শুনে দুচোখ বেয়ে পানি পড়তে শুরু করলো)
"আম্মু ও অসুস্থ আর কারো অসুস্থতা নিয়ে এসব বলা ঠিক না"
কথাটা শুনে পাশ ফিরে তাকালাম, একটি ছেলে মা'কে বুঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ছেলেটি কে?
দাদু: বৌমা অসুস্থতার সময় অন্তত মেয়েটাকে বকো না।
মা: বাবার বাসায় গিয়ে জ্বর বাঁধিয়ে এসেছে বকবো না কেন?
আদিল: আম্মু ওর কি দোষ? হসপিটালে থেকেছে ঠিকমতো ঘুম হয়নি তাছাড়া আজ ঠান্ডা বাতাস ছিল, বাসের মধ্যে বাতাস...
মা: হয়েছে আমাকে আর বুঝাতে হবে না, নীরব তুই চল আমার সাথে আর আদিল ওকে নিয়ে রুমে যা। (সবাই একে একে চলে গেল, আদিল আমার গালে হাত রেখে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে)
আদিল: অস্বস্তি লাগছিল আমাকে বলবে না? আজ যদি কিছু হয়ে যেতো।
আমি: কি করে বলবো আপনি তো রাগে ফুলছিলেন, তা আপনার মানহা কোথায়?
আদিল: মানহা?
আমি: হ্যাঁ আপনি তো ওকে দেখার জন্যই এতো উতলা হয়ে ছিলেন, কেন মানহা আসেনি? (আদিল মুচকি হেসে আমাকে কোলে তুলে নিলো তারপর রুমের দিকে পা বাড়ালো)
আমি: বলুন না মানহা আসেনি?
আদিল: মানহা আমার বাসায় আসবে কিভাবে? এসেছে তো নীরব, ও আমার বন্ধু আর ওকেই আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। (উফফ যাক বাবা বাঁচলাম আমিতো ভেবেছিলাম আদিলের সাথে মানহাকে দেখতে হবে বুঝি। আদিলের দিকে তাকালাম চুপচাপ আমাকে কোলে করে নিয়ে রুমের দিকে যাচ্ছে, দুহাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরে ওর গালে চুমু দিয়ে দিলাম। আদিল থেমে গিয়ে আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে, লজ্জা পেয়ে ওর বুকে মুখ গুঁজে দিলাম)
আদিল: এইটা কিসের জন্য?
আমি: আপনার সাথে মানহাকে দেখতে হয়নি তাই।
আদিল: পাগলী।
আদিল আমাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে আমার পাশে বসলো, আমার কপালে হাত দিয়ে জ্বর কতটুকু দেখছে।
আদিল: এখনো অনেক জ্বর ডক্টর আনতে হবে।
আমি: উঁহু লাগবে না আমি এমনিতেই সুস্থ হয়ে যাবো।
আদিল: ওষুধ না খেলে কেউ সুস্থ হয় নাকি?
আমি: মা যে বললেন আমি ঢং করছি, ডক্টর আসলে যদি আবার কিছু বলেন। লাগবে না ওষুধ এমনিতেই সেড়ে যাবে।
আদিল: (নিশ্চুপ)
আমি: আপনি তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন।
আদিল: কিসের জন্য?
আমি: এইযে বলছিলেন যে এসেছে তাকে আপনি খুব ভালোবাসেন সে আপনার পুরোটা জুড়ে আছে সে...
আদিল: হ্যাঁ নীরবকে আমি খুব ভালোবাসি ও শুধু আমার বন্ধু নয় ভাইয়ের মতো। নীরবের তো কেউ নেই ছোটবেলায় এতিমখানায় থাকতো, একদিন রাস্তায় পরিচয় তারপর ওকে বাসায় নিয়ে আসি। সেই ছোটবেলা থেকে নীরব আমাদের সাথে আছে, আম্মুকে ও আম্মু বলেই ডাকে আর আম্মুও নীরবকে ততোটাই ভালোবাসেন যতোটা আমাকে বাসেন। এখন নীরব বাহিরে পড়াশুনা করছে, গতকাল সকালের ফ্লাইটেই দেশে এসেছে।
আমি: মা সবাইকে ভালোবাসেন শুধু আমাকেই আপন করে নিতে পারছেন নাহ। (একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাশ ফিরে শুয়ে রইলাম, ভেবেছিলাম শাশুড়ির থেকে মায়ের ভালোবাসা পাবো কিন্তু তা আর ভাগ্যে জুটলো না)
আদিল: একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো।
আমি: হুম ততোদিনে আপনি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে মানহাকে বিয়ে করে ফেলবেন।
আদিল: (নিশ্চুপ)
আদিল: তুই আমাকে কেন বকছিস এতে আমার কি করার আছে?
নীরব: তুই তো আম্মুকে বুঝাতে পারিস।
আদিল: তুই ভালো করে জানিস আম্মু কারো কথা শুনেনা তাছাড়া আমি আম্মুর সিদ্ধান্তের উপর কথা বলতে পারবো না।
নীরব: হ্যাঁ আপনি তো মায়ের বাধ্য ছেলে এতোটাই বাধ্য যে একটা মেয়ের উপর অত্যাচার করতেও আপনার বিবেকে বাধছে না।
আদিল: আমি কখন অত্যাচার করলাম? আমি কোনো অত্যাচার করিনি বরং ও যেন কষ্ট ভুলে থাকতে পারে সেজন্য ওর সাথে ভালো ব্যবহার করি।
নীরব: আমিতো বলবো আনিশার সাথে সবচেয়ে বড় অন্যায়টা তুই করেছিস।
আদিল: মানে?
নীরব: ভালোবাসিস একজনকে আর বিয়ে করেছিস অন্য একটা মেয়েকে তাও আবার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। ভাই বিয়েটা কি পুতুল খেলা?
আদিল: (নিশ্চুপ)
দুজনেই নিশ্চুপ হয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে, ওদের তর্কাতর্কিতে আমার ঘুম ভেঙে গিয়েছে। এতোক্ষণ চুপচাপ শুয়ে ওদের দুজনের কথা শুনছিলাম। নীরব তো বললো আদিল একজনকে ভালোবাসে আর বিয়ে করেছে অন্য একজন কে, তারমানে আদিল সত্যিই মানহাকে ভালোবাসে।
চোখ দুটু বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছি, আদিল আর নীরব এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।
নীরব: আদিল বুঝার চেষ্টা কর এভাবে জীবন চলে না। একটা মানুষ অন্যায় করতেই পারে তাই বলে কি এভাবে প্রতিশোধ নিতে হবে অন্য ভাবেও তো শাস্তি দেওয়া যায়। তুই তো বললি আনিশার বাবার হার্ট এ্যাটাক হয়েছে, দেখ বাবার আদরের একমাত্র মেয়ে আনিশা ওর উপর এভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে শুনলে তো উনার অবস্থা এমন হবেই। তাছাড়া আনিশাও তো কষ্ট পাচ্ছে, বাবার আদরের মেয়ে কষ্ট কি কখনো বুঝেনি...
আদিল: নিজে কষ্ট কি বুঝেনি বলেই তো অন্যকে কষ্ট দিতে দ্বিধা করে না। (আদিল রুমে চলে আসলো, আমি ওর দিকে তাকাতেই চোখ ফিরিয়ে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল)
নীরব: আচ্ছা আদিল তুই কি ওই মেয়েটাকে দেখেছিস কখনো? দেখিসনি তো তাহলে বুঝলি কিভাবে যে এই আনিশাই সেই মেয়ে? আদিল শুধু মাত্র সন্দেহের বশে একটা মানুষকে তুই এভাবে কষ্ট দিতে পারিস না। (আরে নীরব তো একাই বকবক করে যাচ্ছে ও হয়তো দেখতে পায়নি আদিল যে চলে গেছে)
বিছানা থেকে উঠে আস্তে আস্তে বারান্দায় আসলাম, নীরবের পাশে এসে দাঁড়াতেই ও আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো?
নীরব: এখন কেমন আছেন?
আমি: এইতো একটু ভালো লাগছে। আদিল তো সেই কখন চলে গেছে আপনি একা একা বকবক করে যাচ্ছেন।
নীরব: এই আদিলটা এমনই যখন আমার সাথে যুক্তিতে পেরে উঠে না তখন এভাবেই চলে যায়।
আমি: আচ্ছা তখন আপনি কি যেন বলছিলেন শুধুমাত্র সন্দেহের বশে ওরা আমাকে...
নীরব: আপনি দেখতে খুব সুন্দর। (হুট করে উনার মুখে এমন কথা শুনে আমি থ হয়ে গেলাম, আমি জিজ্ঞেস করলাম কি আর উনি বলছেন কি)
নীরব: বিশ্বাস হচ্ছে নাতো আমার কথা? সিরিয়াসলি বলছি আপনি দেখতে খুব সুন্দর, একদম সেই মায়াবতীর জন্য যে মায়াবতীর ছবি হাজার হাজার পুরুষ তাদের মনে এঁকে রাখে। প্রথম দেখায় যে আপনার প্রেমে পড়বে না সে শালা পুরুষই না। (এই বেডা পাগলটাগল হয়ে গেল নাকি)
নীরব: আমাকে পাগল মনে হচ্ছে তো? বলতে পারেন এইটা এক ধরণের পাগলামিই, পাগলামি নাহলে কি আর বন্ধুর বউয়ের দিকে নজর দেই।
আমি: মানে?
নীরব: আপনি যখন সেন্সলেস হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন তখন আদিল আপনাকে কোলে করে বাসার ভিতর নিয়ে এসেছিল, তখন আমি দেখেছি আপনার লম্বা সিল্কি চুল গুলো এলোমেলো হয়ে নিচের দিকে ঝুলে ছিল জাস্ট প্রেমে পড়ে গেছি এই চুলের।
আমি: কিসব আবোলতাবোল বকছেন আপনি? যান তো এখান থে...
নীরব: তারপর আমি আপনাকে সেন্সলেশ অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখেছি, চোখ দুটু বন্ধ করা অবস্থায় আপনার মুখটা কতোটা মায়াবী লাগছিল আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। দুধেআলতা গায়ের রঙ তারউপর ঠোঁটের নিচে কালো তিলটায় জাস্ট পাগল করা সুন্দর লাগছিল আপনাকে। তারপর চোখেমুখে পানির ছিটা দিতেই যখন আপনি চোখ খুলে তাকালেন তখন তো আমি রীতিমতো আপনার ওই গভীর দুটু চোখের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম।
আমি: আপনি পাগল হয়ে গেছেন বের হন এখান থেকে।
নীরব: কেমন দিলাম ভাবি?
আদিল: সুযোগ পেয়েছিস আর এমনি শুরু করে দিয়েছিস তো? এইযে মহারাণী ওর এসব রসালো কথায় ফেঁসে যেওনা, এই শালা সুযোগ পেলে সব মেয়েকেই এমন রসালো কথা বলে।
আমি: আনিশা তো একজনের প্রেমে অনেক আগেই ফেঁসে গেছে, নতুন করে কেউ ফাঁসাতে পারবে না।
আদিলের কানে ফিসফিস করে কথাটা বলেই রুমের দিকে পা বাড়ালাম, আবারো পিছন ফিরে তাকালাম, আদিল রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর নীরব আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। আচ্ছা নীরবের এতোসব কথা কি জাস্ট মজা করার জন্য ছিল?
তানিয়া: আমাদের সাথে দেখা না করে চলে গেলি কেন?
আমি: আব্বুকে নিয়ে হসপিটালে ছিলাম তাই আর তোদের আসতে বলার সুযোগ পাইনি।
তানিয়া: বাসায় পৌঁছে তো বলতে পারতি? তাছাড়া হসপিটালে থাকতে আমাদের বলিসনি কেন আমরা যেতাম আঙ্কেলকে দেখার জন্য।
আমি: আব্বুর এমন অবস্থা দেখে এসব কিছু মাথাতেই আসেনি, আর আব্বুকে যেদিন রিলিজ করে দিয়েছে সেদিন বিকেলেই আমি কক্সবাজার ফিরে এসেছি।
তানিয়া: দেখাই হলো না আর সেই বিয়ের দিন দেখা হয়েছিল।
আমি: মন খারাপ করিস না আমি খুব শীঘ্রই আবার ঢাকা যাবো।
তানিয়া: তা তোর হিরো কই আমাদের সাথে কি কথা বলাবি না? (জানালার কাছে দাঁড়িয়ে তানিয়ার সাথে ফোনে কথা বলছিলাম, ওর কথায় পিছন ফিরে আদিলের দিকে তাকালাম। আদিল তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছে অফিসে যাবে তাই)
তানিয়া: এই আনিশা?
আমি: হুম, আদিল তো এখন অফিসে যাবে রাতে কথা বলিস।
তানিয়া: ঠিক আছে।
ফোন রেখে আদিলের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম, আদিলকে কি বলবো আগামীকাল আমার বার্থডে? নাহ থাকুক যে আমাকে ভালোবাসে না তাকে বলার কি প্রয়োজন। ওকে বরং তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বলি, ওর কাছে আজ মুক্তি চাইবো আমি। এসব যন্ত্রণা আর সহ্য হচ্ছে না তারচেয়ে ডিভোর্স হয়ে যাওয়া অনেক ভালো।
আদিল: কিছু বলবে? (আদিলের কথায় ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো, ও টাই বাঁধতে বাঁধতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে)
আদিল: টাই বেঁধে দাও। (অসহায়ের মতো তাকালাম ওর দিকে কেন এভাবে মায়া বাড়াচ্ছে)
আদিল: মুখ গোমড়া করে আছ কেন? (আদিল আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে আমাকে ওর কাছে টেনে নিলো। আমি চুপচাপ ওর টাই বেঁধে দিচ্ছি)
আমি: বাসায় ফিরবেন কখন?
আদিল: প্রায় এগারোটা হবে।
আমি: একটু তাড়াতাড়ি ফিরতে পারবেন না?
আদিল: কেন আমার জন্য কি নিজের হাতে রান্না করে খাবার নিয়ে বসে বসে অপেক্ষা করবে?
আমি: (নিশ্চুপ)
আদিল: ঠিক আছে আসবো, আসি এখন?
আমি: হুম।
আদিল আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বেরিয়ে গেল, আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। আজ ওর কাছে আমি ডিভোর্স চাইবো, কখনো কাছে টেনে নেওয়া আবার কখনো ছুড়ে ফেলে দেওয়া এসব সত্যি আর নিতে পারছি না আমি।
দাদু: বাব্বাহ্ একজন অফিসে যাচ্ছে আর অন্যজন মুখ গোমড়া করে তার চলে যাওয়া দেখছে, আচ্ছা ও কি তোর কপালে চুমু টুমু দিয়ে গেছে? (দাদু রুমে এসেই বিছানায় বসতে বসতে কথা গুলো বললেন)
আমি: দাদু আপনি না...
দাদু: লজ্জা পাচ্ছিস কেন? আমি অফিসে যাওয়ার সময় তোর দাদির কপালে চুমু দিয়ে যেতাম। (আমার কপালে এসব যে জুটবে না দাদু আদিল যে অন্য কারো)
দাদু: কিরে কি ভাবছিস?
আমি: ভাবছি আজ আদিলের কাছে মুক্তি চাইবো।
দাদু: মানে?
আমি: হ্যাঁ দাদু আজ আমি ডিভোর্স চাইবো। আগামীকাল আমার বার্থডে আর গিফট হিসেবে আদিলের কাছে এটাই চাইবো। আদিল তো মায়ের আদেশ ছাড়া ডিভোর্স দিবে না তাই গিফট হিসেবে চাইবো।
দাদু: পাগল হয়ে গেছিস নাকি কিসব আবোলতাবোল বকছিস?
আমি: দাদু আমি আর পারছি না এসব সহ্য করতে। (দাদুর পায়ের কাছে বসে কেঁদে দিলাম, সত্যি আমি আর পারছি না)
দাদু: আমিতো তোর উপর ভরসা করে ছিলাম আর তুই কিনা এভাবে ভেঙে পড়লি? ওদের প্রেমের কাছে স্ত্রীর সত্যিকারের ভালোবাসাকে হারিয়ে দিলি?
আমি: দাদু সত্যি বলছি আমার পক্ষে আর এসব সহ্য করা সম্ভব না।
দাদু: আচ্ছা তোর জন্মদিনে ডিভোর্স না চেয়ে আদিলের কাছে ভালোবাসাও তো চাইতে পারিস, হয়তো আদিল দিয়ে দিবে।
আমি: দিবে না কারণ ও অন্য কাউকে ভালোবাসে।
দাদু: তুই একবার চেয়ে দেখবি তো, হতে পারে তোর ভালোবাসার কাছে ওই মেয়ের ভালোবাসা হেরে যাবে। তাছাড়া তুই আদিলের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কি করেছিস বলতো, কিছুই তো করিসনি তাহলে আদিল ওই মেয়েকে ভুলে তোকে ভালোবাসতে যাবে কেন? (সত্যিই তো আমি ওর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কিছুই করিনি)
দাদু: এতোকিছু না ভেবে আজ একবার ভালোবাসা চেয়েই দেখ, আমার দাদুভাই এতোটাও খারাপ না।
আমি: হুম।
ঘড়ির কাটায় এগারোটা বাজতে চলেছে কিন্তু আদিল আসার নাম নেই। নীরবের থেকে আদিলের সব পছন্দের খাবারের নাম জেনে সবকিছু নিজের হাতে রান্না করেছি কিন্তু আদিল তো আসছেই না।
নীরব: আচ্ছা দাদু তুমিই বলো সামনে এতো ভালো ভালো খাবার রেখে কতোক্ষণ বসে থাকা যায়? তুমি আদিলের জন্য অপেক্ষা করো আমি খেয়ে নিচ্ছি।
দাদু: দাঁড়া না আদিল আসুক, মেয়েটা অসুস্থ শরীর নিয়ে এতো কষ্ট করে সবকিছু আদিলের জন্য রান্না করেছে।
আমি: দাদু আপনারা খেয়ে নিন অনেক তো রাত হলো, আদিল আসলে আমি খাবো।
নীরব: পারমিশন পেয়ে গেছ এবার খাওয়া শুরু করো।
দাদু: কি আর করার খেয়েই নেই।
নীরব: রমণী যেমন সুন্দর রমণীর হাতের রান্নাও তেমন ফাটাফাটি।
দরজার দিকে তাকিয়ে আছি আর অপেক্ষা করছি কখন বেল বেজে উঠবে। আজ আমি আদিলকে আমার মনের কথা বলবো, বলবো ওকে আমি ভালোবাসি।
ঘড়ির কাটা বারোটা ছুঁতে চললো আদিলের এখনো আসার নাম নেই। বাসার সবাই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে আর আমি ড্রয়িংরুমে বসে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি আদিল কখন আসবে। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো, দৌড়ে এসে দরজা খুললাম।
আদিল: কি ব্যাপার এখনো ঘুমাওনি? জ্বর বেড়েছে নাকি?
আমি: উঁহু এমনি ঘুমাইনি।
আদিল দরজা লাগিয়ে রুমের দিকে চললো, আমিও ওর পিছু পিছু রুমে আসলাম।
আদিল জুতা খুলে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
আদিল: কিছু বলবে? (আমি আস্তে আস্তে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম, আদিল বোতাম খুলা রেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আদিলের দু পায়ের উপর আমার দু পা রেখে ওর গলা জড়িয়ে ধরলাম, ওর ঠোঁটের কাছে আমার ঠোঁট এগিয়ে নিতেই ও মাথা পিছিয়ে নিলো)
আদিল: তাড়াতাড়ি আসিনি বলে শাস্তি দিচ্ছ নাকি? আসলে অফিসের ঝামেলার পর মানহার রাগ ভাঙাতে হলো, ওকে না বলে ঢাকা চলে গিয়েছিলাম তো তাই... মনটাই খারাপ করে দিলো, আদিলের গলা থেকে দুহাত ছাড়িয়ে আনতে যাবো তখনই ওর শার্টে নজর পড়লো, সাদা শার্টে গোলাপি লিপস্টিক এর দাগ খুব সুন্দর ভাবে ফুঁটে উঠেছে। শার্টের দিকে আমার তাকিয়ে থাকা দেখে আদিলও তাকালো, লিপস্টিক এর দাগ দেখে মুছতে চাইলো।
আদিল: এই মানহাটা যে কি করে। (আস্তে আস্তে আদিলের থেকে দূরে সরে আসলাম, বার্থডে তে এতোবড় গিফট আমার জন্য অপেক্ষা করছিল?)
দৌড়ে এসে ওয়াশরুমে ঢুকলাম, শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে ভিজছি যেন আমার কান্না কেউ না শুনতে পায় আমার কান্না যেন কেউ না দেখতে পায়। ডিভোর্স চাওয়াটাই ঠিক হতো, কেন যে দাদুর কথা শুনে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে গেলাম।
আদিল: আনিশা কি করছ দরজা খুলো বলছি।
আমি: (নিশ্চুপ)
আদিল: আনিশা এই মাঝরাতে ভিজো না প্লিজ আবার জ্বর বেড়ে যাবে।
আমি: (নিশ্চুপ)
আদিল: বিশ্বাস করো আমি তোমাকে এভাবে কষ্ট দিতে চাইনি কিন্তু কিভাবে যে এই দাগ... আনিশা দরজা খুলো প্লিজ!
খুলবো না দরজা আমি নিজেকে শাস্তি দিচ্ছি, এতো কষ্ট পেয়েও কেন এই মন তোমাকে ভালোবাসে সেই শাস্তি। তুমি মানহাকে ভালোবাস জেনেও কেন তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি সেই শাস্তি। এতো অত্যাচার সহ্য করে তবুও কেন তোমাকেই শুধু ভালোবাসি সেই শাস্তি...
চলবে😍
