Breaking News

সিনিয়র বউ | পর্ব -১১



তামিম রিক্সা থেকে নেমে রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকলো।।
বাসার দরজার কাছে গিয়ে তামিম বেল চাপ দিল।।
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে তানিয়া দৌড়ে এসে দরজা খুললো।।
দরজা খুলে তামিমকে দেখতে পেয়ে সাথে সাথে সে তামিমকে জড়িয়ে ধরলো আর কেদে দিল।।
হুট করে দরজা খুলে তানিয়া তামিমকে জড়িয়ে ধরাতে তামিম ভেবাচেকা খেয়ে গেল।।
কিন্তু মূহুর্তের মধ্যেই তামিম নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে সেও তানিয়াকে আস্তে করে জড়িয়ে ধরলো।।
তামিমঃ এই আপনি কাদছেন কেন.?
তানিয়াঃ নিশ্চুপ শুধু কেদেই যাচ্ছে।।
তামিমঃ আরে বলবেন তো কাদছেন কেন.?
তানিয়াঃ নিশ্চুপ শুধু কেদেই যাচ্ছে।।
তামিমঃ কথা না বললে কিন্তু আমি আবার চলে যাব তারপর আর কখনো বাসাতে আসবো না।।
তানিয়াঃ বাসা ছেড়ে যাওয়ার কথা বললে একদম মেরে ফেলবো বলে দিলাম।।
কোথায় যাবে তুমি.?

আর কোথাও যেতে দিব না তোমায় (বলেই তার নিজের শরীরের সব শক্তি দিয়ে আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো)।।
তামিমঃ আরে আরে করছেন টা কি ছাড়েন আমায়।।
আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তো।।
তানিয়াঃ হোক তাতে আমার কি, আমাকে ছেড়ে যাওয়াতে আমারও তোমাকে ছাড়া থাকতে এইভাবে দম হয়ে আসছিল।।
এবার বুঝ কেমন লাগে।।
তামিমঃ আমি কি ইচ্ছা করে এই বাসা থেকে গিয়েছিলাম নাকি.? আপনি আর আম্মু মিলেই তো আমায়
তানিয়াঃ ওইদিন থেকেই আমরা তোমাকে কতো জায়গায় খুজেছি জান.?
তামিমঃ কেন খুজেছিলেন.?
মামনি কার সাথে এতো কথা বলছ কে এসেছে.? (ভিতর থেকে আম্মু বললেন কথাটা)
তানিয়াঃ এই যে এবার ভিতরে চলেন আম্মু ডাকছে (বলেই আমাকে ছেড়ে দিল)।।
তামিমঃ আম্মু আমায় আর বকবে না তো.?
তানিয়াঃ না কেন বকবে, তা ছাড়া তুমি তো এই এক মিনিট।। তোমার গায়ে পাঞ্জাবী আর মাথায় টুপি এইসব আসলো কোথা থেকে.!
তামিমঃ ভিতরে চলেন সব বলবো।।

তানিয়াঃ আচ্ছা চল।।
তারপর তানিয়ার সাথে আমি ভিতরে চলে এলাম।।
ভিতরে এসে তানিয়া আম্মু আর আব্বুকে ডাকতে লাগলো।।
কিছুক্ষণ পর আব্বু রুম থেকে বেরিয়ে আসলেন আর আম্মু রান্নাঘর থেকে।।
আম্মু-আব্বু দুজনেই আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেন।।
আম্মু তো কোনোকিছু না বলেই হুট করে আমায় এসে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললেন।।
আম্মুঃ বাবা কোথায় ছিলি তুই এতোদিন.?
আমাদের ছেড়ে থাকতে তোর একটুও কষ্ট হলো না, এতো সার্থপর কীভাবে হলি তুই.? আমাদের কথা কি তোর একবারও মনে পরলো না.?

তামিমঃ ছিলাম আম্মু এক জায়গাতে।। আর কষ্ট তো হয়েছেই, কিন্তু কি করবো বল তুমিই তো আমায় বলে দিয়েছ আমি যতদিন না পর্যন্ত ভালো হতে পারি ততদিন পর্যন্ত এ বাসায় যেন আর পা না রাখি।।
আম্মুঃ তাই বলে তুই সত্যি সত্যি আমার ছেড়ে চলে গেলি।।
আমি নাহয় তখন রাগের মাথায় ওইসব কথা বলেছিলাম কিন্তু পরে তো তোর নাম্বারে অনেকবার ফোন করেছিলাম কিন্তু বার বার তোর ফোন বন্ধ দেখাচ্ছিল।।
আমরা ভাবলাম তুই হয়তো তোর কোনো বন্ধুর বাসায় চলে গেছিস, সকাল হলে এমনিতেই চলে আসবি।।

কিন্তু না সেই যে গেলি তুই আর ফিরেও এলি না।।
তামিমঃ আমার ফোনে চার্জ ছিল না আম্মু তাই ফোন বন্ধ ছিল।। আর পরেরদিন আমি ফোনটা বিক্রি করে ফেলেছিলাম।।
আম্মুঃ ফোন বিক্রি করেছিস কেন.? আর তুই গায়ে পাঞ্জাবী আর মাথায় টুপি এইসব কীভাবে এলো.?
তামিমঃ ওই যে বললাম ফোন বিক্রি করেছি।।
আর ফোন বিক্রি করেই নিজের জন্য এইসব কিনেছি।।
আম্মুঃ তা বুঝলাম কিন্তু তুই তো কখনো পাঞ্জাবী পরিস না আর পাঞ্জাবী পরতে তোর ভালোও লাগে না।। তাহলে তুই হঠাৎ পাঞ্জাবী কিনলি কেন.? আর তুই এই ৩ দিন কোথায় ছিলি.?
তামিমঃ আচ্ছা তাহলে শুন (তারপর সবাইকে সব বললাম, মানে এতোদিন কোথায় ছিলাম আর কাদের সাথে ছিলাম)।।

আম্মুঃ আমার কথাগুলো শুনে আবার কেদে ফেললেন, তবে এটা দুঃখের কান্না নয় সুখের কান্না।। তারপর আম্মু আমার কপালে একটা চুমু খেয়ে বললেন, আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন।। নামায পড়ে মোনাজাতে বসে সবসময় আল্লাহর কাছে একটা দোয়াই করতাম আল্লাহ যেন তোকে নিজের দীনের পথে কবুল করে নেন।।
আর আজ সত্যি আল্লাহর কাছে আমার দোয়াটা কবুল হয়েছে।।
তামিমঃ আম্মু এখন কি আমায় এইখানেই দাড় করিয়ে রাখবে নাকি কিছু খেতেও দিবে।। এমনিতেই সকালে বেশি কিছু খাওয়া হয়নি বাসায় এসে খাব বলে।।
আম্মুঃ হে তুই রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় আমি তোর জন্য টেবিলে নাস্তা দিচ্ছি।।
তামিমঃ আচ্ছা বলে সোজা নিজের রুমে চলে এলাম।।

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে আবার নিচে চলে এলাম।। নিচে এসে সোজা ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসে পরলাম।। কিছুক্ষণ পর আম্মু একটা বড় প্লেটে করে আমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসলেন।।
তামিমঃ আম্মু এতো নাস্তা কেন এতো নাস্তা আমি খেতে পারবো না তো।।
আম্মুঃ তুই একা খাবি নাকি আমার মামনিও খাবে।। সকাল থেকে বেচারি কিছুই খায়নি, এমনকি তুই চলে যাওয়ার পর থেকে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়াও করেনি।।
তামিমঃ আম্মুর কথা শুনে তানিয়ার দিকে তাকালাম (তানিয়া তখন আমাদের পাশেই ছিল)।।
তানিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখ মুখ অনেকটা শুকিয়ে গেছে আর চোখের নিচে হালকা কালো দাগ পরে গেছে।।

দেখেই বুঝা যাচ্ছে এ কয়দিন ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করেনি আর আমার জন্য সারাক্ষণ কান্না করেছে।।
আম্মুঃ ওর দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেন খাইয়ে দে ওকে।।
তামিমঃ হে দিচ্ছি, আসেন আমার পাশে এসে বসেন (তানিয়াকে উদ্দেশ্য করে)।।
তানিয়া কিছু না বলে একটা চেয়ার টেনে আমার পাশে বসে পরলো।। আমিও আর কিছু না বলে প্লেট থেকে হালকা নাস্তা নিয়ে তানিয়ার মুখের সামনে ধরলাম।।
তানিয়া অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে নাস্তাটা মুখে নিয়ে নিল।।
হয়তো সে ভাবছে আম্মুর একবার বলাতেই আমি কীভাবে ওকে খাইয়ে দিতে রাজি হয়ে গেলাম।।
তানিয়ার সাথে আমিও এক প্লেটে নাস্তা খেতে লাগলাম।।
একবার তানিয়াকে খাইয়ে দিচ্ছি আরেকবার আমি নিজে খাচ্ছি।।
এইভাবে দুজনের খাওয়া শেষ হলে তানিয়া প্লেটটা নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল আর আমি হাত ধুয়ে রুমে চলে এলাম।।

এইভাবেই দিনটা কেটে গেল।।
সারাদিনের মধ্যে তানিয়ার সাথে আমার আর কোনো কথা হয়নি।।
তানিয়া নিজেও কথা বলেনি আর আমিও আগ বারিয়ে কথা বলিনি।।
রাতের খাবার খেয়ে রুমে এসে বিছানার উপর বসে আছি এমন সময় তানিয়া এসে রুমে ঢুকলো, রুমে ঢুকে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আমার পাশে এসে বসলো।।
তানিয়াঃ ওইদিনের ঘটনার জন্য তুমি কি আমার উপর রেগে আছ.?
তামিমঃ নাহ ওইদিনের ঘটনা তো আমি ভুলেই গেছি।।
তানিয়াঃ তাহলে সারাদিনের মধ্যে আমার সাথে একটা কথাও বলনি কেন.?
তামিমঃ এমনিই ভাবলাম রাতেরবেলা কথা বলব নে।।
তানিয়াঃ সত্যিই তুমি আমার উপর রেগে নও তো.?

তামিমঃ কিছু না বলে তানিয়াকে টান মেরে নিজের বুকের মধ্যে নিয়ে আসলাম আর বললাম, কি এবার বিশ্বাস হয়েছে তো নাকি এখন কিছু করে দেখাতে হবে.?
তানিয়াঃ কি করবা কর দেখি।।
তামিমঃ পারমিশন পাওয়া মাত্রই তানিয়াকে টান মেরে নিজের আরও কাছে নিয়ে আসলাম আর তানিয়ার ঠোঁটের সাথে আমার ঠোঁট এক করে দিলাম।।
২ মিনিট পর তানিয়াকে ছেড়ে দিয়ে বললাম, কি এবার বিশ্বাস হয়েছে তো মহারাণীর.?
তানিয়াঃ হুম বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।।
আচ্ছা সারাজীবন আমায় তোমার এই বুকে এইভাবে আগলে রাখবে তো।।
তামিমঃ ইনশাআল্লাহ।।
তানিয়াঃ আচ্ছা তুমি আমায় এতো সহজে মেনে নিলে কীভাবে.?
তামিমঃ এই প্রশ্নের উত্তর নাহয় অন্য একদিন দিব,

এখন প্রচুর ঘুম পাচ্ছে ঘুমাব, সকালে আবার নামাযের জন্যও উঠতে হবে।।
তানিয়াঃ আচ্ছা আর আমি আজকে থেকে তোমার বুকের মধ্যেই ঘুমাব কিন্তু।।
তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে এবার ঘুমান।।
তারপর তানিয়া তামিমকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো।।
তামিমও তানিয়ার কপালে একটা চুমু খেয়ে তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল।।
পরেরদিন সকালবেলা তামিম আর তানিয়া দুজন নাস্তা করে ভার্সিটিতে চলে এলো।।
কিন্তু ভার্সিটিতে ঢুকতেই ঘটলো এক বিপত্তি।।

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com