Breaking News

সিনিয়র বউ | পর্ব -১০



হঠাৎ একদল মেয়েদের মধ্যে থেকে একটা বোরকা পরা মেয়ে তামিমের কাছে এসে তার হাত থেকে সিগারেটটা ফেলে দিল।।
তারপর তামিমের হাত ধরে তাকে ওইখান থেকে টেনে সামনে নিয়ে যেতে লাগলো।।
তামিম আর তামিমের বন্ধুরা কিছু বুঝতে না পেরে অবাক চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।।
তামিমেরও বুঝে আসছে না যে এই মেয়েটা কে যে তাকে এইভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।।
তখন পাশ দিয়ে একটা রিক্সা যাচ্ছিল আর ওই মেয়েটা রিক্সাকে ডাক দিয়ে দাড়াতে বলে নিজে রিক্সায় উঠে তামিমকেও জোর করে রিক্সায় উঠাল।।
তামিম মেয়েটার কণ্ঠ শুনে মনে মনে বললো, আরে এটা তো তানিয়ার কন্ঠ, তার মানে কি এই মেয়েটা তানিয়া.!

মামা —– এইখানে চলেন (মেয়েটা রিক্সাওয়ালাকে বললো)।।
তামিম মেয়েটার মুখ থেকে নিজের বাসার নাম শুনে এবার পুরোপুরি শিউর হয়ে গেল যে এই মেয়েটা আর কেউ না তানিয়া।।
রিক্সাওয়ালাও কিছু না বলে রিক্সা চালাতে শুরু করলো।।
এদিকে তামিম মনে মনে নিজেকে বলছে, দুর কেন যে বন্ধুদের পাল্লায় পরে সিগারেট খেতে গেলাম।।
এখন নিজের কামাই নিজেই খেতে হবে।। আর তানিয়া হঠাৎ কোথা থেকে আসলো এটাও তো বুঝতে পারছি না।। নাকি সে ভার্সিটিতে এসেছিল আজ আমি কি কি করি তা দেখতে।।
হতেও পারে কারণ তানিয়াদের ক্লাস ২ তলায়।। আর ২ তলা থেকে ভার্সিটির গেইট স্পষ্ট দেখা যায়।।
কে ভিতরে ঢুকলো আর কে বাহিরে গেল সবই দেখা যায়।।
উফফ এই মেয়েটা কখন থেকে আমার হাতটা ধরে রেখেছে।।

একবারের জন্যও ছাড়েনি।। হাত একেবারে ঘেমে যাচ্ছে দেখি হাতটা ছাড়াতে পারি কি না।।
তামিম কোনোকিছু না ভেবে তানিয়ার থেকে তার হাতটা ছাড়াতে গেলে সাথে সাথে তানিয়া তামিমের দিকে তাকালো।। তানিয়ার চোখ থেকে যেন আগুন ঝরছে, চোখ অনেকটাই লাল হয়ে আছে হয়তো রাগের কারণে।।
তানিয়ার এমন রূপ দেখে তামিম কিছুটা ভয় পেয়ে গেল।।
যেদিন তামিম প্রথম তার শ্বশুরবাড়িতে মানে তানিয়াদের বাড়িতে গিয়েছিল আর রিমি মেয়েটা তাকে কিউট + নিজের সপ্নের রাজকুমারের মতো বলেছিল সেদিন তানিয়া যেভাবে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তামিমের দিকে তাকিয়েছিল তার চেয়ে বেশি ভয়ংকর দৃষ্টিতে তানিয়া আজ তামিমের দিকে তাকিয়ে আছে।।
তামিম তানিয়ার এমন রূপ দেখে ভয়ে কিছু বলতে পারলো না আর নিজের হাতটাও ছাড়াতে গেল না।।
এদিকে তানিয়া তামিমের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অন্যদিকে তাকাল।।

তামিম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তানিয়াও বোরকা পরে রেডি হয়ে ভার্সিটিতে চলে আসে।। ভার্সিটিতে এসে তানিয়া সোজা নিজের ক্লাসে চলে আসে।।
তারপর সব ক্লাস শেষ হওয়ার পর যখন তানিয়া ভার্সিটি থেকে বের হলো তখনই সে দেখলো তামিম ওর ফ্রেন্ডদেরকে নিয়ে সিগারেট খাচ্ছে আর তাদের পাশ দিয়ে যাওয়া মেয়েদের মুখে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছে।।

তামিমের সিগারেট খাওয়া দেখে তানিয়ার মাথা গরম হয়ে যায়।। তাই সে তামিমকে ওইখান থেকে টেনে নিয়ে আসে।।
তারপরের কাহিনি তো আপনারা জানেনই।।
কিছুক্ষণ পর রিক্সা এসে তামিমদের বাসার সামনে থামলো।।
রিক্সা থেকে নেমে তানিয়া রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে তামিমের হাত ধরে তাকে নিয়ে বাসার ভিতরে চলে আসলো।। তামিমেরও এখন আস্তে আস্তে ভয়ে হার্টবিট বাড়তে শুরু করলো।।
না জানি আজ আমার সাথে কি হয়।।

বাসার ভিতরে ঢুকে তানিয়া চিৎকার করে তামিমের আম্মুকে ডাকতে লাগলো।।
কিছুক্ষণ পর তামিমের আম্মু রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে তাদের সামনে এসে দাড়ালেন।।
আম্মুঃ কি হয়েছে মামনি এইভাবে চিৎকার করছ কেন.?
তামিমের আম্মু আসাতে তানিয়া তামিমের হাত ছেড়ে দেয় আর এই সুযোগে তামিম মাথা নিচু করে চুপিচুপি নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলো।।
তানিয়া বিষয়টা দেখে ফেলে আর চিৎকার করে বলে উঠে…
তানিয়াঃ এই কোথায় যাচ্ছ তুমি.? যেখানে আছ ওইখানেই দাঁড়িয়ে থাক।।
ওইখান থেকে এক পাও নড়বে না নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।।
তানিয়ার এমন কথা শুনে তামিম আর সামনে এগুতে পারলো না, ওইখানেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।।

আম্মুঃ কি হয়েছে মামনি তুমি এতো রেগে আছ কেন.? ও কি কোনো ভুল করেছে.?
তানিয়াঃ হে অনেক বড় ভুল করেছে ও।।
আম্মুঃ কি ভুল করেছে আমায় বল মামনি।।
তানিয়াঃ তাহলে শুনুন (তারপর তানিয়া তামিমের আম্মুকে সব বললো)।।
তানিয়ার থেকে সব শোনার পর তামিমের আম্মুরও মাথা গরম হয়ে গেল।।
তিনি সাথে সাথে তামিমের কাছে গিয়ে তামিমের গালে ঠাসস, ঠাসস করে ২টা চড় বসিয়ে দিলেন।।
আম্মুঃ তোকে না একবার নিষেধ করেছি সিগারেট না খেতে তারপরও আবার কোন সাহসে তুই খেলি.?
তামিমঃ নিশ্চুপ (গালে হাত রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো)।।
আম্মুঃ জীবনে কি পাপ করেছিলাম যে তুই এতটা খারাপ হলি।।
ছোটবেলা থেকে কতো চেষ্টা করলাম তোকে নামায কালাম শিখিয়ে আল্লাহর পথে আনার জন্য।।
কিন্তু এতো চেষ্টা করেও তোকে ভালো মানাতে পারলাম না।।
তুই যেহেতু আর ভালোই হবি না তাহলে তোর মতো ছেলে আমার দরকার নেই।।
বেরিয়ে যা এক্ষুণি আমার বাসা থেকে (ধমকের শুরে)।।
তামিমঃ আম্মু আমি

আম্মুঃ চুপ ভুলেও তোর ওই মুখে আমাকে আর আম্মু বলে ডাকবি না বলে দিলাম।।
যা বেরিয়ে যা আমার বাসা থেকে।।
যদি ভালো হতে পারিস তাহলেই এই বাসায় জায়গা পাবি।।
নাহলে জীবনেও এই বাসায় পা রাখবি না আর তোর এই চেহারাও আমাদেরকে আর দেখাবি না।।
তানিয়াঃ আম্মু এইসব আপনি কি বলছেন ও তো (তানিয়াকে থামিয়ে দিয়ে)।।
আম্মুঃ মামনি তুমি ওর হয়ে কথা বলতে আসবে না বলে দিলাম (কড়া গলায়)।।
তামিমের আম্মুর কথায় তানিয়া আর কিছু বলার সাহস পেল না।।
তানিয়া আর কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।।

আম্মুঃ কিরে তোকে না বলেছি বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে তাহলে এখনো এইখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন.?
তামিমঃ আম্মু আমার ভুল হয়েগেছে প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও আমি আর
আম্মুঃ চুপ বললাম না তোর এই মুখ দিয়ে আমাকে আর আম্মু বলে ডাকবি না।।
আজ আমি তোর কোনো কথা শুনছি না তুই এক্ষুণি আমার বাসা থেকে বের হয়ে যা নাহলে তোকে আমি নিজেই বের করে দিতে বাধ্য হব।।
তামিম তার মায়ের মুখে এমন কথা শুনে ছলছল চোখে তার মায়ের দিকে তাকালো।।
তামিমঃ আচ্ছা আম্মু আমি চলে যাচ্ছি, আর জীবনেও এই বাসায় পা রাখবো না।।
যদি এ জীবনে ভালো হতে পারি তাহলেই তোমাদের সামনে এসে দাড়াবো।।
নাহলে আর কখনো এ বাড়িতে পা রাখবো না।।

ভালো থেক আম্মু (কথাগুলো বলেই তামিম শার্টের হাতা দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল)।।
তামিম বাসা থেকে বেরুনোর সময় একবার তানিয়ার দিকেও তাকিয়েছিল।।
তামিম তানিয়ার চোখেও পানি দেখতে পেয়েছে।।
কিন্তু তানিয়ার চোখের পানির কারণ কি সেটা তামিম খুজে পেল না।।
শেষবারের মতো তামিম একবার পিছন থেকে তাদের বাসাটায় চোখ বুলিয়ে হাটা ধরলো এক অজানা গন্তব্যে।।
সন্ধ্যাবেলায় তামিমের আব্বু অফিস থেকে ফিরে দেখলেন সবাই মন মরা হয়ে বসে আছে।।
কারণ জানতে চাইলে তামিমের আম্মু তামিমের আব্বুকে সব বললো।।
তিনিও বিষয়টা শুনে কিছুটা কষ্ট পেলেন।। তবে তিনি কিছু না বলে রুমে চলে গেলেন।। তিনি জানেন তামিম ঠিকই রাতেরবেলা বাসায় আসবে।।

এদিকে তামিম হাটতে হাটতে হঠাৎ রাস্তার মাঝে একটা ব্রিজ দেখতে পেল।।
ব্রিজের মধ্যে একটা লাইটও রয়েছে।। তামিম হেটে হেটে ব্রিজের উপর গিয়ে মাটিতে বসে পরলো।।
বসে বসে তামিম ভাবতে লাগলো এখন সে কি করবে কোথায় যাবে সে।।
তার তো যাওয়ার কোথাও জায়গা নেই।। বন্ধুদের কাছেও সে যেতে চাচ্ছে না।। তাহলে এখন সে কোথায় যাবে।।
তামিম ব্রিজের উপর বসে বসে এইরকম নানান কথা ভাবছে তখনই তার পাশ দিয়ে ২টা লোক হেটে যাচ্ছিল।।

ব্রিজের উপর তামিমকে দেখতে পেয়ে লোক ২টা তামিমের কাছে এসে দাড়ালো।।
–আপনি কে ভাই আর এইখানে একা একা বসে আছেন কেন.? (লোকদের মধ্যে একজন)
তামিম মাথা তুলে তার সামনে ২টা লোককে দেখতে পেয়ে উঠে দাড়ালো।।
লোক ২টার ঘায়ে পাঞ্জাবী, মাথায় টুপি আর মুখে দাড়ি।। তামিম লোক ২টাকে দেখে ভাবলো এরা নিশ্চয় মাদ্রাসার ছাত্র।।
দেখি এদের কাছে আমার ঘটনাটা শেয়ার করে তারা কিছু করে কি না।।
তারপর তামিম লোক ২টাকে সব বললো।।
সব শুনে লোকদের মধ্যে একজন বললো…
তাহলে আপনি চাচ্ছেন এখন খারাপ পথ ছেড়ে ভালো পথে আসতে।।
আর ভালো পথে আসলেই আপনি আবার আপনার বাসায় ফিরে যাবেন।।
তামিমঃ জি আপনারা কি আমায় কোনোভাবে সাহায্য করতে পারবেন.?
–পারবো মানে অবশ্যই পারবো।।

আমরা এখন বেরিয়ে ছিলাম মানুষকে তাবলিকে যাওয়ার জন্য একটু দাওয়াত দিতে।।
কাল আমাদের মসজিদ থেকে একটা তাবলিকের জামাত বেরুবে।।
কিন্তু আরও ২-১ জন লোক পেলে জামাতটা বড় হতো।।
আপনাকে যখন পেয়ে গেছি তাহলে আর মানুষ খুজা লাগবে না চলেন আমাদের সাথে আমাদের বাসায়।।
তামিমঃ তাবলিক কি.?
আপনি এইসব বুঝবেন না আমাদের সাথে চলেন গেলেই বুঝতে পারবেন।।
তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে চলেন।।
তারপর তামিম ওই লোক ২টার সাথে চলে গেল তাদের বাড়িতে।।
বাড়িতে শুধু লোক ২টাই থাকে কোনো মহিলা নেই।। হয়তো ২জন ভাই অথবা বন্ধু।।
তো তাদের সাথে খাওয়া দাওয়া করে তামিম তাদের বাড়িতেই ঘুমিয়ে পরলো।।
এদিকে রাত ১২টা বেজে গেছে কিন্তু তামিম এখনো বাসায় ফিরছে না দেখে তামিমের আম্মু-আব্বু আর তানিয়া সবাই চিন্তিত হয়ে পরলো।।

তানিয়া অনেকবার তামিমের ফোনে কল দিয়েছে কিন্তু তামিমের ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।।
তামিমের আব্বু তাদেরকে বললেন, হয়তো তামিম তার কোনো বন্ধুর বাসায় আছে তাই তিনি তাদেরকে চিন্তা না করে ঘুমিয়ে যেতে বললেন।।
তামিমের আব্বুর কথায় সবাই ঘুমিয়ে পরলো, কিন্তু তামিমের আম্মু আর তানিয়ার ঘুম এলো না তামিমের চিন্তায়।।
পরেরদিন সকালবেলা তামিম ওই লোক ২টার সাথে একটা মসজিদে গেল।।
তারপর লোক ২টা সবার সাথে তামিমের পরিচয় করিয়ে দিয়ে সবাই ৩ দিনের জন্য আল্লাহর রাস্তায় বেরিয়ে পরলো।।

৩ দিন পর…
তামিম এই ৩ দিনে ইসলামের অনেক কিছুই শিখে গেছে তাবলিকে গিয়ে।। অজু কীভাবে করতে হয়, নামায কীভাবে পড়তে হয় সবকিছু তামিম শিখে গেছে।। এবার তামিমের বাসায় যাওয়ার পালা।।
কারণ এই ৩ দিনে তামিম নিজেকে অনেকটাই বদলে ফেলেছে।। এখন বাসায় গেলে হয়তো সবাই তাকে দেখে অনেক খুশি হবে।।

বাসা থেকে বের হয়ে আসার সময় তামিমের কাছে তেমন বেশি টাকা ছিল না।।
মানিব্যাগে ছিল মাত্র ১০০ টাকা, তাই সে তাবলিকে থাকাকালীন তার মোবাইলটা বিক্রি করে দেয়।।
মোবাইলটা সে ৫০০০ টাকায় বিক্রি করেছে।।
এতে কিছু টাকা দিয়ে সে নিজের জন্য পাঞ্জাবী, টুপি এইসব কিনেছে।। তাবলিকে গিয়ে খরচ হয়েছে ৫০০ টাকা।। সেই টাকা ওই লোক ২টাই দিয়েছে।।
তামিম আসার সময় ওই লোক ২টার কাছে ৫০০ টাকা দিয়ে আসলো।।
লোক ২টা টাকা নিতে চাচ্ছিল না কিন্তু তামিম জোর করে দিয়ে এসেছে।।

তারপর তামিম ওদের থেকে বিদায় নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিল।।
বাসায় যেতে অনেক সময় লাগবে দেখে তামিম একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে আসলো।।
কিছুক্ষণ পর রিক্সাটা তাদের বাসার সামনে এসে থামলো।।
তামিম রিক্সা থেকে নেমে রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকলো।।
বাসার দরজার কাছে গিয়ে তামিম বেল চাপ দিল।।
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে তানিয়া দৌড়ে এসে দরজা খুললো।।
দরজা খুলে তামিমকে দেখতে পেয়ে সাথে সাথে সে তামিমকে জড়িয়ে ধরলো আর কেদে দিল।।
হুট করে দরজা খুলে তানিয়া তামিমকে জড়িয়ে ধরাতে তামিম ভেবাচেকা খেয়ে গেল।।
কিন্তু মূহুর্তের মধ্যেই তামিম নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে সেও তানিয়াকে আস্তে করে জড়িয়ে ধরলো।।

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com