Breaking News

সিনিয়র বউ | পর্ব -১২



পরেরদিন সকালবেলা তামিম আর তানিয়া দুজন নাস্তা করে ভার্সিটিতে চলে এলো।।
কিন্তু ভার্সিটিতে ঢুকতেই ঘটলো এক বিপত্তি।।
তামিম আর তানিয়া দুজন ভার্সিটির ভিতরে ঢুকতেই তারা দেখলো ভার্সিটির সব ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।। বিশেষ করে সব মেয়েরা তামিমের দিকে তাকিয়ে আছে।।
হয়তো সব মেয়েরাই মনে মনে ভাবছে, যে ছেলেটা সবসময় শার্ট-প্যান্ট পরে ভার্সিটিতে আসতো সে আজ পাঞ্জাবী + মাথায় টুপি দিয়ে হুজুরের বেশে কীভাবে ভার্সিটিতে আসলো.!

তামিমের পাশে তানিয়াকে দেখেও হয়তো অনেকেই অবাক হয়েছে।। তামিম তো কখনো কোনো মেয়ের পাশে থাকলে শান্তশিষ্ট থাকে না।। মেয়ে দেখলেই তামিম তাদেরকে টিজ করা শুরু করে দেয়।। তাহলে তামিমের পাশে এই মেয়েটা কে.? ভার্সিটির সব ছাত্র-ছাত্রীদের মাথায় এইসব প্রশ্ন-ই ঘুরপাক খাচ্ছে।। হঠাৎ তামিম এমন পোশাক পরলো কেন আর ওর পাশে থাকা মেয়েটাই বা কে।।
এদিকে সব মেয়েরা তামিমের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে তানিয়া একটু রাগী গলায় বললো…
তানিয়াঃ এই তুমি এইখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন যাও ক্লাসে যাও।। আর হে ভার্সিটি ছুটি হলে গেইটের কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকবা আমার জন্য।।

তামিমঃ আচ্ছা তবে অনেকদিন ধরে তো বন্ধুদের সাথে দেখা হয়নি, একটু ওদের সাথে দেখা করে আসি।।
তানিয়াঃ না ওদের কাছে আর ভুলেও যাবা না বলে দিলাম।। ওরা তোমাকে আবার ওইসব ছাইপাঁশ খাওয়াতে পারে।।
তামিমঃ ওরা হাজার চেষ্টা করলেও আমাকে আর ওইসব খাওয়াতে পারবে না।। আপনাকে এইসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, আপনি নিশ্চিন্তে ক্লাসে যান।।
তানিয়াঃ ওইসব কিন্তু আর খাবা না কথা দাও আমায়।।
তামিমঃ আচ্ছা কথা দিলাম ওইসব আর খাব না।। 
এবার আপনি ক্লাসে যান আমি একটু ওদের সাথে দেখা করে আসি।।

তানিয়াঃ আচ্ছা আর সব ক্লাস করে ক্লাস থেকে বের হবে কিন্তু।। 
এর আগে যদি ক্লাস থেকে বের হও তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।।
তামিমঃ আচ্ছা মহারানী।।
তারপর তানিয়া আর কিছু না বলে সোজা ক্লাসে চলে গেল।। 
আমিও আর ওইখানে দাঁড়িয়ে না থেকে বন্ধুদের আড্ডায় চলে আসলাম।।
তামিমঃ আসসালামু ওয়ালাইকুম, কি খবর তোদের.?
শুভঃ হুম ভালো তোর খবর কি.? আর এতোদিন কোথায় ছিলি ভার্সিটিতেও এলি না, 
ফোন করলাম কিন্তু ফোনও ধরলি না।। আর আজকে আবার হুজুরের বেশে ভার্সিটিতে এসেছিস.!
তামিমঃ আরে এতো প্রশ্ন একসাথে করলে কোনটার উত্তর দিব।।
আর কেউ সালাম দিলে সালামের জবাব দিতে হয় জানিস না.? 
আগে সালামের জবাব দে তারপর যা প্রশ্ন করার করিস।। 
শুভঃ হুম ওয়ালাইকুমুস সালাম, হঠাৎ তোর এমন গেটাপ কেন.?
তামিমঃ তা অনেক লম্বা কাহিনি, অন্য আরেক দিন বলবো নে।।
শুভঃ না আজকেই বলতে হবে, বল।।
তামিমঃ আচ্ছা তাহলে শুন (তারপর তাদের সব ঘটনা বললাম)।।

রনিঃ আন্টি তোকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন বলে তুই নিজেকে একেবারে বদলে ফেলেছিস.!
তামিমঃ হুম আর আমিও বুঝেছি যে মুসলিম হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের উচিত খারাপ পথ ছেড়ে আল্লাহর পথে চলা।।
শুভঃ আচ্ছা আরেকটা কথা, ওইদিন যে আমরা ভার্সিটির বাহিরে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলাম এমন সময় যে একটা বোরকা পরা মেয়ে এসে তোকে আমাদের মধ্যে থেকে নিয়ে গেল ওই মেয়েটা কে ছিল.?
তামিমঃ মনে মনে ভাবলো, মিথ্যা বলা তো মহাপাপ।।
এদেরকে মিথ্যা বলেও কি লাভ, একদিন তো জেনেই যাবে যে তানিয়া আমার বউ।।
তাহলে সত্যিটা বলেই দেই।।
শুভঃ কিরে কি ভাবছিস চুপ করে আছিস যে।।
তামিমঃ হে না মানে ওই মেয়েটা আমার বউ।।
কিহহ.! তুই বিয়ে করলি কবে.! (সবাই একসাথে)

তামিমঃ অনেক আগেই করেছি, কিন্তু নিজের ইচ্ছাতে নয় আম্মুর জোরাজুরিতে করতে হয়েছে।।
রনিঃ তো আমাদেরকে কোনোদিন বললি না কেন যে তুই বিয়ে করেছিস আর তোর বউকেও তো আমাদেরকে একদিন দেখালি না।।
তামিমঃ আরে বললাম না নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করিনি, আম্মুর জোরাজুরিতে করতে হয়েছে।। তাই প্রথমে মেয়েটাকে মেনে নেইনি।। তার উপর আবার মেয়েটা আমার সিনিয়র, তাই ওকে প্রথমে মেনে নিতে পারছিলাম না।।
শুভঃ কিহ, বিয়ে করলি তাও আবার সিনিয়র মেয়েকে.!
তামিমঃ হুম, কিন্তু সিনিয়র মেয়েকে বিয়ে করা কিন্তু সুন্নত।।

শুভঃ তুই এতোকিছু জানিস কীভাবে.? আর মেয়েটাকে কি তুই এখন মেনে নিয়েছিস.?
তামিমঃ ওই যে বললাম তাবলিকে গিয়েছিলাম, ওইখানে গিয়েই এইসব জেনেছি।। আর হে এখন ওকে আমি মেনে নিয়েছি।।

শুভঃ এই তাবলিক আবার কি.?
তামিমঃ তাবলিক মানে দাওয়াত দেওয়া।। আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) যেভাবে উনার আমলে মানুষদেরকে কালিমার দাওয়াত দিতেন ঠিক তেমনিই এই তাবলিক হলো এর একটা নমুনা।। এই তাবলিক এর একটা অংশ আছে গাস্ত, ওই গাস্তের দিন কয়েকজন মানুষ মসজিদ থেকে বের হয়ে মুসলমানদের নামাযের দাওয়াত দেয়।। আরও আছে এই তাবলিকের কাজ, তা অন্য একদিন সময় করে বলবো নে।। এবার চল ক্লাসে যাই, একটু পরেই ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।।
শুভঃ আচ্ছা চল।।

তারপর তামিম আর তার বন্ধুরা সবাই ক্লাসে চলে গেল।।
অপরদিকে তানিয়া ক্লাসে ঢুকতেই তার বান্ধবীরা এসে তাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো…
এই দুলাভাইকে দেখলাম আজ টুপি পাঞ্জাবী পরে ভার্সিটিতে এসেছে হঠাৎ ওর মধ্যে এতো পরিবর্তন আসলো কি করে.? কি এমন জাদু করেছিস তুই (তানিয়াকে খুটা মেরে)।।
(তানিয়ার বান্ধবীরা আগে থেকেই তামিমকে চিনে আর তামিমের ব্যাপারে সব জানে)।।
তানিয়াঃ আরে তেমন কিছু না শুন তাহলে কি হয়েছে (তারপর তানিয়া তার বান্ধবিদেরকে তামিমের ঘটনাটা বললো)।।

–তার মানে ও তোকে এখন মেনে নিয়েছে.?
তানিয়াঃ হুম (কিছুটা লজ্জা পেয়ে)।।
–তা কিছু হয়েছে কি তোদের মধ্যে.?
তানিয়াঃ আরে দুর কি হবে, ও গতকালই তো বাসায় এসেছে।।
আর এখনো তো আমাদের পড়াশোনা শেষ হয়নি।।
আগে পড়াশোনা শেষ হোক তারপর নাহয় ভেবে দেখবো কি করা যায়।।
–কি ভেবে দেখবি.?
তানিয়াঃ এখন কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে (রেগে গিয়ে)।।
–আচ্ছা আচ্ছা সরি।।

এদিকে তামিম আর বন্ধুরা ক্লাসে বসে আছে।।
কিছুক্ষণ পরেই স্যার ক্লাসে এসে ক্লাস করাতে লাগলেন।।
কিন্তু ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে কোনো মনোযোগ নেই।।
সবাই শুধু তামিমের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে হঠাৎ এই ছেলেটা এতো ভালো হলো কি করে।।
কিন্তু তামিম আজ কোনো মেয়ের দিকেই তাকাচ্ছে না।।
সারাটা ক্লাস সে মাথা নিচু করে রেখেই ক্লাস করেছে।।
দেখতে দেখতে ওইদিনের মতো সব ক্লাস শেষ হলে ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেল।। তামিম আর তার বন্ধুরা ক্লাস থেকে বেরিয়ে ভার্সিটির গেইটের কাছে এসে দাড়ালো।।
রনিঃ বন্ধু চল মেয়েদের তো অনেকদিন ধরে টিজ করা হচ্ছে না, আজ একটু
তামিমঃ নাহ ভাই আমি আর এইসবে নাই, তোরাও এইসব করা বাদ দে।।
শুভঃ কেন করলে কি.?

তামিমঃ এমনিই আমি আর এইসব করবো না।।
শুভঃ কিন্তু আগে তো
তামিমঃ আগে যা করেছি করেছি, কিন্তু এখন আর এইসব করতে চাইনা।।
রনিঃ আচ্ছা নাই করলি এখন কিছু টাকা দে, আমি সবার জন্য সিগারেট নিয়ে আসি।।
তামিমঃ সরি বন্ধু, আমি আর তোদের সিগারেট খাওয়ার জন্য টাকা দিতে পারবো না।।
সিগারেট খাওয়া ভালো না, এটা একটা খারাপ নেশা।।
তাই আমি আমার টাকায় তোদেরকে আর খারাপ নেশা করতে দিব না।।
রনিঃ এই শুভ চল তো, এ তো দেখছি সত্যি সত্যি বদলে গেছে।।
এর সাথে থেকে আর আমাদের লাভ নেই চল এইখান থেকে (রাগী গলায়)।।
শুভঃ হুম চল।।

বন্ধুরা চলে গেল আর তামিম ওইখানেই দাঁড়িয়ে থেকে ভাবলো,
তোদেরকে আজ খারাপ কাজে সাপোর্ট দেইনি বলে তোরা আমায় রেখেই চলে গেলি বাহ্।।
তামিম আর কিছু না ভেবে ওইখানে দাঁড়িয়ে থেকে তানিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।।
কিছুক্ষণ পর তানিয়া তার বান্ধবিদেরকে নিয়ে তামিমের পাশে এসে দাড়ালো।।
তামিমকে দেখে তানিয়ার বান্ধবীরা চলে গেল।।
তানিয়াঃ সরি আসতে একটু দেড়ি হয়ে গেল।।
তামিমঃ সমস্যা নেই এখন বাসায় চলেন।।
তানিয়াঃ হুম চল।।

তারপর তামিম একটা রিক্সা ডেকে তানিয়াকে নিয়ে বাসায় চলে আসলো।।
বাসায় এসে দুজনে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে নিল।।
খাবার খেয়ে তামিম রুমে চলে আসলো।।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে তামিম ভাবছে কীভাবে তার বন্ধুদেরকে খারাপ পথ থেকে ভালো পথে আনবে।।
তার উচিত এখন তার বন্ধুদেরকেও ভালো পথে ডাকা।।
কিন্তু কীভাবে তাদেরকে আল্লাহর পথে আনবে সে কিছুই বুঝতে পারছে না।।
তামিম বিছানার মধ্যে শুয়ে শুয়ে এইসব ভাবছে তখন তানিয়া এসে রুমে ঢুকে দেখলো তামিম শুয়ে শুয়ে কি যেন ভাবছে।।
তানিয়া দরজাটা বন্ধ করে বিছানায় উঠে তামিমকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রাখলো।।
তারপর তার মাথাটা উচু করে তামিমের দিকে তাকিয়ে বললো…
তানিয়াঃ কি ভাবছ গো.?

তামিমঃ ভাবছি আমার বন্ধুদেরকে কীভাবে আল্লাহর পথে আনবো।।
আজ ওদেরকে খারাপ কাজে সাপোর্ট করিনি বলে তারা আমায় রেখেই চলে গিয়েছে।।
আমার তো উচিত তাদেরকে আল্লাহর পথে আনা।।
তানিয়াঃ কিছু না বলে চুপ করে কিছুক্ষণ ভেবে বললো, আচ্ছা তোমাদের সব বন্ধুদের বোন আছে.?
তামিমঃ হে ১ বন্ধু ছাড়া বাকি সবার বোন আছে কেন.?
তানিয়াঃ আমার কাছে একটা বুদ্ধি আছে শুন (তানিয়া তামিমের কানে কানে বুদ্ধিটা বললো।।
তানিয়া কি বললো সেটা নাহয় সময় হলেই জানতে পারবেন)।।
তামিমঃ এই বুদ্ধিতে কাজ হবে তো.?
তানিয়াঃ ইনশাআল্লাহ হবে, তোমাকে যা করতে বলেছি সেটা শুধু কর একবার।।
তামিমঃ ওকে তাহলে কালকে বুদ্ধিটা কাজে লাগিয়ে দেখবো নে।।
তানিয়াঃ হুম

এইভাবে তাদের দিনটা কেটে গেল।। রাতের খাবার খেয়ে তামিম বিছানায় এসে শুয়ে শুয়ে তানিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু তানিয়া আসছে না।।
কিছুক্ষণ পর তানিয়া রুমে আসলো আর দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় 
গিয়ে তামিমের বুকে মাথা রেখে তামিমকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো।। 
তামিমও তানিয়ার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে তানিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো।।

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com