Breaking News

সিনিয়র বউ | পর্ব -১৩



ঘুমের মধ্যে মনে হলো কেউ একজন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।।
একেবারে নরম তুলার মতো হাত।।
হঠাৎ কানের মধ্যে আওয়াজ আসলো…
ওগো শুনছ, আযান হয়ে গেছে উঠ নামায পড়বা না.?
মনে মনে ভাবলাম হয়তো সপ্ন দেখছি।।
কিন্তু না কিছুক্ষণ পর কেউ একজন আবার ওই একই কথা আমার কানের কাছে এসে বললো।
এবার আর ঘুমিয়ে থাকতে পারলাম না, আস্তে আস্তে চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখি সেই মানুষটা আর কেউ না তানিয়া।
তানিয়ার গায়ে কালো বোরকা থাকলেও তার মাথায় আজ হিজাব রয়েছে।
অন্যদিনের তুলনায় তানিয়াকে আজ ভিষণ সুন্দর লাগছে।
দূর থেকে ওকে দেখে যেন মন ভরছে না তাই ওর হাত ধরে টান মেরে ওকে নিজের বুকের মধ্যে নিয়ে আসলাম।

তানিয়াঃ এই এইসময় কি শুরু করলে, অনেক আগে আযান হয়েছে উঠে অজু করে নামায পড়তে যাও (নিজেকে আমার থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে)।
তামিমঃ আযান আমার কানেও এসেছে, তাই মিথ্যা বলে আমাকে বোকা বানাতে পারবেন না।।
তানিয়াঃ আমি তোমাকে বোকা বানাচ্ছি না।। অনেক্ষণ আগেই আযান হয়েছে, বিশ্বাস না হলে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখ।।

তামিমঃ তানিয়ার কথা শুনে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি নামায শুরু হওয়ার আর মাত্র ১০ মিনিট বাকি আছে।। উফফ আরও আগে ডাকতে পারলে না।।
তানিয়াঃ এই যে আপনাকে ১০ মিনিট ধরে ডেকে যাচ্ছি কিন্তু আপনি উঠছেনই না, আর এখন আমার দোষ দেওয়া হচ্ছে তাইনা.?
তামিমঃ না দোষ কখন দিলাম।। আমি বলতে চাচ্ছি আরও আগে যদি ডেকে তুলতে পারতেন তাহলে আমার এই সিনিয়র বউটার এতো সুন্দর চেহারাটা একটু প্রাণ ভরে দেখতে পারতাম।।
তানিয়াঃ এহহ এতো ঢং কতো, দেখি এবার ছাড় আর উঠে অজু করে নামায পড়তে যাও।।
তামিমঃ তাহলে একটা মিষ্টি দেন।।

তানিয়াঃ এখন মিষ্টি কোথায় পাব.?
তামিমঃ এই যে মিষ্টি (তানিয়ার ঠোঁটে আঙুল রেখে)।।
তানিয়াঃ অজু করে আস তারপর পাবা।।
তামিমঃ নাহ আমার এখনই চাই।।
তানিয়াঃ আমি কি বলছি কানে যায়নি (রাগী গলায়)।।
তামিমঃ আচ্ছা আমিই নিয়ে নিচ্ছি বলে তানিয়ার ঠোঁটের সাথে আমার ঠোঁট এক করে দিলাম।।
 ১ মিনিট পর আবার ছেড়ে দিলাম।।

তানিয়াঃ শয়তান একটা, যাও এবার অজু করে আস নাহলে নামায মিস হয়ে যাবে।।
তামিমঃ হুম যাচ্ছি মহারানী বলেই তানিয়াকে ছেড়ে দিয়ে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।।
কিছুক্ষণ পর অজু করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই তানিয়া এসে আমার পাঞ্জাবী টুপি বিছানার রেখে গেল।। আমি তাড়াতাড়ি পাঞ্জাবীটা পরে নিলাম।। তারপর তানিয়াকে ডাক দিলাম।। সাথে সাথে তানিয়া আমার সামনে এসে হাজির।।
তানিয়াঃ কি হয়েছে ডাকছ কেন.?
তামিমঃ কোনোকিছু না বলে তানিয়াকে নিজের কাছে নিয়ে এসে ওর কপালে একটা চুমু খেলাম।।
তানিয়াঃ আগেরটায় মন ভরে নি নাকি.?
তামিমঃ ভরেছে তো, কিন্তু এটা ভালোবেসে দিলাম।। স্ত্রীকে ভালোবেসে তার কপালে চুমু খাওয়া যে সুন্নত জানেন না.?

তানিয়াঃ বাব্বাহ ৩ দিন এতোকিছু শিখলেন কি করে.?
তামিমঃ ২টা লোকের কথা যে বলেছিলাম, ওরাও আমার মতো বিবাহিত।। ওরাই আমাকে এইসব শিখিয়েছে।।
তানিয়াঃ ওহহ আচ্ছা এবার নামাযে যাও।।
তামিমঃ হুম যাচ্ছি।।
তারপর বাসা থেকে বেরিয়ে সোজা মসজিদে চলে এলাম।। নামায আদায় করে কিছুক্ষণ বাহিরে হাটাহাটি করে আবার বাসায় চলে আসলাম।।

বাসায় এসে কিছুক্ষণ পড়াশোনা করে নাস্তা করে নিলাম।। তারপর তানিয়াকে নিয়ে ভার্সিটিতে চলে এলাম।। আজকেও ভার্সিটির সব ছাত্র-ছাত্রীরা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।। আমাদের মধ্যে কীসের সম্পর্ক এটা কয়েকজন ছাড়া তো আর কেউ জানেনা তাই হয়তো সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।। এরপর তানিয়া তার ক্লাসে চলে গেল আর আমিও নিজের ক্লাসে চলে এলাম।।
ক্লাসে আসার কিছুক্ষণ পর স্যারও ক্লাসে চলে আসলেন।। তারপর সবাই ক্লাসে মনোযোগ দিল।। একে একে সবকটা ক্লাস শেষ করে বন্ধুদেরকে নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে ভার্সিটির গেইটের সামনে এসে দাড়ালাম।।

রনিঃ তুই তো এখন ভালো হয়ে গেছিস আর সিগারেট খাবি না, মেয়েদেরকে টিজ করবি না।। তাহলে তুই আমাদের সাথে আসলি কেন.?
তামিমঃ এতোদিনের অভ্যাস কি আর সহজে ছেড়ে দেওয়া যায়, তাই ভাবলাম আজকে তোদের সাথে একটু আড্ডা দিয়ে সিগারেট খাব।।
শুভঃ সত্যি বলছিস নাকি আমাদের সাথে মজা করছিস.?
তামিমঃ আরে ভাই সত্যি, এই নে টাকা আর সবার জন্য সিগারেট নিয়ে আয় যা।। অনেকদিন তো হলো মেয়েদেরকে টিজ করা হচ্ছে না।।
রনিঃ আচ্ছা তোরা থাক আমি সিগারেট নিয়ে আসছি।।
তারপর রনি চলে গেল সিগারেট আনতে।। কিছুক্ষণ পর আবার সবার জন্য সিগারেট নিয়ে চলে আসলো।।

তামিমঃ সিগারেট এখন রাখ আগুন ধরাবি না।।
রনিঃ এখন না ধরালে কখন ধরাব মেয়েরা তো এক্ষুণি ভার্সিটি থেকে বের হবে।।
তামিমঃ নাহ আজকে ভার্সিটির কোনো মেয়েকে টিজ করবো না।।
শুভঃ তাহলে কাকে টিজ করবি.?
তামিমঃ একটু অপেক্ষা কর সব বুঝতে পারবি।।
তামিমের কথা শুনে তার বন্ধুরা কিছু বুঝতে না পেরে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।। আর তামিম মোবাইলটা বের করে কাকে যেন ফোন করে তাদের ভার্সিটির কাছে আসতে বললো।।
কিছুক্ষণ পর ২টা মেয়ে এসে তাদের সামনে দাড়ালো।। মেয়েগুলোকে দেখে তামিমের বন্ধুরা অবাক হয়ে গেল।। কেননা মেয়েগুলোর মধ্যে একটা মেয়ে হলো শুভর বোন আরেকটা হলো রনির বোন।।
শুভঃ ইরা তুই এইখানে কি করছিস.! (শুভর বোনের নাম ইরা)
ইরাঃ আমাকে তামিম ভাইয়া এইখানে আসতে বলেছে।।
রনিঃ ইতি তুই এইখানে কেন.? (রনির বোনের নাম ইতি)
ইতিঃ আমাকেও তামিম ভাইয়া এইখানে আসতে বলেছে।।

তামিম এইসবের মানে কি তুই আমাদের বোনদেরকে এইখানে আসতে বললি কেন.? 
(শুভ আর রনি একসাথে)
তামিমঃ কেন টিজ করার জন্য (মুচকি হেসে)।।
মানে.? (দুজন একসাথে)
তামিমঃ ভার্সিটির মেয়েদেরকে যে তোরা টিজ করতে চাচ্ছিস তার আগে একবার ভেবে দেখ না তোদের বোনদেরকে যদি কোনো ছেলে টিজ করে তাহলে তোরা কি করবি।। বল কি করবি.?
ওই ছেলেকে মাটিতে পুতে ফেলবো (দুজনে একসাথে)।।
তামিমঃ ওর অপরাধ কি যে তোরা ওকে মাটিতে পুতে ফেলবি।।
কারণ ও আমাদের বোনকে টিজ করেছে।।

তামিমঃ তা তোরা যে ভার্সিটির মেয়েদেরকে টিজ করতে চাচ্ছিস ওরাও তো কারও না কারও বোন তাইনা.? ওদের ভাই যদি জানতে পারে এতোদিন ধরে তোরা তাদের বোনদেরকে টিজ করছিস তাহলে ওরা তোদের কি হাল করবে ভেবে দেখ তো একবার।।
তামিমের কথা শুনে শুভ আর রনি দুজনেই মাথা নিচু করে ফেললো।।
তামিমঃ দেখি সিগারেট আর লাইটারটা আমার কাছে দে।। আমি এখন তোদের সামনে তোদের বোনদের মুখে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়বো তখন বুঝতে পারবি ওইসব ভাইয়েরা কতো কষ্ট পাবে যখন তারা জানবে তোরা এতোদিন ধরে তাদের বোনদেরকে টিজ করছিস।।

এবার শুভ আর রনি দুজনেই তাদের হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে আমায় ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো।।
ভাই আমাদের ভুল হয়েগেছে, আমরা সত্যি এতোদিন ধরে অনেক বড় ভুল করে আসছি।। আমরা কথা দিলাম আর জীবনেও কোনো মেয়েকে টিজ করবো না।। নিজের বোনকে যেভাবে দেখি অন্যের বোনকেও আজ থেকে সেভাবেই দেখবো (দুজনে একসাথে)।।
তামিমঃ যাক তোরা যে তোদের ভুলটা বুঝতে পেরেছিস এটাই অনেক।। আজ থেকে এইসব খারাপ কাজ ছেড়ে দিয়ে ভালো পথে আয় তাহলে দুনিয়াতেও শান্তি আর মৃত্যুর পর আখিরাতেও শান্তি।।
আমরা আজ থেকে এইসব ছেড়ে দিব কথা দিলাম।। এমনকি আর জীবনেও সিগারেট খাব না।। আমাদের এখন কি কি করতে হবে তুই বল।।

তামিমঃ এখন থেকে সবসময় ৫ ওয়াক্ত নামায পড়বি আর নারীদেরকে সম্মান করে চলবি।।
কিন্তু আমরা যে নামায
তামিমঃ আচ্ছা বুঝেছি, তোদেরকে এখন সঠিকভাবে নামায শিখাতে হবে।। আচ্ছা তোরা কাল আমার বাসায় চলে আসিস তোদেরকে যতটুকু পারি শিখিয়ে দিব।। এখন তোদের বোনদেরকে নিয়ে বাড়িতে যা।। আর আপুরা তোমাদেরকে কষ্ট দেওয়ার জন্য সরি।।
না না ভাইয়া আপনি আমাদের এইখানে এনে অনেক ভালো কাজ করেছেন।।
তামিমঃ আচ্ছা তাহলে এবার সবাই যার যার বাসায় যাও।।

তারপর সবাই যার যার বাসায় চলে গেল।। কিছুক্ষণ পর তানিয়াও চলে আসলো।। তানিয়া এসে জিজ্ঞেস করলো কাজ হয়েছে কি না।। আমিও বললাম, হে হয়েছে।। এরপর একটা রিক্সা নিয়ে তানিয়া আর আমি বাসায় চলে আসলাম।।

(আপনারা হয়তো ভাবছেন তামিম তার বন্ধুদের বোনদেরকে কীভাবে ভার্সিটিরে আনলো তাইতো।। তামিম আর তানিয়া ভার্সিটিতে আসার সময় তাদের কলেজের পাশ দিয়ে এসেছিল আর তখন তামিম তাদের কলেজে ঢুকে তাদের ভাইদের সম্পর্কে বলে তাদেরকে তার ভার্সিটিতে আসতে বলে)।।
তামিম আর তানিয়া বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে রুমে চলে আসলো।। রুমে এসেই তানিয়া বললো…

তানিয়াঃ তোমাকে যে আমি বুদ্ধিটা দিয়ে হেল্প করলাম এবার তার বদলে আমাকেও কিছু দাও।।
তামিমঃ কি চাই আপনার বলেন।।
তারপর তানিয়া যা বললো তা শুনে তামিমের মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার পালা।। তামিম ভাবতে লাগলো তানিয়া তার কাছে কীভাবে এইটা চাইতে পারলো।। কারণ তানিয়ার কথাটা হলো..

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com