Breaking News

আবছা আলো । পর্ব -০২


দাদীঃ(শ্রাবণের বাবার ফুপি) কোথায় নিয়ে যাচ্ছো ওকে,,,,??
ছোট খালাঃ ও এখানে থেকে কী করবে,,,?? যে ওকে এখানে এনেছিলো সেই চলে গেলো,,,
দাদীঃ নতুন বউয়ের নিয়ম পালন করে এই বাড়িতে প্রবেশ করার ভাগ্য ওর হয়নি,,, তবে বিধবার নিয়ম ওকে পালন করতে হবে,,, আর ততদিন ওকে এখানেই থাকতে হবে,,,, চার মাস দশ দিন ওকে ইদ্দত পালন করতে হবে,,, আর ততদিন এখানেই থাকবে ও,,,,, স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর জন্য পালনীয় বিধান হলো- ইদ্দত পালন করা। ইদ্দতকালীন সময় চার মাস ১০ দিন। এ সময়ের মধ্যে ও বিয়ে করতে পারবে না, বিয়ের প্রস্তাব পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারবে না। বিয়ের প্রস্তাবে যেতেও পারবে না। এটা ইসলামের বিধান। এই সময়টাতে ও সাজসজ্জা করতে পারবে না। এটা ইদ্দতকালীন সময়। চার মাস দশদিন পর এসে যেখানে ইচ্ছে নিয়ে যেও,,,,
শ্রাবণের মাঃ কিন্তু খালাম্মা,,,, আমি ওকে এক মুহূর্ত সয্য করতে পারবো না,,,,, ওকে দেখলে আমার ছেলের না থাকা আমাকে শেষ করে দিবে,,,, ও আমার ছেলের খুনি,,,,
দাদীঃ বউমা,,,, এটা নিয়ম,,, আমি আর কোনো কথা শুনে চাই না,,, ওকে শ্রাবণের রুমে পাঠাও,,,
নিশিতাঃ (আমি এখন সবার হাতের পুতুল,,,, যে যেভাবে বলবে সেভাবেই করবো,,,, কিছু বলার নেই আমার,,,, খালামুনি শ্রাবণের রুমের সামনে নিয়ে দাঁড় করালো,,,)
ছোট খালাঃ তুই যা,,, গোসল করে নে,,,, আমি আসছি,,,,।
নিশিতাঃ (খালামুনি চলে যেতেই রুমের দরজা ঢেলে ভেতরে গেলাম,,,, ভেতরে গিয়ে বুক ফেটে কান্না আসছে,,, রুমটায় এখনো বাসর সাজানো,,,, এতো কিছুর মধ্যে হয়তো এই রুমের কথা সবাই ভুলে গেছে,,,,, পুরো রুম অনেক সুন্দর করে সাজানো,,,,যেমনটা শ্রাবণ বলেছিলো)
★★★
শ্রাবণঃ হ্যালো নিশু,,,,
নিশিতাঃ হুম,,,,
শ্রাবণঃ রাতে খেয়েছিস,,,
নিশিতাঃ হুম,,, তুমি,,,??
শ্রাবণঃ হুম,,,,,কী করছিলি,,,??
নিশিতাঃ কিছু না,,,,, তুমি,,,??
শ্রাবণঃ তোর কথা ভাবছিলাম,,, আমার স্বপ্ন পূরণের কথা ভাবছিলাম,,,, নিশু শোন না,,,,আমাদের বাসরঘর না আমি নিজে হাতে সাজাবো,,,, তোর পছন্দের রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে,,, রুমের প্রতিটা কোণায় রজনীগন্ধা থাকবে,,,, তুই যখন ঐ রজনীগন্ধার মাঝে বসে থাকবি আমি সোফায় বসে তোকে দেখবো,,,,, কম হলেও দু ঘন্টা শুধু দেখবো,,,,(অস্থির সুরে)
নিশিতাঃ (আমি তো উনাকে ভালোবাসি না,,, তাহলে উনার এই কথাগুলো এমন অদ্ভুত ভালোলাগা এনে দিচ্ছে কেনো,,,)
শ্রাবণঃ কিছু বলছিস না কেন,,,??
নিশিতাঃ শুনছি তো,,,,
শ্রাবণঃ জানিস খুব ইচ্ছে ছিলো তোর সাথে জমিয়ে প্রেম করবো,,, তারপর বিয়ে,,,, কিন্তু তুই আমার ভালোবাসাটা বুঝলি না,,, বিয়ের পর ঠিকই বুঝবি,,, তবে বুঝতে বেশি দেরি করিস না,,, তাহলে পরে হয়তো আফসোস করবি,,,, এখনও বিয়ের দুদিন বাকি,,,, বিয়ের পর আগে প্রেম করবো তারপর সংসার,,,,, মনে থাকবে,,,??
নিশিতাঃ হুম,,,,,
শ্রাবণঃ তুই শুধু হুম হা করছিস কেনো,,,?? কিছু বলার নেই,,,??
নিশিতাঃ কী বলবো,,,??
শ্রাবণঃ তোর কোনো স্বপ্ন নেই,,,??
নিশিতাঃ আছে,,, পরে বলবো,,,
শ্রাবণঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,, আমরা সারারাত গল্প করবো বেলকনিতে বসে,,,,, সেদিন তোর মনের সব কথা শুনবো,,,,??
★★★
নিশিতাঃ (ধীরে ধীরে বেলকনিতে চলে গেলাম,,,,, ফ্লোরে একটা মাদুর পাতানো,,,, বেলকনিটাও সাজানো,,,, বসে পড়লাম মাদুরে,,,) অনেক কথা তো বলার ছিলো,,,, না শুনেই চলে গেলে,,, ছোটবেলা থেকে হারাতে হারাতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি শ্রাবণ,,,,,। এই বুকে অনেক কথা জমে আছে,,, কখনো কারো সাথে শেয়ার করার সুযোগ হয়নি,,, ভেবেছিলাম তোমার বুকে মাথা রেখে সব বলবো কাল,,,, নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসবো,,, আমাদের ছোট একটা সংসার হবে,,, এতো স্বপ্ন দেখিয়ে এভাবে একা ফেলে চলে গেলে,,,, কেনো শ্রাবণ কেনো,,,,???(চিৎকার করে কান্না করে,,, শ্রাবণের চলে যাওয়ার পর এই প্রথম কান্না করলাম,,, কিছুতেই থামছে না,,,, উঠে রুমে চলে এলাম,,, ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় চোখ গেলে নিজেকে দেখে চমকে গেলাম,,,, বিয়ের সাজ এখনো আছে,,, গায়ে বিয়ের বেনারসি,,, সাজটা নষ্ট হয়ে অনেক বাজে লাগছে,,,, এই সাজ কেমন বিষের মতো লাগছে,,, দৌঁড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম,,,, শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম তার নিচে,,,,)
★★★
শ্রাবণঃ তুই কাঁদছিস কেনো নিশু,,,,?? তোর চোখের পানি আমার সয্য হয়না,,,
নিশিতাঃ তুমি তো কাঁদালে,,, কেনো একা ফেলে চলে এলে,,,,??
শ্রাবণঃ আমাদের একসাথে পথচলা হয়তো এতোটুকুই লিখেছিলো ওপরওয়ালা,,,, তাই দুজনের রাস্তা দু’দিকে চলে গেলো,,,,
নিশিতাঃ আমার যে কষ্ট হচ্ছে,,,, আমি যে মানতে পারছি না,,,, অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে,,,
শ্রাবণঃ তোর কেনো কষ্ট হচ্ছে,,,?? তুই তো আমাকে ভালোবাসতি না,,,(মুচকি হেঁসে)
নিশিতাঃ আমি,,,,,(ধীরে ধীরে শ্রাবণ কুয়াশার আড়ালে চলে গেলো,,,) শ্রাবণ কোথায় তুমি,,,?? শ্রাবণ সামনে এসো প্লিজ,,,,, শ্রাবণ,,,,,,,,,,,
★★★
ছোট খালাঃ নিশিতা,,,, কী হয়েছে,,,?? কাকে ডাকছিস তুই,,,?? চোখ খোল,,,,
নিশিতাঃ ছোট খালার গলা পেয়ে ধীরে ধীরে চোখ খোলে খালাকে দেখতে পেলাম,,,,??
খালামুনিঃ এখন কেমন লাগছে,,,??
নিশিতাঃ (এক নিমিষে আবার সব মনে পরে গেলো,,, শ্রাবণ নেই,,, শাওয়ারে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে সব ঝাপসা হয়ে আসে তারপর আর কিছু মনে নেই)
খালামুনিঃ ভাগ্য ভালো ওয়াশরুমের দরজা খোলা রেখেছিলি,,,, আমি গিয়ে দেখি সেন্সলেস হয়ে পরে আছিস,,, মাথায় ব্যান্ডেজ ভিজে আবার রক্ত বের হচ্ছিলো,,, ডক্টর এসে আবার ব্যান্ডেজ করে দিয়ে গেছে,,,,
নিশিতাঃ (চারদিকে চোখ বুলিয়ে বুঝলাম রাত হয়ে গেছে,,, রুমে কোনো ফুলের ছিটেফোঁটা নেই,,, সব স্বাভাবিক,,,)
খালামুনিঃ তুই বস আমি তোর জন্য খাবার আনছি,,,
নিশিতাঃ( খালামুনি আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে বের হয়ে গেলো,,, আমি অনেক কষ্টে উঠে বসলাম,,, গায়ে সাদা কাপড় দেখে অবাক হলাম,,, ওহ্ আমি তো এখন বিধবা,,,, স্বামীর স্পর্শ না পেয়েও বিধবা,,,, শ্রাবণের কথা মনে পরে গেলো আবার)
★শ্রাবণঃ সাদা ড্রেসে তোকে কতটা পবিত্র লাগে সেটা তুই জানিস নিশু,,,, একদম সদ্য ফোটা সাদা গোলাপ,,,,আমাদের বিয়ের পর তুই শুধু সাদা ড্রেস পরবি (দুষ্টু হেঁসে চোখ টিপ মেরে)
খালামুনিঃ নে খা কর,,,(এক চামচ সুপ মুখের সামনে নিয়ে,,,,)
নিশিতাঃ আমার সাথে কেনো এমন হয় সবসময়,,,, খালামুনি,,,,??(টলমল চোখে তাকিয়ে)
খালামুনিঃ (ওর মুখের দিকে তাকালাম,,, কী বলে সান্তনা দিবো তোকে,,,, মুখের ভাষাও যেনো কেড়ে নেওয়া হয়েছে,,,,, এতো নিষ্পাপ ফুলটাকে আল্লাহ কেনো এতো কষ্ট দিচ্ছে সে আল্লাহ ভালো জানেন,,,)
নিশিতাঃ উত্তর নেই তো,,,?? জানি আমি,,, এর উত্তর কারো কাছে নেই,,,,,। না না আছে তো,,, আমি অপয়া তাই আমার সাথে সবসময় এমন হয়,,,, কিন্তু আমার আপন মানুষগুলোকে কেনো কেড়ে নেয় আল্লাহ,,, তার পরিবর্তে আমাকে নিলেই তো হয়,,,, আমার জন্য এই পৃথিবীতে কাঁদার কেউ নেই,,,,
খালামুনিঃ আমার ভালোবাসার কোনো দাম নেই,,,,?? (টলমল চোখে,,,)
নিশিতাঃ সেই ভালোবাসার জোরেই তো নিশ্বাস চলছে,,, তবে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি খালামুনি,,, বড্ড ক্লান্ত,,,, এবার একটু শান্তি চাই আমার,,,,
খালামুনিঃ খেয়ে নে,,,, সেই গতকাল হয়তো কিছু মুখে দিয়েছিলি,,,
শ্রাবণের মাঃ হ্যাঁ হ্যাঁ খা,,, বেশি করে খা,,,। বাপ খেয়ে পেট ভরেনি মা খেয়েছিস,,, মা খেয়েও পেট ভরেনি এখন আমার ছেলেটাকেও খেয়ে নিয়েছিস,,, এখন আমরাই বাকি আছি,,,,(কান্না করতে করতে,,,) মোমেনা(ছোট খালা) এই অপয়াকে তুই নিয়ে যা,,, একে দেখে আমি এক মুহুর্ত শান্তি পাচ্ছি না,,,,,,
নিশিতাঃ (বড় খালামুনির এমন কথা শুনে কারো গলা দিয়ে খাবার নামবে কিনা আমার জানা নেই,,, নিচের দিকে তাকিয়ে আছি আর টপটপ পানি পরছে চোখ থেকে,,,,)
খালামুনিঃ আমি তো নিয়ে যেতে চাইছি কিন্তু আন্টি নিয়ে যেতে দিচ্ছেন না,,,
দাদীঃ বউমা আবার কী হয়েছে,,,??
শ্রাবণের মাঃ খালাম্মা আমি এই মেয়েকে সয্য করতে পারছি না,,, আপনি দয়া করে একে নিয়ে যেতে দিন,,,
দাদীঃ এই মেয়েকে আমি খুশি হয়ে রাখছি না,,, আজ এই মেয়ের জন্য আমার দাদু ভাই চলে গেলো,,,, কিন্তু আমি চাই না বিধান পারলে কোনো ভুল হোক,,,, চার মাস দশ দিন হলে আর এক মিনিটও এই মেয়ে,,,, এই বাড়িতে থাকবে না,,, কিন্তু তার আগে এ কোথাও যাবে না,,,
নিশিতাঃ (দাদী কথাগুলো বলে চলে গেলো,,, বড় খালামুনিও আমার দিকে ঘৃণার চোখে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো,,,, ছোট খালামুনি খাবারটা আমার মুখের সামনে আনতে গিয়েও রেখে দিলেন,,, হয়তো বুঝতে পেরেছেন এসব শুনেও খাওয়া সম্ভব নয়,,,,, সুপের বাটিটা পাশের টেবিলের ওপর রেখে রুম থেকে চলে গেলো,,,, বেড থেকে ধীরে ধীরে নেমে আবার বেলকনিতে গেলাম,,, এখানেও সব গুছানো,,,, তখনকার সেই সাজানো আর কিছুই নেই,,, তবে টবে লাগানো সাদা গোলাপ গাছে ফুল ফুটেছে,,, সাথে অনেক কলি,,,, বেতের চেয়ারটায় হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করলাম,,,,,)
শ্রাবণঃ সাদা গোলাপ আমার প্রিয় ফুল,,, এখানে কেনো লাগিয়েছি জানিস নিশু,,,,
নিশিতাঃ হ্যাঁ বলেছিলে তো,,,,
শ্রাবণঃ কী বলেছিলাম বল দেখি,,,??
নিশিতাঃ সবাই যখন গভীর ঘুমে বিভোর থাকবে,,, তখন তুমি আর আমি এই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রাতের শহর উপভোগ করবো,,,, আমার খোলা চুলে তুমি একটা গোলাপ ছিঁড়ে গুঁজে দিবে,,,, চুল আর গোলাপের সুভাস একসাথে নিবে চুলে মুখ গুঁজে,,,, আর সাথে এক কাপ চায়ে দুজন চুমুক দেবো একটু পরপর,,,,
শ্রাবণঃ বাহ্ ,,,, তোর তো দেখি মাথা কাজ করতে শুরু করেছে,,,,,
নিশিতাঃ,,,,,,,,,,,।।
শ্রাবণঃ নিশু,,,,,
নিশিতাঃ হুম,,,,,,,,,
শ্রাবণঃ ভালোবাসি,,,, (কানের কাছে ফিসফিস করে)
নিশিতাঃ(হঠাৎ চোখ খোলে শ্রাবণকে খোঁজতে লাগলাম আশেপাশে,,,,। নেই তো,,, কেউ নেই,,,,, আছে শুধু নিকষকালো অন্ধকার,,,, যার মাঝে আমি  আবছা আলো খোঁজে চলেছি বারবার,,,, কিন্তু তা কী আর পাবো,,,??)
চলবে,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com