Breaking News

তুই আমাই থাকবি | পর্ব-০২

বারান্দার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে তামিম আর মনে মনে ভাবছে,
রাগের মাথায় তো মায়াকে নিজের ভালোবাসার কথাটা বলে দিল এবার কি হবে.?
সে তো চেয়েছিল মায়ার সাথে আরও কিছুদিন ফ্রেন্ডলি ভাবে কাটিয়ে তাকে ভালো করে বুঝতে।।
কিন্তু মায়া আজ যা করলো তাতে তার আর সে-সব করা হলো না।।
আর তখন রাগের মাথায় মায়াকে নিজের মনের কথাগুলো বলে দিল।।
আচ্ছা মায়া এখন কি ভাবছে.?
দূর কি ভাববে ও তো নিজে থেকেই আমায় প্রপোজ করেছে, তাহলে নিশ্চয় সে আমায় ভালোবাসে।। আমিও তাকে ভালোবাসি আর ভালোবাসার কথা বলেও দিয়েছি এইসব নিয়ে আমি এতো চিন্তা করছি কেন.?
মায়া আবার ওইখানে একা একা বসে আছে যাই গিয়ে দেখে আসি ওর কোনো কিছু লাগবে নাকি।।
এদিকে মায়া তামিমের কথাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে নিজের চিন্তা করতে মগ্ন।।
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসছে, ভার্সিটি সেই কখন ছুটি হয়ে গেছে।।
এখন তার বাসায় থাকার কথা ছিল কিন্তু সে এখন এক অজানা জায়গায় বন্ধি হয়ে আছে।।
এখন সে কীভাবে বাসায় যাবে, কখন বাসায় যাবে।।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই তার মা-বাবাও তার জন্য চিন্তা করা শুরু করে দিয়েছেন।।
তার বাবা আবার প্রেসারের রোগী, কোনো বিষয় নিয়ে বেশি চিন্তা করলে উনার আবার প্রেসার বেড়ে যায়।।
মায়ার এখন নিজের থেকে মা-বাবাকে নিয়েই বেশি চিন্তা হচ্ছে।।
না জানি আম্মু-আব্বু এখন কি করছেন।।
এইরকম নানান বিষয় নিয়ে ভেবে যাচ্ছে মায়া।। এমন সময় রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো তামিম।।
তারপর আগেরকার মতোই মায়ার কাছে এসে পাশে থাকা চেয়ারটা নিয়ে মায়ার সামনা-সামনি বসে পরলো সে।।
তামিমঃ আমার জানপাখিটা কি ভাবছে.?
মায়াঃ প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন আমি বাসায় যাব।।
আম্মু-আব্বু নিশ্চয় আমার জন্য চিন্তা করছেন প্লিজ আমায় যেতে দিন (মিনতির শুরে)।।
তামিমঃ এটা তো হবে না জানপাখি, ভুল যেহেতু করেছ তাহলে শাস্তি তো পেতেই হবে।।
তবে প্রথমবার বেশি শাস্তি দিব না।।
কয়েকদিন শুধু এইখানে থাকবে তারপর এমনিতেই ছেড়ে দিব।।
মায়াঃ এইসব কি বলছেন আপনার মাথা ঠিক আছে তো.? কি এমন ভুল করেছি আমি যার জন্য আমায় এতোদিন এইখানে থাকতে হবে।।
তামিমঃ ওই যে আজ ক্লাসের মধ্যে একটা ছেলের সাথে কথা বলেছিলে।।
মায়াঃ আমি তো বললামই যে আমি ওই ছেলের সাথে ইচ্ছা করে কথা বলি নি।।
জাস্ট একটা পড়ার বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলাম।।
তা ছাড়া আমি ওই ছেলের কাছে যাইনি, ওই ছেলেটাই আমার কাছে এসেছিল পড়া নিয়ে একটা কথা বলতে।।
তামিমঃ তার জন্য বুঝি একজন আরেক জনের গা ঘেষে বসতে হয়।।
মায়াঃ না আসলে
তামিমঃ চুপ আর একটা কথাও নয়।। আমি যা বলেছি তাই হবে।।
আর থাকা নিয়ে তোমার এতো চিন্তা করতে হবে না।।
তোমার জন্য আলাদা করে রুম ঘুছিয়ে রাখা হয়েছে যেখানে শুধু তুমি থাকবে আর কেউ না।।
আর বাসার কাউকে নিয়ে অযথা চিন্তা করতে হবে না।।
বাসায় ফোন করে জানিয়ে দাও যে তুমি আজ তোমার এক বান্ধবীর বাসায় থাকবে।।
মায়াঃ আম্মু-আব্বু আমাকে ফেলে কখনো একা খাবার খায়নি আর কখনো কোনো ফ্রেন্ডের বাসায় থাকতেও দেয়নি।। আর আমি কখনো আম্মু-আব্বুকে মিথ্যা কথা বলি নি আজকেও বলতে পারব না প্লিজ আমাকে বাসায় যেতে দিন (মিনতির শুরে)।।
তামিমঃ মাঝেমধ্যে নিজের ভালোর জন্য মিথ্যা কথা বলতে হয় জানপাখি।।
বাসার কারও নাম্বার বল ফোন লাগিয়ে দিচ্ছি।।
মায়াঃ নিজের ভালোর জন্য মিথ্যা কথা বলতে হবে মানে.?
তামিমঃ হুম কারণ তুমি যাই কর না কেন তুমি এইখান থেকে কোথাও যেতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি যেতে না দিচ্ছি।। তাই বলছি বাসার কারও নাম্বার দাও আমি ফোন লাগিয়ে দিচ্ছি।।
নাহলে বাসার মানুষ শুধু শুধু চিন্তা করবে তোমার জন্য।।
মায়াঃ বুঝতে পেরেছে আজকে তামিম ওকে কোনো ভাবেই ছাড়বে না।।
এখন কি করা যায়, কি করা যায়.?
হুম পেয়েছি একবার কোনো রকমে বাসায় কথা বলতে পারলে ওদেরকে বলে দিব যে আমায় কিডন্যাপ করা হয়েছে।। তাহলে নিশ্চয়ই আব্বু পুলিশের দ্বারা আমাকে খুজে বের করবে (মনে মনে কথাগুলো ভাবছে)।।
তামিমঃ এতো কি ভাবছ জানপাখি.?
মায়াঃ হে না মানে কিছু না।। আমার হাত খুলে দেন আমি বাসায় ফোন করে বলে দিবনে আমি আজ আমার এক বান্ধবীর বাসায় থাকব।।
তামিমঃ হাত তো এখন খুলা যাবে না জানপাখি।। তুমি নাম্বার বল আমি ফোন লাগিয়ে দিচ্ছি তোমার কাছে।।
মায়াঃ উপায় না পেয়ে তার আম্মুর নাম্বার তামিমকে বললো।।
তামিমঃ নাম্বারগুলো তুলে ফোন লাগিয়ে মোবাইলটা মায়ার কানের কাছে ধরলো আর বললো, ভুলেও তাদেরকে কিছু বুঝতে দিবা না নাহলে কিন্তু তোমার পরিবারের কারও ক্ষতি হতে পারে।।
কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর মায়ার আম্মু ফোন রিছিভ করলেন।।
হ্যালো কে বলছেন.? (মায়ার আম্মু)
মায়াঃ হ্যালো আম্মু আমি মায়া বলছি।।
মায়া.! আম্মু তুই এখন কোথায় আছিস.? সন্ধ্যা হয়েগেছে অথচ এখনো বাসায় আসিস নাই কেন.?
(অস্থির কণ্ঠে)
মায়াঃ আসলে আম্মু আমি আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায় আছি আর আজকে ওইখানেই থাকব।।
তোমরা খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পর আমি কাল সকালেই বাসায় চলে আসবো।।
ফ্রেন্ডের বাসায় কেন থাকবি.?
তুই তো কখনো রাতে বাহিরে কোথাও থাকিস না তাহলে আজ কীসের জন্য ফ্রেন্ডের বাসায় থাকবি.?
মায়াঃ আসলে আম্মু আজকে আমার এক ফ্রেন্ডের জন্মদিন তাই সে আমায় জোর করে তার বাসায় রেখে দিয়েছে।। আমি কাল সকালেই বাসায় চলে আসবো প্রমিস।।
কিন্তু তোর আব্বু যে
মায়াঃ তুমি আব্বুকে একটু বুঝিয়ে বল প্লিজ আমার আজ (মায়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই তামিম ফোন কেটে দিল)।।
তামিমঃ অনেক কথা হয়েছে তোমার কি এখন খুদা লেগেছে.?
মায়াঃ নাহ
তামিমঃ ওকে তাহলে তুমি থাক আমি একটু পরে আবার আসবো।।
তারপর তামিম আবার বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।।
এমন সময় হঠাৎ তার ফোনে একটা কল আসলো।।
পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখল তার আব্বু কল করেছেন।।
কোনোকিছু না ভেবেই সে কলটা রিছিভ করলো।।
তামিমঃ হে আব্বু বল।।
–কোথায় তুমি.?
তামিমঃ আমি তো এখন আমাদের বাগান বাড়িতে আছি, কেন.?
–এইসময় তুমি ওইখানে কি করছ.? বাগান বাড়িতে তো তুমি কোনো কাজ না ছাড়া যাও না।।
তামিমঃ হে একটা জরুরি কাজে এইখানে এসেছিলাম।। আজকে এইখানেই থাকব কাল ভার্সিটি শেষে বাসায় আসবো।।
–ওকে তোমার যা ইচ্ছা কর এখন ফোন রাখলাম তাহলে।।
তামিমের বাবা রফিক আহমেদ ফোন কেটে দিলেন আর তামিম ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে আবার আকাশের দিকে এক মনে তাকিয়ে রইলো।।
এদিকে মায়া বসে বসে ভাবছে, তামিম কে প্রপোজ করে তো সে এখন ফেঁসে গেছে।।
সে তো তামিমকে ভালোবাসে না,
ওইদিন বাজি জিতার জন্য ভুল করে তামিম কে সে প্রপোজ করে ফেলেছে।।
এখন সে কি করবে.? তামিম কে কি ওইদিনের ঘটনা টা বলে দিবে।।
বললে যদি তামিম ওর কোনো ক্ষতি করে।।
না বললে তো আবার তামিম তার পিছনে সবসময় ঘুরঘুর করতে থাকবে।।
সে কিছু বলতেও পারবে না কারণ তামিমকে সে ভিষণ ভয় পায়।।
কিন্তু এইভাবে চলতে থাকলে তো হবে না।।
তাহলে এখন তার কি করা উচিত.? মায়ার মাথায় যেন কিছুই কাজ করছে না।।
কি থেকে কি করবে সে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।।
রাত্রিবেলা তামিম মায়ার জন্য গরুর মাংস ভোনা করে একটা প্লেটে ভাত নিয়ে অন্য আরেকটা প্লেটে মাংস ভোনা নিয়ে চলে আসলো মায়ার কাছে, যেখানে সে মায়াকে বেঁধে রেখেছে (তামিম আবার সবকিছুই রান্না করতে পারে।। তার রান্নাও কিন্তু অনেক ভালো হয়।। ছোটবেলায় সে সবসময় তার মায়ের সাথে রান্নাঘরে থাকতো।। আর তার মায়ের রান্না করা দেখে সেও আস্তে আস্তে সবকিছু শিখে ফেলে।।
এমনকি সে মাঝেমধ্যে বাসায় সবার জন্য রান্নাও করে)।।
রুমে ঢুকে তামিম একটা চেয়ার টেনে মায়ার পাশে বসে পরলো তারপর প্লেটে একটু মাংস ভোনা নিয়ে ভাত ভালো করে মাখিয়ে মায়ার মুখের সামনে ধরে বললো, নাও হা কর তোমার জন্য গরুর মাংস ভোনা করে এনেছি।।
মায়ার আবার গরুর মাংস খেতে অনেক ভালো লাগে।। বলতে গেলে এই খাবারটা তার পছন্দের খাবারের মধ্যে ১ম তালিকায় রয়েছে।। আজ সকালে সে তার আম্মুকে বলেছিল গরুর মাংস রান্না করতে।। তিনি রান্না করতে পারবেন না বলাতে মায়া রাগ করে না খেয়েই বাসা থেকে বেরিয়ে পরে।।
আর এখন তার সেই পছন্দের খাবার তার সামনে.! মায়া কোনোকিছু না ভেবেই হা করে ফেললো।। তামিমও সুন্দর করে খাবারের লুকমা টা মায়ার মুখে ঢুকিয়ে দিল।।
মায়াঃ আহ কি টেস্ট খাবারের।। এই ব্যাটা দেখছি অনেক ভালো রান্না করতে পারে।।
কিন্তু রান্নাটা যে ভালো হয়েছে এটা উনাকে বুঝতে দেওয়া যাবে না।।
নাহলে বলা তো যায়না বেশি খাইয়ে দিতে পারে।।
মায়া খাচ্ছে আর মাঝেমধ্যে তামিমের দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে যেটা তামিম বুঝতে পারছে না।।
মায়ার খাওয়া শেষ হলে তামিম প্লেটটা নিয়ে রান্নাঘরে চলে এলো।।
তারপর ওই প্লেটের মধ্যেই খাবার নিয়ে সেও খাবার খেয়ে নিল।।
খাওয়া শেষ করে তামিম হাত ধুয়ে একটা গার্ডকে ডেকে সবকিছু ঘুছিয়ে নিতে বললো মায়ার কাছে চলে আসলো।। মায়ার কাছে এসে কোনো কথা না বলেই মায়ার হাত-পা খুলে দিল।।
তারপর তার হাত ধরে তাকে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে আসলো।।
তামিমঃ এই রুম স্পেশালি তোমার জন্য ঘুছিয়ে রাখা হয়েছে।।
ওইটা ওয়াশরুম, হাত মুখ ধুয়ে এসে ঘুমিয়ে পর।।
আর কোনো কিছুর দরকার হলে আমায় ডাক দিবা আমি চলে আসবো।।
আর হে ভুলেও এইখান থেকে পালানোর চেষ্টা করবে না কারণ বাড়ির সব জায়গাতেই আমার বডিগার্ড রয়েছে।। পালাতে চাইলেও পালাতে পারবে না কারণ ওরা তোমায় ধরে ফেলবে।।
আর একবার যদি পালাতে গিয়ে ধরা পরে যাও তাহলে তোমার কি অবস্থা হবে সেটা তখনই বুঝতে পারবে।।
এখন তাহলে আমি গেলাম তুমি ঘুমিয়ে পর (কথাগুলো বলেই তামিম রুমের দরজাটা বাহির থেকে বন্ধ করে চলে গেল)।।
মায়াঃ ব্যাটা ওয়ার্নিং দিয়ে গেল নাকি হুমকি দিল.? দুর এইসব আমার ভেবে লাভ নেই, অনেক ঘুম পাচ্ছে এবার ঘুমিয়ে পরি।।
তারপর মায়া ওয়াশরুম থেকে হাত মুখ এসে ঘুমিয়ে পরলো।।
বিছানা একদম তুলার মতো নরম তাই ঘুম আসতে তার বেশি সময় লাগলো না।।
পরেরদিন সকালবেলা মায়ার ঘুম ভাঙলো কারও হাতের ছোঁয়া পেয়ে।।
চোখ খুলতেই সে দেখল তামিম তার মাথার পাশে বসে আছে আর তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।।
তামিমকে এতো কাছে দেখে সে ভয়ে লাফ মেরে উঠে পরলো।।
তামিমঃ কি হলো জানপাখি তুমি উঠে পরলে কেন.?
মায়াঃ আআপনি আপনি আমার কাছে বসে কি করছিলেন.? (হালকা ভয় পেয়ে)
তামিমঃ দেখছিলাম তোমাকে সাজালে বেশি সুন্দর লাগবে নাকি না সাজালে।।
মায়াঃ মানে আমাকে সাজাবেন কীসের জন্য.?
তামিমঃ বিয়ের দিন তো বউকে একটু হলেও সাজতে হয় তাইনা.?
মায়াঃ বিয়ের দিন মানে কার বিয়ের কথা বলছেন আর বউ কে.?
তামিমঃ কেন তুমি বউ, একটু পরেই তো আমাদের বিয়ে হবে তারপর তুমি হবে আমার বউ আর আমি হব তোমার স্বামী (মুচকি হেসে)।।
মায়াঃ তামিমের কথা শুনে মায়ার মনে ভূমিকম্প শুরু হতে লাগলো।।
তাহলে আজকে তাকে বিয়ে করার জন্য তামিম তাকে এইখানে ধরে রেখেছে.?
কিন্তু আমি তো উনাকে ভালোই বাসি না বিয়ের তো প্রশ্নই উঠে না।।
এখন আমি কি করবো.?
হে উপরওয়ালা প্লিজ আমাকে এই শয়তানটার কাছ থেকে বাঁচাও (মনে মনে)।।
চলেবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com