Breaking News

লঙ্কাবতী । পর্ব-০৩

প্রভা সাদের কাছাকাছি চলে এসেছে।হাতদুটো পজিশনে এনে যখনই ধাক্কা দিতে যাবে তখনই সাদ ঘুরে দাড়ালো আর প্রভার ধাক্কা আচমকা সামলাতে না পেরে সাদ পড়ে যেতে নিলেই প্রভার হাত ধরে ফেললো তবুও শেষ রক্ষা হলো না দুজনই ধুপ করে পড়ে গেলো।
দূর থেকে এটা দেখে সাদিয়া দৌড়ে এলো।সাদিয়ার পিছনে আদিও ছিলো।আর এদিকে প্রভা আর সাদ উঠে দাড়িয়ে ধুলো ঝাড়াছে।আদি এসেই বলল”কি হইছে রে দোস্ত?”
“আরে এই মেয়েটা কোথা থেকে এসে ধাপ করে আমাকে ধাক্কা মারে।ব্যালেন্স রাখতে না পেরে আমি পড়ে যাই।”
প্রভা দাত কটমট করতে করতে বলল”আপনি আমার হাত ধরে আমাকেও ফেললেন কেনো?”
“আরে আমি তোমাকে ফেলতে চাই নি।আমি ভেবেছি তোমার হাত ধরে ব্যালেন্সটা রাখবো কিন্তু তুমিই উল্টো আমার ওপর পড়ে গেলে।”
“আচ্ছা সরি।” প্রভা মুখটা ছোটো করে বলল।
সাদ মুখটা ভেঙচিয়ে বলল”লঙ্কাবতী আবার সরিও বলতে পারে।বাহ!”
প্রভা মুখটা ভেঙচিয়ে চলে যেতে লাগলো।ওর পিছনে সাদিয়াও যেতে লাগলো।সাদি চলে যেতে নিলেই আদি পিছনে থেকে বলল”আমাকেও কেউ এভাবে একটা ধাক্কা দিলে কতো ভালো হতো।”
সাদিয়া আদির কথা শুনতে পেয়ে মনেমনে বলল”কতো বড়ো লুচু কথায়ই বোঝা যায়।”
এবার আদি সাদের সামনে দাড়িয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বলল”বাবু চলো সেলুনে।”
সাদ ঢোক গিলে বলল”ক..কেনো?”
“ভুলে গেলি?সেদিন যে আমরা বাজি ধরেছিলাম।”
“দোস্ত অন্যকিছু কর তবুও আমার চুলের দিকে তাকাইস না।আমার এতো সুন্দর চুলগুলো ফেলে দিলে কোনো মেয়েই আমার দিকে তাকাবে না।প্লিজ দোস্ত!আমার মাসুম চুলগুলোর ওপর অত্যাচার করিস না।”
আদি একটা ভিলেনী হাসি দিয়ে বলল”সেটা তো হবে না।শর্ত যা ছিলো তাই হবে।”
আদি সাদের দিকে এগুতে লাগলো।সাদ আদির হাত থেকে বাঁচার জন্য ভো দৌড় দিলো।পিছনে আদিও দৌড়াচ্ছে।
সাদের প্রচুর বিরক্ত লাগছে।বারবার নিজের টাকলা মাথায় হাত দিয়ে বিরক্ত হয়ে উঠছে।নিজেকে কেমন যেনো এলিয়েন এলিয়েন লাগছে।সব হয়েছে আদির বাচ্চার জন্য।সাদ দাঁত কটমট করতে লাগলো।এতক্ষণ বসেবসে আদি,তামিম সুমন ওরা মিলে মজা নিয়েছে।সাথে ওর নিজের মা, বাবা তো ছিলোই।আজকে সবাই মিলে ওর মাথা নিয়ে হাসাহাসি করেছে।সাদ নিজের টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা ধারালো কাঁচি বের করে নিজের হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত ১১.০০ টা বাজে।রাত বারোটায় আদি শুয়ে পড়ে।তারমানে আরো একঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে।সাদ একঘন্টা বসেবসে ছটফট করতে লাগলো।কখন ১২.০০ টা বাজবে আর কখন ও বের হবে।তো অনেক্ক্ষণ অপেক্ষা করার বারোটা বাজতেই সাদ কাঁচিটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো।দুই বাড়ি পরেই আদি দের বাড়ি।আদির বাসার সামনে পৌঁছে সাদ বারান্দা দিয়ে ওর ঘরে ঢুকলো।আদি খাটে খুব আরামে ঘুমিয়ে আছে।সাদ কয়েকবার পরীক্ষা করলো আসলেই কি জেগে আছে নাকি ঘুমিয়ে আছে।যখন নিশ্চিত হলো যে ঘুমিয়ে গেছে তখনই কাঁচিটা বের করে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে মনেমনে বলল”কালকে সকালে বুঝবি মজা।চান্দু।”
এটা বলে কাঁচি দিয়ে উল্টা পাল্টা চুল কাটা আরম্ভ করে দিলো।মুটামুটি চুলের সর্বনাশ করে সাদ আস্তে আস্তে নিজের বাসায় গিয়ে শান্তিতে শুয়ে পড়লো।
আয়নার সামনে দাড়িয়ে আদি ভূত দেখার মতো চমকে উঠে চিল্লিয়ে উঠলো।একি!চুলের এ অবস্থা কেনো?আদির মা এসে দেখে চুলের একদম দফারফা অবস্থা।আদির মা বিরক্তির স্বরে আদিকে বকতে বকতে বলল”চুল ফেলতে সেলুনে যেয়ে ফেলতি।ঘরে ফেলার কি দরকার ছিলো।এখন যা সেলুনে গিয়ে চুল ফেলে দিয়ে আয়।”
আদি কেঁদে ফেলার মতো অবস্থা।কোনোমতে মাথায় টুপি পড়ে সেলুনে গিয়ে টাকলা হয়ে সোজা সাদের বাসায় গিয়ে ওর ঘরে ঘরে গিয়ে ঘুমের মধ্যেই মারামারি শুরু করে দিলো।সাদও শুরু করলো।একপর্যায়ে মারামারি কর দুজনই ক্লান্ত হয়ে বসে পড়লো।দুজনেই দুজনের দিকে চেয়ে হাসাতে লাগলো।
সাদিয়া আর প্রভা হাটছে কলেজে যাওয়ার জন্য।আকাশে মেঘ করেছে।যেকেনো সময় বৃষ্টি হতে পারে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে।কিন্তু আজ প্রভা আর সাদিয়ার মনে কোনো তাড়াহুড়ো নেই।দুজনেই ঠিক করেছে বৃষ্টি আসলে আসুক ভিজতে ভিজতে যাবো।কিন্তু বৃষ্টি আসলো না।প্রভা আর সাদিয়া ক্লাস রুমে গিয়ে বসতেই ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি পড়া শুরু হলো।দুজনেরই মেজাজ গরম হয়ে গেলো।কেনো!আরো একটু আগে আসলে কি হতো!যেনো বৃষ্টিটা অপেক্ষা করছিলো ওদের ক্লাসে ঢোকার।যাইহোক এখন আর কিছু করার নেই।জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখা ছাড়া।
আর এদিকে সাদ আর আদি বৃষ্টিতে ভিজছে।দুজনই ভিষণ খুশী।অনেকদিন পর ভীষণ তৃপ্তি নিয়ে বৃষ্টির পানি উপভোগ করা যাচ্ছে।সাদ আদির সামনে দাড়িয়ে বলল”বিয়ে করবি কবে শালা?
বিয়ের বয়স তো পার হয়ে যাচ্ছে তোর।”
“আর তোর বিয়ের বয়স যেনো বসে রয়েছে।তুই করবি কবে সেটা বল।”
“আরে আমি চাইলেও এখন করতে পারবো না আগে ভাইয়া তারপর আমি।কিন্তু তুই তো এখনি করতে পারিস।”
“হ্যা মাও এগুলো বলে ইদানীং যন্ত্রণা দিচ্ছে।”
“হ্যাঁ তো করে ফেল।মেয়েটা কিন্তু খারাপ না।”
আদি তাজ্জব বনে গেলো সাদের কথায়।তারপর বলল”কোন মেয়েটা?”
“আহা!সোনা গো আমার কিচ্ছু বোঝে না।ওই লঙ্কাবতীর সাথে যে মেয়েটা ছিলো ও।”
“ধূর,কি যে বলিস।” আদি অন্যদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল।
সাদ এবার টিটকারি মেরে বলল”হইছে আর লজ্জা পেতে হবে না।”
“ধূর শালা,তুইও তো ওই মেয়েটাকে পছন্দ করিস।”
“তোরে বলছে।ওইটা একটা ঝগড়ুটে মেয়ে।ওকে বিয়ে করার চেয়ে জীবনে বিয়ে না করাই ভালো।”
সাদের কথা শুনে আদি হাসতে লাগলো।সাথে সাদও হাসছে।
মাত্রই ছুটি হয়েছে কলেজ।কিন্তু এখনও বৃষ্টি হচ্ছে।তবে এখন দুজনের কারোই ভিজতে ইচ্ছে করছে না।কলেজের সামনে ছাউনির নিচে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে রিকশার জন্য।কিন্তু রিকশা পাওয়া যাচ্ছে না।আর যা পাওয়া যাচ্ছে তারা কেউ যাবে না।প্রায় আধঘন্টা দাড়ানোর পরও যখন রিকশা পাচ্ছে না কেউ তাই আর দাঁড়িয়ে না থেকে হাঁটা শুরু করলো।বৃষ্টিতে ভিজে দুজনেরই অবস্থা খারাপ।হঠাৎ মনে হলো ওদের মাথায় বৃষ্টি পড়ছে না।দুজনই পিছনে তাকিয়ে দেখলো সাদ আর আদি দাড়িয়ে আছে।আদি বলল”আমাদের কাছে দুটো ছাতা আছে।আপনারা এগুলো নিয়ে যান।”
“না,আমাদের বাসা কাছাকাছি।আর আমরা প্রায় ভিজে গেছি।তাই আমাদের ছাতা লাগবে না।আপনারাই রাখুন।”
“আরে সমস্যা নেই।আপনারা আরো ভিজলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন।নিয়ে যান।”সাদ বলল।
” আমাদের প্রয়োজন নেই।আপনারা প্লিজ চলে যান।”
আদি ছাতাটা সাদিয়ার মাথায় ধরে বলল”চলুন।”
“মানে?”
“মানে আমরা দুজন একসাথে যাবো।ওরা একসাথে আসবে।”
এটা বলে আদি সাদিয়ার হাতে ধরে হাটতে লাগলো।আর সাদও প্রভার মাথায় ছাতা ধরলো।অগত্যা প্রভার সাদের সাথে হাঁটতে হলো।আগে সাদিয়া আর আদি হাটছে আর পিছনে সাদ আর প্রভা হাটছে।সাদিয়া রাগে গমগম করছে।হঠাৎ আদিকে কিছু বলতে গিয়ে খলখলিয়ে হেসে দিলো।আদি ভ্রু কুচকে বলল”হাসছেন কেনো?”
“আপনার মাথার চুল কোথায়?” এটা বলে সাদিয়া আবার হাসতে লাগলো।আদির এবার রাগ উঠছে।এটা নিয়ে এতো হাসার কি আছে।কিন্তু রাগ উঠলেও কিছু বলতে পারছে না।কিছুক্ষণ হেসে সাদিয়া জিগ্যেস করলো”আচ্ছা এটা হলো কি করে?”
আদি মুখ কালো করে সব বলল।সবশুনে সাদিয়া আবারও হাসতে লাগলো।হাসতে হাসতে দেখলো আদি মুখ কালো করে রেখেছে।সাদিয়া এবার হাসি থামিয়ে বলল”সরি,সরি আর হাসবো না।তবে এমনিতেও খারাপ লাগছে না।”
এবার আদি বলল”তুমি তো আমার কষ্ট বুঝতে পারবা না।চুল হলো ছেলেদের অলংকার।এই চুলের জন্য মেয়েরা আমার ওপর ক্রাশ খেতো।”
সাদিয়া হেসে বলল”থাক সব মেয়ের ক্রাশ খাওয়া লাগবে না।যার খাওয়ার কথা সে অলরেডি খেয়ে ফেলেছে।”
এটা বলে আদির দিকে তাকিয়ে একটা দুষ্ট হাসি দিলো।আদি কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাদিয়া বলল”আচ্ছা আজকে আসি।সামনেই বাসা।আল্লাহ হাফেজ।ভালো থাকবেন।”
এটা বলে সাদিয়া হাটতে লাগলো।পেছন থেকে আদি মুচকি হেসে বলল”নাম টা?”
সাদিয়া ও মুচকি হাসলো কিন্তু আদির দিকে না ঘুরেই বলল”সাদিয়া শেখ।”
আদিও উত্তর দিলো”আদিব হাসান।
এরপর দুজনই অন্যপথ ধরলো।
এদিকে প্রভা একটা টু শব্দও করছে না।সাদের কথা বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু মেয়েটা এমন বোবার মতো হাটলে কিভাবে সম্ভব!
তবুও সাদ নিজের থেকেই বলল”লঙ্কাবতী।”
“আমার নাম লঙ্কা না।নয়না রহমান প্রভাতী।”
“আমি কি বলে ডাকবো?প্রভাতী নাকি নয়না?”
“যেটা ইচ্ছা!”
“আমার একটাও ভাল্লাগছে না।আমি লঙ্কাবতী বলে ডাকবো।”
প্রভা চোখ রাঙিয়ে সাদের দিকে তাকালো।সাদ মেকি হেসে বলল”আচ্ছা নয়না ডাকবো।আর লঙ্কাবতী মাঝেমধ্যে ডাকবো।ঠিকাছে?”
“কখনো ডাকবেন না।”
“আচ্ছা।”সাদ মুচকি হেসে মনেমনে বলল” আমি লঙ্কাবতী ই ডাকবো।দেখে নিও।”
প্রভা বাড়ির কিছুটা সামনে এসে বলল”আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ।”
এটা বলে প্রভা চলে যেতে নিলেই।সাদ বলে”শোনো!”
প্রভা ঘুরে দাড়িয়ে বলল”বলুন।”
সাদ নিজের মাথা থেকে টুপিটা সরিয়ে বলল”দেখো।তোমার জন্য আজ আমার চুল নেই।”
প্রভা কিছুক্ষণ বিষ্ময়ে তাকিয়ে ছিলো তারপরই হেসে দিলো।তারপর বলল”আগের থেকে সুন্দর লাগছে।আপনার মাথাটা ছুতে ইচ্ছে করছে।”
সাদ এটা শুনে প্রভার দিকে এগুতে নিলেই প্রভা ভো দৌড় দেয়।
চলবে..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com