Breaking News

কালো বউ । পর্ব -১২



পুরো পরিবার বসে আছি দিদুনের সাথে। ডাক্তার বলেছে দিদুনকে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য।
দিদুন সাফ মানা করে দিয়েছেন।
উনার কথা হলো উনি এখানে থাকবেন না।ডাক্তার আবার বলতেই দিদুন হাসিমুখে বলেছেন যে,
–”ডাক্তার,সবাইকে মরতে হবে,সেটা তার নির্ধারিত সময়ে।
আমি আর বাচবোই বা কয়দিন?কী দরকার শুধুই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকার?
এখানে থাকলে বাঁচা আর মরা সমান লাগবে।
এরথেকে বরং আমি শেষ সময়ে পরিবারের সাথে আনন্দ করে কাটাই।”
এর মধ্যেই হুড়মুড় করে প্রবেশ করলেন নিরা ফুফি।
ফুফি কে দেখে আমার পুরো পরিবার চমকে গিয়েছে,সাথে আমিও।
ফুফি এসেই দিদুনকে জড়িয়ে কান্না করতে লাগলেন,
আর আমরা সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি।
ফুফিকে দেখে দিদুন ও বড় রকম ঝাটকা খেয়েছে।
ও এখানে কী করছে?
বলেই চাচ্চুরা সবাই তেড়ে আসতে লাগলেন।দিদুন ইশারায় সবাইকে চলে যেতে বললেন।
উনাদের নড়চড় না দেখে দিদুন আমাকে বললেন,ওদের সবাইকে বল চলে যেতে।
আমি সবার দিকে তাকালাম,সবাই ধীরে ধীরে বের হতে লাগলেন।
ফুফি কাঁদছে,দিদুনের পা জড়িয়ে কাঁদছে।
দিদুন তেমন কোনো রিয়েকশন দেন নি।উনি শুধু অন্য দিকে চেয়ে রয়েছেন।
—‘কেমন আছেন আম্মা?এখন কেমন লাগছে?’
—‘দিদুন কোনো কথা বলছে না।শুধু শুনছেন।’
ফুফি এবার শব্দ করে কাঁদতে লাগলেন।দিদুনের পা জড়িয়ে বারবার মাফ চাইতে লাগলেন।
—‘জানো আম্মা,আমার সোসাইটির সবাই মনে করে আমি নাকি সবচেয়ে সুখী।
কিন্তুু বিশ্বাস করো আমি সবচেয়ে অসুখী। এ ত্রিশ বছরে একটা রাতেও শান্তিতে ঘুমাতে পারি নি।
কিশোর বয়সের আবেগ সামলাতে না পেরে চলে গিয়েছিলাম তার হাত ধরে।
কয়েক মাস ভালোই চলছিলো সংসার। টাকা ফুরাবার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় অশান্তি।
ওর কাছে টাকা না থাকলে ও পাগল হয়ে যেতো।
শুরু করে দিতে আমার উপর অত্যাচার।
মুখ বুঝে সব সহ্য করছিলাম কারন তখন আমার গর্ভে আবরার ছিলো।
আমি গর্ভবতী জানার পর ও আরো বদলে যায়।
আমার সাথে শারিরীক সম্পর্ক করতে না পেরে ও জড়িয়ে যায় অন্য নারীতে।
আমি এ নিয়ে ওর সাথে কথা বললেই ও এক সেকেন্ড দেরী করতো না আমার গায়ে হাত তুলতে।
এরপর একদিন ও আমাকে ছেড়ে চলে যায়,তখন আবরারের বয়স ১ মাস।
আমি একদম অসহায় হয়ে যাই।কই যাবো?কী করবো?
কীভাবে থাকবো এক মাসের ছেলেকে নিয়ে?
আমার কাছে তখন কিছুই ছিলো না,
বাড়ী থেকে যা নিয়ে গিয়েছিলাম সেসব বেঁচে প্রথম কয়েক মাস সংসার চলেছিলো।
বাড়ী ফিরে আসতে চাইলেও পারতাম না।
কোন মুখে ফিরে আসবো? এক মাসের বাচ্চা টাকা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি কাজের খোঁজে।
না হলে আমি আর আমার বাচ্চা মরে যেতাম।
আল্লাহর কী কুদরত সেদিন রাস্তায় আমার জীবন একদম বদলে যায়।
রাস্তায় হাটতেছিলাম তখন দেখলাম এক মহিলা মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছে।
প্রেশারের রুগী ছিলো।কেউ এগিয়ে আসছিলো না, আমি দ্রুত উনাকে পাশের হাসপাতালে ভর্তি করাই।
ভদ্র মহিলার সেন্স ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করি।
উনার সেন্স ফেরার পর উনি উনার ছেলেকে আর মেয়েকে ফোন দেয়।
এর মধ্যেই উনি আমার জীবনের পুরো কাহিনী শুনেন।
ছেলে মেয়ে এসে আমাকে অনেক বার শুকরিয়া জানালেন।
আমি আবরারকে নিয়ে চলে আসতে চাইলাম কিন্তু ভদ্র মহিলা দেন নি।
উনি আমাকে নিয়ে যান উনার বাড়ীতে।
নতুন আশ্রয় হয়ে উঠে আমার।এক সপ্তাহ পর ছিলো উনার মেয়ের বিয়ে।
মেয়ে বিয়ে দিয়ে উনি একলা হয়ে যান তাই এর মাস খানেক পরেই উনি উনার ছেলেকে বিয়ে দিয়ে দেন।
মেয়ে টা উনাদের আগের পছন্দ করা ছিলো,ছেলেটার ক্লাসমেট ছিলো।
উনার ছেলের বউ বিয়ের ১ মাস না যেতেই পালিয়ে যায় তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে।
ছেলেকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে বললে ছেলে সরাসরি না বলে দেয়,
কারন পাত্রী ছিলাম আমি। ভদ্র মহিলার কথা শুনে আমিও অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।
আমি নিজেও বারন করে দেই। কারণ আমি একবারেই বুঝেছি যে বিয়ে কেমন।
ভদ্র মহিলা দিন দিন আরো অসুস্থ হচ্ছিলেন,
এরপর একদিন আমাদের দুজনকেই কসম দিয়ে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেন।
জানো আমি না খুব ভয়ে ছিলাম,কারন ছেলে টা তো আমাকে পছন্দ করে না।
আমার সাথে কোনোদিন প্রয়োজন ছাড়া একটা কথা বলতো না।
বিয়ের আগে প্রায় সারাদিন আমার ছেলেকে আদর করতো।
ভাবতাম এখন হয়তো আমার ছেলেকে দেখতে পারবে না।
ভয়ে ভয়ে আমি আমার ছেলেকে নিয়ে নিচে বিছানা পাতিয়ে শুয়েছিলাম।
সে এসে আমাকে নিচে দেখে এমন ধমক দিয়েছিলো যে আমার তা আজ এত বছর পরেও মনে রয়েছে।
ছেলের নাকি ঠান্ডা লেগে যাবে, আমি নাকি কেয়ারলেস এসব বলে ও আমাকে আর আমার ছেলেকে বিছানায় শুয়েছিলো। আবরার আমাদের মাঝেই ছিলো।
ও প্রতিদিন আবরারকে জড়িয়ে ঘুমাতো,মনে হতো ওর নিজের ছেলে।
আমার থেকেও বেশি আমার ছেলের খেয়াল রাখতো।
যা হয়েছিলো আমার জন্য কাল,কারণ আমি তখন রেহানের উপর একদম দূর্বল হয়ে যাই।
ওর কেয়ার,আচরণ,
বিহেভ আমার আর আবরারের প্রতি যত্ন নেওয়া সব কিছুর জন্যই ওর প্রতি দূর্বল হয়ে যাই।
কিন্তু আমি তো জানি ও আমাকে কখনও ভালোবাসবে না।
জানো সেটা ছিলো আমার সবচেয়ে বড় ভুল ধারনা।
কারণ রেহান প্রথম দিন থেকেই আমার উপর দূর্বল ছিলো,
আমার আগ থেকেই আমাকে ভালোবাসতো।
আর ওর যে বিয়ে টা হয়েছিলো সেটা বিয়ে ছিলো না,
মেয়ে টা কে উনি রিকুয়েস্ট করেছিলেন কয়েকদিন এমন নাটক করার জন্য।
কেননা তাহলেই হয়তো উনার মায়ের বড়লোক ঘরের মেয়েদের প্রতি বিশ্বাস চলে যাবে,আর ওর বিশ্বাস ছিলো এরপর নাকি আমাকে বিয়ে করার জন্য বলবেন। এসব উনার ডায়েরী পড়ে জেনেছিলাম। বিশ্বাস করো আমি এত খুশি ছিলাম বলার বাহিরে। আবরারের পাঁচ বছর বয়সে কোল জুড়ে আসে রিয়া। সেদিনও ছিলো আমার পরিবারের অন্যতম খুশির দিন। এরপর আবার হুট করে ঝড়ের মতো সব বদলে যায়। আমি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে যাই, সেটাও ব্রেইন ক্যান্সার। কাউকেই জানাই নি, চুপচাপ নিজের ভেতর অসুখ পুষতে লাগলাম।কথায় আছে না অতীতের পাপ পিছু ছাড়ে না,ঠিক তেমন বিপদ আমার পিছু ছাড়ে নি।
হয়তো তোমাদের মনে কষ্ট দিয়েছিলাম বলে সুখী হয়েও হতে পারতাম না। আমার স্বামী কে বললাম, মরার আগে অন্তত একবার হলেও যেনো আমি বাবামা থেকে ক্ষমা চাইতে পারি সেটার ব্যবস্থা করে দেও।সে চুপ করে ছিলো,আমি জানতাম না যে ও এর আগ থেকেই আমার পরিবারের খবর নিচ্ছিলো। আর আমার ছোট ভাইয়ের সাথে মিলে আমাদের পরিবারের সমস্যা মিটানোর ব্যবস্থা করতেছিলো।
আমার ছেলেকেও পাঠিয়ে দিয়েছিলো আপনাদের মন জয় করার জন্য। সেদিন যখন স্ট্রোক করেছিলাম, তখন ছেলের থেকে জেনেছিলাম এসব। সব শুনার পর আমি ব্যাকুল হয়ে গিয়েছিলাম আসার জন,কিন্তু ছেলে আমায় বারন করে দিয়ে বললো আরো পরে যেতে। আজ যখন ছেলে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো আপনার অসুখের কথা তখন আমি আর থাকতে পারি নি, ছুটে চলে এসেছি পাপের ক্ষমা চাইতে। আম্মা গো আম্মা, আমাকে মাফ করে দেন নাহলে মরেও শান্তি পাবো না।
ও মাই গড ফুফি এত কষ্ট সহ্য করেছেন?
ফুফি মাথা নিচু করে কাঁদছেন। পিছন থেকে মেঝো চাচ্চু বাদে উনার সব ভাইয়েরা উনার কাঁধে হাত রাখলেন। কথায় এত মনোযোগ ছিলাম যে উনারা কখন এসেছে খেয়াল ই করি নি। ফুফির সব ভাইয়ের চোখে পানি।
ফুফি আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছলেন।
মেঝো চাচ্চুর মুখ তখনও লাল হয়ে আছে। ফুফির দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে রেখেছেন। হঠাৎ উনার।
১৩
হঠাৎ মেঝো চাচ্চু দিদুনের সামনে এসে হাটু গেড়ে বসে পড়লেন। দিদুনের হাত ধরে বললেন ক্ষমা করে দেও না মা!
এবার আমরা সবাই অবাক হয়ে গেলাম। মেঝো চাচ্চু এ কথা বলছে?উনার কত বছরের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো ফুফির জন্য।
দিদুন মেঝো চাচ্চুর মাথায় হাত রেখে বললো,–‘তুই মাফ করে দিয়েছিস তাহলে আমি না করার কে?’
এরপর ফুফিসহ সবাই দিদুনকে জড়িয়ে ধরলো। আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,–‘আমি কেউ না?’
দিদুন বললো, –‘তুই তো আমার কলিজা!’
আমি হেসে দিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। এরপর ফুফি উনার স্বামী আর শাশুড়ীকে পরিচয় করিয়ে দিলেন।উনারাও ফুফির পিছন পিছন এসেছেন।রিয়াকে দিদুন জড়িয়ে ধরে ছিলো,আবরারের কান টেনে বললো,–‘এতদিন এখানে ছিলি তাও চিনি নাই!পরিচয় দিস নি কেনো?’
আবরার ভাব নিয়ে বললো,–‘যদি তুমি আমার প্রেমে পড়ে যেতে তাই!’
আমরা সবাই একসাথে হেসে উঠলাম।
২১.
হসপিটাল থেকে দিদুন কে রিলিজ দিয়ে দিয়েছে। সব কিছু কমপ্লিট করে সবাই মিলে করে বের হয়েছি। ফুফির পরিবার অন্য দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই দিদুন বললো,–‘কই যাও?’
ফুফির শাশুড়ী বললো,,–‘বেয়াইন বাড়ী যাচ্ছি।’
—‘না,না এখন কোথাও যাওয়া হবে না। আমার নাতীনের বিয়ে খেয়ে তারপর যাবেন।’
দিদুনের কথা শুনে চমকে তাকালাম। কার কথা বলছে। আমার নয় তো?
—‘আরে আজ আমার বেয়াই আর বেয়াইন আসবে বিদেশ থেকে। উনাদের আসার দুদিন পরেই বিয়ের ডেট। ছোট বেলায় ওদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলাম আমরা। আমার কথা রাখতেই আগামী পরশু ওদের বিয়ে দিবো।’
ফুফি বললো–‘কার কথা বলছেন আম্মা?’
দিদুনের আমার থুতনি ধরে বললো,—‘আমার কলিজা আর ইশতিয়াকের!’
কথা টা আমার কানে বারবার বাজতে লাগলো। হতভম্ভ হয়ে উনার দিকে তাকালাম। আবরার ও চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালো। পুরো পরিবারের মুখে হাসির রেশ, সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলছে।শুধুমাত্র আমি আর আবরার চোখ বড়বড় করে দুজনের দিকে বার বার তাকাচ্ছি!ইশতিয়াক লাজুক মুখ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
২২. বিয়ের দিন ঘনিয়ে এসেছে। আবরার বিয়ে টা বন্ধ করার জন্য বহু চেষ্টা করেছে। ও ইশতিয়াক কেও বলেছে আমাদের ব্যাপারে সব,ইশতিয়াক কে বলেছে যে বিয়ে টা যেনো না করে!
ইশতিয়াক সরাসরি না করে দিয়ে বললো,–‘আপনারা যদি লিভ ইন রিলেশনে থেকে থাকেন তবুও আমি ওকে বিয়ে করবো।আমার কোনো আপত্তি নেই! ও আমার পছন্দ নয় যে যে কাউকে দিয়ে দিবো,ও আমার ভালোবাসা যা আমার প্রাণ থাকতে আমি কাউকে দিবো না। মাফ করবেন ভাই,আপনি যেমন ভালোবাসেন আমিও তেমন ভালোবাসি সেটাও আপনার অনেক আগ থেকেই।ছোট বেলা থেকেই ও আমার সব কিছু জুড়ে বসবাস করছে। আমার মন মষ্তিষ্ক,হৃদয় সব জুড়ে।’
আবরার ওর পা ধরে বললো, –ভাই মেনে যান না।আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না!’
ইশতিয়াক ওর হাত ধরে বললো,–‘ভাই,আপনি মেনে যান। আমার পুরো পরিবার ছোট থেকেই ওকে নিয়ে স্বপ্ন বুনে রেখেছে।দিদুন আমাদের পরিবারকে, দাদাজির কবর ছুঁয়ে কথা দিয়ে বলেছেন যে থাকতে উনি শ্রুতিকে আমার সাথেই বিয়ে দিবেন।এ ওয়াদার পরিপ্রেক্ষিতেই আমি বিদেশ গিয়েছিলাম নাহলে ওকে ছেড়ে কোথাও যেতাম না।আর এ যে বললেন না, বাঁচতে পারবেন না এটা ভুল। একটা কথা আছে,চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল!কয়েক টা দিন যেতেই দেখবেন আপনি ওকে ভুলেই গিয়েছেন।’
আবরার তবুও ওকে বারবার বলেছে,কিন্তু ও মানে নি।
ফুফির কাছে গিয়ে বলতেই ফুফি আঁতকে উঠলেন।
উনি আবরারের সামনে দু হাত জোড় করে বললেন,–‘বাবা,এ অন্যায় কিছু চেয়ো না।’
ফুফি আবরারকে বলেছে,এত বছর পর উনি উনার পরিবারের সাথে এক হতে পেরেছেন।
তোর বাবা যে খুশি কেড়ে নিয়েছিলো,তা আজ এত বছর পর ফিরে পেয়েছি।
তুই আজ আবার সেটা কেড়ে নিস না। ‘
বাহ,কী আবদার! আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছি সবার কার্যকলাপ।
আবরার পাগলের মতো সবার কাছে হাত জোড় করতে লাগলো,কেউ মানে নি।
আমার কাছে এসে বললো,”চলো আমরা পালিয়ে যাই!’
শেষে আমি ওর গালে থাপ্পর দিয়ে বলেছি,কেউ যদি মেনেও যায় তাহলেও আমি বিয়ে করবো না তোমাকে।
আর পালিয়ে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।
আবরার শুধু ছলছল নয়নে তাকিয়ে ছিলো।
আমি দৌড়ে চলে এসেছি,চোখের পানি তো আমার বাঁধ মানছিলো না।
তাই ওখান থেকে চলে আসি।
আজ আমার বিয়ে।বিয়ের জন্য পুতুলের মতো সাজানো হচ্ছে। বিয়ে টা করবো আমি।
পুরো পরিবারের হাসিখুশি মুখ শুধু আমার এ বিয়ে নিয়ে।
ভেবেছিলাম দিদুনকে সরাসরি না বলে দিবো যদি না মানে তাহলে পালিয়ে যাবো ।
এই তো সেই দিদুন যে আমাকে নিজের কিডনি দিয়ে দিয়েছিলো,
আজ তার কথা না ভেবে আমি আমার খুশীর জন্য পালিয়ে যাবো?
এত বছর পর পুরো পরিবার এক হয়েছে,সবাই খুশী।
আজ আমি পালিয়ে গিয়ে আবার কী আমি সেই পুরানো ক্ষত টা
জাগ্রত করে দিয়ে কী করে সবার হাসিখুশি মুখ ধ্বংস করে দিবো?
‘আমার এক ত্যাগে যদি শত মানুষের মঙ্গল হয়, তাহলে সে ত্যাগেই আমি সুখী!’
২২.
চোখ ভর্তি স্বচ্ছ জ্বল নিয়ে বিয়ের আসরে বসে আছি।বিয়ে টা কী হয়ে যাবে?
এখন কী সিনেমার মতো কোনো চমক হবে না?
কেউ কী বলবে না যাও তুমি আবরারকে বিয়ে করো আর ওর সাথেই সুখে থাকো।
খুব কী ক্ষতি হবে কোনো মিরাক্কেল হলে?
বিয়ে পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে।কবুল শব্দ উচ্চারণ করা টা আমার জন্য দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে।
গলা দিয়েই বের হচ্ছে না।
আধো আধো গলায় ১ বার “ক বু ল” বলতেই পুরো বিয়ে বাড়ীতে চোরগোল হয় যে আবরার সুইসাইড করেছে।
কথা টা আমার দুনিয়া হেলিয়ে দিলো। সারা শরীর জুড়ে টান টান উত্তেজনা অনুভব করলাম।
বিস্ফোরিত হয়ে আমি উঠে গেলাম।দৌড়ে গেলাম আবরারের কাছে,পুরো রুম রক্তে ভেসে আছে,
শরীরে আঘাতের চিহ্ন। আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ঔষধ।
ওর পার্লস রেট চেক করে দেখা হয়ে গিয়েছে। ধপ করে বসে পড়লাম ওর পাশে,
কাঁপা কাঁপা হাত এগিয়ে দিয়ে ওর শরীরে রাখতে নিলাম।
পাশ থেকে কেউ আমার হাতে চিরকুট গুঁজে দিলো।
**শ্রুতি,
এই যে তুমি,হ্যা তুমি! এত সেজেছিলে কেনো?আমার কত কষ্ট হয়েছে জানো?
কী দরকার ছিলো এত সাজার?বুক টা ফেটে যাচ্ছিলো।কাঠ ফাটা রোদে মাঠঘাট যেমন ফেটে যায়,
আমার বুক টাও তেমন ফেটে যাচ্ছিলো!সহ্য হচ্ছিলো না,
তাকাতে পারছিলাম না। আপনাআপনি চোখের বর্ষণ হচ্ছিলো।
এক পলক তাকিয়ে ছিলাম,শুধু এক পলক। ভাবতে পারো,
এই পলক তাকানো তেই আমার এ হাল হয়েছে তাহলে সেখানে বাকি জীবন কী হবে?
কত কষ্ট হবে। আমি কী সত্যিকারে বেঁচে থাকতাম? বলো?
তুমি হয়তো এখন বলতে,ভালোবাসা মানুষকে বেঁচে থাকতে শেখায়।
জীবিত থেকে সেই ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখতাম।
তাহলে বলি আমি না একদম তেমন প্রেমিক পুরুষ নই।
আমি পারবো না পুরানো স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে আর না অন্য কারো সাথে সংসার করতে।
তাই আমি চলে যাচ্ছি। তোমার ওই ইশতিয়াক কে বলো,
আমি প্রমান করে দিয়েছি যে আমি সত্যি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।
ওহ,হ্যা তোমার ফুফিকেও বইলো আমি আমার বাবার মতো হয় নি,ছিনিয়ে নেই নি তার খুশী!
শুনো আমি তো চলে যাচ্ছি, তাই একটা অনুরোধ ছিলো।
ভয় পেয়ো না,আমি তো থাকবোই না তাই তেমন কিছুই চাইবো না।শুধু এ সামান্য টুকু চাই।
সেটা হলো আমাকে না একদম ভুলে যেও না,একটু একটু হলেও মনে রেখো।
দোয়ায় না পারলে বদ দোয়ায় হলেও মনে রেখো!এটা না হয় শেষ অনুরোধ ধরে নিও।
মনে রাখবে তো?
ইতি,
‘আশিক আবরার’
সমাপ্ত!

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com