কলেজের রাগী অহংকারী মেয়েটি। পর্ব- ০৬

এই কথা শুনে মুহূর্তের মধ্যেই আমার নেশা কেটে গেল।।
যাদেরকে এতদিন বাবা আর ভাই জেনে এসেছি তারা আমার আসল বাবা মায়ের খুনি??? আমি এতদিন একটা খুনিকে আমার বাবা জেনে এসেছি।। কাঁদতে কাঁদতে এগুলো ভাবতে থাকলাম।।
—–( চোখের পানি মুছে) না আমি আর কাদবো না।। আমার বাবা মায়ের খুনিদের শাস্তি দিতে হবে।। ওই খুনির জন্য আমি মানুষের উপর অনেক অত্যাচার করেছি।। ওদের করা পাপের শাস্তি ওদের দিতে হবে।।
—- এতখন করা ভিডিও গুলা।। এখন মামার কাছে নিয়ে যেতে হবে।।
—- তারপর সেখান থেকে চুপচাপ বের হয়ে আসলাম।। মামার বাসায় এসে মামাকে সব কিছু বললাম।। সব কিছু শুনার পর মামা আমাকে জরিয়ে ধরে বলতে থাকলো—-
মামাঃ আমরা সবাই ভেবেছিলাম তুই ও হয়তো ওইদিন মারা গিয়েছিল।। কিন্তু খোদার অশেষ রহমতে তুই বেচে আছিস।।
ওই শয়তান টা আমাদের জাল দলিল দেখিয়ে বলেছিল —
দুলাভাই নাকি সব সম্পত্তি ওর নামে করে গিয়েছিল।। তার উপর তোরা কেউ জিবীত ছিলি না তাই আর এই বিষয় নিয়ে আগাই নি।।
এখন তো ওই শরিফ চোধুরীকে ওর পাপের শাস্তি পেতে হবে।।
— তারপর মামা পুলিশ ফোন করে আসতে বললো।। পুলিশ আসার পর ভিডিওটা পুলিশকে দিলাম।।
— পুলিশকে সাথে নিয়ে শরিফ চোধুরীর বাড়িতে গেলাম।। পুলিশ শরিফ চৌধুরিকে গ্রেফতার করলো।। আর তার ছেলেকে ওয়ার্নিং দিল।। ভবিষ্যতে সে যদি আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করে তাহলে তাকে গ্রেফতার করবে।
— আমি মামার সাথে মামার বাসায় চলে আসলাম।।
মামা, মামি,,আর একমাএ মামাতো বোন। ওর নাম আয়শা।। ক্লাস ১০ এ পড়ে।
মামাঃ দেখ মা যা হবার তা হয়ে গেছে।। ওই খুনিটা ওর শাস্তি পেয়েছে।। এসব ভেবে কষ্ট পাস না।। আজ থেকে তুই আমার বড় মেয়ে।
মামিঃ কখনও তুই এই বিষয় নিয়ে মন খারাপ করবি না।। আজ থেকে এটাই তোর বাড়ি।।
আর তুই আর আয়শা এখন থেকে এক রুমেই থাককি। যা এখন হাত-মুখ ধুয়ে আয় সবাই একসাথে খাবো।।
—– খাবার খেয়ে রুমে গেলাম।। তারপর আয়শার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে ঘুমাতে গেলাম।। তারপর চোখ বুজে ভাবতে থাকলাম–
—- আমার ২০ তম জন্মদিনের সেরা গিফটা পেলাম।। আমার বাবা মার খুনিদের শাস্তি দিতে পেরেছি।। ওই খুনির জন্য আমি এতদিন খারাপ পথে চলেছি।। গরিবদের মানুষই মনে করতাম না।। রবির উপর কত অত্যাচার করেছি।।
কালকেই কলেজে গিয়ে ওর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে?? কিন্তু ও কি আমাকে ক্ষমা করবে??
আমি তো ওকে অনেক অত্যাচার করেছি।। যা ক্ষমার অযোগ্য।। ও যদি আমাকে ক্ষমা না করে তাহলে হয়তো এই অপরাধ বোধ নিয়ে আমি বাচতে পারবো না।। যে করেই হোক ওর কাছ থেকে মাফ পেতে হবে
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি তা নিজেও জানি না।।
সকালে ঘুম থেকে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে কলেজে গেলাম।। কলেজে গিয়ে বন্ধুদের সব কিছু বললাম।। ওদের বললাম আজ থেকে সবার সাথে ভালো ব্যবহার করবো।। আর রবির কাছে মাফ চাইবো।।
তারপর ওদের সাথে আড্ডা দিতে লাগলাম।। আর রবির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম—-
অন্যদিকে—-
সকালের টিউশনি করিয়ে বাসায় আসলাম।। খাওয়ার পর আমি আর জান্নাত একসাথে বের হলাম।। জান্নাতকে ওর কলেজে নামিয়ে দিয়ে আমি কলেজে আসলাম।।
গেট দিয়ে ঢুকে ক্লাসের দিকে যাইতেছি তখনই
আদিবাঃ রবি।। এই রবি দাড়াও??
—- মনে হলো আমাকে কেউ যেন ডাকলো।। কিন্তু আমাকে তো কলেজে সবাই ছোটলোক বলে ডাকে?? না হয়তো অন্য কাউকে ডাকছে।।
এই ভেবে হাটতে লাগলাম।। তারপর আবারও
আদিবাঃ এই রবি দাড়াও।। একবার আমার কথাটা শুনো প্লিজ??
—- না এবার পিছনে ফিরে দেখতেই হয় যে কে ডাকছে।।
—– পিছনে তাকিয়ে তো আমি অবাক।। দেখি আদিবা আমাকে ডাকছে আর দৌড়ে আমার দিকে আসছে।।
—– আমি ভাবতে থাকলাম আদিবা কেনো আমাকে ডাকছে।। আর কেনই বা আমার কাছে আসছে।। হয়তো আমাকে অত্যাচার করার নতুন কোনো ফন্দি আটছে।।
—- আদিবা আমার কাছে এসেই বলতে লাগলো—
আদিবাঃ রবি আমাকে মাফ করে দেও।। যানি তোমার সাথ যা করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য।। তারপরও আমাকে সবকিছুর জন্য ক্ষমা করে
দাও প্লিজ??
—– আরে কি করছেন। বড়লোকেরা কখনও ছোটলোকের কাছে ক্ষমা চায় না।।
আদিবাঃ দয়া করে আমাকে এবারের মত মাফ করে দাও?? আর কখনও তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবো না।। এমনকি আর কারও সাথে খারাপ ব্যবহার করবো না।। আর কোনো সময়
অহংকার করবো না।।
—- ম্যাডাম আপনি কেনো আমার কাছে মাফ চাইছেন।। ছোটলোকের কখনও রাগ করার অধিকার থাকে না।। আমাদের জন্মই হয়েছে সব অত্যাচার সয্য করার জন্য।।
—- আপনার মাফ চাইতে হবে না আমি কিছুই মনে করিনি।।
আদিবাঃ আমি মানছি আমি যা করেছি কা অন্যায় করেছি।। দয়া করে আমাকে এই শেষবারের মত মাফ করে দাও?? কাঁদতে কাঁদতে বললো।।
—– আপনার আর মাফ চাইতে হবে না।। আর কাঁদতেও হবে না।। আমি আপনাকে মাফ করে দিয়েছি।।
আদিবাঃ সত্তিই।। ( খুসি হয়ে) তাহলে আজকে থেকে আমরা বন্ধু।।
—– মাফ করবেন।। আমি আপনার সাথে বন্ধুত্ত করতে পারবো না।। শুধু আপনার সাথেই না।। আমি কারও সাথে বন্ধুত্ত করতে পারবো না।।
আদিবাঃ তার মানে তুমি আমাকে মাফ করতে পারো নি??
—- আপনি যা খুসি ভাবতে পারেন কিন্তু আমি বন্ধুত্ত করতে পারবো না।। আর আমি আপনাকে মাফ করে দিয়েছি।।
আদিবাঃ কেনো পারবা না আমার সাথে বন্ধুত্ত করতে??
—– আমি এই বিষয়ে আপনার সাথে আর কথা বলতে চাইছি না।। মাফ করবেন।। আমি ক্লাসে গেলাম।।
তারপর আদিবা আমাকে অনেক ডাকতে থাকলো কিন্তু আমি সাড়া দেয় নি।।
আদিবাঃ তোমার পিছু তো আমি ছাড়ছি না।। যখন বলেছি তোমার সাথে বন্ধুত্ত করবো।।
তাহলে তা করেই ছাড়বো।।
আসলে আমার আদিবার সাথে বন্ধুত্ত না করার কারন হলো
আদিবারা অনেক বড়লোক ওর যত বন্ধু সবাই অনেক বড়লোক।। আর তাছাড়া আদিবাকে দেখলেই আমার ওর করা অত্যাচারের কথা মনে পড়ে যায়।। আর তখন ওর প্রতি খুব ঘৃনা হয়।।
যতদিন না পর্যন্ত সককিছু ভুলতে পারবো ততদিন পর্যন্ত ওকে সয্য করতে পারবো না।।
তাই তখন আর ওর সাথে বেশি কথা বাড়াই নি।।
ক্লাস করে বাইরে বের হলাম।। তখনই আবার আদিবা আসলো —
আদিবাঃ দয়া করে আমাকে মাফ করে দাও।। প্রয়োজনে আমি তোমার পায়ে পড়ি তাও আমাকে মাফ করে দাও??
—- আরে কি করছেন।। আমার মতো ছোটলোকের পা আপনি কেনো ধরবেন।। আমার সাথে কথা বললে আপনার বন্ধুরা আপনাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে।।
আদিবা কিছু বলছে ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।। তারপর কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।।
আমি কলেজ থেকে বের হয়ে জান্নাতের কলেজে গেলাম।। তারপর জান্নাতকে নিয়ে বাসায় গেলাম।।
সন্ধ্যার সময় টিউশনিতে গেলাম।। রাতে টিউশনি শেষে রাস্থা দিয়ে হাটতেছি তখনই কোথা থেকে যেন কোন মেয়ের চিৎকারের শব্দ পেলাম।।
রাস্থায় দাড়িয়ে গেলাম তারপর আবার সেই চিৎকারের শব্দ পেলাম।
একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম চিৎকারটা একটা গল্লির ভিতর থেকে আসছে।।
সেখানে গিয়ে দেখলাম গল্লির ভিতর একটা বাড়ি থেকে কোনো মেয়ে চিৎকার করছে।।
বাড়ির ভিতর গিয়ে দেখলাম।। কতগুলো ছেলে একটা মেয়ের সাথে জোর- দবস্তি করছে।।
আমি গিয়ে বললাম —-
—- কি হচ্ছে এখানে??
তারপরই ছেলেগুলো মেয়েটাকে ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে তাকালো।। তাদের ভিতর একটা ছেলেকে দেখেই তো আমি অবাক কারন ছেলেটা ছিল সাব্বির।। যে এক সময় আদিবার ভাই ছিল।। আর একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটা হলো আদিবা।।
হয়তো সাব্বির তার বাবার প্রতিশোধ নিতে আদিবার সাথে এই রকম করছে।।
সাব্বির আমাকে দেখেই বলতে লাগলো—-
চলবে—–
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url