Breaking News

লেডি কুইন । পর্ব -১৩

গাড়িটা নেহাদের বাসার সামনে এসে থামলো৷ আরোহী নেহাদের বাসা দেখে চলে গেলো। নেহা মেহেরাবকে নিয়ে ঘরে গেলো। নেহা বললো
-এখানে বসো আমি মাম্মিকে ডেকে আনি।
-আচ্ছা ।
নেহা রুমের ভেতর চলে গেলো। মেহেরাব নেহাদের বিশাল বড় বাড়ি দেখে হা করে তাকিয়ে চারপাশ দেখছে। হৃদয় মেহেরাবকে বললো
-দোস্ত আমার না ভয় লাগছে। নেহার মা যদি কিছু বলে।
-তাহলে প্রেম করছিস কেন? এতই যখন ভয়।
-আরে তা না। আজ প্রথম আসছি তো তাই। কি দিয়ে কি যে হবে।
-ভয় পাওয়ার কি আছে। ভয় পেলে তো চলবে না।
এর ভেতর নেহার মা আসলো। মেহেরাব দাঁড়িয়ে পড়লো। হৃদয় এটা দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো। মেহেরাব দাঁড়িয়ে
-আসসালামু আলাইকুম
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। বসো বাবারা দাঁড়িয়ে আছো কেন?
-জ্বী বসছি আপনি ও বসুন৷
মেহেরাব হৃদয় সোফায় বসে পড়লো।
আরোহী বাসায় ফিরলো। কুহু বাসায় এসে
-এভাবে একা চলে আসলি কেন?
-এমনি।
-কি হয়েছে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন? তোকে।
-কই না তো।
-তুই আমার থেকে লুকাবি।
-আরে তা না। নেহাকে দেখলাম মেহেরাবকে ওর বাসায় নিয়ে গেছে।
-তো কি হয়েছে।
-কিছু না। তবুও ছেলেটা সাদাসিধা।
কুহু আরোহীর দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে
-তুই কি পাগল হইছিস। ও তোকে ডাক্কা মেরে ফেলে দিলো তাকে তুই সাদাসিধা বলছিস।
-আরে ঐ কথা নিয়ে এখনো পড়ে আছিস কেন? বাদ দে না।
এর ভেতর আরোহীর ফোনটা বেজে উঠলো। মোবাইল স্কিনে নেহার নামটা ভেসে উঠলো। আরোহী অবাক হয়ে গেলো।
হৃদয় বলে উঠলো
-আন্টি কেমন আছেন। ওষুধ ঠিকমতো খাচ্ছেন তো।
-হ্যা বাবা। আগের থেকে ভালো। তোমার নাম কি?
-হৃদয়। আর ও হচ্ছে
নেহার মা হৃদয়কে থামিয়ে দিয়ে
-হ্যা আমি জানি। ও মেহেরাব। নেহা বলছে সব।
হৃদয় অবাক হয়ে গেলো৷ মেহেরাবের কথা বলছে ওর মার কাছে। মেহেরাব বলে উঠলো
-আন্টি আমার একটু কাজ আছে যেতে হবে
-কি বলছো। আসছো খেয়ে তারপর যাবে। তুমি এতদিন ছিলে কই?
-আন্টি গ্রামের বাড়িতে। একটু অসুবিধা ছিলো।
-তা তোমার বাবা কি করে
-জ্বী কৃষক।
নেহার মা দাঁড়িয়ে পড়লো হৃদয় মেহেরাব অবাক হয়ে গেলো। হৃদয় মনে মনে বলছে আরে গাধা কৃষক বলার কি দরকার ছিলো এখন বোঝ কেমন ভাবে নিবি।
আরোহী ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নেহা বলে উঠলো
-তোর ওষুধ খাওয়ার সময় হয়েছে ওষুধ টা খেয়ে নে।
-তুই কিভাবে জানলি এখন আমার ওষুধ খাওয়ার সময় কিন্তু আমি জানি না। ।
-তুই জানবি কি করে তোকে যেটা বললাম শোন। ওষুধ খেয়ে নে লেট করিস না।
নেহা ফোনটা কেটে দিলো। কুহু আরোহীকে জিঙ্গেস করলো
-কি বললো
-আমাকে ওষুধ খেতে।
-ওহ আমি তো ভূলেই গেছিলাম তোর এখন ওষুধ খেতে হবে। তুই একটু বোস আমি ওষুধ নিয়ে আসছি।
কুহু চলে গেলো৷ আরোহী অবাক হয়ে গেলো।
নেহার মা দাঁড়িয়ে নেহাকে ডাকতে লাগলো। মেহেরাব বসা থেকে উঠে দাড়ালো।
নেহা বলে উঠলো
-মাম্মি আসছি।
নেহার মা মেহেরাবের দিকে তাকিয়ে
-উঠলে কেন? বসো তুমি।
মেহেরাব সোফায় বসে পড়লো। নেহার মা বললো
-তোমরা থাকো আমি আসছি।
নেহার মা চলে গেলো। হৃদয় বলে উঠলো
-আমার প্রেমটা তবে শেষ।
-কেন?
-তুই কেন বলতে গেলি তোর বাবা কৃষক।
-যা সত্যি তাই তো বলবো।
-নেহার সাথে যদি আমাকে মেনে না নেয়৷
-আমার বাবা কৃষক তোর বাবা তো আর কৃষক না যে মেনে নিবে না। “
-চল চলে যায়। আজ নেহার উপর থেকে কি যাবে বলা যায় না।
মেহেরাব আর হৃদয় উঠে দাঁড়ালো তখন নেহার মা আর নেহা আসলো। দুজনের মুখ হাসিখুশি৷ নেহার মা বলে উঠলো
-খেতে চলো।
হৃদয় বলে উঠলো
-আরেকদিন। আজ একটু কাজ আছে।
নেহা চোখ রাঙ্গিয়ে
-তোমাকে মাম্মি কি বলছে শোনোনি। মেহেরাব তোর কি কাজ আছে।
নেহার মা নেহার দিকে তাকিয়ে
-হৃদয় তোর বন্ধু না।
-হ্যা মাম্মি বন্ধু
-তাহলে তুই ওকে তুই না করে তুমি করে বলছিস কেন?
নেহা থ ম খেয়ে গেলো কি বলবে বুঝতে পারছে না। মেহেরাব বলে উঠলো
-আন্টি মাঝে মাঝে গুলিয়ে ফেলে ও কাউকে তুই আবার কাউকে তুমি করে বলে বসে।
-ও আচ্ছা।
নেহা যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো।
কুহু আরোহীকে ওষুধ এনে দিলো। আরোহী ওষুধ খেয়ে নিলো। কুহু বলে উঠলো
-রেস্ট নে তুই।
-হুম নিবো একটা কাজ করতে পারবি।
-কি?
আরোহী কুহুর কানে কানে কিছু কথা বললো৷ কুহু হেসে উঠলো ।
ডাইনিং টেবিলে বসে খাওয়া শুরু করলো সবাই৷ নেহার মা বলে উঠলো
-বাবা তুমি চাইলে আমাদের বাড়ি থেকে পড়াশোনা করতে পারো। তোমার তো এই শহরে তো কেউ নেই।
নেহা মেহেরাব হৃদয় অবাক হয়ে গেলো। মেহেরাব বলে উঠলো
-না আন্টি আমি যেখানে আছি ভালোই আছি।
-দেখো মেহেরাব আমার বাবা ও এক টাইম কৃষক ছিলো। সে কিন্তু কৃষি কাজ করে আজ প্রতিষ্ঠিত। আমি জানি যারা কৃষি কাজ করে তাদের কষ্টটা। তুমি এখানে থাকো তোমার কোন খরচ লাগবে না। সব আমি দিবো। তোমার বাবা ও নিচিন্তিতে থাকবে। আমার তো কোনো ছেলে নেই একটাই মেয়ে শুধু৷ আর তা ছাড়া তুমি আমার যে বড় উপকার করছো তা কখনো ভোলার না।
-কিন্তু আন্টি
নেহা বলে উঠলো
-কোনো কিন্তু না ভাইয়া। মাম্মি যা বলছে তাই ওকে। আমার তো ভাই নেই আজ থেকে তুই আমার ভাই।
মেহেরাব অবাক হয়ে গেলো। খাওয়া শেষ এ মেহেরাব আর হৃদয় বের হলো। মেহেরাবকে তার জিনিস পত্র নিয়ে আসতে বললো। অবশ্য নেহা বলছিলো ওসবের কিছুর দরকার নেই। তবুও মেহেরাবের সৃতি জরিয়ে আছে তাই আনবে। ড্রাইভারকে বলে দিলো নেহা। হৃদয় নেহাকে বললো
-তোমার মা আমাকে থাকতে বললে তো পারতো৷ তাহলে তো তোমার কাছাকাছি থাকা হতো।
-এই জন্যই তো বলেনি। বললে আমি না করে দিতাম।
-ও তাই বুঝি। আচ্ছা আমাকে তো ভালোবাসোই না।
-তাই। যাও বাসি না।
নেহা কথাটা বলে চলে আসলো।
শুভ্র আশফা রেস্টুরেন্টে বসে আশফা বললো
-মেহেরাবকে সারপ্রাইজ দিলে কেমন হবে।
-আমি ও তাই ভাবতাছি। ওকে সুন্দর একটা সারপ্রাইজ দিতে হবে।
-হুম। তা প্লানিং টা কি করা যায়।
-কানটা এগিয়ে নিয়ে এসো। পাবলিকে শুনলে ফাঁস হয়ে যাবে।
আশফা হেসে দিয়ে কানটা এগিয়ে দিলো। শুভ্র ফিসফিসিয়ে বললো।
হৃদয় আর মেহেরাব গাড়িতে বসে আছে। হৃদয় মেহেরাবকে বললো
-দোস্ত তুই থাকলে আমার একটু সুবিধা বেশি হবে।
-কেন?
-আমি নেহার কাছে সহজে যেতে পারবো।
-তোর কি মনে হয় আমি নেহাদের বাসায় থাকবো।
হৃদয় অবাক হয়ে
-তাহলে।
মেহেরাব কিছু বলতে যাবে তখনি গাড়ি কষে ব্রেক করলো। হৃদয় মেহেরাব কিছুটা ঝুকে পড়লো। একটুর জন্য মাথায় বারি খায়নি। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাস্তার মাঝখানে মাইক্রো দাড়িয়ে আছে। কিছু লোক এসে ড্রাইভারকে দরজা খোলার ইশারা করলো তখন দরজা খুলে দিলো। মেহেরাবে মাথায় পিস্তল ঠেকালো। হৃদয় বাম দিকে জড়োসড়ো হয়ে গেলো৷ মেহেরাব গাড়ি থেকে নামলো। মেহেরাবকে মাইক্রোতে বসিয়ে চলে গেলো। হৃদয় বোকার মতো হা হয়ে গেলো। হৃদয় ফোনটা বের করেই নেহাকে সবটা বললো। নেহা অবাক হয়ে গেলো। নেহা ওর মা কে সবটা বললো। ওর মা থানায় ফোন দিয়ে সবটা বললো। মেহেরাবকে খোঁজার জন্য এক গাড়ি টহল পুলিশ নেমে গেলো।
রাত ১১ টা ৫৮ মিনিট
একটা চেয়ারের উপর হাত পা বাধা অবস্থায় মেহেরাব বসে আছে। চোখ কালো কাপড় দিয়ে বাঁধা । কেউ একজন এসে দঁড়ির বাঁধন গুলো খুলতে লাগলো। মেহেরাব বলতে থাকে
-কারা আপনারা আমি কি করছি আমাকে কেন ধরে আনছেন। ছেড়ে দেন আমাকে।
মেহেরাবের কথার উত্তর কেউ দেয় না। মেহেরাবকে দাঁড় করিয়ে চোখের বাঁধন খুলে দেয় সাথে সাথে একটা গুলির আওয়াজ শোনা গেলো। মেহেরাব চমকিয়ে উঠে।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com