Breaking News

অবুঝ প্রেমের গল্প । পর্ব -০৪

আমি উৎসকে নিজের রক্ত দিয়ে চিঠি লিখতে বলেছি।আর বলেছি,যদি লিখতে পারে তাহলে বুঝবো সে আমাকে সত্যি সত্যি ভালবাসে।যদিও আমার এই কাজটা একদমই পছন্দ না।আমি ভেবেছি ও এই কাজ টা করার ভয়ে নিজে থেকেই আমার জীবন থেকে সরে যাবে।
কিন্তু আমার ধারণাকে বদলে দিয়ে উৎস আমাদের বাড়ীতে চলে আসে,
আমাকে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ফোন দিয়ে যেতে বলে।কি আর করবো,তারপর যাই ওখানে।
আমিতো জানি,এই ছেলের দাঁড়া এই কাজ সম্ভব না।
কিন্তু আমাকে সে মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়ে আমার হাতে কিছু রক্ত মাখা চিঠি দেয়।
আর বলে,এগুলো পড়ে নিও।
আমি ভয়ে শেষ।
বাসায় এসে চিঠি গুলো খুলে দেখি রক্ত দিয়ে আমার নাম আর অনেক কিছু লিখা।
কিছু ক্ষণ পর উৎস আমাকে ফোন দিয়ে বলে,
এই কাজ টাকে আমি সব চেয়ে ঘৃণা করতাম।
আজ তোমার জন্য তাও করতে হলো।
এখন কি তোমার বিশ্বাস হয়েছে আমি যে পালানোর মত ছেলে নই?
আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
প্রেম করতে চাইনা।
কেন বোঝ না ভালবাসি কতটা।
আমি তার কথা গুলো শুনে চুপ করে ছিলাম।
এর মাঝে আমার অনেক বিয়ের কাজ আসে।
আম্মু আব্বু চান আমার কোন ধনী পরিবারে বিয়ে হোক।
ছেলে দেখতে সুন্দর,শিক্ষিত হোক।
উৎস দেখতে সুন্দর আর শিক্ষিত ঠিকই,শুধু ধনীই নয়।
বরং অনেক টাই নিম্নবিত্ত বলা চলে।
যেখানে মধ্যবিত্ত ও নয়,সেখানে পরিবারের মানার তো প্রশ্নই আসেনা।
যাইহোক,
আমি তার পাগলামো টা দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম তার থেকে নিজেকে খুব দূরে রাখতে হবে।
নয়তো সে আমার প্রতি আরো উইক হয়ে পড়বে।
আমি চাইনা সে আরো কষ্ট পাক।
পরিবার যেখানে রাজি না,সেখানে কিভাবে সম্ভব।
আমি আমার মোবাইল অফ করে রাখলাম।
কিন্তু ওইদিকে উৎস পাগল হয়ে যাচ্ছিলো প্রায়।
কোন দিশা না পেয়ে উৎস আমার কাকীকে ফোন দেয়।
ফোন দিয়ে আমাকে চায়।
এরপর শুরু হয় আরেক অশান্তি।সবার মনে প্রশ্ন,কেন ও আমাকে চাইলো।
আমার সাথে ওর কিসের সম্পর্ক।এই সেই আরো নানান কথা।
আমার কাকী তার বোনকে জানালো।
তার বোন উৎসের মাকে জানালো।ওদের বাড়ীর সবাই জানাজানি হলো।
এদিকে আমার বাসায়ও জানাজানি হলো।
আমার আম্মুর সেই রকমের বকাবকি শুরু হলো।
কাঁদতে কাঁদতে অবস্থা খারাপ।
বিনা দোষে কাঠগড়ায় দাঁড়ালাম আমি।
উৎসের মা উৎসকে ডেকে বল্লো,তুই কুহুকে ভালবাসিস?
উৎস ডিরেক্ট উত্তর দিলো,হ্যাঁ ওকে আমি বিয়ে করতে চাই।
কিন্তু উৎসের মা তখনই দিলো এক ডায়লগ:
-কোন ভাবেই ওই মেয়েকে আমার ছেলের বউ করে আনবোনা আমি।তুই ওকে ভুলে যা।
এ যেন ডলি জহুরের সিনেমার ডায়লগ।
উৎসও বলে দিলো নায়ক রিয়াজের মত,বিয়ে যদি করতে হয় আমি কুহুকেই করবো।
তারপর সে স্থান প্রত্যাক্ষান করে।
যেহেতু আমি উৎসের কারণে বাসায় বকা খাই।তাই তার উপর ভালবাসা আসবে কি ছাই।
রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছিলো।
আমার ছোট ভাই বোনেরা বলে দিলো সুন্দর করে,
উৎস ভাইয়াকে আমরা দুলাভাই বলে ডাকতে পারবোনা।
আমি হাসবো না কাঁদবো ওদের কথায় বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
আব্বু আসেন এর মধ্যে দেশে।
আমার জন্য ছেলে দেখা শুরু হয়েছে।
কাকী,
শয়তানি পানা করে উৎসকে জানালো আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।
আর ওই দিকে শুরু হলো অগ্নিকান্ড।
উৎস ওর মাকে বল্লো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আমাদের বাড়ীতে আসতে।
ও নাকি বাঁচবেই না আমাকে ছাড়া।
নাওয়া খাওয়া সব ছেড়ে দিয়েছে সে।
কেউ তাকে জোড় করেও খাওয়াতে পারছেনা।
এরপর উৎস একদিন আম্মুর ফোনে কল দেয়।
ফোন দিয়ে সালাম দিয়ে বলে,কুহু আছে?
আম্মু বলে, না কুহু বাসায় না।
এরপর আমি ফোন অন করি,আর দেখি উৎসের শত মেসেজ।
ফোন অন করার কিছু ক্ষণ পরই উৎস আমাকে ফোন দেয়,
আর ফোন রিসিভ করতেই ও আমাকে বলে,
-কুহু,
-জ্বী।
-আমি জানি আমার কারণে তোমার অনেক প্রবলেম ফেস করতে হয়েছে।
কিন্তু বিশ্বাস করো,আমি চাইনি তোমার কোন সমস্যা হোক।
আসলে তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারছিলাম নাতো,কষ্ট হচ্ছিলো আমার খুব।
আচ্ছা শোন,মা আমাকে বলেছে তোমার সাথে কোন রকম যোগাযোগ না করতে।
আর খালেদা আক্তার কল্পনার মত বলেছে,
যদি তোমাকে আমার বিয়ে করতে হয়,তাহলে আমাকে তার লাশের উপর দিয়ে যেতে হবে।
শোনো!ক্ষমা করে দিও আমাকে কেমন?
ভালো থেকো।
অনেক বিরক্ত করেছি না?
আর করবোনা।
রাখছি।
শেষ বারের মত একটা কথা বলি?
-জ্বী বলুন!
-আমি না,তোমাকে খুব বেশিই ভালবাসি।
নিজের যত্ন নিও।
আল্লাহ্‌ হাফেজ।
এই বলে উৎস ফোন রেখে দেয়।
আর এদিকে আমি মনে মনে ভাবতে থাকি,আদৌ কি আমাদের আর কথা হবে?
এই পাগল ছেলেটা কি আর কোন দিন আমার জন্য পাগলামো করবে?
নাকি এখানেই সব শেষ?
এখানেই সব কিছুর পরিসমাপ্তি?
হঠাৎ লক্ষ্য করলাম,আমার ডান চোখ বেয়ে এক ফোটা অশ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে,
একি!
আমি কাঁদছি?
আমি কেন কাঁদছি।
আমার তো খুশি হবার কথা,উৎস যে আমাকে চিরদিনের মত ছেড়ে চলে গেছে।
কেউ আর ভিখারির মত আমার কাছে আমাকেই ভিক্ষে চাইবেনা।
কেউ আর বলবেনা,কুহু আমি তোমাকে না অনেক ভালবাসি।
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com