অবুঝ প্রেমের গল্প । তিতিশ্মা মুসাররাত কুহু
আমার চাচ্চুর গায়ে হলুদের দিন হঠাৎ করে আমার শাড়ী খুলে যায়।আমি কোন রকম কুচি গুলো হাত দিয়ে ধরে দৌড়ে কাকীদের বাসার ভেতরে যাই আর খুঁজতে থাকি কাকে বলবো আমার শাড়ী ঠিক করে পরিয়ে দিতে।আমি পানি পান করতে এসেছিলাম আর ওই সময়ই শাড়ীটা খুলে যায় আমার।তাই আমার বাসার কেউই আমার সাথে ছিলোনা।
হঠাৎ আমার কাকীর বড় বোন আমার কাছে এগিয়ে আসে আর আমাকে শাড়ী পরিয়ে দেয় নতুন করে।
যখনই আমার আঁচল টা বুকে তুলে দিয়ে শাড়ীটা পুরোপুরি ঠিক করে দেয় আন্টি। ঠিক তখনই উৎসের আগমন।
ও আমার দিকে তাকাতেই আমি পেছন ঘুরে দাঁড়াই।তখন শাড়ী পরা হয়ে গেছে আমার।
জীবনের প্রথম শাড়ী পরা হয়েছিলো সেদিনই আমার।ক্লাস সিক্সে পড়ি সবে মাত্র আমি।
আন্টি তখন উৎসকে ডেকে বলে,এই সরো সরো,আমাদের মেয়ে লজ্জা পেয়েছে।
উৎস তখন হেসে বলে,ছোট মানুষ তাও এত লজ্জা?
পরে আন্টি আমাকে বলেন,ও আমার ভাসুরের ছেলে।তুমি যেমন তোমার কাকীর ভাসুরের মেয়ে।তেমনি ও আমার ভাসুরের ছেলে।
তারমানে তোমরা দুজন বেয়াই বেয়াইন।
আমি ছোট ছিলাম বলে এই বেয়াই বেয়াইন সম্পর্কের কিছুই বুঝিনি।
তখনকার ক্লাস সিক্সের ছেলে মেয়েরা প্রেম ভালবাসার ও কিছুই বুঝতোনা।
সে পড়তো তখন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে।
তার সাথে আমার বয়সের ডিফারেন্স ৫/৬ বছরের।
আমি কিছু না বুঝলেও সে ঠিকই বুঝতো।
যাইহোক,সেদিন গায়ে হলুদের দিন আমরা কাকীকে হলুদ দিয়ে চলে আসি।
চাচ্চুকে যখন হলুদ দিতে আসে সবাই পি বাড়ীর,
আমি চাচ্চুর সাথে স্টেজে বসি।
উৎস যখন হলুদ দিতে আসে চাচ্চুকে তখন সে চাচ্চুকে হলুদ না দিয়ে আগে আমাকে হলুদ দিয়ে দেয়।
আমি অবাক হই + রেগে যাই।
চাচ্চু তখন আমাকে বলে,কিচ্ছু হবেনা।তুমি ছোট তো তাই দুষ্টুমি করেছে।
যাইহোক হলুদের দিন চলে যায়,
বিয়ের দিন চলনে আমি চাচ্চুর সাথে যাইনি।
চাচ্চু বউ নিয়ে চলে আসে।
বৌভাতের দিন উৎস আসে কাকীর বাড়ীর মানুষদের সাথে কাকীকে নিতে।
এক সময় আমাকে খুঁজে সে বলে,কাল তুমি ওই বাসায় আসোনি কেন?
তুমি জানো আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
উৎসের কথা শুনে আমিতো অবাক।
সে আমার জন্য কেন অপেক্ষা করবে।
তারপর উৎস আমাকে বলে,শোনো!
তুমি পড়াশোনা করে তাড়াতাড়ি বড় হও বুঝেছো?
তুমি বড় হলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো।
আমি উত্তর দিয়েছিলাম,আমি কিন্তু আম্মুকে সব বলে দিবো।
উৎস বলেছিলো,বললে বলো গিয়ে।
দেখবে তোমাকেই বকা দিবে হুম।
তখন কি করবে?
আমি তখন চুপ করে ছিলাম।
যাইহোক,এরপর বিয়ের প্রোগ্রাম মোটামুটি শেষ হয়ে যায়।
কয়েক দিন পর উৎস আমাদের বাসায় আসে কয়েক জন বন্ধু নিয়ে।
আর কাকীকে এসে বলে ও ঢাকা চলে যাচ্ছে।
পড়াশোনার জন্য।ঢাকা ভর্তি হয়েছে কলেজে।
ওখানে থেকেই পড়াশোনা করবে।
আমাকে সেদিন সে ফিসফিস করে বলে যায়,তোমাকে শেষ বারের মত দেখতে এসেছিলাম।
ভালো থেকো।ঠিক মত পড়াশোনা করো।
আর আমার সেদিনের কথাটা মনে রেখো।
এরপর উৎস চলে যায়।
এর মাঝে উৎসের সাথে আমার আর দেখা বা কথা হয়না।
হঠাৎ করে এত বছর পর উৎসের আগমণ।সে সোজা আমাদের বাসায় ঢুকে আম্মুকে ডেকে বলে,
-মম,আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।
একটু এদিকে আসবেন?
উৎস আম্মুকে মম একটু এদিকে আসবেন বলার পর আম্মু বেড়িয়ে ঘরের বাইরে যায়।
আর ছেলে আর আম্মু কিছু ক্ষণ কথা বলে।
যেহেতু সে আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয় মানে আমার বেয়াই হয়।
আম্মু তাকে চেনে বলে দূর্ঘটনা ততটা ঘটেনি।
নইলে আম্মু কি করতো আল্লাহ্ই জানেন।
কারণ তিনি আম্মুকে ডিরেক্ট বলেছেন,
মম,আমি কুহুকে বিয়ে করতে চাই।
লে আমার আম্মু-তুমি যে আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাও,তুমি কি আমার বাসায় ডাল ভাত আর আলুর ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে পারবে?আমি তোমাকে এ ছাড়া আর কিচ্ছু দিতে পারবোনা।
উৎস:-আমার ভাত ডাল কিছুই লাগবেনা আমি শুধু কুহুকে চাই।আমার কুহু হলেই চলবে।
আম্মুতো সেদিন রেগে মেগে আগুন।
বল্লো,তুমি এবার বাসায় যাও।
-না আপনি বলুন মম,কুহুকে আমার কাছে বিয়ে দিবেন!
বলুন।
-আমি তোমার আংকেলের সাথে কথা বলবো এ ব্যাপারে।যখন ওকে বিয়ে দিবো তখন।
তোমার আংকেল আসলে আমরা ওর বিয়ের কথা ভাববো।সে আসতে এখনো কয়েক মাস বাকি।
তুমি বাসায় যাও এখন।
আম্মু উৎসকে কিছু নাস্তা খাইয়ে বিদায় দিয়ে দিলো।
কিন্তু উৎস যাবার পর আম্মু আমাকে কড়া গলায় শোনায়,
ছেলেটা খুব ভালো আমি জানি।
কিন্তু ও এখনো স্টুডেন্ট।
আর ওর পারিবারিক এবং আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ।ওর মা ও খুব পাজি।
তাই আমি বলবো,ওই দিকে যেন নজর না যায় কারো।
আমি চুপ করেই রইলাম কোন কথা বললাম না।
ওইদিকে আমি কলেজে যাই,উৎস আমাকে ফলো করে আমার কাছে এগিয়ে আসে।
আর আমি দৌড়ে পালাই।
আবার কোচিং এ যাই,সেইম আমার সামনে আসে কথা বলার জন্য।কিন্তু আমি পালিয়ে যাই।
একদিন আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড আমাকে বলে,জানিস একটা স্মার্ট ছেলে আমার পিছু নিয়েছে।
আমার সাথে প্রেম করতে চায়।ফোন নাম্বারও দিয়েছে আমাকে।
কাউকে বলিনি,তোকেই বললাম আজ।
ও আমার জন্য প্রায় দাঁড়িয়েও থাকে।
দেখবি ওকে?
আমি বললাম,ঠিক আছে দেখবো।
এ কথা বলে মনা আমাকে কলেজ থেকে বাইরে নিয়ে আসে।
আর ইশারায় যাকে দেখায় তাকে দেখেতো আমি যেন আকাশ থেকে পরি।
এ যে উৎস।
আমি মনাকে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি,
ওই ছেলেই কি তোকে ফোন নাম্বার দিয়েছে?
-হ্যাঁ,ওই ছেলেইতো দিয়েছে।
-ওই ছেলে তোর সাথে প্রেম করতে চায়?
-হুম চায়ই তো।
মনার কথা শুনে উৎসকে একটা থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করছিলো।
কিন্তু না মেরে এই ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে এলাম যে,
একটা মানুষ এত খারাপ কি করে হয়,
আমার বাসায় এসে বলে আমাকে বিয়ে করতে চায়।
আর অন্য দিকে আমারই ফ্রেন্ড এর সাথে প্রেম করতে চায়।
ফোন নাম্বার দেয়।
আম্মু বলেছিলো ছেলে ভালো আমি জানি।
কিন্তু ছেলে যে জঘন্য খারাপ আম্মু সেটা জানেনা।
পরের দিন কলেজে যাবার পথে উৎস আমার সামনে এগিয়ে আসে,
আর আমি তাকে দেখে ফিরে যেতে থাকি।
আর তখনই ও আমাকে ডেকে বলে…
চলবে…
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com