সৌভাগ্য । তিতিশ্মা মুসাররাত কুহু
দিনের একটা সময় আমার শ্বশুরকে আর খুঁজে পাওয়া যায়না।
প্রতিদিন ওই একই সময় তিনি গায়েব হয়ে যান বাসা থেকে।
উৎস প্রতিদিন সকালে অফিস চলে যায়,আর আসে রাতের বেলা।
সারাদিন বাসায় থাকি আমি আর বাবা ই।
এইতো শ্বাশুড়ি মা মারা গেছেন প্রায় ছয় মাস হতে চল্লো।
বাবা একদম নির্বাক হয়ে গেছেন তিনি মারা যাবার পর।
দুজন দুজনকে খুব ভালবাসতেন।কিছুই বুঝতেন না কেউ কাউকে ছাড়া।
কিন্তু একদিন তো সবাইকেই যেতে হবে।তাই মা আগেই চলে গেলেন বাবাকে ছেড়ে।
কিন্তু ওই যে বললাম না,এক টা সময় বাবাকে বাসায় খুঁজে পাওয়া যায়না।
অথচ এ ছাড়া তিনি বাসা থেকেই বের হন না একদম।শুধু নামাজের সময় নামাজ আদায় করে চলে আসেন।
তো একদিন আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম,বাবা আপনি প্রতিদিন বিকেল বেলা কই যান?
তাও আবার একই সময়ে,একই টাইমে।
বাবা কিঞ্চিৎ একটা হাসির রেখা টেনে আমাকে বললেন,
তোমার মায়ের কাছে।
আমি বাবার কথাটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।
উৎস বাসায় এলে উৎসকে কথাটা জানালাম।
যে,বাবা সারাদিন ঘরকোণো হয়ে পড়ে থাকেন মা মারা যাবার পর থেকে।
কেউ ডাকলেও কোথাও যান না।মন মরা হয়ে বসে থাকেন।
কিন্তু প্রতিদিন একটা সময় বাবা বাসা থেকে ঠিক বের হন।
আর ওই একটা টাইম ই ফিক্সড করা।
এর আগেও যান না বা পরেও না।
কিন্তু যান কই তিনি?
বিষয় টা একটু দেখা তো দরকার।
উৎস আমাকে অবাক দৃষ্টিতে বল্লো,এটা তুমি আমায় আগে বলবানা?
এই বয়সে এই মানসিক অবস্থায় বাবা একা বের হন,কোথায় যান খেয়াল রাখতে হবেনা?
যদি রাস্তা ঘাটে পড়ে যান কোথাও তখন কি হবে?
আগামীকাল আমি অফিস যাবোনা।
বাবা বের হয়ে গেলেই আমি আর তুমিও বাবার পিছু পিছু যাবো কেমন?
দেখবো বাবা কোথায় যান।
যেই কথা সেই কাজ।
পরের দিন বাবা বেড়িয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণ আমি আর উৎসও বেড়িয়ে পড়ি বাবার পিছু পিছু।
কিছু দূর যাওয়ার পর লক্ষ্য করি,
বাবা একটা টোল/মোড়া নিয়ে মায়ের কবরের পাশে বসলেন।
আর তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তিনি কোরআন তিলাওয়াত শুরু করলেন।
আমার আর উৎসর চোখে জল চলে এলো।
আমার মনে পড়ে গেলো,
বাবা সারাদিন বাসার বাইরে থাকলেও ঠিক এই সময় টা ঘরে ফিরে আসতেন।
আর মাকে সময় দিতেন।
দুজন মিলে খুব গল্প করতেন।
বাবা আজো সেই কথা রেখেছেন।
আমি চোখের জল মুছতে মুছতে উৎসকে বললাম।
মায়ের মত সৌভাগ্য,সবার হয়না গো।
সবার হয়না।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com