Breaking News

গোধূলীর আলোয় । পর্ব -৩৯



আপু আমি মামা হবো তোমার বাবুর তাইনা?”
“দুনিয়ার সব জানিস আর এইটা জানিস না যে, মামা হবি না খালু হবি আমার বাচ্চার?”
“জানি তারপরও শিউর হয়ে নিলাম। খালু কিভাবে হয় আপু?”
“তুই কি খালুও হতে চাস আমার বেবির?”
“হতে পারলে সমস্যা কোথায়?”
“আচ্ছা বড় হয়ে যা তাড়াতাড়ি তারপর ছোট খালার মেয়ে পুষ্পির সাথে তোর বিয়ে দিয়ে দিবো তখন তুই আমার বাবুর খালুও হয়ে যাবি।”
“পুষ্পিকে কিভাবে বিয়ে করবো? ওতো একদম পিচ্চি।কিছুদিন আগে বাসায় এসেছিলো জানো? আমার একটা খাতা ও ছিড়ে ফেলেছে। একটা বইয়ের পাতা ইচ্ছামত কলম দিয়ে আঁকিয়েছে। আমিও ছেড়ে দিইনি, দিয়েছি পিঠের ওপর গদাম করে বসিয়ে।”
“তুই বড় হতে হতে পুষ্পিও বড় হয়ে যাবে।”
“হোক বড়, আমি পুষ্পিকে চাই না।”
“তাহলে তোকে আর খালু হওয়া লাগবেনা।”
“খালু হবোনা। মামাই থাকবো আর মামা বিস্কুট খাওয়াবো তোমার বাবুকে।”
“আচ্ছা মাশফি, এখন রাখি ফোন কেমন, পরে আবার কথা বলবো।”
“আপু রেখোনা রেখোনা থামো!”
“কি?”
“আমার না বাবুকে আদর করতে ইচ্ছা করছে।”
“সব হবে,আগে সে আসুক পৃথিবীতে।”
“সে এখন কোথায় আছে আপু?”
“আমার পেটে।”
“আমিও কি আম্মুর পেটে ছিলাম?”
“হুম।”
“আমার পেটেও যে কবে একটা বাবু আসবে। আমি সবসময় তার সাথে খেলবো।”
“তোর পেটে আসবেনারে বোকা,তোর বউয়ের পেটে আসবে তখন খেলিস।”
“আমার পেটে আসবেনা কেনো?”
“ছেলেদের পেটে আসেনা বাবু। মেয়েদের পেটে আসে।”
“ওওওও”
“এখন রাখছি, আল্লাহ হাফেজ।”
“আল্লাহ হাফেজ।”
মাশফির সাথে কথা বলে মিথিলা ফোন রাখতে না রাখতেই আয়মানের কল আসলো।
“আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমার বেবির মাম্মাম কি করে?”
“আপনার বেবির মাম্মাম তার বরের সাথে কথা বলে।”
“তার আগে কি করছিলো?”
“তার আগে বেবির মামার সাথে ফোনে কথা বলছিলো।”
“নিলয় ভাইয়ার সাথে?”
“না, মাশফির সাথে।”
“ওহ আচ্ছা। নিলয় ভাইয়ার কি অবস্থা এখন? নুসরাতকে রাজি করাতে পারলো?”
মিথিলা নুসরাতের দিকে তাকিয়ে আয়মানকে বললো,
“পাষাণ মাইয়া, মন গলবার চাইনা।”
“নিলয় ভাইয়ার আম্মাও তো রাজি না।”
“হু, এ জন্যই হয়তো নুসরাত রাজি হচ্ছেনা।”
“হতে পারে। নিলয় ভাইয়াকে বলো তার মা’য়ের সাথে লেগে থাকতে আর নাহয় বাদ দিতে বলো।”
“শুনছেনা। এক জেদ, বিয়ে করলে নুসরাতকেই করবে।”
“কি করবা এখন?”
“পড়বো।”
“শরীর কেমন এখন?”
“এখন মোটামোটি ভালো।”
“আম্মা তোমাকে বাসায় নিয়ে আসবে।এই অবস্থায় হোস্টেলে রাখতে চাচ্ছেনা।”
“হুম, আমাকেও ফোন করেছিলো আম্মা। বললো, তোমার মা’কে বলেছি আর অনুষ্ঠান করার কি দরকার তার থেকে মিথিলাকে নিয়েই চলে আসি।”
“আম্মা কয়েক দিনের মধ্যেই তোমাকে নিয়ে চলে আসবে, শ্বাশুড়িআম্মাও সম্মতি দিয়েছে। রেডি হোও এবার একেবারে আমার বাসায় আসার জন্য। আমি বুধবারে আসবো বাসায় তার আগেই আম্মা তোমাকে নিয়ে আসবে।”
“সবাইকে ছেড়ে যেতে আমার খুব কষ্ট হবে।এরাও আমার একটা পরিবার,অনেক মায়া জমে গেছে।”
“ওদের আমাদের বাসায় আসতে বলবে যখন ইচ্ছা হবে তখন। আমিও বলবো।”
“হুম।”
“এখন রাখছি, পড়তে বসো।”
মিথিলার মন খারাপ লাগছে। আর কখনোই মিতু, নুসরাত, নিপা, মাইশা, সুমনার সাথে এভাবে এক সাথে থাকা হবেনা।
নুসরাত অনেক্ষণ থেকেই দেখছে নিলয় তাকে ফলো করছে এবার সামনে এসেই দাঁড়ালো নিলয় নুসরাতের। নুসরাত চোখ, মুখ শক্ত করে বললো,
“কি চাই?”
“তোমাকে?”
“আমাকে আপনি কোনদিনও পাবেননা।”
“কেনো পাবোনা? আমি কোনদিক দিয়ে খারাপ?”
“আপনি কেনো খারাপ হতে যাবেন? খারাপ আমি। আমার আশা আপনি ছেড়ে দেন। অনেক ভালো ভালো মেয়ে পাবেন, তাদের মধ্যে থেকে একজনকে বেঁছে নিয়ে বিয়ে করে ফেলেন।”
“আমার অন্য কাউকে চাইনা, আমার শুধু তোমাকে চাই প্লিজ রাজি হয়ে যাওনা নুসরাত।”
“আপনার মত ছ্যাচড়া আমি আমার জীবনে একটাও দেখিনি জানেন? সত্যিই দেখিনি। এত ইগনোর করছি তারপরও বেহায়ার মত আপনি আমার পেছনে কেনো আসেন? আপনাকে আমি বিয়ে করবোনা, কিছুতেই না, কোনদিনও না। আপনাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। দয়া করে আমাকে আর বিরক্ত করবেননা, এখন রাস্তা ছাড়েন আর বখাটেদের মত আমার পেছন পেছন না আসলে খুশি হবো। একটা জায়গায় গিয়ে আমি শান্তি পাচ্ছিনা। সব জায়গায় গিয়ে আপনি হাজির হচ্ছেন। এমন আর করবেন না দয়া করে। নিজে ভালো থাকেন এবং আমাকেও ভালো থাকতে দিন।”
“আমি না আসলে খুশি হবে?”
“অবশ্যই।”
“ঠিকাছে, আমি আর আসবোনা তোমার কাছে। তোমাকে আর বিরক্ত করবোনা। ভালো থাকো তুমি তোমার জেদ আর অহংকার নিয়ে।”
নিলয় আর দাঁড়ালোনা, চলে আসলো সে নুসরাতের সামনে থেকে। অনেক তো চেষ্টা করলো নুসরাতকে নিজের করে নেওয়ার জন্য দিন শেষে শূন্য হাতেই ফিরতে হলো।
অনু আজ তার রুমের মধ্যে দরজা বন্ধ করে নিজে নিজে সাজছে। সাজতে খুব ইচ্ছা করছিলো তাই ইচ্ছাটাকে আর দমিয়ে রাখেনি, সাজতে শুরু করেছে। অহনার একটা কাতান শাড়ি এই বাড়িতেই ছিলো, ওটায় পড়েছে। চুলে খোঁপা করে বেলি ফুলের মালা গেঁথেছে। মুখে ভারি সাজ, হাত ভর্তি চুড়ি, কানে পড়েছে বড় সাইজের ঝুমকা। সাজা শেষ হলে আয়নায় ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখছে অনু। আর কয়দিন পর তো নিবিড়ের বাড়ি চলেই যেতে হবে, নিবিড় যেভাবে থাকতে বলবে, যেভাবে চলতে বলবে, সেভাবেই কাজ করা লাগবে। সব ছেলেরা সাজ পছন্দ করেনা। সজল যেমন করতোনা। নিবিড়ও যদি না করে তাই আগেই একা একা একটু সাজলে ক্ষতি কি এই ভেবে অনু আজ সেজেছে। গভীর রাত এখন, বাসার সবাই ঘুম। এখন আর কেউ আসবেনা অনুর রুমে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনু শাড়ির আঁচলটা তার মাথায় তুলে দিলো। নিজেই নিজের দিকে তাকিয়ে একা একা বললো,
“তোকে তো একদম বউ বউ লাগছেরে অনু সাথে তোর রুপ ঝড়ে ঝড়ে পড়ছে। আমি তোর প্রেমে পড়ে গেলাম। সজল তো বোকা, সে তোর রুপটা কখনোই সেভাবে দেখেনি, দেখলে হয়তো এভাবে তোকে ধোঁকা দিতে পারতোনা। তোর রুপের জালে সারাজিবন আটকে থাকতো। সজলের বউ হওয়ার খুব শখ ছিলো তোর তাইনারে কিন্তু হতে পারলিনা, নিবিড়ের বউ হবি এখন। যাকে তুই একটুও জানিসনা, যার সাথে তোর কখনো সেভাবে কথাটাও হয়নি। আচ্ছা, নিবিড়ের সামনে এভাবে সেজে গেলে সে কি খুশি হবে? ভাইয়া তো সাজগুজ পছন্দ করে, নিবিড় ভাইয়াও নিশ্চয় করবে।
সায়নের বাবা-মা সায়নের জন্য মেয়ে দেখতে এসেছে।সায়নও এসেছে সাথে। মেয়ে দেখতে মা শা আল্লাহ বিরাট সুন্দরী। সায়ন একবার শুধু মেয়েটাকে দেখেছে এরপর মাথা নিচু করে নিয়েছে। ঘটক সাহেব সায়নের বাবাকে বলছে,
“কি বলেছিলাম ভাইসাব! মেয়ে অত্যাধিক সুন্দরী। ডাক্তারী পড়ছে, বাংলাদেশের ভবিষৎ ডাক্তার যাকে বলে। আপনাদের তো চিকিৎসার খরচ বেঁচে যাবে কি বলেন?”
সায়নের বাবা বললো,
“মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে এখন আমাদের ছেলে সায়নের পছন্দ হলেই আমরা পাকা কথা দিয়ে দিবো।”
মেয়ের বাবা বললো,
“আমাদেরও আপনাদের ছেলে পছন্দ হয়েছে। ঘটক সাহেবের কাছে শুনেছিলাম, ছেলে অনেক ভদ্র। এখন নিজের চোখে দেখে তো আরোই ভালো লাগলো আপনাদের ছেলেকে। এ যুগে এমন ভদ্র ছেলে খুব কমই আছে। আমাদের সবার খুব পছন্দ হয়েছে এখন আমাদের মেয়ের মতটা নেওয়াও জরুরী। এ যুগের ছেলে-মেয়ে বলে কথা।”
সায়নের বাবা বললো,
“জ্বি, জ্বি।”
ঘটক পাশ থেকে বললো,
“ছেলে-মেয়ে দুটোকে আলাদা একটু কথা বলার সুযোগ দিলে কেমন হয়? মানে এ যুগে এখন এমনই হচ্ছে তাই বলছিলাম আরকি।”
“মেয়ের বাবা মেয়েকে বললো,
” স্নেহা মা, সায়নকে নিয়ে ছাদে যাও।”
স্নেহা ওর বাবার কথায় হ্যাঁ বোধক মাথা দুলিয়ে উঠে দাঁড়ালো, সায়নকে বললো,
“আসুন আমার সাথে।”
সায়ন একবার সামিরের দিকে তাকালো এরপর স্নেহার পেছন পেছন ছাদে গেলো।
নিরিবিলি ছাদের এক কোণায় পাশাপাশি দাঁড়ালো স্নেহা এবং সায়ন। দুজনেই নিরব। এভাবে কিছু সময় যাওয়ার পর স্নেহা সায়নের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললো,
________________
#চলবে, ইন শা আল্লাহ।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com