Breaking News

উত্তম চরিত্রের সওয়াব ও মর্যাদা

উত্তম চরিত্রের সওয়াব ও মর্যাদা।
°ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বোত্তম হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হচ্ছে উত্তম চরিত্র।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন,
❛তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম যার চরিত্র সর্বোত্তম।❜
–(বুখারি-(৩৫৫৯)।
ইসলামে উত্তম চরিত্রের বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে।
মুমিনদের জন্য বিভিন্ন গুণাবলিতে চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা ঈমানের দাবি।
কেননা উত্তম চরিত্র ব্যতীত একজন মুমিনের ঈমান পরিপূর্ণ হতে পারে না।
ঈমানের পরিপূর্ণতার জন্য উত্তম চরিত্র অর্জন করা অপরিহার্য।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ❛ওই মুমিন ঈমানে পরিপূর্ণ- যার চরিত্র সর্বোত্তম।❜
_(আবু দাউদ-(৪৬৮২)।
উত্তম চরিত্রের মাধ্যমেও যে অপরিসীম সওয়াব লাভ হয় তা আমরা অনেকে জানি না।
এর সওয়াব এত বেশি যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।
কেয়ামতের দিন মানুষের সওয়াব ও গুনাহ পরিমাপের জন্য মিজানে ওজন করা হবে।
সেদিন যে আমলের ওজন সবচেয়ে বেশি ভারী হবে তা হলো উত্তম চরিত্র।
এ সম্পর্কে হজরত আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
❛কেয়ামাতের দিন মুমিনের দাঁড়িপাল্লায় উত্তম চরিত্রের চেয়ে বেশি ওজনের আর কোনো জিনিস হবে না।
কেননা, আল্লাহ‌ তায়ালা অশ্লীল ও ক-টু-ভাষীকে ঘৃ-ণা করেন।
_(তিরমিজি-(২০০২)।
উত্তম চরিত্রের সওয়াব ওজনে সবচেয়ে বেশি ভারী হওয়ার রহস্য আরেকটি হাদিস হতে জানা যায়। সে হাদিসে উত্তম চরিত্রের সওয়াবের পরিমাণ বর্ণনা করা হয়েছে। একজন ব্যক্তি সারা দিন রোজা পালন করে ও সারা রাত নফল নামাজ পড়ে যেরূপ সওয়াব পায় আল্লাহ তায়ালা উত্তম চরিত্রের বদৌলতে সেরূপ সওয়াব দান করেন। হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ❛নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে দিনভর রোজা পালনকারী ও রাতভর নামাজ আদায়কারীর মর্যাদা লাভ করতে পারে।❜__________(আবু দাউদ-(৪৭৯৮)।
জান্নাতে মানুষের আমল অনুযায়ী সম্মানজনক জায়গায় অধিষ্ঠিত করা হবে। যার আমল যত ভালো হবে সে তত বেশি সম্মানিত হবে। উত্তম চরিত্র এমন ফজিলতপূর্ণ একটি নেক আমল রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে উত্তম চরিত্রবানদের জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে ঘরের জিম্মাদারি নিয়েছেন। এ সম্পর্কে হজরত আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ❛যে ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও ঝ-গড়া পরিহার করবে আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার; আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি ঘরের জিম্মাদার আর যে ব্যক্তি চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের জিম্মাদার।❜__________(আবু দাউদ-(৪৮০০)।
আমাদের জন্য সর্বোত্তম চরিত্রের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ হলেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। তাঁর আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমেই আমরা সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে পারি। তার সুমহান চরিত্রের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, ❛নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।❜__________(সুরা কলম-(৪)।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তম চরিত্রের অসংখ্য ঘটনা হাদিস ও সিরাত গ্রন্থে বর্ণিত আছে।
তিনি সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তির সঙ্গেও সর্বোত্তম আচরণ করেছিলেন।
হজরত আয়েশা (রা.) হতে এ সম্পর্কিত একটি ঘটনা বর্ণিত আছে।
তিনি বলেন, ❛এক ব্যক্তি নবী (সা.)-এর নিকট আসার জন্য অনুমতি চাইলে তিনি বললেন,
‘সে গোত্রের কতই না খারাপ লোক।❜ অতঃপর তিনি বললেন, তাকে আসতে দাও।
যখন সে ভেতরে এলো তখন তার সঙ্গে তিনি নম্রভাবে কথা বললেন।
সে চলে গেলে হজরত আয়েশা (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল!
আপনি এ ব্যক্তির সঙ্গে নম্রভাবে কথা বললেন, অথচ ইতঃপূর্বে আপনি তার সম্পর্কে অন্য রকম মন্তব্য করেছিলেন।
তিনি বললেন, কেয়ামাতের দিন আল্লাহর নিকট ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে খারাপ,
যাকে মানুষ তার অশালীন কথার ভয়ে ত্যাগ করেছে।❜
__(আবু দাউদ-(৪৭৯১)।
আমরা তো তুচ্ছ থেকে অতি তুচ্ছ কারণে খাদেম কিংবা অধীনস্থ মহিলাদের বকাঝকা ও মারধর করি।
কিন্তু রাসুলুলুল্লাহ (সা.) জীবনে কখনও কোনো খাদেম কিংবা মহিলাদের মারধর কিংবা বকাঝকা করেননি।
হজরত আনাস (রা.) বলেন, ❛মদিনায় আমি দশ বছর যাবৎ নবী (সা.)-এর খেদমত করেছি।
তখন আমি বালক ছিলাম। সব কাজ আমার মালিক যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে করতে পারিনি।
সে জন্য তিনি আমার প্রতি কখনও মন-ক্ষু-ন্নতা প্রকাশ করেননি এবং কখনও আমাকে বলেননি,
তুমি এটা কেন করলে অথবা এটা কেন করলে না।❜
_(আবু দাউদ-(৪৭৭৪)।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ❛রাসুলাল্লাহ (সা.) কখনও কোনো খাদেমকে এবং কোনো মহিলাকে মারধর করেননি।❜__________(আবু দাউদ-(৪৭৮৬)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তায়ালার কাছে তার সুন্দর চরিত্র গঠনের জন্য দোয়া করতেন।
এ সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এ দোয়া করতেন,
❛হে আল্লাহ, আপনি আমার চরিত্রকে সুন্দর করুন যেমনভাবে আমার শারীরিক গঠনকে সুন্দর করেছেন।❜__________(মুসনাদে আহমাদ-(৩৮২৩)।
❏ —তাই আমাদেরও উত্তম চারিত্রিক গুণাবলি অর্জনের জন্য চেষ্টার পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালার কাছে বেশি বেশি দোয়া করা উচিত।
➤ আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে উত্তম চরিত্র গঠনের তাওফিক দান করুন।

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com