Breaking News

সতীনের সংসার | ৩য়- পর্ব



১ম লোকটি বললো, “শর্ত নং ৩….. এতক্ষণ পর্যন্ত যত গুলো মেয়ে এই পোস্টের জন্য ইন্টারভিউ দিতে এসেছে তারা কেউই এই শর্তটা মানে নি। তাই তারা এই কাজ টি পাইনি। এবার দেখি, আপনি সেটা মানতে পারেন কি না।”
১ম লোকটার কথা শুনে অধরা একটু ভয় পেয়ে গেল।
“কি শর্ত স্যার?”
“আপনাকে বাসায় ফিরতে মাঝে মাঝে অনেক রাতও হয়ে যেতে পারে।”
“কিন্তু কেন ?”
.
“এই কোম্পানির এমন অনেক ইনভেস্টর আছেন যারা ফরেইনার। তারা রাতে নানা ধরনের পার্টি রাখেন যেগুলো আমাদেরকে এটেন্ড করতে হয়। আপনি যখন বসের পিএ হয়ে যাবেন তখন আপনাকেও এই পার্টি গুলি এটেন্ড করতে হবে। তখন আপনার বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যেতেই পারে।
” আর আমার সিকিউরিটি?”
.
” এই অফিসে আর কোম্পানির পার্টি গুলোতে আপনি ফুল সিকিউরেড। কিন্তু এই অফিসের বাইরে, রাস্তাঘাটে আপনার নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করবে না। এখন বলুন আপনি কি এই শর্তে রাজি?”
কিছুক্ষণ ভেবে অধরা বললো, ” সরি স্যার। আমিও এই শর্তটা মানতে পারলাম না।”
“আরেকবার ভেবে দেখুন।”
.
“আমি নিজেকে নিয়ে ভাবছি না স্যার। আমি আমার পরিবারের কথা ভাবছি। আমার সাথে যদি খারাপ কিছু হয়ে যায়, তাহলে আমার পরিবারেরও যথেষ্ট বদনাম হবে। তাই, সরি স্যার,, আমার পক্ষেও এই জবটা করা সম্ভব হবে না। থ্যাংক ইউ।”
কথা গুলো এক নিশ্বাসে বলে অধরা চেয়ার থেকে উঠতে লাগল। এমন সময় ১ম লোকটি আবার বললো, “ইমোশনস্? এই ইমোশন গুলোর কারনেই মানুষকে অনেক কিছু হারাতে হয় জীবনে। আরেকবার ভেবে দেখতে পারেন।”
“এটা ইমোশন নয় স্যার, এটা রিয়েলিটি। এটা আমাদের এখনকার সমাজের রিয়েলিটি, আমাদের দেশের রিয়েলিটি, যেটা বদলাবে বদলাবে করেও আর বদলাচ্ছে না।
আমার সিদ্ধান্তটা আমি আপনাদেরকে জানিয়ে দিয়েছি। আসি।”
.
অধরা সালাম দিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে গেল।
মন খারাপ করে অনাথ আশ্রমে ফিরে আসে সে।
অধরা যখন খুব ছোট তখন ওর বাবা মা একটা রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়।
তারপর ওর এক চাচা ওকে এই অনাথ আশ্রমে দিয়ে যায়।
তখন থেকে অধরা এখানেই থাকে। রাজিয়া বেগম ও অনিল ঘোষ এই অনাথ আশ্রমটি পরিচালনা করেন।
এখানে অধরার মতো আরও অনেকেই আছে। তারা সবাই অধরাকে অনেক ভালবাসে।
অধরাও তাদেরকে অনেক ভালবাসে।
.
অধরা অনাথ আশ্রমের ভেতরে আসতেই পূর্ণিমা আপু বললেন, ” কিরে অধরা? ইন্টারভিউ কেমন হলো?”
আলো আপু সামনে এগিয়ে এলেন। “খালি হাতে এসেছো কেন? মিষ্টি কই?”
সবাইকে পাশ কাটিয়ে অধরা নিজের ঘরে যাচ্ছিল। এমন সময় পেছন দিক থেকে জেরিন ওর হাতটা ধরল। জেরিন ওর বেস্ট ফ্রেন্ড।
“কিরে? কি হয়েছে? কিছু না বলেই যে ঘরে ঢুকছিস?”
অধরা শান্ত ভাবে বললো, ” কি আর বলব? চাকরিটা আমার হলো না।”
“কেন? এভাবে বলছিস কেন?”
.
সবাই এবার অধরার ঘরে বসে সব কিছু শোনে। সবকিছু শোনার পর আলো আপু বলল, “আসলে কি বলতো অধরা,, ধনী মানুষের জীবন আর গরীবদের জীবনের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে। ধনীরা চাইলে সবই করতে পারে। তারাই পারে অনেক রাত করে বাসায় ফিরতে। কারন এগুলো তাদেরকেই সাজে। আমাদেরকে নয়। তাদের কাছে টাকা আছে। তাদের সাথে ভুল কিছু হলে তারা অনেক সময়ই সেটা টাকার জোরে লুকিয়ে দেয়। কিন্তু আমাদের কাছে সেটা নেই। আমাদের কাছে সবার আগে আমাদের সম্মান টা আসে।
এনিওয়ে, তুমি ভালো কাজ করেছ যে না বলে দিয়েছ। তুমি মন খারাপ করো না আপু। আল্লাহ তো আছেন। তুমি ঠিক একটা না একটা চাকরি পেয়ে যাবে।”
.
সবাই আলোকে সমর্থন করলো। অধরার সাথে টুকিটাকি কিছু কথা বলে সবাই যার যার ঘরে চলে গেল।
জেরিন ওকে বললো, “শোন, বাদ দে এসব। যা হয়েছে, হয়েছে। যা ফ্রেশ হয়ে নে। একটু পরেই খেতে ডাকবে।”
জেরিন চলে যাওয়ার পরে অধরা আর বেশি কিছু না ভেবে ফ্রেশ হয়ে খেতে চলে গেল।
খাওয়া শেষে নিজের রুমে এসে লম্বা একটা ঘুম দিলো। ঘুম ভাঙল একটা ফোনের আওয়াজে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসছে।
“অপরিচিত নাম্বার থেকে কল? ধরব কি?…… না ধরি, গুরুত্বপুর্ণ কিছু হতে পারে। ( কল রিসিভ করে) আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?”
ওপাশ থেকে একটি মেয়ে বলল, “আপনি কি মিস অধরা ইসলাম?”
“জি। কিন্তু কেন? আর আপনি কে?”
“আমি এ.আর গ্রুপ এন্ড ইন্ডাস্ট্রি থেকে বলছি। আপনাকে কিছু জানানোর ছিল।”
“বলুন”
“এ.আর গ্রুপ এন্ড ইন্ডাস্ট্রির এমডির পিএ হিসেবে আপনাকে নির্বাচন করা হয়েছে।
অভিনন্দন

, আপনি চাকরিটা পেয়ে গেছেন।”

মেয়েটির কথা শুনে অধরা অবাক হয়ে গেল।
“কি? কিন্তু কিভাবে? মানে আমি তো বলেই এসেছিলাম যে আমি এই চাকরিটা করতে পারব না। তাহলে?”
“দেখুন আমি তো অতো কিছু জানিনা। আমাকে শুধু আপনাকে জানাতে বলা হয়েছিল তাই বললাম। কাল সকাল ৮ টার মধ্যে আপনি অফিসে জইন করবেন।”
মেয়েটি ফোনটা কেটে দিল।
” কিন্তু এটা কেমন করে হলো? আমি তো না বলে এসেছিলাম। তাহলে ওনারা আমাকে কেন সিলেক্ট করলেন? কিছুই তো বুঝতে পারছিনা।
.
এমন সময় অধরার ঘরে এলো জেরিন।
“কি রে? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন? আবার কি হলো?”
অধরা জেরিনকে সব বলল। সবটা শুনে জেরিন অনেক খুশি হয়ে গেল।
“আরে তা এতে তুই এতোভাবছিস টা কি? তোর তো খুশি হওয়া উচিত। এতো ভাল একটা জব পেয়েছিস।”
“খুশি হব? কি করে জেরিন? আমি তো শেষের শর্ত টা মানতে পারব না। তাহলে?”
এমন সময় রাজিয়া বেগম ঘরে এলেন।
.
“তাহলে কি অধরা?”
“মামনি, তুমি এখানে?”
” হুম। শোনো অধরা, এই পৃথিবীর কোনো কিছু যেমন কোনো মানুষের আদেশে হয় না, ঠিক তেমন ই মানুষের জীবনের সব কিছু তার ইচ্ছে মতো হয় না। আসতে একটু রাত হয়ে যাবে ভেবে তুমি এতো ভাল একটা চাকরি ছেড়ে দিচ্ছো? না মা। এমন করে না। আল্লাহ এত বড় সুযোগ জীবনে একবারই দেয়। সুযোগ টা হাত ছাড়া করো না মা। কাল কখন যেতে বলেছে?”
.
“সকাল ৮ টায়।”
” ঠিক আছে। তুমি যাবে কাল।”
“ঠিক আছে মামনি। তুমি যখন বলছো তাহলে আমি যাবো।”
রাজিয়া বেগম অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। “সোনা মেয়ে আমার।”
কথাটি বলে রাজিয়া বেগম চলে গেলেন।
জেরিন বলল, ” দাড়াঁ, সবাইকে এই খুশির খবর টা দিয়ে আসি।” কথাটি বলে জেরিনও চলে গেল। কিন্তু অধরার মনে এখন ও সেই প্রশ্ন টাই ঘুরছে, কেন ওকেই এই চাকরিটা দেওয়া হলো…..
.
চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com