Breaking News

প্রথম প্রতিশ্রুতি । পর্ব -০৯

অন্ধকারে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না…লোকটা ধীরে ধীরে ঘরের ভেতরে ঢুকলো।পা টিপে টিপে এগিয়ে যেতে লাগলো প্রতিশ্রুতির দিকে।
কে….কে তুমি…..সাহস থাকলে আমায় দেখা দাও।এভাবে অন্ধকারে লুকিয়ে আছো কেন!??
(লোকটা কোনো জবাব না দিয়ে এগিয়ে চললো)
—-আমার কাছে আসবে না একদম,দূরে থাকো একদম দূরে থাকো আমার।
(সে প্রতিশ্রুতির কোনো কথাতেই ভ্রুক্ষেপ করলো না,)
—কি আমার কথা কানে যাচ্ছে না…একদম কাছে আসবে না বলছি।
লোকটা আরো কাছে আসলো প্রতিশ্রুতির।তারপর প্রতিশ্রুতির সাথে ধ্বস্তাধস্তি শুরু হয় তার রীতিমতো।লোকটা প্রতিশ্রুতির সাথে খারাপ কিছু করতে চাইছে। কিন্তু কিছুতেই যেন পেরে উঠছে না ওর সাথে।
পেছনের দিকে এগোতে এগোতে কিছু একটা হাত স্পর্শ করলো প্রতিশ্রুতির।সে বুঝতে পারলো লোহার ভারী কোনো জিনিস মনে হচ্ছে। নিজেকে বাঁচানোর একটা শেষ চেষ্টা করতেই হবে।তাতে যা হবার হোক।এই ভেবে সেই রডটা উঠিয়ে সজোরে লোকটার মাথায় আঘাত করলো!!
মূহুর্তে আঁতকে উঠলো সে….প্রতিশ্রুতি বুঝতে পারলো তার মাথা ফেটে গেছে হয়তো।লোকটা একটু একটু করে নির্জীব হয়ে আসছে।সে প্রতিশ্রুতির ওপরে জোর জবরদস্তি করার শক্তি হারিয়ে ফেলছে যেনো।
এটাই পালানোর মোক্ষম সুযোগ,, এর দূর্বলতা সুযোগ নিয়ে পালাতে হবে প্রতিশ্রুতিকে।লোকটাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়লো প্রতিশ্রুতি।তারপর এক দৌড়ে দরজার দিকে গেলো।অদ্ভুত ব্যাপার সেই লোকটা আর নেই সেখানে।তাই পালাতে আর অসুবিধে হলো না প্রতিশ্রুতির।
বাড়িটা থেকে বের হয়ে সোজা রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো প্রতিশ্রুতি…তারপর ছুটতে লাগলো। নিজের দীর্ঘশ্বাসের আওয়াজ নিজেই শুনতে পাচ্ছে সে।।
.
ছুটতে ছুটতে হঠাৎ সে রাস্তার মাঝখানে হোঁচট খেয়ে পড়লো….
মনে হলো প্রথমের গলার আওয়াজ শুনলো !!
—শ্রুতি….. শ্রুতি!তুমি এখানে… এতো রাতে রাস্তায় কি করছো তুমি??
—আপনি এখানে এলেন কিকরে…. (হাঁপাতে হাঁপাতে প্রথমকে জিজ্ঞেস করে প্রতিশ্রুতি)
—আরে আমি খুঁজে মরছি তোমায়… এতো রাতে তুমি… বাসা থেকে বের হলে কেন বলো আমায়?
—আমি বাসা থেকে বের হইনি !কেউ জোর করে নিয়ে এসেছিলো আমায়।
—কি বলছো কি তুমি এগুলো।কে জোর করে তোমায় আমার বাসা থেকে তুলে এনেছে।
কে সে…তার নাম বলো?
—আমি তাকে দেখিনি…তবে সে এখনো আছে।
পালাতে পারে নি নিশ্চই।আপনি জানেন সে আর কেউ নয়।
পুলিশ যে সিরিয়াল রেপিস্টকে খুঁজে বেড়াচ্ছে এই সেই ব্যক্তি।
—ও মাই গড। কি বলছো তুমি এগুলো।তবে তো আমাদের ওকে হাতেনাতে ধরা উচিত।
চলো আমি যাবো তোমার সাথে। আমায় নিয়ে চলো…
—হ্যাঁ,,কিন্তু আমাদের এভাবে যাওয়াটা একদম ঠিক হবে না।
আপনি একটা কাজ করুন। পুলিশকে ফোন দিন।আমরা পুলিশ নিয়েই যাবো।
আজ ওর মুখোশ টেনে খুলে দেবার সুযোগ পেয়েছি,এটা কিছুতেই হারাতে চাই না।
একদম ঠিক বলেছো।আমি পুলিশকেই ফোন করছি।কিন্তু তার ভেতরে ও যদি পালিয়ে যায়।
না, ও পালাতে পারবে না।আমি নিশ্চিত। আপনি তাড়াতাড়ি ফোন করুন।
প্রথম পুলিশ স্টেশনে কল করলো।আধাঘন্টা বাদে পুলিশ আসে….
প্রতিশ্রুতি পুলিশ নিয়ে সেই বাড়িটায় পৌঁছে গেলো…সাথে ওর স্বামী প্রথম।প্রথমের দিকে তাকাতে পারছে না প্রতিশ্রুতি। বেচারা নিজের বৌকে খুঁজতে খুঁজতে আধমরা অবস্থা।।
সেই বেডরুমের ভেতরে যেখানে প্রতিশ্রুতিকে ধর্ষন চেষ্টা করা হয়েছিলো সেখানে উপস্থিত হয় সবাই।রুমের লাইটটা অন করা হলো।
.
সবাই দেখতে পাচ্ছে একটা লোক খাটের ওপরে উপুড় হয়ে পড়ে আছে।পুলিশ এগিয়ে গেলো তার দিকে।তারপর লোকটাকে ধরে চিৎ করে শুইয়ে দেয়া হয়…..
তার চেহারা দেখে আঁতকে উঠলো প্রতিশ্রুতি।এতো নির্জন…..!!!!
নির্জনকে এই জায়গায় আর এই অবস্থায় দেখতে হবে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি প্রতিশ্রুতি। তার মানে সিরিয়াল রেপিস্ট আর কেউ নয় নির্জন। প্রতিশ্রুতির প্রাক্তন প্রেমিক। আর প্রতিশ্রুতি ওর হাতেই ধর্ষিতা হয়েছিলো আগে!
পা থেকে যেন ধীরে ধীরে মাটি সরে যাচ্ছে প্রতিশ্রুতির।নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারছে না সে….ইতিমধ্যে প্রেস-মিডিয়া একত্রিত হলো।লাইট, ক্যামেরায় গোটা বাড়ি ঘিরে যায়।আর সেটা হবারি কথা…প্রায় আড়াইশো ধর্ষন এবং খুন করা এবং সিরিয়াল রেপিস্ট হাতেনাতে ধরা পড়েছে। এর থেকে বড়ো ব্রেকিং আর কি হতে পারে…..
বাড়ির সামনে প্রথমের সাথে দাঁড়িয়ে আছে প্রতিশ্রুতি।ভেতরে ডাক্তার দিয়ে নির্জনকে সুস্থ করানো হচ্ছে।একটু পরে গ্রেফতাররতো অবস্থায় নির্জনকে নিয়ে বেরিয়ে আসলো পুলিশ।
প্রতিশ্রুতি ভয়ে তাকাতে পারছে না ওর দিকে…নির্জন প্রচুর চিৎকার চেঁচামেচি করছে…
—আমায় ছেড়ে দিন… আমি কিচ্ছু করিনি ।ছেড়ে দিন আমায় ।আমি কিছু জানি না।
(সকল অপরাধী ধরা পড়ার পরে একি কথা বলে,তাই কেউ আর পাত্তা দিচ্ছে না ওর কথা)
প্রতিশ্রুতির সামনে থেকে নির্জনকে নিয়ে যাওয়া হয়।নির্জন প্রতিশ্রুতিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো…
—প্রতিশ্রুতি বাঁচাও আমায়। আমায় ভুল বুঝো না। আমি তোমাকে ধর্ষন করতে চাই নি, আমি কোনো ক্ষতি করি নি তোমার।বিশ্বাস করো।
.
নির্জনের কথাগুলো শেলের মতো বিদ্ধ হচ্ছে প্রতিশ্রুতির কানে।
একবার নির্জনের দিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো সে। যখন নির্জনকে গাড়িতে তোলা হয়।
শেষ বারের মতো দেখার জন্য একবার ফিরে তাকালো প্রতিশ্রুতি।
হঠাৎ একটা অদ্ভুত আর খটকা বিষয় তার চোখে পড়লো।আর সেটা
হলো প্রথমের মাথায় কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই!!! ও এমনিতেই অজ্ঞান ছিলো….
কিন্তু প্রতিশ্রুতির এখনো স্পষ্ট মনে আছে সে ঐ ব্যক্তির মাথায় জোরে
লোহার দিয়ে বাড়ি মেরেছিলো,তাড়াহুড়োতে পুলিশকে সেই কথা বলতেই ভুলে যায়।
সেই আঘাতের চিহ্ন এভাবে কিকরে গায়ের হয়ে যেতে পারে….
ওটা আদৌ নির্জন ছিলো তো,, নাকি অন্য কেউ…
তবে কি নির্জন সত্যি কথাই বলছে???ওকে ফাঁসালো না তো কেউ….???
একটা অজানা আশংকায় বুকটা কেঁপে উঠলো প্রতিশ্রুতির….!!
পরের সব পর্ব আমার প্রোফাইলেতে দেয়া আছে ভালো লাগলে পড়ে আসতে পারেন
.
চলবে,,..

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com